Thursday 16 August 2018

আবাহন সংখ্যা



সম্পাদকের কথায়

লিটিল ম্যাগাজিন : সম্পাদকের ভূমিকা ও কিছু কথা

সম্পাদক হলো লিটিল ম্যাগাজিনের অধিনায়ক || নতুন দের সুযোগ দিতে হবে ; অনুৎসাহিদের উৎসাহ দিতে হবে || গলি গলি ঘুরে সাহিত্য সেবক তুলে আনতে হবে || আর যারা ব্যর্থ হল তাদের ব্যার্থতা সারিয়ে তুলতে হবে || এই তো হল সম্পাদক ||
সম্পাদক হলো একজন সাহসি গুন্ডার মতো , যে যাকে খুশি গেট লস্ট বলতেই পারে ।। আবার একজন লেখক বা লেখিকা যে একটিও লেখা ছাপাই নি , তাকেও তুলে আনতে পারে ।। সম্পাদক হলো একজন ব্যক্তি যে লিটিল ম্যাগাজিন টিকে পাঠকের বা পাঠিকার করে দিতে পারে অনায়াসে ।।
আগামীর স্বপ  গঠনে লিটিল ম্যাগাজিন ও তার সম্পাদকের ভূমিকা প্রচুর ।। সম্পাদক পুরাতনের মাঝে নতুনকে নিয়ে প্রয়োগশালা খুলে বসতে পারে , আর সেই প্রয়োগশালাতে গঠিত হয় এক একটা অস্ত্র , বিনিময়ে সেই লিটিল ম্যাগাজিন বা তার সম্পাদককে কে আর মনে রাখে ।। নতুন সেই লেখক যখন একদিন কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয় , সেদিনও সম্পাদক নতূন সৃষ্টি খুঁজতে ব্যস্ত ।। এদের সম্মান আগে হওয়া উচিত ।।
অধিকাংশ লিটিল ম্যাগাজিনগুলো নামি লেখকদের একটি লেখার জন্য তেল মারতে ব্যস্ত , এতে নাকি বিক্রি বাড়বে ।। যে নতুন লেখাগুলি আসছে সেগুলি পড়ে দেখুন , এক একটা এটম বোম্ব , আর সেল বাড়িয়ে প্রফিট করতে কি লিটিল ম্যাগাজিন খুলেছেন, নাকি এই ভেবে যে প্রফিট হলে ভালো নাহলে মুলধনটুকু উঠে এলেই যথেষ্ট !! যদি ব্যবসা করতে লিটিল ম্যাগাজিন চাষ করছেন , তাহলে তাদের বলবো , গেট লস্ট ।।
লিটিল ম্যাগাজিন তত দিন বিগ হবে না , যতদিন এরা বড় ব্র্যান্ড থেকে নিজেকে মুক্ত না করে ।। নতুন খোঁজ নয়তো মধ্য শ্রেণীতেই থাকতে হবে  - লিটিল ম্যাগাজিন ও বিগ হবে , হতেই হবে আর এই দায়িত্ব তো সম্পাদকের  , তাই না ?
অনেক লেখক বা লেখিকারা ভুল পথে চলেছে আজ ।। অনেকের অহংকার আকাশছোঁয়া ।। সম্পাদক ছাড়া তাদের বোঝাবে কে ? প্রয়োজন হলে ছেঁটে ফেলে দিয়ে নতুন সৃষ্টি সম্পাদক ছাড়া আর কে করবে ??
অনেকে লিটিল ম্যাগ করতে এসে অর্থ সংগ্রহ করে , বিনিময়ে একটা লেখা ছেপে দেওয়া হবে ।। ও সম্পাদক বাবু এটা লিটিল ম্যাগ নাকি বার্টার প্রথা - একটু বোঝাবেন ।।

