Thursday 5 October 2017

বর্ষ -১ ; ইস্যু -১

অপরাজিত বর্ষ -১ ; ইস্যু -১ 




সম্পাদকের কলম : - 

প্রথমেই সকল লেখক / লেখিকা , পাঠক / পাঠিকা দের জানাই শুভ বিজয়া , এরই সাথে ধন্যবাদ জানাই সকল লেখক ও লেখিকাদের যাদের সঙ্গ না পেলে আমার এই প্রচেষ্টা কোনদিন সফল হতে পারত না ।। সকলের অফুরন্ত ভালবাসা ও উপযুক্ত ট্যালেন্ট এর মেল বন্ধন হয়ে উঠে আসতে বদ্ধ পরিকর এই অপরাজিত ।।  আশাকরি আগামী দিনেও আপনাদের সঙ্গ এ ভাবেই পেতে থাকব ।।

সম্পাদক 

---------------------------------------------------------------------------


সুচিপত্র 

কবিতা 

১. শ্যামাপদ মালাকার
২. অভিজিৎ মান্না
৩. পায়েল খাঁড়া
৪. বিধান চন্দ্র রায়
৫. নাজিমা পারভীন
৬. অর্ণব মণ্ডল
৭. ইন্দিরা ব্যানার্জী
৮. সুদর্শন প্রতিহার 
৯.জ্যোতির্ময় রায়
১০. শংকর ব্রহ্ম
১১. জয়দীপ রায়
১২. গোলাম কাদের
১৩. প্রবীরকুমার ভদ্র 
১৪. সাজিব চৌধুরী
১৫. নারায়ণী দিদি
১৬. তৈমুর খান
১৭ . দোলা ঘোষাল 
১৮. সৈয়দ আরসর আহমদ 
১৯. দিব্যায়ন সরকার 
২০. অর্জুন 
২১.দুলাল  প্রামানিক 



গল্প ও অনুগল্প 

১. শ্যামাপদ মালাকার
২. সুদর্শন প্রতিহার 
৩. দোলা ঘোষাল 
৪. শুভা গাঙ্গুলী 
৫. নিজামুদ্দিন মোল্লা 
৬. শুভদীপ মহাপাত্র 

------------–----------------–-------------------------------------------



কবিতা 

খোঁপা



শ্যামাপদ মালাকার



সে মূর্ত্তি একবার হেরিলে

অন্তরে রাখিতে পারনাই কেন

বারে বারে মোরে নূতন করে সাজিতে

হয় কেন প্রিয়!?

ভাবি-- পৃথিবীতে সব গন্ধ যদি
অবসান হয়ে যায় আমি নিশ্চিত,
খোঁপাটিও গন্ধহীনা হয়ে পড়ে রবে যেথায়--
নির্ঘাণ হয়ে পড়ে রয়
জুঁই -- চামেলী -- চম্পা -- টগরেরা।

যতকাল গন্ধ রবে ততকাল কি বলিবে
--"তুমি আমার -- আমার -- আমার!"।
যবে আর বাঁধিতে পারিবোনা খোঁপা কত
সহজে কত প্রেম-আমার,
পরাজিত হবে সুরাময় বাসি-খোঁপায়।

অভাগী অন্তরের আর---
কতই বা দর দেবে-- নেশা জাগানো খোঁপার
বাজারে
আজি সেভয়েই অবিশ্রান্ত--
তাড়া করে নিয়ে বেড়ায় আমাকে!।।





দুলছে সময় 



অভিজিৎ মান্না 

----------------------

অনন্ত কান্নার অন্তেও 

একফালি রোদ , ঠোক্কর মারা 

আঁচে শুকায় অশান্ত যৌবন ।

পলাশ লাল  শুধু দৃশ্যপটেই  ।
অপেক্ষায় কেটে গেছে অনেকটা  অনেকটা পথ। অরণ্য -ঝড় আটকে পাহাড়ের প্রতিবাতে ।তবু  তবু আকাশ শুষে চলে দূষণ ।
ওড়ে প্রশ্ন -শান্তি  ? না রক্তাম্বর ।




নিষেধের মলাটে আমার প্রেম*

পায়েল খাঁড়া

সেই ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁওয়া উষ্ণতা,চোখের বর্নপ্রকরণ
মনে পড়ে কি__সুপ্রিয়,ক্লাস ছুটির ঘন্টায় বুকের শিরার সে অনুরণন?
বছর বারো কি তের সবে পেরিয়েছি বয়সের চৌকাঠ,
রক্তে বাঁধেনি তখনও তথাকথিত সামাজিকতার জটিল বিভ্রাট!
হ্যাঁ__নেহাতই কিশোর আমরা তখন।
তাই তো বুঝিনি,সম্পর্কেও থাকে চোহদ্দি-কাঁটাতার;
অবুঝ মনের সবুজ প্রেমের অকালমৃত্যু নাগরিকত্বের মাশুল গোনে আকচার।
ভালোবাসতে গেলেও আঁটঘাট বেঁধে করণীয় বিশ্লেষন।

আজ আমি নিয়ম নিষেধের মলাট জড়ানো রুচি-শীলিত নারী,
আর তুমি__ন্যায় নীতির বোধিসও্ব,সমাজসুলভ ব্যক্তিত্বের আপামর স্বত্ত্বাধিকারী।
তোমার সৌখীন পৌরুষে মানায় না নাকি আর সে কিশোর প্রেমিকের সহবাস,
সেদিনের ঠোঁটের উষ্ণতা আজ ছাইচাপা চিতার ইতিহাস
আর পুড়ে গেছে আগুনে বেবাক__আমাদের কৈশরযাপন। 
জানো সুপ্রিয়,সেদিনই ভালোবেসেছিলাম নির্ভেজাল আত্মীয়তায়
আজ সুপটু নটীর মতো জীবনের প্রেক্ষাগৃহটায়—
প্রেমের নাম করছি শুধুই নিখুঁত অভিনয়  প্রদর্শন!




যদি তোমার স্পর্শ পাই

বিধান চন্দ্র রায়

যদি তোমার স্পর্শ পাই -
আমি অন্ধকার পেরিয়ে
তোমার হাসির মতো সরল
এক রূপকথার রাজ্যে পৌঁছে যাবো

যদি তোমার স্পর্শ পাই -
আমি সমস্ত সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে
তোমার মনের মতো উদার কোন এক স্বর্গে
মুর্তিহীন মন্দির বানাবো

যদি তোমার স্পর্শ পাই -
আমি বনমালীর কলায় অফুরন্ত কথা ও ধ্বনিতে
গড়ে তুলবো গভীর কাব্য প্রতিমা

যদি তোমার স্পর্শ পাই
যদি তোমার স্পর্শ পাই . . .




আবার দেখা 

নাজিমা পারভীন

হয়ত তোমার পাব দেখা 
কোন এক মায়াবী রাতে, 
জ্যোৎস্নালোকে,
 পুকুর ঘাটে। 
শিমুল গাছের তলে 
একলা বসে,
 আপনমনে, 
খেয়ার পানে চেয়ে
কবিতার কোন এক স্তবক খুঁজবে 
ছন্দ-পর্ব-মাত্রা-লয়ে 
ঐ সূদূর গাঁয়ে। 





যুদ্ধ হোক✊

          
অর্ণব মণ্ডল

গৃহবন্দি থেকো না সবে,কন্ঠ দাও খুলে—
নব প্রবীণ দুষবে তোমায় মানবতার ভুলে—

দেখ আজ তোমার পথে সত্যযুগ, বেমানান নবীন-
উচ্চশিরে কুঠারাঘাত মূল্যবোধে প্রবীণ।

মহামানবের জ্ঞানের মেলা মুক্তির পথে বক্তৃতা,
ভাঙ সবে বন্যবেগে ছিনিয়ে নাও মুক্তিটা। 
বুঝিয়ে দাও দু'মুখোদের—
     মোদের রক্তে আর্যবর্ত,
বজ্রপাতে চলতে পারি গুড়াতে পারি চোরাশর্ত।
ভবিষৎতের প্রতীক্ষা হোক,হোক চির উজ্জ্বল
মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ প্রবীণের এই শৃঙ্খল। 

মুক্তি আনো,যুদ্ধ ডাকো,
লুপ্ত কর অপমান—
খুনি হও বিশ্বপ্রান্তে শুদ্ধকর কল্যাণ। 
উদার পরান মাটিতে রাখো আঘাত হানো ছুরির,
ভন্ডামি টার কবর দাও হালটা ধরো তরীর।
উদিবে সূর্য ঘুমাবে কালো দীর্ঘায়ু হবে বলবান;
পূজিবে সত্য বীরের মতো সম্বল হবে ভগবান।। 





বেদবতী
ইন্দিরা ব্যানার্জী

ও গো বেদবতী; তুমি কী জানতে না; মেদিনীপুরের টিয়াজুরির মত অজপাড়া গাঁয়ে; বুদ্ধিমতী-মেধাবী-সুন্দরী বামুন স্কুল শিক্ষকের মেয়ে হয়ে; আবৃত্তি করবে, গান গাইবে, দৃঢ় উচ্চারনে মঞ্চ কাঁপাবে; আর কারুর চোখে পড়বে না?

ওগো বেদবতী; তুমি কী জানতে না; বামুনের মেয়ে হয়ে চাঁদ ধরতে চাওয়া অপরাধ;
স্কুল শেষে কলেজ; উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা যাওয়ার স্বপ্ন দেখা আদেতে দুঃস্বপ্ন।

ওগো বেদবতী; তুমি কী জানতে না; তোমার মৃত্যু মেনে নেবে সবাই কিন্তু যদি ছোট জাতের ছেলে "রতন" কে বিয়ে করার ভুল কর তবে সমাজ তোমার পরিবার কে করবে পরিত্যাগ।

তাই নিঁখোজ হবার পাঁচদিন পরে; কেলেঘাই যখন ফিরিয়ে দিল তোমার নিথর দেহ তখন হুঁশ ফিরল সমাজের 
ধর্ষন করে খুন ও হতে পারে তোমার মনে হল দিন পাঁচেক পর।

"বেদবতী" পুরানে রাবন ধ্বংসের জন্য জন্ম নিয়েছিলে অযোনিতে "সীতা" নামে; রাম নারায়নের সীতা লক্ষ্মী হয়ে।

ফেরো আবার, "কেলেঘাই" "বেদবতী" হোক বা না হোক; 
চন্ডী হয়ে ফেরো; মহাকালী ভয়ংঙ্করী প্রলয়িনী বেশে এসো; তান্ডব কর সমাজের বুকে....

রাবন ধ্বংস হলে; সমাজ "দশেরা" করবে উৎযাপন।




শাস্তি 
""""""""
সুদর্শন প্রতিহার 
***************

তোর দাবি ছিলো - একটা শাস্তির 
হেলায় হারানোর শাস্তি 
নিদারুণ তিনটি বছরের শাস্তি 
এমন শাস্তি ; যাতে আর না'করিস এমন I

দেবো ; এমন শাস্তিই দিতে চাই 
তোকে ছোঁব ---
চাওয়া-পাওয়ার চরম উষ্ণতায় 
খুলে দেবো শরীরের আভরণ বস্ত্র 
ছুঁয়ে নেবো নারীত্বের প্রতিটি অঙ্গ 
ভালবাসার লালসায় ---
চেখে নেবো পিপাসার যৌবন সুধা  
পুরুষত্ব ভরে দেবো শরীরের উত্তেজনায় 
হানা দেবে আমার পুরুষত্ব তোর মাতৃ জঠরে 
নিষিক্ত ডিম্বাণু এনে দেবে উত্তরের  সূরি I

তোকে শাস্তি দিলাম ---
শাস্তি দিল আমার পুরুষত্ব 
নারীত্বের শ্রেষ্ঠত্বের একটা উত্তরসূরি 
ভালবাসা বড়ো হবে তোর বুকে - তোর হাতে 
আর তোকে উপহার দেবে একদিন ---
শুনবি সেই হৃদয়ের আকুলি ডাক ..... 'মা' I




শুধু_তোমাকেই 


জ্যোতির্ময় রায় 



কিছু মেঘ সাজিয়ে রাখি এখন ওই চাঁদেও ,
চুমুর উষ্ণতায় বরফ গলে গেলেও "কই সুনামি তো হলো না"।
সুরে সুরে তাল মেলাতে গিয়ে কথা হারায় এখন ।
মৃত মন।মেটাস্টেবেল। বন্ধ তোমার জানালা ।।



রং পরে ।রং তুলির ছোঁয়ায় চোখ মায়াবী ।
পেন্ডেলে পেন্ডেলে আগমনী সাজ সাজ রব।তুমি 
রূপকথার গল্প হয়ে বানভাসি তখনও ।
রোহাঙ্গির আর্তনাদ পৌঁছায় না।ধর্ম আলাদা দেশও।। 


নির্বাক দর্শক বারুদে জ্বালায় সিগারেট কিংবা শীতঘুম ।
আগমনী আসে ।প্রেমিকার ছবিতে উঁকি ঝুঁকি।নিঝুম 
রাত্রির কিছু জোনাকিও ফসফরাসহীন  
আমার আমি ,তোমার তুমিতে এখনও হয়তো রাঙা ।। 





অন্তিম স্বাদ
শংকর ব্রহ্ম


চাঁদ তাকে দেখেও,  ডাকে না কেন আজ?
এই বোধে অহেতুক
         সান্ধ্য মেঘের বুকে, পড়ে যেন বাজ। 
অনেক আকাশ ঘুরে
                মেঘ এসে ঝুঁকে পড়ে
                                      খাদের কিনারে। 
এবার মরণ ঝাঁপ দিলে পরে
           পেয়ে যাবে জীবনের অন্তিম স্বাদ।

আজও আকাশ দেখ 
             থোকা থোকা ঢেকে আছে মেঘে,
এ পাশ ও পাশ থেকে টানের আবেগে
       অন্তিমের দিকে তার যাত্রা হলে শুরু,
বার বার ডাকে তাকে খাঁদ
                  মেঘও দেয় সাড়া,  গুরু গুরু। 

অনেক আকাশ ঘুরে
                 মেঘ এসে দাঁড়িয়েছে 
                                      খাদের কিনারে,
এবার মরণ ঝাঁপ দিলে পরে
           পেয়ে যাবে জীবনের অস্তিম স্বাদ, 
জল তো জীবন
             তাই,  ইশারায় ডাকে তাকে খাদ।




অন্ধকার ঘরের কোন


জয়দীপ রায়

অন্ধকার ঘর থেকে ভেসে এল
একটা কান্নার আওয়াজ-
একটা মেয়ের করুন গলার স্বর
বাইরে কিছু লোকের বলাবলি
ধর্ষিত হয়েছে মেয়েটি,গতকাল রাতে
পাড়া পড়শির কাছে নষ্ট মেয়ে
পরিবারে এক ঘরে; ওর স্থান এখন
অন্ধকার ঘরের একটা কোন...
ওরা দুষ্কৃতিরা!
খেলা করেছে শরীরটা নিয়ে
লেপে দিয়েছে কালির দাগ
বেআব্রু করেছে বিচ রাস্তায়
ক্ষত বিক্ষত দেহটা পরনে এখন
শুধু কাপড়ে নয়
তুলো আর ব্যান্ডেজে...।
প্রত্যক্ষ দর্শীর ঘরের সামনে
নিন্দুকের টহলদারি ...
সাক্ষীরা সব বিক্রি আদালতের বাইরে,
আইনের চোখে কাপর বেঁধে
ঘুরে বেড়ায় সমাজের নেকড়েরা
এটাই কি সমাজের অন্ধবিচার
অন্ধ নিয়ম কানুন
বিচারের নামে চলল প্রহসন
মহামান্যের রায়ে মেয়েটা নষ্ট
ওরা বেকসুর...তবু মেয়েটা কাঁদে না
নির্বাক থাকে চৌহদ্দির মাঝে
বলে না চিৎকার করে,ও নির্দোষ
বেড়িয়ে পড়ে নগ্ন পায়ে,কালিমা ঝেড়ে গরিমার খোঁজে
সামনে যে ওর অজানা গলি,সামনে যৌন পল্লি...।।




কাউকে বলিনি
গোলাম কাদের

প্রেমের গল্পটা কাউকে বলিনি
কথা ছিল-
বুকের মাঝে ফুল দেবে,
ঝরনা থেকে সুগন্ধী বয়ে আনবে ।
রাত শেষে প্রজাপতির
ডানা থেকে ক্লান্তি বয়ে এনে
নিরাপত্তার ঘুম দেবে ।

কাউকে বলিনি এখনো
কেন আমি বারবার বিধ্বস্ত,
কোন মায়াবলে ছিন্ন
শেষ সম্ভাবনা নামের প্রতীক্ষা।
কেউ জানে না,
কেন আমি আত্মা থেকে ছিন্ন,
কাউকে বলিনি এখনো
আমার প্রেমের গল্পটা ।
আমার প্রেমিকা সুদূরে বন্দী!
মুক্তির স্বাদ মৃত।



ভালোবাসার গান // ***********************
 প্রবীরকুমার ভদ্র // ***************** _____________________________
কেমন করে বলব তোমায় প্রিয়
নামটি ধরে ডাকতে পার যদি
আমি তবে হয়ে যাবো ভালোবাসার কল্লোলিনী নদী | |
তরঙ্গ-গান শুনতে শুনতে অনুভবের ।।





পৃথিবীতে শান্তি চাই
        সাজিব চৌধুরী
.............................................
ইতিহাসকে একবার ছুঁতে চাই, মানব সভ্যতার ইতিহাস।
এতো মহাজন এলো গেলো, হলো সভ্যতার চাষাবাদ, জাতিতে জাতিতে হলো সংঘ,
তবু কেনো দানবরা পৃথিবীতে চষে বেড়ায়?
কেনো তারা খামচে ধরে মানবতার ইতিহাস?
কেনো হিরোশিমা নাগাসাকিতে মানবিকতা হারিয়ে যায় পারমাণবিকতার ঝাঁঝালো ঘ্রাণে।
ফোরাত নদীর তীরে বসে মেসোপটেমীয় সভ্যতা কেনো কাঁদে?
আফগানে কেনো চলে মৃত্যুপুরীর গল্প?
রোহিঙ্গারা কেনো দিশেহারা হয়ে স্বদেশে পরবাসী?
ফিলিস্তিনে কেনো উঠে বারবার শোকের মাতম?
গো-হত্যার অপবাদে কেনো রক্তধারা প্রবাহিত বৈদিক সভ্যতায়?
মানুষের রাজ্যে মানুষ হয় বিকিকিনি,
দাসত্বের উর্ণজাল এখনো বিস্তিত মনের কৌটায়।
শুনেছি, আমরা নাকি সভ্য হয়েছি,
এলিয়েনের খোঁজে ঘুরছি এখন মঙল গ্রহে,
তবে একবার ঘুরে দেখো বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকার গহীন অরণ্য,
চেয়ে দেখো অনাহারী শিশুর জীবন্ত কঙ্কাল,
কষ্টে সাদা-কালো মেঘ ভারি হয় নীলাম্বরে,
মানব সভ্যতার ইতিহাস ধর্ষিতার রক্তে আঁকা ছবি,
কৃষ্ণাঙ্গের বিদেহী আত্মার অভিশাপ ইতিহাসের পাতায় পাতায়,
এখনো উঁকি দেয় সাম্রাজ্যবাদের করাল গ্রাস,
মুখোশধারী দানবের প্রেতাত্মারা কেড়ে নিচ্ছে পৃথিবীময় উড়ন্ত শান্তির পায়রা।
তবে কি পৃথিবী হতে চলেছে স্বৈরাচার কিম-এর ক্যাম্প টুয়েন্টি টু?
ধর্ম তো মানবতার কথা বলে,
তবে কেনো পৃথিবীময় ঢুকিয়ে দিচ্ছো নতুন মিথস্ক্রিয়ায় তৈরিকৃত উগ্র ফরমালিন?
কেনো ধর্মের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে ধর্মকে করো অপমান?
এখনো খুঁজে পাই মানুষ হত্যার গুপ্ত আস্তানা,
হিংস্রতা,বর্বরতা, সন্ত্রাসবাদ কেনো ছিনিয়ে নিবে স্রষ্টার সৃষ্টি,
তবে কি তোমরাই স্রষ্টা?
তোমরাই কি মৃত্যুদূত ধ্বংসের গুপ্তসহচর?
আমি মানিনা তোমাদের ওসব নষ্টামি।
ছেড়ে দাও ভণ্ডামির কারসাজি, ছেড়ে দাও বর্বরতার উদাম নৃত্য।
যে নামেই হোক, সমগ্র পৃথিবীর ধর্ম হোক একটাই।
একবার গেয়ে উঠো মানবতার স্লোগান,
নতুন করে সাজাতে চাই ইতিহাসের পাতা,
থাকবে না কালো অক্ষরে লেখা বায়ান্ন একাত্তর পঁচাত্তরের মতো কোন কালো অধ্যায়।
পৃথিবীতে শান্তি চাই,
বন্ধ করো বারুদের উগ্র ঘ্রাণ পৃথিবীর হাওয়ায়।




গ্রহণ

নারায়ণী দত্ত


আজ অন্ধকারে ঢেকেছে ভালবাসা
দানব গ্রাস করেছে হৃদয়
ধারালো অস্ত্র নৃসংশ্রভাবে
বুকের ভেতরটা ছিন্ন ছিন্ন করে দেয়
হৃদয়ের ক্ষত থেকে ঝরে পড়ে রক্ত
রক্ত গোলাপ মন
কাতর হয়ে ওঠে দুঃখ যন্ত্রনায়
ভালোবাসা নিঃস্ব - রিক্ত - অসহায় ।
কে বলে শুধু চাঁদ বা সূর্যেই গ্রহণ লাগে ?
ভালোবাসাতেও গ্রহণ লাগে
ভালোবাসা নীরবে কাঁদে
ভালোবাসা রাত জাগে ।




সমর্পণে এসেছি আজ

তৈমুর খান

তোমার হাতে কি বজ্র আছে  ?
তাই দিয়ো আমার মাথায়   ।
ভিজছি একা এই মাঠে
ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢাকা   ।

সমর্পণ লিখে দিয়েছি
আলোহীন  , গৃহহীন , রাস্তাহীন পৃথিবীতে
তোমার মেঘ  , তোমার বজ্র , তোমার আকাশ
যা ইচ্ছে হোক , যা ইচ্ছে হোক...

প্রেমের আয়নায় তোমারই মুখ
আমিই বা কে  ?   আমিই বা কে  ?
মিলিয়ে যাচ্ছে আলোর বিন্দু
সিন্ধু হচ্ছে মাতাল ঢেউয়ে



তরণি নেই , ভিজছি একা
সমর্পণে এসেছি আজ....







ছায়া শরীর
<<<<<<<<<<<<
দোলা ঘোষাল
<<<<<<<<<<<<<
ছায়া শরীর ভেসে বেড়ায়
তার গায়ে বেয়ে ওঠা
শিকড়-বাকড়েরাও ভাসে
আলোকরশ্মির বিচ্ছুরনে
      ঝলকে ওঠে
দিগদিগান্তরে
শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে
এই ছায়া শরীরের
    আনাগোনা
বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়
স্পর্শ করে যায় কিছু শিহরণ!
ভালবাস বললেই কি আর ভালবাসা যায়!
ঘুমের ভেতরে নিঃসাড়ে বয়ে বেড়ানো
স্বপ্নগুলো তিল-তিল করে মরে যায়
বীণার তারে ঝংকার দিয়ে
জেগে ওঠেন সরস্বতী!



ছায়া শরীর ভেসে বেড়ায়
তার গায়ে ওঠা
শিকড়-বাকড়েরাও ভাসে
ভেসে চলে অনন্তে!