তরঙ্গ কিছু কথা :
" এই যা সম্পাদক দল বদলে ফেললো !! অপরাজিত ছেড়ে তরঙ্গ ।। এই হয়েছে আজকালকার ছোকরা সব ।। মুখে বলে আমরা আছি আর তারপর পাল্টি বাজির খেলা শুরু করে দেয় ।। " --- পাঠক
এটা পড়ার পর সমস্ত লোকেরা এটাই বলবে । আমি নিশ্চিত । সে বলুক , ক্ষতি নেই । কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে যে আমার - এই কথাটা নিজেদের উদ্দেশ্যে বলে না কেন ? কেন বলে না আমরা ব্যর্থ ? কেন প্রশ্নটা তারা নিজেদের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেয় না কেন ? শাল্যদানী রূপম এর সাথে বহুবার কথা হয় । এই কিছুদিন আগেও হয়েছে । ও কি বলে জানেন ? পাগলের মত করে আনন্দে ফেটে পড়ে বলতে বলতে যে ও রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কবিদের সুযোগ দিয়েছে । না , সেটা অহংকার নয় । কারন পরক্ষনেই বলে সিনিয়র কবিদের জন্য কিছুই করা হল না ওর এত দিন ধরে । এমন পাগল ছেলে ম্যাগ করতে নেমে কি করবে বলুন তো ? সৌরভ গাঙ্গুলি ম্যাগের দুনিয়ায় থাকলে ওকে কাগজ কুড়িয়ে আনতে পাঠাত , নালির ধারে , রাস্তার পাশে পড়ে থাকা দামি দামি কাগজ । জানেন তো ওগুলো দিয়েও ঘর সাজানো যায় ? ওর তরঙ্গ তাই করে । আর ওই যে সম্পাদিকা আছে ও তো আরো একজন । নতুন দের লেখাই ছাপবে । জ্যোতিও তাই ছিল , আর তুলি ও তাই হয়েছে । ওরে রুপম এই ভাবে প্রফিট হবে না রে !! বাকিদের দেখ , কত কোটি কোটি কামিয়ে নিলো । আর তুই কি করলি --- প্রচুর ভালোবাসা , একটা তরঙ্গ , একটা বই পাব আর ওই কি একটা স্বশাসিত স্কুল ।
ফেসবুকের কবিতা ও কবিতার ভবিষ্যৎ
ফেসবুক ; কথাটির সাথে আজ কে না পরিচিত । বর্তমানে ফেসবুক কেবলমাত্র একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয় ; ফেসবুক আজ বিপণন প্রক্রিয়ার একটি প্রধান হাতিয়ার । মানুষের ঘরের দরজা হয়ে ফেসবুক বিভিন্ন জিনিসের বিপণন কে মানুষের শোয়ার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে  । সাহিত্য জগতও এর বাইরে নয় । নানা অচেনা কবি ও সাহিত্যিক আজ ফেসবুকের সৌজন্যে মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে । এতে দুটো সুবিধা হচ্ছে –
১। লেখক বা কবিগণ পাঠক/পাঠিকার সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে ।
২। নানা প্রকাশক ও এই সমস্ত নতুন কবিদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের ফলে দুটো শ্রেণিরই উন্নতির পথ সুগম হয়েছে ।
এতো গেল একটা দিক ।। নামি কবি ও সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রেও ফেসবুক হয়ে উঠেছে বিপণনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । কোন বই কবে কোথা থেকে প্রকাশিত হবে অথবা কোন বই কোথায় পাওয়া যাবে এগুলি সবই ফেসবুকে বিপনিত করে থাকে তারা । ফলে বেশি সংখক পাঠক বা পাঠিকা অবধি এই খবর প্রচারিত হতে পারে। এ ছাড়াও লেখক লেখকে সহজে ভাব বিনিময়ের ফলে ফেসবুক আরও ভুমিকাবতি হয়ে উঠছে ।
এ সমস্ত কিছুর পরেও একটি কথা সমাজে আজ ব্যাপক হারে প্রচলিত ; সেটা হল ফেসবুক কবি । যে সমস্ত কবিরা ফেসবুকে লেখালেখি করছে তাদের প্রায়সই ফেসবুক কবি বলে ব্যাঙ্গ করা হয়ে থাকে । যখন একদিকে এই তিব্র ব্যাঙ্গ তাদের সৃষ্টিকে ক্রমাগত অপমান করে চলেছে তখন অন্যদিকে আর একটি বিতর্ক মাথা চারা দিয়ে উঠছে । সেটি হল ভবিষ্যৎ । আমরা ভাবছি অথবা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি যে এই সব ফেসবুকিয় কবিদের ভবিষ্যৎ তাহলে ঠিক কোথায় দাড়িয়ে ? এদের সৃষ্টি কি তবে সৃষ্টি নয় ? এই যে এতো লাইক অথবা কমেন্ট এগুলো কি স্রেফ লোক দেখানো ব্যাপার ।
মন দিয়ে ভেবে দেখুন তো কবিতার দুনিয়ায় অথবা কবির এই পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ বলে আধুনিক যুগে কিছু ছিল কি না আছে ? কারা নির্ধারণ করে এই ভবিষ্যৎ ? খুব ভালো করে ভেবে দেখলাম ; আজও কফি হাউসের সেই অমলের মত প্রতিভা গুলো ঢাকা পড়ে যেত যদি এই ফেসবুক না থাকতো । এই সমস্ত বেনামি তরুন তুর্কিদের উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম কে দেয় ? মনে আছে বুদ্ধদেব বসু-র পাণ্ডুলিপি কবিতাটা ? ঠিক তেমনই অবস্থা তরুন উঠতি কবিদের । একটা প্রশ্ন তাদের সমস্ত আশা , স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয় – কি জানেন ? এ কবিতা আপনার চলবে তো ?
আসলে এদেশে কবিদের ভাগ্য স্থির হয় ঠাণ্ডা কাঁচের ঘরে ; টাকার গাদায় শুয়ে শুয়ে ; হুইস্কি বা রাম বা জিনে চুমুক দিতে দিতে । ট্যালেন্ট এখন নগন্য বিষয় । ফেলো কড়ি ; মাখো তেল – এই তো নীতি । তরুণদের শিল্প কর্মগুলো ছুয়ে পর্যন্ত দেখা হয় না ; তাদের একটি প্ল্যাটফর্ম কি দেবে এরা ? আর এসবকিছু আমি বানিয়ে বলছি না । ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি । আমি নিজে এর শিকার হয়েছিলাম । বাঙলার সেরা প্রকাশনি আমার পাণ্ডুলিপি পর্যন্ত নিতে অস্বিকার করেছিল । কারন আমার নাম নেই । আমি তরুন ; তাই । এবার আপনাদের প্রশ্ন করছি ; এরাম ঘটনা যাদের সাথে ঘটেছে ( আমি নিশ্চিত অধিকাংশের সাথেই এই ঘটনা ঘটে থাকে ) তারা বলুন তো ; আপনাদের কবিতাগুলো ছেপে রিস্ক কে নেবে যদি এই প্রকাশনিরা আপনার পাশে না দাড়ায় ?
সরাসরি একটি উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করে দেখাচ্ছি । একজন তরুন কবির সাথে কথা হল । তিনি এখনো নিজের একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন নি । তার লেখা আমি ব্যাক্তিগতভাবে পড়েছি । আমি নিজে একটি পত্রিকা চালাই এবং তার সম্পাদক হিসেবে বলতে চাই সেই তরুন কবির রচনার স্বাদ অপূর্ব । কিন্তু তিনি তো তাদের আসরে মাল ঢালেননি ; তাই স্বভাবতই তার বই প্রকাশ করার সাহস কেউ দেখাইনি । আমি সত্যি অবাক হয়ে গেলাম তার কথা শুনে । বলতে কোন লজ্জা নেই সেই তরুন প্রতিভা আসলে ফেসবুকেরি দান ।
তাহলে কবির ভবিষ্যৎ কি হবে ? সত্যি কি ভবিষ্যৎ কথাটির কোন গুরুত্ব রইল ? যাক , ফেসবুক ছিল বলে এদের একজন হলেও চিনল । আর প্রকাশকরা যে বর্তমান কবিদের নিয়ে এত মাতামাতি করেন , তারাও এদের মতই । সেই ফেসবুককেই এরা ব্যবহার করে নিজেদের প্রচারের কাজে । তার মানে এই দাঁড়ালো যে এই নামকরা কবিরা যারা কোথাও না কোথাও তেল প্রয়োগ করে বড় হয়েছে এবং এই তরুন কবিরা তারা দুজনেই সেই এক গোয়ালেরই – সেই ফেসবুকের লাইক ও কমেন্টস এর ওপর দুটি শ্রেনিই নির্ভর করে থাকে ।
অর্থাৎ ফেসবুক হল ভবিষ্যতের সেই প্লাটফর্ম যা কবিদের কাছে ভবিষ্যৎ নামে একটি উপহার তুলে দিয়েছে / দিয়ে চলবে ।

সন্দীপ দাস



সহ সম্পাদকের কথায়

ট্রাজেডি সবার সাথেই ঘটে, তেমনি আমাদের সঙ্গে ট্রাজেডি ঘটার ফলেই "অপরাজিত "র জন্ম। আসলে  আমরা অনলাইনের দুনিয়া থেকে যখন কিছু মানুষের অহংকার, কিছু পত্রিকাওয়ালাদের দাম্ভিকতার সম্মুখীন হলাম ঠিক সেই সময়ে সন্দীপ দাস মানে সন্দীপ দা আমাকে বলল, "বুঝলি নিজাম, এই ভাবে সহ্য হয় না আর। সাহিত্য কে নিয়ে যে দলাদলি ও পত্রিকাগুলোর দালালি আর মোটেই মেনে নেওয়া যায়  না।" আমি তখন বুঝলাম হ্যাঁ ঠিক তো। এই ভাবে লেখার গুণমান না রেখে শুধু চেনা পরিচিতির বসে লেখাকে প্রাধান্য দেওয়া। শুধু এটাই নয়, ভালো লেখা গুলো শুধু বাতিল হতে দেখলাম কারণ বুঝলাম পত্রিকাওয়ালারা অজ্ঞাত কবি বা লেখকের লেখা ছাপেই না।

ঠিক এই অবস্থাকে কাটিয়ে আমরা যাত্রা  আরম্ভ করলাম অনলাইন হিসাবে। যখন আমরা এই অনলাইন ম্যাগ কে লেখার গুণমানে রাখতে পারলাম তখন ঠিক সেই সময়ে কিছু অজ্ঞাত লেখক ও কবি আমাদের কাছে পরিচিত লাভ পেল। শুধু এটাই নয়, এই নতুন দের আগমণেই হয়ত "অপরাজিত" সবার কাছে পরিচিতি লাভ করল। তার জন্য একটাই কাজই করতে চাই সেই সকল আমার বন্ধুদের যারা  লেখার সাথেও উৎসাহ দিয়ে আমাদের দুজনকে শক্তি  প্রদান করেছে।