কখন কে জানে

          সৈয়দ আসরার আহমদ

কখন কে জানে
আনমনে
সংগোপনে
তুমি আসো স্বপনে
দোলা দিয়ে যাও মনে!

দিন কেটে যায় চলে,
রাত যাবো না বলে!
আকাশে চাঁদ দোলে!
তারারা কথা বলে!
নৌকো ছুটে চলে
দক্ষিণা হাওয়া লাগে পালে,
তুমি না এলে,
ভাল না বাসলে,
তুমি না হাসলে,
থাকি আমি দোলাচলে,
এই বুঝি তুমি এলে!

কে জানে কখন,
আসবে সেই শুভক্ষণ!
তুমি আসবে যখন,
ভালবাসবে তখন!




চক্র


-দিব্যায়ন সরকার


অর্কিডের গায়ে পচন ধরেছে,

লাল-নীল-হলুদ অর্কিডের

ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে সারা শরীর -

মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছে।


সৌন্দর্যের ছটা যতদিন ছিল

' বাগানের শিরোমণি ', ' বাড়ির  অহংকার '

কত উপাধি ছিল তার !

ভীষণ লজ্জা পেত,  আবার

অহংবোধ ছিল বেশ।


আজ সকালে কারা যেন

ফ্যাকাসে অর্কিডগুলিকে,

পরম যত্নে রেখে গেছে -

ডাস্টবিনে!




নো বেল
      গবেষণা



 অর্জুন 

অঙ্ক বলে হিসাব করো ,
বিজ্ঞান ;বিশেষ জ্ঞান নিয়ে চলে
ভূগোল শেখায় কোথায় কি ,
পুরোনো গুলো ইতিহাসের থেকে জেনো ।।
ছেলেটা ছোট , পেন্সিল চিবিয়ে খায়
দাঁত নেই তাই চুষছে -- বিশেষ ক্ষেত্রে অসভ্য বলত ।।
মাঠে মাঠে ওরাও গরু চরায়,এগারো জন পিছনে একটা
হিসাব করে , জায়গা বুঝে ।।  দূর থেকে ভেসে আসে
গবেষণা = গো অন্বেষণ = গরু খোঁজা ।।
কত দিন ধরে চলছে একই কাজ !!
মাস্টার , ওদের গরু বল যে কেলাসে ;
নোবেল পাবে না কেন ওরা !!





অচল

       দুলাল প্রামানিক

স্থবিরতা গ্রাস করেছে
অচল হয়েছে, চলছে না
পৃথিবী তো আপন গতিতে সচল।
দৃষ্টি আঁটকে আছে
চোখ ছানাবড়া
বিদঘুটে সব স্বপ্নরা -
ভেসে বেড়ায় অজান্তে
নাম না জানা গল্পকথা অচল।
বেতার দূরদর্শন সদাজাগ্রত,
কাউকে অচল হতে দেয় না,
অচল মানবিক মূল্যবোধ।
কচিকাঁচারা ছুটছে
তাদের গতি থমকে গেলে,
বিশ্ব - সংসার অচল হলে --
তারপর? তারপর?  তারপর?
পৃথিবীটায় একদিন হবে অচল।
রচিত হবে স্থবিরতার গান।


---------------------------------------------------------------------------


গল্প ও অনুগল্প


   
 ছুঁয়ে-দে দেবী

শ্যামাপদ মালাকার

তখনো পাড়ার হাবু-কাকা ভোরের কাশিটা ঝেড়ে কাশেনি, তাই বিনদ-দাও হাঁড়িভর্তি
গাড়ীর জোঁয়াল গরুর কাঁধে দেওয়ার সাহস এখন দেখায় নি।
সবেমাত্র পাড়ার ভাদীখুড়ী ভোরের উনোন ধরাবে বলে বিছানায় গা'মোচড় দিয়েছে।

আর রাত নেই। রাত শেষে জগৎ যে ভোরে প্রবেশ করেছে তা এক প্রকার নিশ্চিৎ।
তবে সব ভোরকে তো আর ভোর বলা যায় না, কিছু ভোর আছে-- যে ভোরে জাগলে গা
ছম্-ছম্ করে, যে ভোরে জাগলে গা' ছ্যাক্-ছ্যাক্ করে এটা সেই ভোর।
গরমে এমনেতেই ঘুম হয়নি, তারপরে গ্রীষ্মকাল-- ফেসবুক ঘেঁটে ঘেঁটে রাতের
বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি, তাই বলে যে খুব বলমান বা গর্ব বোধ করছি তা-না,
দেহটা টলমল করছে, গরমে যে চ্যাট-চ্যেটে ভাবটা ছিল এখন আর তা নেই।

হিম্ হিম্ মন্দপবনের ভিতর দিয়ে কে যেন তুলার ন্যায় ঘুম্ ঘুম্ কোমল শিকড়
সর্বাঙ্গে বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছ।
ভাবলাম, বিধাতাপুরুষের দান, অবহেলা করলে অমান্য করা হবে। তাই দান গ্রহণ
করে পুনরায় নিজেকে বিছানায় নিক্ষিপ্ত করে দিলাম।
শুতে শুতে চোখটা গেল লেগে।
সহসা স্বপ্নে দেখছি-- কালের স্রোত নিংড়ে কারা যেন বলে যাচ্ছে--"ছুঁয়ে দে
ছুঁয়ে দে, যাকে পাবি তাকেই ছুঁয়ে দে।"
কলির জীবকে উদ্ধারের জন্য মহাপ্রভূর পিছনে যেমন অগণিত মানুষের ঢল, তেমনি
--খোলকরতাল লয়ে ঐ দেবী দুটির পিছনেও সহস্র ভক্তবৃন্দের ঢলছিল। এই
দেখেশুনে আমিও অস্হির হয়ে উঠলাম, এবং উনাদের পিছনে ছুটতে ছুটতে সুরে সুর
মিলিয়ে উচ্চৈস্বরে বলে উঠলাম--- ছুঁয়ে দে ছুঁয়ে দে, বড় লোকের মেয়েগুলোকে
ছুঁয়ে দে,-- কোনো গল্প দিয়ে নয়-- কোনো লালসার বিষদন্ত দিয়ে নয়, এক অাকাশ
হৃদয় দিয়ে ছুঁয়ে দে!।
হঠাৎ কপাট খোলার শব্দে ঘুমটা গেল ভেঙ্গে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি-- প্রায়
সাড়ে-আট'টা। মা'য়ের বকুনি খেতে হবে এই ভেবে তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়ে
বারান্দাতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখি-- ছলছল চোখে আঙিনার মাঝে মা'যেন
বর্ষণোন্মুখ মেঘের ন্যায়-- আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ
হো--হো করে কেঁদে উঠল।

সে কি কান্না-- ললাটে হাত রেখে বিলাপ করে কাঁদতে লাগল এই বলে---"কোন
হতভাগী আমার ছেলাটাকে ছুঁয়ে দিয়েছে গো,--ও-- ও
আমার ছেলাটাকে কে পাগল করে দিল গো--ও--ও- -।"
আমি সহজেই বুঝতে পারলাম-- মা'য়ের শব্দ-বিলাপের সাথে-- আমার স্বপ্নে দেখা
"ছুঁয় দে দেবীর মিল রয়েছে।
মনে হয় আমার স্বপ্নের চিৎকার মা' পরিষ্কার শুনতে পেয়েছে। যাক সে কথা,
মা'য়ের কান্না যেন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে লাগল।
ধীরে ধীরে পাড়ার মাসী-পিসিরা পরিষ্কার তকতকে উঠোনে ভীড় জমাতে লাগল।
প্রথমটাতে ওরা কিছুই অনুমান করতে না পেরে হতভম্ব হয়ে-- মা'য়ের ও আমার
দিকে তাকাতে লাগল।
পরিস্হিতি ক্রমাগত ঘোরাল হতে লাগল।
তাই আর বিলম্ব না করে আমাকেই হাল ধরতে হল।
আগতাদের বোঝাবার চেষ্টা করলাম এই বলে-- আমি নাকি স্বপ্নে কাকে কি বলেছি,
তাই শুনে- - আমার কথা শেষ হতে না হতেই
মা'যেন রণমূর্ত্তি ধারণ করে আমার দিকে দু'পা এগিয়ে বলল ----"খালভরা, কোন
মেয়াটা তোখে ছুঁয়েছে বল্ আমি তার সব্বনাশ করে আসবো--গো --ও-- ও- আমি তাখে
জমের হাতে দেবো, বাব্বা আমার এতোটুকু ছেলাকে ছুঁয়া! -- - আজকাল আবার
ছুঁয়া-ছুঁয়ি খেলা কি বাবা- ও-- হো-- হো--, হে ভগবান!  এতুমি কি কল্লে গো-
ও-ও-!"।
মায়ের কান্না-বিজড়িত কণ্ঠে এই বিলাপ শোনার পর, জানতে কারু বাকি রইল
না,--নিশ্চয় আমি কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েগেছি।
আমি মা'কে বোঝাতে লাগলাম-- মা' তুমি অাগে শান্ত হও, আমাকে কেউ ছুয়েনি
তুমি বিশ্বাস করো- -,। মা' পুনরায় দু'পা এগিয়ে দু'চোখ রাঙিয়ে আবার চার
পা' পিছনে পিছিয়ে পাড়ার ভাদী-খুড়ীকে যাচায় করে বলতে লাগল ----" বল্ ভাদী
তুই-এই বল্, ইটা ভোরের সপুন কখনও কি মিছা হয়!?।।





প্রাপ্তি
"""""""""
সুদর্শন প্রতিহার
****************

     প্রতিদিনের মতোই সৃজন আর আমি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম I আজকের বিষয় ছিলো দেশের সৈনিক I তাদের বীরত্ব ,সাহসিকতা ,তাদের ভূমিকা সব বিষয়েই আমরা একমত ছিলাম I শুধু তার বিনিময়ে তাদের প্রাপ্তিটা নিয়ে আমরা দ্বিমত হলাম I
     সৃজনের মতে ওদের অনেক বেশি বেশি সুবিধা দেওয়া হয় I ও আমাকে একটি গল্প শোনালো - এক সৈনিক ৪০ বছর বয়সে ফৌজের চাকরী ছেড়ে এসে ব্যাঙ্কের কাজে নিযুক্ত হলেন I এখন ওনার ওদিকের পেনশন আবার এদিকের মাসিক বেতন সবে মিলিয়ে দারুন I উনি ৫৯ বছর বয়সে মারা গেলেন ,তাই ওনার পেনশনের এক অংশ ওনার স্ত্রীর নামে আর ওনার চাকরী ওনার ছেলের নামে হয়েগেলো I ওনাদের চাকরীরত অবস্থায় ওনাদের এতো সুবিধা দেওয়া হয় ,তবে রিটায়ারমেন্টের পরেও এতো সুবিধা দেওয়ার কি মানে হয় ...???
    আমিও প্রত্যুত্তরে সৃজনকে একটা কাহিনী শোনালাম - বাবা ফৌজে গিয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন কার্গিলের যুদ্ধে I ছোট থেকে ছেলে জেদ ধরে বসেছিলো সেও ফৌজের চাকরী করবে I চাকরী পেলো ট্রেনিং শেষ করে প্রথম পোস্টিং জম্মু I একমাস পর ত্রিরঙ্গা মোড়া কফিন বন্দি সেই ছেলের দেহ তার বিধবা মায়ের কাছে ফিরে এলো I স্বামীর মৃত্যুর টাকা আর ছেলের মৃত্যুর টাকা ওনার মোটা প্রাপ্তি I কিন্তু জীবনের প্রাপ্তির খাতায় দেশের নামে শুধুই বিয়োগ আর বিয়োগের ...প্রাপ্তি ....!!!





কাল রাত্রি
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
                   দোলা ঘোষাল
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
             আজ উপল আর চন্দ্রিমার বিয়ের সাতদিন পূর্ণ হলো।উপল ঠিক করেছে আজ পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজাবে।যদি ফুলশয্যাটা হয় আজ
হ্যাঁ উপল-চন্দ্রিমাট ঠিকঠাক ফুলশয্যা এখনও হয় নি।বৌভাতের দিন উপল কোনও জোর করে নি চন্দ্রিমাকে।কাছে টেনেছিল চন্দ্রিমাও স্বেচ্ছায় সমর্পন করেছিল নিজেকে।কিন্তু ভয় তখনও কাটে নি চন্দ্রিমার।উপল ধীরে ধীরে নিরাবরন করেছিল চন্দ্রিমাকে নিজেও খোলস ছেড়েছিল।তারপর আলগা আদর সোহাগ চলেছিল প্রায় সারারাত।কিন্তু কিছুতেই দুজন দুজনের কাছে পুরোপুরি সমর্পিত হতে পারে নি।তার কারণ চন্দ্রিমা।চন্দ্রিমা উপলের এতো ভালবাসা এতো বিশ্বাস-ভরসার পরেও মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছিল।
উপল কিছুক্ষণ পরে চন্দ্রিমাকে জিজ্ঞেস করলো…..
“চন্দ্রা তুমি কি এখনও আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না।আজকের আগে আমি তোমাকে কোনওদিন স্পর্শ করেছি তুমি বলো।”
চন্দ্রিমা মাথা নীচু করে চুপ করেছিল।তারপরে আসতে আসতে উপলের বুকে মাথা রাখল।
    চন্দ্রিমার মনে হচ্ছিল এ যেন তার ‘স্বপ্নের রাত’।এ রাত উপল না থাকলে তার জীবনে কোনওদিনই আসত না।জীবনে যে স্বপ্নভঙ্গের রাত এসেছিল এসেছিল যন্ত্রনার রাত মনে হয়েছিল জীবনের শেষ দিন সেটাই।সরে গিয়েছিল নয় বছরের গড়ে ওঠা ভালবাসা।শুধু উপল হ্যাঁ উপল ছিল বলেই এই রাতটা এসেছে তার জীবনে।
           চন্দ্রিমা ধীরে ধীরে বললো……..
    “সত্যিই তুমি আমায় এতোটাই ভালবাস কিন্তু আমি যে ‘নষ্ট মেয়ে'দেখো না আমার গায়ে কত আঁচড়ানো-কামড়ানোর দাগ।”
“চন্দ্রা বনের হিংস্র পশু যদি মানুষকে আঁচড়ে-কামড়ে দেয় সে দোষ কি মানুষের।তার জন্যে তো চিকিৎসা রয়েছে।তার চিকিৎসা তো আমরা করিয়েছি।আর পশুদের শাস্তিও হয়েছে।তাহলে তুমি এসব কেন ভাবছ।চলো এসো শুয়ে পড়ো এবার।দেখো রাত প্রায় শেষ হতে চলল।”
তারপর দুজন দুজনের আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে পরলো।
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
          আজ এই সাতদিনে উপল-চন্দ্রিমা অনেক কাছাকাছি এসেছে। অনেক বিনিদ্ররজনী কেটেছে ওদের হাতের ওপর হাত রেখে চোখে চোখ রেখে।তবু ওদের ফুলশয্যাটা এখনও হয়ে ওঠে নি।
      চন্দ্রিমা বাথরুম থেকে বেড়োচ্ছিল গায়ে একটা বড় টাওয়াল জড়ানো।পিঠের ওপর ভিজে চুলগুলো অবিনস্ত্য অবস্থায় পরে আছে।উপল ঘোর লাগা চোখে চন্দ্রিমার পথ আটকাল।
    “কি হলো কি ঘরে যেতে দাও”
    “যদি এখন না ছাড়ি”
   “পাগল নাকি এই সক্কালবেলা হচ্ছেটা কি”
   “উঁহু আজ আর ছাড়ছি না আজ এখনই ফুলশয্যাটা হয়ে যাক্”
     “যাহ্ কি যে বলো”
   উপল দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে গেলো চন্দ্রিমাকে।চন্দ্রিমা এক ছুট্টে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।উপল হাসতে হাসতে বলল…….
“এটা কিন্তু রাতের জন্যে তোলা থাকল আজ কিন্তু সত্যি সত্যিই ফুলশয্যাটা হচ্ছে।মনে থাকে যেনো”
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
সেদিন চন্দ্রিমার কলেজের রি-ইউনিয়ন ছিলো।ভেবেছিলো সন্ধ্যার আগেই ফিরবে।কিন্তু সবার সঙ্গে আড্ডা মেরে বেড়োতে বেড়োতে ছ’টা বেজে গেলো।চন্দ্রিমা ভেবেছিলো একটা ক্যাব ডেকে নেবে।এমন সময় চন্দন-অয়ন-সৌমিত্র-পারিজাত আরও অনেকে এসে পরল গাড়ি নিয়ে।কটা নয় দুটো গাড়িতে দুটো দল।দুটো দূলে পাঁচজন করে।দুজনরাই চন্দ্রিমাকে ডাকাডাকি করতে লাগল গাড়িতে যাবার জন্যে।চন্দ্রিমা একটু ভয় পেলো কারণ যতই চেনা হোক্ সামান্য হলেও ওরা নেশা করেছিল।চন্দন-সৌমিত্র হাত ধরে টেনে প্রায় জোর করে গাড়িতে তুলল।
       “আরে চল্ না এক্ষুণি পৌঁছে দিচ্ছি”
        কিন্তু গাড়িতে ওঠার পরে দেখল ওরা নীচু স্বরে কি সব কথা বলছে।তখন চন্দ্রিমা কল্পনা করে নি তার চিরপরিচিত ‘বন্ধু’নামক মুখগুলো এইভাবে বদলে যেতে পারে।খানিকক্ষণ পরেই চন্দ্রিমা বুঝতে পারল গাড়ি অন্য রাস্তায় যাচ্ছে।চন্দ্রিমা থাকে বেহালায় গাড়ি চলেছে যাদবপুরের রাস্তায়।চন্দ্রিমা বলল…….
   “কি রে তোরা কোথায় যাচ্ছিস্ আমি তো বাড়ি যাব।রাত হয়ে যাচ্ছে।বাড়িতে চিন্তা করবে।”
      “আরে দাঁড়া না আমার নতুন ফ্ল্যাটটাএকবার দেখে যা।পাঁচ মিনিটের ব্যাপার।”
চন্দন বলল।
কিন্তু সেই পাঁচ মিনিট গিয়ে দাঁড়াল চন্দ্রিমার সারা জীবনের যন্ত্রনায়।ফ্ল্যাটে ঢোকার পরে-পরেই ওরা আবার ড্রিংকস্ নিয়ে বসে।তখনই চন্দ্রিমা বেড়িয়া আসতে চেয়েছিল।ওরা বাধা দেয়।চন্দ্রিমা যখন দেখল ওরা প্রায় সবাই নেশায় চুর তখন নিঃশব্দে বেড়িয়ে যাচ্ছিল।তখনই ওরা দল বেঁধে ওকে ঘিরে ধরে।চন্দ্রিমার তখন দিশাহারা অবস্থা।
       সৌমিত্র জড়ানো গলায় বলল…….
       “কোথায় যাচ্ছিস্ আজ তো সবাই মিলে আনন্দ করার দিন একটু আনন্দ করবি না।”
         “দেখ রাস্তা ছাড়্ বলছি আমি বাড়ি যাব”
         চন্দ্রিমাকে আর একটা শব্দও করতে দেয়,নি ওরা।পেছন থেকে মুখ বন্ধ করে চ্যাংদোলা করে বিছানায় নিয়ে একমিনিটেই নিরাবরন করে দিয়েছিল।চন্দ্রিমা লজ্জায়-ভয়ে নির্বাক।কি করবে বুঝতে পারছিল না।তারপর শুরু হলো পাশবিক অত্যাচার আর যন্ত্রনা।দশটা পশু ওর শরীরের ওপর উঠেছে আর নেমেছে।এমন কি এক-একজন দুবার করেও।চন্দ্রিমা চিৎকার করেছে কেঁদেছে হাতে-পায়ে ধরেছে তবু ওদের কোনও মায়াদয়া হয় নি।যখন ওদের পাশবিক খিদে মিটলো।তখন রাত বারোটা-একটা হবে।তখন চন্দ্রিমা যন্ত্রনায় নীল হয়ে গেছে সম্পূর্ণভাবে অজ্ঞান।তখন ওদের
খেয়াল হয়েছে চন্দ্রিমাকে নিয়ে কি করবে।পারিজাতের বুদ্ধি মতন চন্দ্রিমাকে কোনওরকম জামা-কাপড় পরিয়ে সব কিছু দিয়ে গঙ্গার ধারের একটা বেঞ্চিতে শুয়েই দিয়ে ওরা গাড়ি নিয়ে পালালো।কিন্তু বিধি বাম ছিলো।ওরা পালানোর সময় উপল দেখে ফেলে।ওরা ঠিক যে জায়গা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল উপল সেখানেই চন্দ্রিমাকে পায় অজ্ঞান অবস্থায়।উপল ওদের গাড়িটা তাড়া করেছিল।ধরতে পারে নি।
           উপল সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রিমাকে তুলে নিয়ে গাড়িতে শুইয়ে দিলো।ননবেঙ্গলী ট্যাক্সি ড্রাইভার কাঁই কাঁই করতে লাগল।
      “বাবুজি কিঁউ ঝামেলে মে ফাঁস রাহে হ্যায় কেয়া বাত হ্যায় মালুম নেহি।কাঁহাকি লেডকি হ্যায় কাঁহা সে আয়ি হ্যায়”
      “তুম চুপ রহো জি তুম কো ক্যায়া হ্যায়।তুম মুঝকো মেরে ঘর পৌঁছা দো বাস্ তুমহারা তো ছুট্টি হো যায়েগা”
       “জি বাবুজি আপ যো আচ্ছা সমঝে।”
        কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি পৌঁছে গেলো উপলের ফ্ল্যাটে।উপলের ফ্ল্যাটও যাদবপুরে।
         উপল চন্দ্রিমাকে বিছানায় শোয়ালো।চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিল।কিন্তু জ্ঞান আর ফেরে না।কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।এইসব ভাবতে ভাবতে কখন আধঘন্টা কেটে গেছে খেয়াল করে নি।হঠাৎ চন্দ্রিমার গোঙানির শব্দে উপলের হুঁশ ফিরল।উপল ছুটে গিয়ে দু-তিনবার ডাকল।হঠাৎ চন্দ্রিমা উঠে বসল।চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।উপলকে দেখে ভয় পেয়েছে।
“ছেড়ে দে ছেড়ে দে Plzz ছেড়ে দে তোরা আমায়।”
“দেখুন আপনি ভয় পাবেন না এখামে আমি ছাড়া কেউ নেই।কি নাম আপনার কোথায় থাকেন।”
     তাও চন্দ্রিমা ভয়ে গুটিয়ে রয়েছে।ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক চাওনি।চন্দ্রিমা হঠাৎ ওয়াক পাড়তে লাগল।উপল প্রায় জোর করে টানতে টানতে বাথরুমের বেসিনের কাছে নিয়ে গেলো।বেশ খানিকটা বমি করলো।ওরা ওই অবস্থার মধ্যে চন্দ্রিমাকে জোর করে মদ খাইয়েছিল এটা তারই ফল।উপল নিজেই চোখ-মুখ ধুইয়ে পরিষ্কার করে ঘরে নিয়ে এসে শুইয়ে দিল।এবার ভয়টা সামান্য কাটলেও পুরোপুরি কাটলো না।
       “আপনি এখানে নিশ্চিন্তে ঘুমোন আমি বাইরে আছি।দরকার হলে ডাকবেন।উপল বেসিন পরিষ্কার করে স্নান করে চেঞ্জ করে এককাপ কড়া কফি আর সিগারেট নিয়ে ব্যালকানিতে বসল।
        যাদবপুরে উপলের এক কামড়ার ফ্ল্যাট।সে জার্নালিস্ট।মা-বাবা থাকেন ব্যারাকপুরে।উপলরা দুই ভাই।ছোটভাই সদ্য মাস্টার্স করে PHD করছে।উপলের বয়স বছর ত্রিশ সুঠাম চেহারা কিন্তু ব্ল্যাকিশ্।কিন্তু অসম্ভব সুন্দর দেখতে।রাস্তায় বেড়োলে মেয়েরা হাঁ করে চেয়ে থাকে।ভয়ে ব্যালকানিতেও বসে না।বসলেই আশেপাশের বাড়ির মেয়েরা উঁকি দেয়।অনেকেই তার জীবনে উঁকি দেয় আসতে চেষ্টা করে।কিন্তু উপল তার মনের মতন মেয়ে এখনও পায় নি।
       ব্যালকানিতে বসে বসেই কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলো উপল।ঘরের ভেতর থেকে চন্দ্রিমার গোঙ্গানির শব্দে উপলের ঘুম ভাঙ্গল।চোখে-মুখে জল দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে চন্দ্রিমা জড়সড় হয়ে শুয়ে-শুয়ে ঠকঠক্ করে কাঁপছে।উপল গায়ে হাত দিয়ে দেখল গায়ে প্রবল জ্বর।কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না প্রথমে।তারপরেই উপল ফোন করলো রিমি আর অনুসূয়াকে।দুজনকেই ডেকে পাঠাল।দুজনেই কাছাকাছি থাকে।উপলের অফিস কলিগ ও ভাল বন্ধুও বটে।উপল পুরো ঘটনা খুলে বললো।রিমি উপলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছুটল চন্দ্রিমার ড্রেস ও অন্যান্য জিনিস কিনতে।অনুসূয়া তার মামাতো দাদাকে ফোন করলো।অনুসূয়ার দাদা ডাক্তার।অনুসূয়ার দাদা পরীক্ষা করে হসপিটালে ভর্তি করার পরমর্শ দিলো।কিন্তু উপল রাজি হলো না।
      “আপনি বুঝতে পারছেন না সন্দীপদা এটা একটা মেয়ের সম্মানের প্রশ্ন।”
       “সেটা তো বুঝলাম কিন্তু এতো বড় অপরাধটা কি আপনি চাপা দিয়ে রাখবেন।”
       “দেখুন ওনার আগে জ্ঞান ফিরুক তারপর সেটা উনি যা ভাল বুঝবেন করবেন।”
       “Ok আপনি ভাববেন না আমার নার্সিংহোমে ওনাকে এ্যাডমিট করাচ্ছি।কাকপক্ষীতেও টের পাবে না।নিশ্চিন্ত থাকুন।আপনি ওঁর ফোন থেকে নাম্বার বের করে ওনার বাড়িতে যোগাযোগ করুন।”
      “কিন্তু ওনার মোবাইল তো কাল থেকে অফ্।বোধহয় চার্জও নেই।”
       “কোনও অসুবিধা নেই নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে মোবাইল চার্জে বসিয়ে দিন।”
        এরপরে দ্রুতবেগে চন্দ্রিমাকে নার্সিংহোমে এ্যাডমিট করনো হলোউপল চন্দ্রিমার বাড়িতে খবর দিলো।সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রিমার মা-বাবা দুই ভাই-বোনকে নিয়ে উপস্থিত হলো।চন্দ্রিমার মা তো উপলের হাত ধরে কাঁদতে শুরু করলেন।
       “কি হলো বাবা।আমার মেয়েটার এখন কি হবে বলো তো।”
       “মাসিমা আমি আছি তো।দেখুন না কি হয়।”
         উপল দিন-রাত পরে থাকল নার্সিংহোমে।দিন সাতেকবাদে চন্দ্রিমা সুস্থ হয়ে যখন বাড়ি ফিরছে তখন উপল আর চন্দ্রিমা দুজনের চোখেই জল।
         “আপনার সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে।”
           “তুমি কবে দেখতে চাও আমায় বলো”
           চন্দ্রিমা মুখ নীচু করে চুপ করে রইল।  
            “কি হলো লজ্জা করো না বলো Plzzz”
            “আপনি যখন আসবেন দেখা করতে”
            উপল এগিয়ে এসে চন্দ্রিমার হাত ধরল।
          “আজ আমার একটা News Cover করার আছে।বিকেল চারটের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।তারপরে যাচ্ছি তোমার কাছে।কি খুশি তো।”
          “চন্দ্রিমা হাসল।”
           “বাব্বা এতোদিনে তাহলে জ্যোৎস্না ফুটল অমাবস্যা কেটে গিয়ে।”
            “না কিছু নয়।চলো এবার বাড়ি ফিরে বিশ্রাম করবে।তারপরে অনেক কাজ আছে।”
             “কি কাজ”
               “সন্ধ্যাবেলা গিয়ে বলব।এখন বাড়ি ফিরবে চলো।”
              সন্ধ্যাবেলা উপলের বাবা-মা’র কথা হলো।প্রথমে তো তাঁরা পুলিশে যেতেই রাজি হচ্ছিলেন না।উপল অনেক কষ্টে রাজি করালো।
       “আপনারা ওই ক্রিমওনালগুলোকে ছেড়ে দেবেন।যারা আপনার মেয়ের সর্বনাশ করেছে।”
      ইতিমধ্যে একটু আগে নির্মল চন্দ্রিমা boy frnd এসে নয় বছরের সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে চলে গেছে।সেখানে উপলও উপস্থিত ছিলো।
    চন্দ্রিমা মা বললেন
    “দেখলে তো বাবা কি হলো।এরপর তো চারিদিকে ঢিঢি পরে যাবে।ওর তো বিয়ে দেওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে।তখন কি করবো বলো তো।”
    “যদি বলি ওর বিয়ে নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না সে ভাবনা আমার।আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন।”
    “কি বলছ কে করবে ওকে বিয়ে”
     “যদি বলি আমি করব ওকে বিয়ে”
       এবারে চন্দ্রিমার মা কেঁদে ফেললেন উপলের হাত ধরে…..
        “কি বলছ বাবা।যা বলছ ভেবে বলছ তো।পরে আবার……”
        “না মসিমা যা বলছি ভেবেই বলছি”
         এরপরে পুলিশে এফআইআর করা হলো।আর সাক্ষী-সাবুদও জোগাড় হলো।সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিললো চন্দ্রিমার পরা সেদিনের ড্রেসে।চন্দনের এনগেজমেন্ট রিঙ্গ-আংটি-সৌমিত্র্যর গলার চেনের টুকরো আর চয়নের জামার বোতাম।কেস খুব দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি হলো।একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই রায় বেড়োলো।দশজনের এক সঙ্গে যাবব্বজীবন কারাদণ্ড হলো।তারপরেও বিচারক জিগ্যেস করেছিলেন চন্দ্রিমাকে….
       “আপনি আসামীদের কি শাস্তি দিতে চান”
        চন্দ্রিমা ফুঁসে উঠে বলেছিলো……..
       “যারা বিনা দোষে অকারণে শুধু শারীরিক ক্ষুধা নিবারনের জন্যে তাদের ছোটবেলার বন্ধুকে এইভাবে পাশবিক। অত্যাচার করে তাদের নপুংশক করে দেওয়া উচিত।দশজনের বাবা-মা সমেত ছেলেরাও চমকে উঠেছিল।বিচারক তাতেই সায় দিয়েছিলেন।কিন্তু দশজনের বাবা-মাই করজোড়ে ভিক্ষা চেয়েছিলো এই রায় ফিরিয়ে নেবার জন্যে।চন্দ্রিমা শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ক্ষমা করে দেয়।
           কিন্তু এখানেই শেষ নয় চন্দ্রিমার লড়াই।আসল লড়াইটা তার শুরু হয় এবার।আঘাতটা আগেই এসেছিলো নির্মলের কাছ থেকে।সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকে দুজনের বন্ধুত্ব তারপরে প্রেম।ঘটনাটা শোনামাত্রই নির্মল সম্পর্ক শেষ করে দেয় চন্দ্রিমার সঙ্গে।তাকে ডাকা হয়েছিল আলাদা করে কথা বলার জন্যে।সে চন্দ্রিমা আর উপল ছিল সেই বন্ধ ঘরে।চন্দ্রিমার মা-বাবা থাকতে চেয়েছিলেন।উপল বারণ করেছিল।
     নির্মলের বক্তব্য………….
     “অন্যের ব্যবহার করা জিনিস আমি পছন্দ করি না।”
     “কি বলছেন আপনি জানেন চন্দ্রিমা কি কোনও ফার্নিচার যে আপনি ফেলে দেবেন।আর বনের পশুরা যদি আঁচড়-কামড়ে দেয় তাতে ওনার দোষ কোথায়।”