আমরা প্রথমে এসেছিলাম কিছুই জানি না। জানতাম না কিভাবে একটা সংগঠন বানাতে হয়। আসলে আমরা পাঠক, সাহিত্য ভালোবাসি। তাই কিছু না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা পারব একটা কবি ও সাহিত্যিক সংগঠন বানাতে, যেমন ভাবেই বানিয়েছিলেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত। আসলে নবীন দের নবীনত্ব, প্রবীনের অভিজ্ঞতা ছাড়া একটা সংগঠন কখনোই দাঁড় করানোই সম্ভব নয়। তাই সন্দীপ দাস এই বিষয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেখিয়ে সেটাকে সম্ভব করতে পেরেছেন। আর সেই সংগঠন কেই "অপরাজিত " নাম দিলেন। তাঁর একটাই ইচ্ছা সাহিত্যের মান বাড়ানো।  অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞদের নিয়ে সমাগম করার ইচ্ছে এই থেকেই জন্ম আমাদের অপরাজিত।

বলা হয়নি "অপরাজিত "নাম নিয়ে খুবই সংকট দেখা দিয়েছিল।আমাদের মনের সাথে সবসময় দ্বিধা ছিল।'পারব কি থাকতে আমরা অপরাজিত। 'কারণ ভয় ভয় নিয়ে এগিয়ে এসেছি আমরা বার বার ব্যর্থতা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল মাথার উপর, বার বার পরাজিত হয়েছি আমরা, তবুও হার মানতে নারাজ। অনেকের ভালোবাসায় আজ আমরা নিজেদের নাম পালটে অপরাজিত করেছি, হয়ত আমাদের মৃত্যুও পরাজিত অবস্থা নেবে না।

একটা স্বপ্ন নিয়ে সত্যি করা চার হাতে গঠন এই পত্রিকা। কিন্তু মূল সন্দীপ দার দুটি হাতেই সমস্ত সক্তি ও সাহসে এই পদক্ষেপ। আজ তাই এই অপরাজিত শপথ নিচ্ছে, নবীনদের অঙ্গে ও প্রবীনদের সঙ্গে নিয়ে, উন্নত ও যুগের উপযুক্ত মানের লেখাকে প্রকাশ করার অঙ্গীকার।  শুধু সকলের ভালোবাসা কাম্য।

               -নিজামউদ্দিন মোল্লা
               








সকল সাহিত্যপ্রেমি পাঠক ও পাঠিকাদের প্রতি আবাহন সংখ্যাটি উৎসর্গ করলাম.. রাজনীতিবিদ অটলবিহারি বাজপেয়ি , সোমনাথ চট্যপাধ্যায় ও যারা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন তাদের শ্রদ্ধা জানাই । শ্রদ্ধা জানাই আমার বাবার প্রতি যিনি দু বছর আগে মৃত্যুলোক ছেড়ে চলে গেছেন আকাশে ।







কাব্য পাতা

Translated from poems of Dr.Saumyajit acharya in English 

Translater : সন্দীপ দাস 

1.
A few loves to visit the park after eleven at the same bench , 
where they loved to meet .
The young green grasses fail to recognise him . The young plastic laid aside thinks him a vagabond . A few , still in search of handkerchief under their seat . 

There is a lake in front of the seat . Many stones laid silently under water 
that had been thrown long back . They got separated 
and failed to raise high as a mountain .

The day walks close to its end . Still , 
a few loves to wait on the bench or in the lake .... 
Where she loved to sit , before her death .

বেলা এগারোটার পর কোনও কোনও প্রেমিক পার্কে গিয়ে বসে
বসে সেই সিটে,যেখানে একদিন তার প্রেমিকা ছিল বসে
সবুজ ঘাসরা নতুন।তারা প্রেমিকটিকে চিনতে পারে না
পলিপ্যাকরাও নতুন।তারা প্রেমিকটিকে ভবঘুরে ভাবে
তবু কোনও কোনও প্রেমিক সিটের নীচে হারানো রুমাল খোঁজে...

সামনে জল।সেখানে শুয়ে আছে আজন্মের ছোঁড়া ঢিল
মিল হয়নি বলে সব ঢিল একসংে পাহাড় বানাতে পারে না
শুয়ে থাকে যেযার মতো মৃত মাছের আ'শের আলগা  ধ্যানে

বেলা বাড়ে।গুলিবিদ্ধ বিকেল ঢলে পরে রাতের কোলের কাছে
তবু কোনও কোনও প্রেমিক পার্কে বসে থাকে।বসে থাকে সিটে
বসে থাকে ঘাসে।থাকে জলে... যেখানে একদিন তার প্রেমিকা ছিল বসে,

 মৃত্যুর আগে...

2.
The city from outside 

Dead city
The dead Police 
standing inactive 
besides the park 

Dead bird 
Dead lamppost
gather side by side 
Dead tree , aged ,
as old as grandmother. 

And amongst them 
I am in search of you , my love .

Dead city 
Dead river 
Touch of death 
in the water 
of the dark room for bath .

Dead tram 
Old sheds of blood 
across the road 

And amongst them 
I am in search of you , my love.

Dead grass 
Dead smile 
Hanging from the bell 
Colony of ants climbing upward.

The terraces are shedless
No drops of rain  

Where are you ?
I am in search of you , my love.

Come outside from the dead silence
Of this city,
Let's make love for once .

শহরের বাইরে

মৃত শহর।
পার্কের পাশে
দাঁড়িয়ে আছে
মৃত পুলিশ

মৃত পাখি
মৃত ল্যাম্পপোস্ট
সারি সারি
মৃত গাছ
প্রপিতামহীর মতো

আমি তোমাকে
খু"জছি প্রিয়তমা...

মৃত শহর
মৃত নদী
পরিত্যক্ত চানঘরে
মৃত্যু ছোঁয়া
কালো জল

মৃত ট্রাম
রাস্তা জুড়ে
পুরোনো রক্তদাগ

আমি তোমাকে
খু"জছি প্রিয়তমা...

মৃত ঘাস
মৃত হাসি
ঝোলানো ঘন্টায়
সারি সারি
পিঁপড়েরা
দল বে"ধে ওঠে-

সব ছাদ
বৃষ্টি চিহ্নহীন

তুমি কোথায়?
তোমাকে খু"জছি আমি

মৃত শহরের বাইরে
এসো একবার
যৌনতা উপভোগ করি...