    “নিশ্চয় দোষ আছে ওর সায় না থাকলে এ ঘটনা ঘটতেই পারত না।অতোগুলো ছেলের সঙ্গে ও কেন গিয়েছিল একা একটা ফ্ল্যাটে।ও কি জানতো না কি ঘটতে পারে।”
      “কি বলছ ওরা আমার তোমার দুজনেরই ছোটবেলার বন্ধু।ওদের আমি বিশ্বাস করেছিলাম সেটাই কি আমার দোষ ছিল।”
      “ওসব আমি শুনতে চাই না।এই রিলেশাইন আমি কনটিনিউ করতে পারব না।I am extrimly Sorry for that  & good bye forever.”
     শোনা মাত্র চন্দ্রিমা মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল।উপল ধরে শুইয়ে দেয় সঙ্গে সঙ্গে।
            “আপনি যান নির্মলবাবু।আস একটা কথা বলে রাখি আপনি যেমন চন্দ্রাকে রিফিউজ করলেন আপনাকেও কেউ একজন রিফিউজ করবপ।কথাটা মনে রাখবেন।”
       “যান যান অতোই যদি দরদ থাকে আপনিই বিয়ে করুন না চন্দ্রিমাকে।পারবেন ওই নষ্ট মেয়েছেলেকে বিয়ে করতে।”
       “তাই করবো আপনি শুধু দেখুন।”
         এই ঘটনার পরে কেস-খামারি শেষ হয়েছে।কিন্তএ তারপরেই শুরু হয়েছে আসল লড়াই।চন্দ্রিমা একটা ছোটখাটো চাকরী করে।অফিসে জয়েন করার পরেই শুরু হলো ঝামেলা।সবাই যেনো অন্য চোখে দেখছে।চারিদিকপ ফিসফিস্-গুজগুজ চলছে।অফিস-কলিগদের লোলুপ দৃষ্টি।যেহেতু এই মেয়ে ধর্ষিতা সেইহেতু এই মেয়ে সবারই ভোগ্য পণ্য।বেস্ট ফ্রেণ্ড সঞ্চিতা তো বলেই দিলো……..
      “তুই আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখিস না।বাড়িতে কেউ পছন্দ করছে না।”
        আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গেলে সবাই এড়িয়ে যায়।
         চন্দ্রিমা এবার আসতে-আসতে ভেঙ্গে পরলো।নিজেকে ঘর বন্দী করে ফেলো।উপল খবর পেয়ে ছুটে এলো।কিন্তু কিছুতেই চন্দ্রিমাকে বোঝাতে পারল না।শেষ পর্যন্ত উপল অন্য ব্যবস্থা নিলো।প্রথমে খবর দিলো USA তে থাকা বন্ধু দীপককে।দুজনে আলোচনা করে নেটে ঘেঁটে Job Select করলো।ঠিক হলো চন্দ্রিমা আপাততঃ USA তেই থাকবে যতদিন না উপল আর চন্দ্রিমার বিয়ে ঠিক হয়।
       চন্দ্রিমা বিদেশে পাড়ি দিলো।
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
         এর প্রায় দেড়বছর পরের কথা।এই দেড় বছরে উপল-চন্দ্রিমা মনের দিক থেকে অনেক কাছাকাছি এসেছে।উপলদের বাড়ি থেকে যথারীতি এই বিয়ে মেনে নেয় নি।উপল বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে।উপলের ভাই ইন্দ্রজিৎও বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে।ভাবী বৌদি এখন তার সবচেয়ে বড় বন্ধু।নেটে তাদের খুনসুটি-ইয়ার্কি সব চলে।
         চন্দ্রিমা ফিরল জানুয়ারীর মাঝামাঝি।বিয়ের জন্যে দুজনেই তৈরী।বিয়ে হলো খুব ধুমধাম করে।এবারে আত্মীয়-স্বজনদের মুখগুলো আবার বদলে গেলো।বান্ধবী সঞ্চিতা এলো বরকে নিয়ে।চন্দ্রিমা সবাইকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে অভ্যর্থনা করলো।
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
কিন্তু তাদের ফুলশয্যাটা বৌভাতের রাতে সম্পূর্ন হলো না।
     সাতদিনবাদে কিছু বন্ধুবান্ধব নিজেদের কিছু লোকেদের নিয়ে আবার উৎসব হলো।আর সেদিন নির্মল এসে হাজির বিধ্বস্ত চেহারায়।জানা গেলো বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে।কারণ নির্মল আর চন্দ্রিমার ব্যাপারটা সে জানতে পেরে যায়।আর চন্দ্রিমাকে যেহেতু নির্মল প্রত্যাখান করে সেইহেতু সে নির্মলকে প্রত্যাখান করেছে।
      এতো কিছুর মধ্যে দিয়ে চন্দ্রিমার ‘স্বপ্নের রাত’আসে।
সেই রাতে দুজনেই নীরব।শুধু দুজনের চোখ কথা বলে যায়।তার মধ্যেই উপলদের খাটের তলা থেকে খুকখুক কাশির শব্দ-হাসির শব্দ ভেসে আসে।একটু পরে উপল তার ভাই ইন্দ্রজিৎ-রিমি-অনুসূয়া আরও কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে খাটের তলা ও ঘরের পর্দার আড়াল থেকে খুঁজে পায়।চন্দ্রিমা ইন্দ্রকে কান ধরে খাটের তলা থেকে টেনে বের করে।
     “আরে বৌদি ছাড়ো প্লিজ আর করবো না”
     “খুব মজা না বেড়োও বলছি।কি অসভ্য ছেলে বড় দাদার ফুলশয্যার ঘরে খাটের তলায় ঢুকে বসে আছে।উপল হাসতে হাসতে সবগুলোকে বাইরে বের করে।
এবারে উপল শুধু একবার চন্দ্রিমার কানে কানে বলে
   “আজ থেকে তুমি শুধু আমার আর আমি শুধু তোমার”
চন্দ্রিমা লজ্জায় উপলের বুকে মুখ গোঁজে।
   ধীরে ধীরে আরও একটা’গভীর প্রেমের কবিতা’রচনা হয়।শেষ হয় চন্দ্রিমার জীবনের’কাল রাত্রি’।