(প্রকাশিত 'বহমান' কবিতা সংখ্যায়)



প্রণব থেকে উজান হয়ে ওঠার গল্প 
©সন্দীপ দাস 

উজান একটি নাম হয়ে উঠছে ,
সময়ের কাল গন্ডি পেড়িয়ে 
হাংরি ছেড়ে এঙরি হয়ে উঠছে ।
কবিতায় ধরে রাখা 
এখন আর সোজা নয় ,
তবু কিছু কথা বলছি তাকে নিয়ে 
মন দিয়ে শুনুন ।

ছেলেটা সুনীল , শক্তি বা বিনয় হয়ে উঠবে না 
কারন , সে হতে চায় না কারুর মতন ।
তাই প্রেসিডেন্সির দরজা ভেঙে , বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে 
বেরিয়ে পড়েছিল একটা নাটকের খোঁজে ।
ভুলে গেছিল মনে হয় , জীবন আর এক নাটকের নাম 
আর তারপর সময় এল সেই 
যখন সব ছেড়ে দিতে হল প্রনবকে ।

প্রনব!! আজ্ঞে এই তো সেই লৌহ পুরুষের 
বাস্তবিক পরিচয় ।
ফিজিক্স গ্র্যাজুয়েট আর যাত্রা পালায় মাস্টার্স তার ।

জীবনের কঠিন অগ্নি পরীক্ষার মাঝখানে সে সফল কবি 
কারন সে সফল হতে চেয়েছিল তাই ।
কবিতার ভাষায় লড়াই শুরু আর তারপর একদিন 
উজান হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা বেশ বেগ ধরলো তার :
জন্ম নিল তরুণ কাব্যিক তুর্কি , উজান উপাধ্যায় ।

এত কিছুর মাঝেও আমি উজানকে কবি মনে করি না 
কারন সে করে না তাই ।
রাগহীন , একটা সরল মানুষকে আমি দেখেছিলাম 
প্রথম থেকে শেষবার ।
আগুনে পুড়ে চলেছি , বিরহের আগুনে 
ধোঁয়া ওঠার আগে আমি 
বিনয় , মলয় অথবা শক্তিকে খুঁজছি 
একটি উজানের আড়ালে ।

প্রণব ; সুনীল ,শক্তি বা বিনয় হয়ে উঠবে না 

কারন , সে হতে চায় না কারুর মতন ।



যেতে হবে নিকেতনে

চোখের জল মাঝে মাঝেই বিরক্ত করে
কি করে এরাই তাকে?
সকল সময়েই জানালা খুলে রাখি,জ্যোৎস্না মাখি,
আর  হাসিকে ডেকে বলি বন্ধু সাথে থেকো।
এইতো আমার আজীবনের চাওয়া,পাওয়া সকল স্বপ্ন -
এর বেশি আর চাইনি কিছু,আর কি আমার চাই ?
আয়, এরই জন্যে বাসর পাতা,আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষা।

অক্ষরের সাথেই বেশিটা সময় কাটাই
বর্ণপরিচয়কে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে
প্রেম নিবেদন করি,
আমাদের তৃপ্তির মিলনে কাব্যের জন্মহয়। দত্তকের নেশায়-
ঢলে ঢলে,কোলে কোলে গ্রাম,গঞ্জ, দূর সীমানায়।

সকাল সাঁঝে কাব্যতরী ভাসাই ,
কবি ও কবিতাকে মেলাতে মেলাতেই সময় যায় কেটে ।
শুধু মাঝে মাঝে পৃথিবীর মাটিতে বিতর্ক আর দুঃসংবাদ গর্ত খুঁড়ে বিঘ্ন ঘটায়,
মন্দির,মসজিদ,গির্জা ডেকে ডেকে বলে-
এই দেখ আমরা কেমন পরস্পরের হাত ধরে বসে আছি,অনন্ত হাসির মাঝে ,শান্তির অভেদ্য সীমানায়,
তোমরাই কেবল বিভেদ আর ভাঙ্গনে  আপনার স্বার্থে আমাদের কলঙ্কিত করো,দাও বৃথাই রক্তের আলপনা।

অক্ষর তুলে তুলে ভালোবাসাকে সাজাই, ক্লান্ত মনে স্বপ্ন দেখাই,
সুন্দর সুন্দর কথাগুলো ফুল হয়ে ফোটে মনের বাগানে,
আমি সুখ সাগরে ভাসি,
বিনি সুতোয় মালা গাঁথি,তারপর-
জীবনহাটে ফেরি করি ভালোবাসার মালা  চাই গো ভালোবাসার মালা .....
শূন্য,রিক্ত,অবসাদগ্রস্ত মনগুলো ছুটে ছুটে আসে কাছে ,
বুকের চাতালে বসিয়ে-
আমি একটার পর একটা কান্নাজড়িত গলায় পড়িয়ে দিই মনের সুখে।
বলতো এর বেশি কি চাওয়ার ছিল ,আর কি চাওয়া যায়?

ঠিক তখনই আমার খোলা জানালায় হাসিরা আসে মুক্ত বাতাসে ভেসে ভেসে, মুক্তির গান গায়।
আর দুঃখের বর্ষণে সৃষ্ট চোখের নোনা  জলগুলো-
তৃষ্ণার্ত অংশুমালি শুষে শুষে,চুষে চুষে আপন কণ্ঠে ধারণ করেন।

ভুল গুলো বোবা কান্নায় ভেঙে পড়ে সমাধানের পায়ের তলায়,
একটার  পর একটা সমীকরণ করুনায় হাত ধরে ধরে -
জীবনের ধারাপাত পড়াতে পড়াতে বলে
ঈশ্বর বললেন ভালোবাস ওরে ভালোবাস .....


একটা,দুটো ,তিনটে,চারটে ....অনন্ত প্রহর কেটে যায় নিস্তরঙ্গ জীবনের ,
দূরে,দূরে কালবেলার ঝাপসা সমাপ্তির অবয়ব ফোটে,
মনের খোলা জানালায় শান্তিদূত এসে দাঁড়ায় , বলে -
এই দেখ সখা তোমার ছুটির ঘন্টা বেজেছে, সানাইয়ে বিদায়ের সুর বাজে,
এবার তরঙ্গে তোমায় দিতে হবে বিসর্জন,
আমরাই কজন তোমায় ফিরিয়ে নিতে এসেছি অনন্ত শান্তির রাজ্যে।
মনের মুরতি মাখিয়ে শেষবারের মতো বলি -
হে প্রিয় পৃথিবী যদি ফের ফিরে আসি
বুকে যেন আরো প্রেম নিয়ে আসি।

----- প্রবীর কুমার চৌধুরী
  সচেতন হও

হে নারী তুমি সচেতন হও
ছোট হতে হতে মাটিতে
ঠেকেছে তোমার মাথা
আর কেঁদো না , এবার
চোখ মুছে উঠে দাঁড়াও
সামনের দিকে এগিয়ে চলো সোজা
আঘাত পেয়ে পেয়ে
ভেঙেছে তোমার বুক
হয়েছে নত মাথা
বুকের  ভেতর সাত সমুদ্র ঢেউ
অবিরত রক্ত ঝরে তাজা
আমি বুঝি তোমার দুঃখ জ্বালা
তোমার কষ্টে আমিও পাই ব্যথা
আমি যে এক নারী
তাই জানতে পারি
তোমার মনের কথা
তোমার ভেতর যে প্রতিভা আছে
কেন রেখেছো ঢেকে তাকে ?
উন্মুক্ত করো শিক্ষার আলোকে
হাজার প্রলোভন পথে ঘাটে
তোমার লক্ষে পৌঁছতে হবে তোমাকে
হয়েও না দিকভ্রান্ত
আসুক শত বাধা , ছেটাক কলঙ্ক
যুদ্ধে তুমি হবে না কখনো ক্লান্ত
ভুলো না তুমি শক্তি স্বরূপিণী
তোমার শক্তি অনন্ত ৷