পিতৃস্নেহ

শুভা গাঙ্গুলী

আচারনিষ্ঠ  ব্রাহ্মণ  তাঁর একমাত্র পুত্রের অন্তেষ্ঠিক্রিয়া সম্পন্ন করে
উঠে দাঁড়ালেন, এয়ার ফোর্সের বিশিষ্ট  অফিসার  রা এতক্ষণ  সমস্ত প্রক্রিয়া  গুলি শান্তমনে ধৈর্য সহকারে প্রত্যক্ষ করছিলেন, কোথাও বিন্দুমাত্র বিচলিত  হন নি বৃদ্ধ  পিতা, সমস্ত কষ্ট অতিক্রম  করেছেন,কিছুই অনতিক্রম্য  ছিলো না তাঁর,এবার একটু শরবত খেয়ে দুহাত তুলে সবাইকে
অভিবাদন জানিয়ে নিজের ঘরে
ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন।
:
এয়ার ফোর্স জয়েন করার আগে তিনি অনেকবার চেষ্টা   করেন শুধুমাত্র এয়ারলাইন্সে থাকার জন্য, কিন্তু সৈনিক হবার প্রবল বাসনা অরিন্দম  কে এতই প্রভাবিত করেছিলো  যে
বৃদ্ধ  তাঁর  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, মানে নিজের ছোট ভাইয়ের শহিদ হয়ে যাওয়া ভুলে ,  তাকে  অনন্যোপায় হয়ে অনুমতি দিয়েছিলেন,
:
আর মহাসমারোহে নিজের জীবন তুচ্ছ  করে অরিদমন করে তাঁর বীর পুত্র অমর হয়ে গেলো,
আর তিনি একাকী হয়ে গেলেন।
অরিন্দম   আকাশের। জীবন চেয়েছিলো,আকাশে উড়তে ভালোবাসতো,adventures  ভালোবাসতো,আর বলতো
'ধ্যেত আমি কখনো বুড়ো হবো না" তাই হলো, যৌবনেই শেষ হলো তার জীবনের ডায়রী।

"ইস বাবা তুমি যে কি না,আমার পেছনে লেগে থাকতেই হবে তোমায়"
:
বৃদ্ধের প্রাণহীন  দেহ পরের দিন
উদ্ধার হল।




বিষাক্ত মিষ্টান্ন
-নিজামউদ্দিন মোল্লা

(১)

মানুষ কতই অদ্ভুত। জীবনের সহজ সরল পথেও নিজেকে মানিয়ে নিতে আকস্মিকভাবে অসুবিধায় পরে এই মানব জাতি।  ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে মানুষের মত বোকা প্রাণী হয়ত এই দুনিয়াতেই নেই। কিন্তু এদিকে, মানব বুদ্ধিমান বা মানব শ্রেষ্ঠ প্রাণী। বা ইত্যাদি ইত্যাদি।
      মায়ের পেট থেকেই জন্ম নিলেই মানুষ হয় না, এক্ষেত্রে আমার শিক্ষক মহাশয়ের একটা উক্তি বলে ফেলি, একদিন পড়াতে পড়াতে কোন এক বিষয় নিয়ে বোঝাতে গিয়ে এই বিষয় টা আসে, আর উনি বলল, ঠিক এমনিই,
" মানুষ ও প্রাণী জন্মের সময় একটাই তাদের অস্তিত্ব তারা জন্তু।  কিন্তু মানব সন্তান কে আমরা মানব বলি তার একটাই কারণ, জন্মের পরক্ষণে মানব শিশুর দেহে বস্ত্র দান কিন্তু পশুর তা জোটে না।"
কথা টি হয়ত সরল হলেও, আমার মতে এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। তা ছাড়ুন এবার যেটা বলার সেটাই আরম্ভ করি।
      শীতকাল!  ঠাণ্ডাভাব খুব। ভারতবর্ষ এর পূর্ব উপকূলে ঠাণ্ডার প্রভাব কমই থাকে, তবুও এই ডিসেম্বর এর ঠান্ডায় কম্পন টা বেশ লাগে। ঠাণ্ডায় কাঁপছি খুব, শাল টা তাই জড়িয়ে নিলাম ভালো করে। হটাৎ সম্রাট এসেই বলল, "কিরে আজ আনন্দবাজার এর খবর কি রে?"
" খবর মানে?" আমি অবাক ভঙ্গিতে বললাম।
এমন সময় সম্রাট আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে,  বলতে গেলে কেড়ে নিল খবরের কাগজ টা।তার পর দেখলাম, মাঝের পাতায় কি খুঁজছে, তার পরমাত্রই আমাকে কাগজ টা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি তার চলন লক্ষ্য করলাম, গটগট করে বেরিয়ে গেল। যেখানে সে হাত দিয়ে পড়ল, সেই জায়গাতে চোখ বুলাতেই আমার শরীর শিহরণ খেলে গেল। একটা মেয়ের অদ্ভুত ভাবে হত্যা হয়েছে শহরে।
     আসলে সম্রাট রহস্যময় ব্যাপার কে খুব ভালোবাসে। তাই তার এতো আগ্রহ। শহরের একটা খুন তার সমস্ত তথ্য নিয়ে ঘাঁটা সম্রাট এর কাজ নয়।  খবর টা পড়েই সম্রাট  বলল, " আরে ভাই! সমাজে কত রকমই রহস্য ঘনীভূত হয়ে আছে কে জানে! চল ঘুরে আসি। দেখে আসি, আর যদি বার করে দিতে পারি এই রহস্য তাহলে দিন টা বেশ ভালোই কাটবে।"
    শুরুতেই বলি, সম্রাট কোনো গোয়েন্দা নয়, কিন্তু ওর মন গোয়েন্দার মত, খুবই রহস্য প্রিয়। যেমন এক বনের বাঘ নরমাংস কে বেশি পছকন্দ  করে, তেমনি ভাবেই সম্রাট ও রহস্যের উন্মোচন করতে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি পছন্দ করে।

 আমি একটু অস্বস্তি করেই বললাম, " এটা কি ঠিক হবে?"
  " ঠিক হবে না কেন? আসলে কি জানিস এইরকম সুযোগ আর কি আসে নাকি?"
    " তাহলে চলো, না গিয়ে আর কি উপায় আছে।"
চটপট সমস্ত কাজ মিটিয়ে চললাম, আমাদের গন্তব্য স্থান। যেতে  যেতে সম্রাট কে প্রশ্ন টাই করি,
"আচ্ছা! সম্রাট তুমি রহস্যের সমাধান বার করতে পারবে?"
  " সমস্ত তথ্য গুলো পেলেই পারব। তাছাড়া না পারলেও চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি?"
   " তা বেশ! কিন্তু সমস্ত তথ্য তো ওই খবরের কাগজে দেওয়া আছে। কখন ঘটেছে,  কি কারণে সম্ভাবত সবই আছে তো!"
একটু কড়া মেজাজে সম্রাট বলল, "ধূর বোকা খবরের কাগজে কি সব কিছু দেওয়া থাকে নাকি? উলটে অসুবিধাই হয়, কিছু কিছু খবরকাগজ ওয়ালারা  খবর টাকে এমন সাজায় আসল জিনিস টাই হারিয়ে যায়। "
   " ঠিকই বলেছ!"
(২)
কথা বলতে বলতে গন্তব্যে পৌছে গেলাম। ঠিকানা টা হল, কলকাতা থেকে একটু দূরে বাটা নগরে।  মেয়েটার বাড়িতে পৌছে গিয়ে দেখি, পুলিশের ভিড়।  পুলিশের বড়বাবুর সাথে সম্রাট গিয়ে কথা বলল। সম্রাট বলল, " নমস্কার!  আমি সম্রাট গায়েন। আমি শুধু জানতে এলাম খুন এর রহস্য জানতে পারলেন কি?"
 বড়বাবু ঠোটের কোণে একটু হাসি রেখে বলল, " ও আপনিই সম্রাট বাবু পারসোনাল ডিটেকটিভ। "
" দূর মশাই। ডিটেকটিভ না ফালতু। আমি রহস্য প্রেমি। রহস্য কে উন্মোচন করতে বড্ড ভালোবাসি।"
" তা বললে কি চলে, সেই তো  একই হল।"
এই টা বলার পর বড়বাবু একটু ভাবল, তার পর আবার বলতে শুরু করল, " তা আপনার নাম প্রচুর শুনেছি,আলাপ করে ভালো লাগল। আমি দয়ানন্দ সেন।"
   " ও তাই, অনেক ধন্যবাদ সেন বাবু।"
দয়ানন্দ সেন আবার একটু চিন্তিত হয়ে  কি যেন  বলবে,  হটাৎ সম্রাট বলল, " এই রহস্য টা কি?"
     " তা আর কি?" তার পর আবার বলতে শুরু করল, " মেয়েটার নাম নলিনী গুপ্ত। বিয়ে হয়নি, একবছর আগেই গ্রাজুয়েশন কম্পিট করেছে। বাবা দিনমজুর। হাওড়ায় একটা মিলে কাজ করে।"
  সম্রাট একটু সময় নিয়ে বলল, " তা বুঝলুম।"
 " তবে মেয়েটার সাথে কারোর শত্রুতা ছিল না। আসলে সে বাড়ির বাইরে খুব কমই যেত। "
 সম্রাট চমক দিয়ে বলল, " কেশ টা আমাকে দেবেন সেন বাবু, আমাকে দুদিন সময় দিন আমি এই খুনের রহস্য উদঘাটন করব। "
  " ওকে তাই নিন, কিন্তু শুধু মাত্র দুদিন। মনে থাকে যেন।  আর আশা করি আপনি তাতে সফল হবেন।"

 (৩)
    কিছুক্ষণ চুপচাপ, পোষ্টমর্টান রিপোর্ট  টা এসেছে।  দেহে বিষক্রিয়া ঘটেছে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ দেখাচ্ছে ভয়। এটা কি সম্ভব!    আমার তো মুখ হাঁ হয়ে গেছে। কিন্তু সম্রাট একটুও অবাক হয়নি। কে জানে মানুষ টার মধ্যে কি একটু ও অদ্ভুত হওয়ার ভঙ্গিমাপূর্ণ ভাব নেই!
   
বাড়ি চলে এলাম, প্রত্যহ দিনেই খবর কাগজ আসে, কিন্তু আজ প্রথম খবর কাগজের থেকে পাওয়া এক খুন এর রহস্য এর সন্ধানে বেরিয়েছে সম্রাট। আজ অনেক ঘোরাঘুরি হল, আমি ক্লান্ত কিন্তু সম্রাট বিন্দু মাত্র ও ক্লান্তি বোধ করেনি। ও রহস্য নিয়ে সত্যি পাগল হয়ে গেছে।

   বাড়িতে ডুকতে ডুকতে, পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরাল। ধরিয়ে  মেঝে তে বসে পড়ল সম্রাট।সে ভাবছে গভীর ভাবে, তার ভুরুটা কুঁচকে আছে আর চোখ বন্ধ। মনে হয় আজকের এই খুন এর রহস্যের জটিলতার জাল ভেদ করার উপায় খুঁজছে।
     আমি ও চুপ করে শুয়ে পড়লাম  বিছানায়। প্রায় দশ মিনিট হবে, আমাকে চমকে দিয়ে সম্রাট বলে উঠল, " প্রীতম!  ঘুমালি নাকি?"
 " না  কি হয়েছে বলো সম্রাট!"
 "কষ্ট করে, একটু খবর কাগজ গুচ্ছ থেকে আগের মাসের ৩তারিখের খবর কাগজ টা বার করে দে! আর সঙ্গে আমার প্রিয় ম্যাগাজিন থেকে খুন বিষয়ে যে প্রবন্ধ আছে সেই ম্যাগাজিন টা দিবি!"
     তোমাদের বলা হয়নি, লেখা পড়ার জিনিসের কদর সম্রাট ভালোই বোঝে। আমি ওর কথা মত খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিন টা বার করে দিলাম।
খবরের কাগজ টা খুলতে খুলতে সম্রাট বলে উঠল, "এই দেখ একই রকম খুন করা হয়েছিল মালঞ্চ এর একটা তরুণী কে। "
আমার চোখ বিস্ফারিত।  আমি কি বলব সে জ্ঞান নেই। তখন সম্রাট বলল," তাহলে শোন, শহরে নতুন করে খুন করার একটা সিস্টেম বেরিয়েছে। তরুণীদের মাডার করার। পোষ্টমর্টান  রিপোর্ট এ বিষ টা নতুন যার নাম পাওয়া যাচ্ছে  না। " কিছু সময় বিরতির পর আবার বলল, " এই দেখ, ম্যাগাজিনে দেওয়া আছে, কিছু বিষ আছে যা  শরীরে গেলে প্রচুর উত্তেজনা সৃষ্টি করে, কিন্তু দেহের মৃত্যু হয়, সেই উত্তেজনা থেকে ভয়ে হার্ট-এটাকে।
     তাহলে বোঝ, যদি এক্ষেত্রে তাই হয়। তাহলে বিষ টা দিল কে?
   কেনই বা মারবে? এসবের উত্তর কিভাবে পাব?"
আমি তার কথাই ব্যাঘাত দিয়ে বলি, "দেখো সম্রাট,  এর উত্তর গুলো জানতে হলে মেয়েটার মা-বাবার সাথে কথা বলতে হবে।"
 " তুই ঠিক বলেছিস! কাল সকালে ওখানেই যাওয়া হবে। দেখি কিছু তথ্য পাওয়া যায়  কি?"

(৪)
     পরের দিন, সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম  আমি আর সম্রাট।মেয়েটার বাড়িতে প্রবেশ করব,  ঠিক সেই মুহুত্বে পাশ থেকে দুধ বিক্রেতা যাচ্ছে।  আগেকার গোয়ালাদের মতো নয়, এখন দুধ প্যাকেট এর মাধ্যমে বিক্রি হয়।  সম্রাট একটু ওই দিকে তাকিয়ে, প্রবেশ করল।
    তার বাবা সপ্রশ্নে তাকিয়ে, একটু শোকছায়া সরিয়ে আমাদের প্রশ্ন করল," আপনারা কে?"

সম্রাট একটু নরম ভাবে বলল," আপনার কাছে কিছু কথা জানতে এসেছি।যেই যেই  প্রশ্ন করব সেই সেই উত্তর দেবেন!" আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "আর তুই লিখতে শুরু করবি!"
ভাগ্যিস খাতা আর পেন টা নিয়ে গিয়েছিলাম, সম্রাট দা নাহলে রেগে যেত।  সম্রাট মেয়েটার বাবাকে বলল,"আপনার নাম কি?"
" আমি, দীপঙ্কর। "
"কি করেন?"
" নদীর ওপারে জুটমিলে কাজ করি।"
" আচ্ছা,  যেদিন আপনার মেয়ের এই দূর্ঘটনা ঘটে ছিল, আপনি কোথায় ছিলেন?" কড়া মেজাজে প্রশ্ন করল সম্রাট।
 লোকটি একটু অসহায় ভাবে বলল," আজ্ঞে আমি বাড়িতেই ছিলাম।"
 " সেদিন যখন এই ঘটনা ঘটে, তার আগে কি আপনার কন্যা কিছু খেয়েছিল? আমার কাছে পোষ্টমর্টান রিপোর্ট আছে কিছু লোকাবেন না, লোকালেই খবর আছে কিন্তু?"
  " না সাহেব লোকাব কেন? সেদিন রাতে খাবার পর ওই ঘটনা ঘটে। দুটো রুটি খেয়েছিল আলুর তরকারি দিয়ে। আর খাবার শেষে  দুধ ফোঁটানো থাকে সেটাই খেয়েছিল।"
   " সত্যি তাই। আর কিছু খাইনি?"
  " না খায়নি! "
সম্রাট রেগে বলল, "আপনি মিথ্যা বলছেন।"ধমকে লোক টি ভয় পেয়ে গিয়েছিল।  ভয় ভয় করে বলল, " মাফ করুন, ভুলে গিয়েছিলাম, কিছু মিষ্টি দিয়েছিল আমার বন্ধুর  ছেলের বিয়ে পাকা হয়েছে বলে। তাতে অনেক রকম মিষ্টি ছিল,সব গুলোই শুকনো, রসবিহীন মিষ্টি। তার মধ্যে ত্রিভুজ আকারের সন্দেশ টা নলিনীর পছন্দ, সে সেটাই খেয়েছিল।"
   " আচ্ছা মিষ্টির প্যাকেট টা কে এনেছিল? আপনার বন্ধু নাকি?"
 " না তার ছেলে।"
"তা আপনার বন্ধু ও তার ছেলের নাম কি? "
"  সমীরণ দাস ও তার ছেলের নাম কুশাল দাস।"
 এমন সময় সম্রাট  হাত দুটো জোড় করে বলল, " আসি পরে আবার আসতে হবে, নমস্কার।"

(৫)
  বাইরে বেরিয়ে  এসে  সম্রাট একটা সিগারেট ধরাল। তার পর পশ্চিমদিক লক্ষ্য করে হাঁটতে শুরু করল, আর বলতে শুরু করল, " এই সমীরণ দাস এর বাড়ির ঠিকানা টা নিয়ে আয় তো একবার! যা  শিগগির যা। "
   আমি কথা মতই কাজ করলাম। আবার হাটতে হাটতে নদীর ধারে পৌছে গেলাম। সম্রাট বলল, "এটা গঙ্গা! এই দিক টা সব চেয়ে সুন্দর, আর নদী চওড়া ও বেশি।"
   " আচ্ছা সম্রাট,  কি করবে এখন হাতে তো একটু ও সময় নেই।আজই শেষ দিন। পারবে তো?"
    " তুই এককাজ কর, এখানের পুলিশস্টেশন টা কোথায় খুঁজে বার করে, সেখানে সেন বাবুকে গিয়ে বল শিগগির আসতে। "
" কোথায় আসতে বলব?"
" কোথায় আবার! নলিনীদের বাড়িতে।"
" ঠিক আছে।"

আমি কথা মতই তাই করলাম, প্রায় দুঘন্টা পরে দেখা হল সম্রাটের সঙ্গে। দেখি সম্রাটের সঙ্গে দুজন ব্যক্তি।
সম্রাট নিজেই বলে দিলো, " ইনি হলেন সমীরণ দাস ও এনার পুত্র কুশাল দাস।" আবার " সেন বাবু এই কুশাল দাস কে একটু থানায় নিয়ে যাবেন!  আমি যদি একটু কিছু আলাপ করতে পারি কি?"
 " আর বলতে  নিশ্চয়, তাই হোক!" বলল সেন বাবু। তার পরই কুশাল কে নিয়ে আমরা থানায় রওনা হলাম।

 থানায় ভিতরে সেনবাবুর টেবিলের সামনে চেয়ার গুলিতে বসল সবাই। সমীরণ দাস কে আগেই বাইরে করে দিয়েছে সম্রাট।  সেন বাবু বলল, " তাহলে সম্রাট বাবু, তা কি করবেন তা আরম্ভ করুন।"
   " তাই হোক।  " হাসতে হাসতে সম্রাট বলে উঠল। তার পর চেয়ার ছেড়ে বলল," একটা গল্প বলি, বাল্য প্রেম শুনেছ সেন বাবু? নলিনীর বাল্য প্রেমিক ছিল এই কুশাল।  দুটি পরিবারের বন্ধুত্বের জন্য তাদের মেলামেশা কেউ খারাপ নজরে দেখেনি।  এদিকে প্রেম টা পরিণত কিন্তু কুশাল চায় না তাদের  মেলবন্ধন।" আর বলতে যাবে সম্রাট,  এমন সময় কুশাল  চেঁচিয়ে উঠল, "কিসব ফালতু কথা বলছেন।"
 " ফালতু কথা। তা হোক" বলল সম্রাট। আবার বলা আরম্ভ করল, " মেয়েটা কুশাল কে খুব ভালোবাসত কিন্তু  এই মশাই  বিয়ের কথা উঠলেই দমে যেত,  আসলে ইনি নলিনীকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু এই কুশাল দাস মহাশয় নলিনীকে অনেকবার ভোগ করেছে।

বিয়ে করবে না কিন্তু। কিন্তু মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল নলিনী। একটা কথা কি জানো সেন বাবু, বাঙালী নারী যেই সমস্ত প্রেমে নিজেকে ভোগ্য করে, সেটা প্রেম নয় সেটা জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসা।"
 " তা তো বুঝলাম! কিন্তু এর সাথে নলিনীর মৃত্যুর কি মিল আছে সেটা বলুন!" বললেন ইন্সপেক্টর সেন বাবু।
    " তা আছে! পোষ্টমর্টান রিপোর্ট এ মিষ্টি জাত খাবার ছিল, সেটা ছিল সন্দেশ আর সেটা কুশালেরই দেওয়া। আসলে কুশাল জানত নলিনীর পছন্দ -অপছন্দ গুলো,  তার অনেক রকম মিষ্টান্ন এর মধ্যে ত্রিভুজ আকৃতির সন্দেশ এর উপর একপ্রকার বিষ মাখিয়ে দিল। সে জানত এই মিষ্টি টাই নলিনী খাবে তাই।"
   এদিকে কুশাল গর্জন করে বলল, " এসব গাল গল্প কি? আপনি যা  বলছেন তার কি প্রমাণ আছে? আর আমাদের প্রেম ছিল এটার কি কোনো প্রমাণ আছে?"
  সম্রাট হাসতে হাসতে বলল, " যাক ঠিক জায়গায় পড়ল, আমি চাইছিলাম কুশাল তোমার কাছে এই প্রশ্ন গুলো শোনার। আসলে এর উত্তর গুলো ও আছে।"
 " সেটা কি? কি প্রমাণ?"  একনারকীয় ভাবে এই প্রশ্ন করল কুশাল।
  " এই দেখো! এটা নলিনীর ডায়রি। এতে সব লিখে গেছে নলিনী। এবার একটাই প্রশ্ন করি কুশাল বাঁচতে চাও তো সত্যি করে বলো কেন মারলে নলিনীকে?"