--- নারায়ণী দও

মা, আমি মুম্বাই থেকে লিখছি

মা, তুমি আজকাল বড্ড বেশি
          নুয়ে পড়েছো
যত না বয়সের ভাবে
      তার  থেকে বেশি বোধ হয়
        অপমানের ভারে।
তোমার তো মাথা নিচু করার
       কিছু নেই মা?
বুঝেছি, জামায়ের বাড়ি আছো বলে?
কার কাছে থাকবে তুমি এ সময়ে?
তোমার তো কোনো পুত্র সন্তান নেই-
তোমার লজ্জা পাবার
         কিছু নেই মা
তুমি তো তোমার গর্ভজাত
    সন্তানের কাছে আছো।
বৃদ্ধ বয়সে মায়েরা তো
   সন্তানের কাছেই থাকবে
          সেটাই তো ঠিক
     তা সে পুত্র বা কন্যা
      যাই হোক না কেন-
তোমার জামায়ের মা"ও তো
             শেষ জীবনে
আমাদের কাছেই  ছিলেন।
দেশের বাড়ি ছেড়ে তিনি
  আমার কাছে এলেন।
আমি তো মায়ের মতই
 তাঁকে সেবা করেছিলাম-
জামায়ের নামে বাড়ি হলেও
   এই বাড়ি করার সময়
তোমার মেয়ে তার রোজগারের
  সমস্ত টাকা ঢেলে দিয়েছে
একটা ছোট্ট ঘর তোমার জন্যে সে
অনায়াসেই দাবি করতে পারে।
    পাছে লোকে কিছু বলে?
লোকের কথায় কান দিও না মা,
   তারা তোমায় রাখবেও না
        আর দেখবেও না।
যতই নুইবে ততই সবাই নুইয়ে দেবে।
সোজা হয়ে দাঁড়াও মা-
তোমার হীনমন্যতা
 তোমাকে কষ্ট দেয়,
তোমার মনকে শরীরকে দুর্বল করে।
তোমার লজ্জা পাবার কিছু নেই মা,
অনেক কষ্টে ছেলের মতই
      মানুষ করেছো আমাকে।
মনে আছে মা, যেদিন তোমার
তৃতীয় কন্যা আমার বোন ঝুনু
     ভূমিষ্ঠ হল......
কি কান্না! কি কান্না!
        আমাদের বাড়ি-
দিদি কাঁদে, আমি কাঁদি,
          বাবা কাঁদে,
হসপিটালে গিয়ে দেখি
     তুমিও কাঁদছো,
অথচ যখন আমাদের গাভীটার
পর পর তিনটে বকনা বাছুর হল
    কি আনন্দ! কি আনন্দ!
মা, আশার কথা,এখন আর 
   মেয়ে হলে কেউ কাঁদে না-
        মুম্বাইতে তো নয়ই।
আজ নিজেদের চিনতে
         মেয়েরা শিখেছে।
এখানে ছেলে মেয়ে সবাই
      ভীষণ ব্যস্ত
তাই সাংসারিক কাজেও
      উভয়েই সমান।
      মা, জান তো,
আমি খুব ভাল আছি।
এখানকার ডাক্তারবাবুরা বলেছেন
আমার ক্যান্সার সেরে যাবে-
হ্যাঁ, ক্যান্সার হলেই যে মরে যায়
    তা আজ আর নয় মা।
   তুমি চিন্তা করো না.মা-
        আমি মরছি না।
ভেবে ভেবে বড্ড বেশি কাহিল হয়ে পড়েছো।
ডাক্তার, নাকি ভগবান,
নাকি বিজ্ঞানের আলোয়
কত ক্যান্সারের যে অবসান এখানে!
সে এক বিপুল কর্ম-কান্ড!
কিন্তু মা এখানে থাকতেই
 ঘটল সেই নিদারুণ
            বোমা বিষ্ফোরণ.....
ঘরে বসে শুনলাম
           বোমার আওয়াজ.....
টি.ভি.র পর্দায় চোখ রাখলেই
দেখি চারিদিকে শুধু প্রাণ
    নেওয়ার আয়োজন.....
অথচ প্রাণ দেওয়ার জন্যেও
  কত গবেষণা, কত প্রচেষ্টা!
কবে সারবে মা সমাজের ক্যান্সার
      বলতে পারো?
এই ঘৃণ্য অসুখের ওষুধ কে এনে দেবে?
কে পৌঁছে দেবে অমৃত বারি
        মানুষের মনে?
---- রমলা মুখার্জী

পর্জন্য।

( ভারতের একটি অগ্রণী প্রদেশে সরকারবাহাদুর
বৃষ্টির জন্য জেলায় জেলায় পর্জন্য যজ্ঞ করতে চলেছেন,
দেশ এগোচ্ছে বটে!)

কাঠফাটা রোদ্দুরে চাষীভাই ত্রস্ত
ভয় নেই, ভয় নেই, হাতে আছে অস্ত্র।
প্রচণ্ড সূর্যের বেয়াদবি থামবে,
আকাশকে কালো করে বৃষ্টিও নামবে,
বৃষ্টিকে ঘাড় ধরে জেনো নিয়ে আসা যায়,
খাল বিল ভরে যাবে ঘনঘোর বর্ষায়।

ভাবছো কি বিজ্ঞানে এগিয়েছে দেশটা?
প্রযুক্তি মেটাবে কি নদীদের তেষ্টা?
আরে ছি ছি , রাম রাম, মাথা ভরা গোময়ে
সমাধান মিলবে না আধুনিক সময়ে।
বিজ্ঞান নির্ভর করে খালি প্রমাণে,
সব মেলে বিশ্বাসে , সব্বাই তা জানে।
ওই পথে গেলে ভাই, ডুবে যাবে ক্ষতিতে,
মেঘ ডাকা পদ্ধতি লেখা আছে অতীতে।

পদ্ধতি নিশ্চিত, গ্যারান্টিযুক্ত,
চারখানা বেদ ঘেঁটে পেয়েছি এ সূক্ত।
খরার প্রকোপ থেকে নিমেষে আরোগ্য,
নিয়ম আর বিধি মেনে করা হলে যজ্ঞ।
মেঘ কেন নেই সেটা বোঝেইনি বিজ্ঞান,
গাছ নেই গাছ নেই বলে করে ঘ্যানঘ্যান।
প্রসন্ন হন যদি বরুণ আর ইন্দ্র,
মেঘডম্বরু বাজে গগনেতে মন্দ্র,
সামান্য সত্যটা এতদিনে বুঝেছি,
বৃক্ষরোপনে বৃথা সমাধান খুঁজেছি।

সুতরাং এইবারে সরকারী খরচায়,
যজ্ঞের পুরোহিত মেঘেদের বর চায়।
মন মন কাঠ পোড়ে, সাথে ঘৃত গব্য,
মেঘ ধরে আনবার পদ্ধতি নব্য।
চাষীভাই সব্বাই হো হো হি হি হাসবে,
সারি সারি ক্ষেতগুলো শস্যতে ভাসবে।
বিজ্ঞান নয় বাবা, গল্পটা অন্য,
যে সে যজ্ঞ নয় জেনো পর্জন্য।

              ----আর্যতীর্থ

 সম্ভোগ ১৯

ভারততীর্থের গরীব মানুষের চলছে ব্যাপক দুর্ভোগ!
সরকারী তোয়াজে ধনীদের বাড়ছে সীমাহীন সম্ভোগ!

গরীবের কথা থাকে না তো কোনদিন নেতাদের মাথায়!
কেউ ছুটে এসে দাঁড়ায় না পাশে তাদের দুঃখ দুর্দশায়!

নীতীশের শাসনে বিহারে দ্যাখো বন্ধ  মদের দোকান৷
গরীবের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে খুলে রেখেছে চোখ কান৷

মোদী সদা ব্যস্ত কর্পোরেটের ব্যাপক তোয়াজে৷
মুখ ফিরিয়ে থাকেন কান দ্যান না আর্তের আওয়াজে!

কাশ্মীরে আন্দোলনে পাকিস্তান জোগাচ্ছে ইন্ধন৷
কাশ্মীরে চলছে নিরীহ মানুষের উপর দলন পীড়ন!

নির্দোষ গরু ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলছে গোরক্ষা বাহিনী
প্রায়ই গণমাধ্যমে শোনা যায় সেসব অতি করুণ কাহিনী!

---         সৈয়দ আসরার আহমদ



কথান্তর ১
     

- কেমন আছিস?
- যেমন থাকতে শিখিয়েছিস।
- তোর বর?
- ওর খুব জ্বর
- তোর মেয়ে?
- ভালই আছে, নেচে গেয়ে।
- তোর ছেলের জন্য হামি।
- দূরে থাক, তুই নাকি সমকামী!
- ইয়েস আই আম গে।
- জানতেই পারিনি কোনোদিন, যাকগে।
- ঘেন্না করে?
- ভয় করে।
- কিসের ভয়?
- ছেলে ছেলে প্রেম হয়?
- হতেই পারে। অন্তত আমি তাই মানি।
- হবে হয়তো, কি জানি!
- কি ভাবছিস?
- তুইতো আগুন নিয়ে খেলছিস।
- মোটেই নয়, ইটস ন্যাচারাল...
- তবু তুই কিন্তু ব্যাচেলার!
- বিয়ে কি সব?
- গুড জব।
- তুইতো বিয়ে করেও আমায় ভুলিসনি
- তুই আমার বিয়েতে আসিসনি
- রজতের সাথে ছিলাম
- তোর কবিতায় ওর নামটা পড়লাম
- আমার কবিতা পড়িস?
- সবইতো রাবিশ!
- তা ঠিক, তবে...
- তোরা এক হবি কবে?
- এক সাথে শোয়া?
- মামার বাড়ির মোয়া।
- জানিস, রজত কিন্তু স্ট্রেট।
- বলিস কি? গ্রেট!
- হুম, তবু তাকেই ভালোবাসি
- আবার ভুল! আজ আসি..
- প্রথম তোকেই কিন্তু রজতের কথা বললাম
- বুঝলাম
- বোর হচ্ছিস?
- অবাক হচ্ছি। তুই ওকে বলেছিস?
- পাগল হয়েছিস?
- কেন?
- ও কোনোদিন জানে না যেন।
- তারপর?
- অনেক কিছু আছে। কাল বলবো আবার।
- রোজ রোজ বলিস।
- আমিও নারীত্বে ডুবি জানিস?
- বলিস কি?
- অনেক জানা বাকি..
- কাল আবার শুনবো।
- আজ রাখি ফোন, ওর কবিতা পড়বো।
- তোর রজতও তো কবি?
- ও আমার গোপন প্রেমের ছবি...



কথান্তর ২
     

- বল খবর কি?
- কাগজতো এখনো খুলিনি।
- তোর খবর!
- দিয়েছি কবর।
- তোর রজতের কেসটা বল...
- রজতের আগে বিতান ছিল।
- রজত তোর প্রথম না?
- না, চতুর্থ। তবে এটাই শেষ।
- মাই গড
- গড নয়, গড ফাদার বল।
- কে?
- প্রথম যে ছেলেটাকে চুমু খেয়েছিলাম।
- নাম?
- প্রতিম। মেয়েলিপনা ছেলে।
- তোর থাকা উচিৎ জেলে।
- তা ঠিক। তবে প্রতিম খুব ভালো চুমু খেতে পারে।
- ভুল বকছিস নাকি জ্বরে?
- নারে, খুব ভালোবেসেছিলাম তাকে।
- ছাড়লি কেন?
- অভিনয় করতে পারছিলাম না বলে
- শুয়েছিস ওর সাথে?
- মানে ফাকিং? নাহ, পুরোটাই গ্যাপিং।
- তবে?
- একসাথে ফুচকা খেয়েছি। ঝাল ঝাল ফুচকা...
- তুইতো ঝাল খেতেই পারতিস না।
- ও শিখিয়েছিলো, ঝাল খেয়ে ঝাল লাগলেই চুমু
- আমিওতো কত খেয়েছিলাম।
- না, ওরটা অন্যরকম। আরো ভালো
- ভালো। তবে অভিনয় করলি কেন?
- ভালোবাসাটা কখন অভিনয় হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি।
- তোর ভালোবাসা ব্যাঙের মাথা।
- তবে প্রতিম শুনি খুব ভালো আছে আজকাল।
- তুই বড্ড বাচাল।
- গানটা খুব ভালোই গাইতো। আর এখন অনেক নাম
- আফসোস?
- নাহ, তবে লুকিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে।
- একটা ফোন কর ওকে।
- যদি ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে বকে।
- তারপর?
- তারপর সেক্স।
- কার সাথে?
- অনেকের সাথে।
- মেয়ে না ছেলে?
- মানুষের সাথে।
- মানে?
- কে যে পুরুষ কে যে নারী, কে জানে?
- তোর মাথা গেছে।
- দাড়া রজতের ফোন এসেছে।
- তাহলে রাখি? রান্না অনেক বাকি
- বিকেলে কথা হবে। এখন রাখি....

শাল্যদানী



স্বগত

মানুষের কথা, আমার না লিখলেও চলবে
তাদের নিয়ে অনেকেই ভাবছে
আমাকে, গাধাদের নিয়ে কিছু বলতে হবে ,
কারণ, সকলেই তাদের ব্যাপারে নীরব।

গাধারা খুব নির্বিরোধী ,
             আজ্ঞা ও ভারবাহী
                      এবং সর্বোপরী প্রতিবাদহীন।

( এলান মার্শালের একটি গল্পে পড়েছিলাম ,
সার্কসের তাঁবুর বাইরে,
               দর্শকদের আনন্দ দেবার জন্য
একটি গাধা বাঁধা থাকত শক্ত দড়ি দিয়ে।
         দর্শকরা তাঁবুর ভিতরে ঢোকার আগে
খুশি মতন চড় চাপাটি মারতেন,     
                 তার মাথায় , পিঠে ,পাছায়
                                  আর মজায় হাসতেন।
গাধাটি একদিন খুব বিরক্ত হয়ে ,
                            তাদের আহাম্মক বানিয়ে,
কামড়ে দিল একজনের হাতে, আচমকাই।
অস্টেলিয়ান গাধা যা পারে ,
আমাদের দেশের গাধারা সেটুকুও পারে না,
                                   এটাই যা আশ্চর্যের। )

গাধা প্রসঙ্গ এলে ভেড়াদের কথা মনে পড়বেই
তাদের সম্পর্কে কিছু বলা উচিত ,
ইচ্ছে হলে আপনারা কেউ কিছু বলতে পারেন।

তবে আমি বলব খচ্চরদের কথা ,
স্বভাবতই আমাদের মধ্যে যাদের বসবাস
            কিংবা আমি যাদের মধ্যে বসবাস করি।