এক প্রবল যন্ত্রণায় কাতর হলে যেমন হয় তেমনিই ভাবে উল্লাসিত, উন্মাদের মতো কুশাল বলে উঠল," হ্যা আমি বিষ দিয়েছি। হ্যা আমি মেরেছি। ঠিক করেছি। ঘাড়ে চেপে গিয়েছিল, আমি যদি ওকে বিয়ে না করি  তাহলে আমার বাবাকে আমাদের রিলেশনের সব কথা বলে দিত। আর পরশু দিন আমাকে বলেছিল
'আমি প্রেগন্যান্ট।  এবার যদি না বলো তাহলে আমি সব্বাইকে বলে দেব কিন্তু।' -এই কথা টা বলতেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলুম তাই আমি ওকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলাম।" কথা টা বলার পর আর্তনাদ করে কেঁদে উঠল  কুশাল।
এদিকে চেয়ার ছেড়ে সম্রাট ও আমি উঠলাম। সম্রাট সেন বাবুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, " সেন বাবু আপনার এই নলিনী হত্যার  আসামী। দুদিন শেষ হতে বাকি থেকে গেল কিন্তু।" সেন বাবু হাসতে হাসতে বিদায় দিলেন আমাদের।

   রাস্তায় আছি, আমি সম্রাট কে প্রশ্ন টা করি," আচ্ছা তুমি ওর ডায়রি টা পেলে কিভাবে?"
    " তুই যখন পুলিশ ডাকতে গিয়েছিলি, তখন আমি কুশাল দের বাড়ির দিকে যাচ্ছি,  এক অপরিচিতা মহিলা এসে  বলল, এটা নলিনীর ডায়রি। উনি নলিনীর মা,  পড়তে পারে না। যদি কিছু সাহায্য হয় তাই এই ডায়রি টা দিয়ে গেলেন। আমি একটু পড়েই সমস্ত টা ধরে ফেলি আর কি!"

 "সাব্বাস তোমার রহস্য খিদে মিটল। আচ্ছা মানুষের জীবনে কি এতোই রহস্য আছে নাকি?"

 সম্রাট উত্তেজিত হয়ে বলল, "মানবের জীবন রহস্য দিয়ে ঘেরা। এজীবন রহস্য ময়। এজগৎ রহস্য ময়। কত রহস্য আমাদের চারপাসে ঘনীভূত হয়ে আছে তা আমাদের অতিইন্দ্রীয়র বাইরে।"






পুজো ডায়েরিজ




শুভদীপ মহাপাত্র 


আমাদের পুজো:-
সারা শরীরে বাসা বাঁধছে হাজার হাজার বীজাণু।মস্তিষ্ক থেকে গলা,ফুসফুস থেকে লিভার,কিডনি থেকে গোড়ালি অবধি এসে গেছে মারণ বিষ।দৃষ্টি শক্তি ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে আমাদের,হেলেন কিলার,অন্ধ মহাকবি হোমারের কথা আর মনে করতে পারি না কারণ Brain death তো কবেই হয়ে গেছে।সামান্য খাবার গলা দিয়ে নামালেই যেনো সমস্ত শরীর জ্বলে যায় আমাদের,শরীর জুড়ে অসংখ্য ঘা।রক্ত আর রক্ত,সারা বাড়ি জুড়ে রক্ত,আকাশ জুড়ে লাল।নাহ্,আমরা ঈশ্বরকে গালি দি না,ধন দৌলত,শরীর যদি ঈশ্বরের কৃপা হয় তাহলে মারণ রোগ-দারিদ্র্য ও ঈশ্বরের ই কৃপা,লেনিন-স্টালিন দেখিয়ে আমাদের তাতানো যাবে না।হয়তো বিজয়া দশমীর সাথে সাথে আমাদেরও বিসর্জন,শুধু একটা ইচ্ছে পূরণ করো গো তোমরা।নাহ্ নতুন জামা চাই না,গাড়িতে করে ঘোরাতেও হবে না,অষ্টমীর সন্ধ্যেতে যখন আকাশে লালচে আভা ধরবে,চারিদিকে আলোর রোশনাই,নতুন নতুন রোমান্টিসিজম,নতুন কেনা আইফোনের দেখনদারি,দূর থেকে ভেসে আসা পাগলু ডান্স, ঠিক তখনই একটিবার সেই পুরুনো খেলার মাঠের পাশে কাশের ঝোপে সুইয়ে দিয়ে আসবে আমাদের।এটাই আমাদের দুগ্গা পুজোর শেষ উপহার!!

পুজো এবার গ্রহান্তরে:-
স্থান ও কালঃ-2180 সালের 13 ই সেপ্টেম্বর,পশ্চিমবঙ্গের একটি অজানা গ্রাম(এখনমরুভূমি)।Flashback:-পৃথিবী থেকে মনুষ্য সম্প্রদায় মুছে গেছে আজ থেকে একশ বছর আগেই,বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মড়কের কবলে পড়ে।পিয়ংইয়ং থেকে আমেরিকার দিকে পরমাণু ছোড়া হয়ে ওঠেনি,সু চি কে ভয়াবহ রোহিঙগা নিধনের জবাব দিতে হয় নি,পাকিস্তান সন্ত্রাসমুক্ত হয় নি,এমনকি ভারতেরও হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে ওঠা হয়ে ওঠেনি,তার আগেই সব শেষ,মানুষ ই হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।পৃথিবীর মূল গঠন ও পরিবর্তিত হয়েছে,বিশ্ব জুড়ে এখন শুধুই মরুভূমি, গড় তাপমাত্রা ভয়াবহ বৃদ্ধি পেয়েছে।আজই পৃথিবীর শেষদিন,আজ রাতের পর সৌরজগত থেকে এই গ্রহের অস্তিত্ব মুছে যাবে।বর্তমান সময়:-বাংলার ওই পল্লীগ্রাম থুড়ি মরুভূমির আকাশে বেশ কয়েকবার চক্কর কেটে নামলো একটি গোলাকার ভীনগ্রহী যান।যানটি থেকে বেরিয়ে এলো একটি অদ্ভুতুড়ে,বেঁটে মতন ইলেকট্রনিক রোবট।সে আসছে আলোকবর্ষ দূরের UF-71 গ্রহ থেকে।পৃথিবীর শেষ দিনে শেষবারের মতো গ্রহটিকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাকে পাঠানো হয়েছে।রোবটটি নেমে এদিক ওদিক ঘোরার পর, বালির মধ্যে কিছু খুঁজতে থাকলো।একটু পরই তার হাতে এলো ত্রিশূল এর ছোট্ট একটি টুকরো।সে টুকরোটিকে হাতে নিয়ে একটু জোরে চাপ দিলো,আর সাথে সাথেই তার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠলো কোলাহল মুখরিত একটি সন্ধ্যা,চারিদিকে মানুষের ভিড়,ঢাকের শব্দ,মন্ত্রপাঠ,এতদূর অবধি দেখেই সে হাঁটতে শুরু করলো তাঁর যানটির দিকে।সময় শেষ হয়ে আসছে এই গ্রহের,তাড়াতাড়ি যেতে হবে।রোবটটি ঢুকে পড়লো যানটির মধ্যে,সাথে সেই ভাঙা ত্রিশূল,এই গ্রহ থেকে পাওয়া শেষ নমুনা,তার বেশ ভালো লেগেছে এই জিনিসটি,তাদের গ্রহেও এইরকম ভাবে পুজো শুরু করবে তারা।তখনই আস্তে আস্তে যানটি বেশ কয়েকবার নড়ে উঠে খুব জোরে আকাশে উড়ে গেলো।এদিকে আর একটু পরেই শুরু হলো মহাপ্রলয়,ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকলো পৃথিবী নামের গ্রহটি ।।

তখন এখন:-
আমার ছেলেবেলার পুজোগুলোর অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে আমার মামাবাড়ি।মহালয়ার আগের দিন দাদাদের সাথে সাত তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া,কিন্তু বরাবর সব দাদাভাই সকলেই লেট রাইসার বলে,শুধু alarm ঘড়িতে ভরসা থাকতো না,তাড়াতাড়ি তোলার দায়িত্ব থাকতো দাদুর ওপর।কী যেনো এক বিশ্ব জয় করার মতো হতো ব্যাপারটা!!দাদু যথারীতি বিশ্বস্ত সেনাপতির মতো ভোর ভোর তুলে দিতেন,তারপর আমরা সব ভাইরা দাদুর সাথে টিভিতে মহালয়া দেখতাম,কতোটা দেখতাম আর কতোটা ঢুলতাম তা এখন বলা মুশকিল।দাদুর কাছেই সেই তখন শোনা মহিষাসুর এর ইতিহাস,রক্তবীজ এর গল্প (এটাতেই interest বেশি লাগতো,এখনো লাগে),দেবলোকের কথা,রাম-রাবণ
,আরো কততো কি।আজ সময় কিছুটা এগিয়েছে,টিভি রয়েছে আগের জায়গাতেই,হাতে smartphone এসেছে, তবে দাদু এখন আর নেই,আমাদের দাদা ভাইদের জমায়েতটাও আর হয় না,আর সকাল সকাল মহালয়ার দেখতে ওঠা,ধুর,ওসব পাগলামি দেখার জন্য সাধের ঘুম নষ্ট করে কেউ??!!!আগে মামাবাড়ি থেকে একসেট জামা,বাড়ির একসেট,আর কারোর কাছ থেকে একসেট,এই তিনসেটেই চারদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরার এক আনন্দ ছিলো,নতুন জামার অদ্ভুত মাদকতা।এখন জামা হয়তো অনেকগুলো,বড়ো দোকান,শপিং মল থেকে কেনা,কিন্তু সেই আনন্দ টা আর নেই।টিউশন শেষে মন্ডপ কদ্দূর কী হলো রোজ দেখতে যাওয়া,এখন পুজোর দিনগুলিতে ও ওসব বিষয়ে অদ্ভুত নিরুত্সাহ।বাবার সাথে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে আইসক্রিম,ফুচকা,রোল খাওয়া কে ভোলা যায় না।আর এখন চারদিন চাররকম ব্যান্ডের মদের hangover সকাল হলেই নেই।আসলে পুজো সেই পুজোই আছে,চারপাশটা বদলাচ্ছে,খুব দ্রুত।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------




আপনাদের মতামতের অপেক্ষায়

ইতি

সম্পাদক - সন্দীপ দাস
সহ সম্পাদক - নিজামুদ্দিন মোল্লা ।।














রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে

                      রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে                                                                            মিথ্যুক ভা...