জীবনে একটাও খচ্চর দেখেনি ,
                           এমন মানুষ স্বভাবতই বিরল,
আর আমার তো প্রতিনিয়তই
                                   তাদের সঙ্গে ওঠা বসা
অথচ কি করে যে এতদিন
        তাদের সম্পর্কে নীরব ছিলাম
                                   ভাবতে আশ্চর্য লাগে।

--- শং  ক  র    ব্র  হ্ম



অনুভূতি

প্রথম দিনের মতো সতটি লাল গোলাপ নয়
নয় টানা সাত বার মিসড্ কল
বৃষ্টি ভেজা বিকেল তেমনও কিছু নয়
নেই কোনো দাবি সে দিনের মতো করে।
ভালোবাসা মানে আজও বুঝিনা প্রিয়তমা
সে কি শুধু মিথ্যা প্ৰতিশ্ৰুতি
ভালোবাসা নিদারুন এক খেলা
তোমার জেতা আমার হারার অনুভূতি।
আমি মাঝে মাঝে ভূল করে ফেলি
ধূসর বিবর্ন শব্দগুলিকে বাঁচতে দিতে চাই
আমার ভালোবাসা ঠাঁই পাই
পুরানো কিছু স্মৃতির পাতায়।
রোজনামচায় দীর্ঘশ্বাস ফেলের।
---কৌশিক দাস।

জ্যামিতি

পাড় ভাঙা মরা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে,আজ বড্ড স্কুলের অঙ্ক স্যারের কথাটা বারবার মনে পড়ে :ওরে ভালো করে জ্যামিতিটা শেখ-- ভবিষ্যতে কাজে লাগবে অন্ততঃ দৈর্ঘ,প্রস্থ আর সম্পূর্ণ বৃত্তটা...এটা শিখলে সহজেই প্রচুর নাম্বার পাওয়া যায়, আর কঠিন বিষয়টাতে পাশ করে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যায়

ভেবেছিলাম আমার কোথাও পকেট রাখব না, রাখলেও তার কোনও মাপ থাকবে না ; হব না কারও পাপেট।

পরে বুঝলাম। এটা আমার মস্ত বোকামি। ভালো করে জ্যামিতি না শিখে অন্য ভাবে পাশ করা! কারন হঠাৎ সেদিন আবিষ্কার করলাম:জং ধরা পুরানো টিনের বাস্কে  একটা আস্ত জ্যামিতি বক্স অবাক বিস্ময়ে, নিয়ে গিয়ে মা কে দেখাতেই,মা হাসতে হাসতে বলল-- তোর বাবা প্রথম জন্মদিনেই তোকে দিয়েছল...

সত্যিই স্যার,তখন বুঝিনি জ্যামিতি এতটা গুরুতপূর্ণ;আজ বুঝি জ্যামিতির ব্যাবহার শিখে নেওয়াটা খুব-ই দরকার ছিল

----কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর

রবিবার

রোববার বাজারে যাওয়ার লোভ প্রবল আমার , অন্য দিনের থেকে অনেকটাই বেশি ।

আসলে রোববারে সুন্দরী মেয়েরা লাইনে দাঁড়িয়ে মাছে হাত দেয় ‌ । কানকো চেপে ধরে । কত চোখাচোখি মাছ ও মেয়ের । এইবার বুঝে যাই , রোববারের মাছেরা মরে যাওয়ার জন্য কেন এত ছটফট করে ।

শেষবারের জল সাঁতারে এতটা  জোয়ান , এতটা সতেজ , আত্ম-সম্প্রদানে এত মোহময়.....

মেয়েদের এভাবে মাছ চিনতে দেখে  নিশ্চিত সিদ্ধান্ত করে ফেলা যায় , প্রেমিকাকে বিয়ে করতে নেই .....

আশৈশব স্নানঘরে আমিও  রোববারের মাছের মত স্মৃতিভ্রংশতায় , বাড়িতে সকলে রুমালে নাক চেপে বৈঠকখানায় , বাজারে মেয়েরা মাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মর্গ সাজায় ....

---- উজান উপাধ্যায়


বোধজ্ঞান
আমার কাঁদতে থাকার খবর কেউ পায় না..
মনের অলিন্দে ধুলোস্তূপ জমে আবর্জনার
শেষবেলায় উড়িয়ে নিয়ে যায় ঝোড়ো হাওয়ার সংসার!
ইতস্তত তখন সর্বনাশী মেঘের বাঙ্ময় গর্জন!
যাযাবর কুহেলিকা নদীকে আচ্ছন্ন রাখে ঘোরে..
বয়ে চলে তার তাকাবার ফুরসৎ কই?
এদিকে নীলচে পোশাকে কতোটা অভিমানী দাগ?
সে হুতাশে স্নিগ্ধ জলোচ্ছ্বাসের সংশয় জাগে না!
মাছরাঙা কেবল চুপচাপ কড় গোনে..
এখানেই মিলবে তপস্যার নিরন্ন সুন্দর দিনের হিসাব
বহুমুখী নয় একমুখী প্রেমে কাটানো পরিচয় ক্ষণ..
নিশ্চয় আনবে মুমূর্ষুর চোখে বোধজ্ঞান!!
----- সৌমী শাঁখারী


ব্যতিক্রম।

তখনও 12 টা বাজতে বাকি ছিলো
ষড়যন্ত্রকারী রঙ তখনও গেরুয়া বা সবুজ স্ট্যাম্প পায়নি অথবা কবিতারা দুঃখ পায়নি লেনিনের সাথে গলা মিলিয়ে ,মুষ্টি হাত হাওয়ায় দুলিয়ে।
গান তখনও নীরবতা পালন করেনি কোনো 12 বছরের যোনি ছেঁড়া রক্তে।
শুধু ঝড়ে পড়তো তারাখসা নিঃশব্দে আর কাঁদতো একলা চাঁদ আজও যেমন। এই চাঁদ, ওই তারা - এরা তো ব্যতিক্রম ,
এরা চিরকাল শিরদাঁড়া খাঁড়া। বদলেছি আমরা, হারিয়েছি ভাষা চাটুকারী সোমরসে।
তবুও কেউ কেউ শঙ্খ হয় শক্ত খোলসে সেই রক্ষিত হৃদয় নিয়ে।আমরা পারিনা, ওঁরা পারে।
কারণ ওই চাঁদ এই তারা আর শঙ্খ ,এঁরা তো ব্যতিক্রম, ব্যতিক্রমী সত্তার রক্ত প্রবাহে।

----- সন্দীপ ভট্টাচার্য, মুম্বাই

উত্তর লেখে ধের্য্য

ময়দান জুড়ে জীর্ণ পাতা । কপোত কপোতীর ভিড়,
লালচে হলুদে ঠেসবেঞ্চ , খুশির রাঙানো নীড়..

সিক্ত প্রান্তর প্রভাতী আভায় দুটো কিঃবা তিন বা চার,
কর্নকুহরে কারা যেন শুনিয়েছিল, ১/২ পেরিয়ে বসন্ত ফেরার,

উড়নচন্ডী তুমি তো তখন ,হয়ত তোমার ২৫ এ পা-
ছেঁড়া চটি অফিস যাত্রী আমি ,ওই ভেতো বাঙালির নামচা..

কোমরে কলসি কাপড়ে গিঁট সে যে গৃহবধুর উদাহরণে,
আড়চোখে খেয়েছি লজ্জার মাথা ,দেখেছি ফিরে মন কেমনে..

কপালে সিঁদুরের জায়গা পরিত্যক্ত , নতুবা অপেক্ষায় সময়,
কিন্তু কিন্তু মনে ফিরে যেতে চেয়েছি , আমি স্বপ্নময়..

উত্তুরে হাওয়ায় দোলা দেওয়া বুক , ঘোমটার জালে নিয়ম মত,
হেঁচকা টানে সেই একবার সেঁকেছি, যৌবনের জমাটি ক্ষত..

পরিক্রমার ১/৩ পেরিয়ে, বাস্তবের মাটি যেই ছুঁয়েছি,
কখন যেন জড়িয়ে তোমায়, সেই যে সময় ভালবেসেছি..

শতাব্দী পেরিয়ে হারিয়ে গেছে সেই বসন্ত , ন্যাড়া জীবন আজ অনিবার্য,
হেমন্ত তখন বসন্ত রাগে , আমার পরীক্ষায় উত্তরের নাম শুধু ধৈর্য্য l

--- অর্ঘ্যদীপ পানিগ্রাহি

কবিতার স্বপ্নজাল
     
একটু কোকেন দিও অনন্যা,
কলমের গর্ভে কবিতারা যে আর আসে না।
মদ্যপানের পরবর্তী ধুমপানে
রক্তস্নাত শব্দমালা ধেয়ে আসে কালির স্রোতে।
আমি নির্বাক চেয়ে থাকি সভ্যতার দলিলে,
কলমটা টলতে থাকে নেশাগ্রস্ত সমাজগাথায়।


একটু কোকেন দিও অনন্যা,
স্বাভাবিকতার চেনা ছন্দে দিন গুলো গিয়েছে বেশ,
আজ কোকেন চাই নৈরাশ্যের স্তব্ধ নিঃসঙ্গতায়।
ধুমপানের বাহুল্যতায় কর্কটের সর্বগ্রাসী ছোবল,
সময় কেঁপেছে ভঙ্গুরতায়, থামেনি যদিও।


একটু কোকেন দিও অনন্যা,
আমি বধির দু চোখে চিরন্তন মৃত্যু সেঁকেছি,
কোকেনের নেশাগ্রস্ত সাম্রাজ্যে
আমি এক নেশাহীন সবুজ মানুষ।
অনন্তকাল ধরে আমি হেঁটেছি সময়ের আঙিনায়।


একটু কোকেন দিও অনন্যা,
মস্তিকের ক্ষণ বিশ্রামস্থলে বিরামহীন মৃত্যুর করাল গ্রাস
ক্লান্ত করে আমায়।
নেশাতুর সাম্রাজ্যের জীবনস্রোতে
আমি এক মৃত্যুঞ্জয়ী চিরন্তন পথিক।
নশ্বর দেহত্যাগের সীমারেখা পেরিয়ে,
আমি বাঁচতে চাই কোনো এক মৃত্যুঞ্জয়ী কাব্যগাথায়

---- সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র
দারু চিনি
    *********

প্রবাহের সাথে প্রবাহে ভেসে
টিপটিপ সে,মুদ্রাদোষ
রাতের বুকে দাগ টেনেছেন,
উল্টোডাঙ্গা'র শঙ্খ ঘোষ।

সেমিকোলনের কুচকাওয়াজে,
বদমেজাজী মেঘের ফোঁস
চোরাবালির টাইপরাইটারে
শমন পাঠান শঙ্খ ঘোষ।

মানববোমা,যিশু'র পিতা-
মরছে ক্ষিধেয় ভ্রুণের কোষ,
এরপরেও কুরুক্ষেত্রে
ভীষ্ম সাজেন শঙ্খ ঘোষ।

কনুই মাঝে বাঘের হানা-
হাঁটতে হবে অনেক ক্রোশ,
বিপদ সুখে কম পড়েছে
লাল সেলামের শঙ্খ ঘোষ।

বরফ দেশের চঞ্চলা মেয়ে
বিগ্রহেরই অসন্তোষ,
আখছার দেশ ছাড়ছে জনতা
পায়ে পায়ে সেই-ই শঙ্খ ঘোষ।

চন্দন কাঠে সুন্দরী চিতা
কাঁটাতারে শুয়ে খরগোশ,
গোলাপ কাঁটায় পড়ছে চুঁইয়ে
কয়েক ফোঁটা শঙ্খ ঘোষ।

--- শুভদীপ পাপলু



অবিদিতা
-----------

নিশাচার হয়ে খুঁজি নিখোঁজ সত্ত্বা -
ধুলোমাখা পথ স্মৃতির আত্মশ্লাঘা ৷
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বিজয়গর্বী মূঢ়তা -
অন্তর্নিহিত করতলে শুদ্ধ সমর্পিতা ৷

আত্মাহুতির আগুন মনখারাপের প্রেমপর্বে -
দমবন্ধ দুঃখের নেশা নীরব আর্তনাদে ৷
স্বঅস্তিত্ত্বের হাহাকার শূন্য হাতছানিতে -
এক নদী উপাখ্যান লিখবো জন্মের গর্বে ৷

বিস্তৃর্ন বিদ্রোহে শিকল ভাঙার গান-
নিজেকে চিনতে অনুভূতির আধান ৷
মধ্যরাতের পাঁজর বারুদে আত্মস্নান -
শূন্য ডায়েরীর পাতাতে শূন্যতার সম্পান

দীপান্বিতায় কাজল লুকাই চোখের ইশারায় -
ঝোড়ো হাওয়ায় বীজ বুনি শুচি শুদ্ধতায় ৷
তবু নিজেকে খুঁজি শেষ না হওয়া কল্পনায়-
যেখানে শেষেরও শুরু আছে নীরব স্তব্ধতায় ৷৷

---- মধুমিতা ঘোষ 


শহর

শহরকে চিনেছি নিয়নে,
আলো-আঁধারিতে সয়ে গেলে চোখ
বুঝে নিয়েছি সব হিসেব,
বাকি ছিল যত তার কাছে
আজন্ম৷
খুঁজেছি কানাগলি,
রাজপথ পায়নি যার খোঁজ,
বানিয়েছি আশিয়ানা
সেই অন্ধ সরণীতে,
যেখানে পাবে না খোঁজ
শহর আমার,
আমি শুধু থেকে যাব
শহরের ঐ বুকে—
কোন এক ফসিল পরিচয়ে৷

---- নির্মলেন্দু কুণ্ডু



শ্রেষ্ঠ শিক্ষা
       
কিছুদিন আগে মহালয় কেটে গেছে, পূজার গন্ধে ভরে উঠেছে ধরনী
অধীর আগ্ৰহের মুখপানে বসে থাকা বাঙালির বুকে এখন শুধু মায়ের আগমনী।
বিক্ষিপ্ত ছোটো ছোটো কুমোরটুলি গুলোয় মায়ের প্রতিমায় রঙ চড়ানোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে,
অনেকগুলি সম্পূর্ন পরিপাটি করে নতুন আসবাব-পত্রের মতো মুড়ে রেখে দেওয়া আছে ;
বোধ হয় দূর কোথাও পারি হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিমার এই হাল
আর তো বেশি হাতে সময়ও নেই ওদের, কারণ চতুর্থী কাল
পাড়ায় পাড়ায় মাইকে গান বাজানো শুরু হয়ে গেছে,
সারা শহর যেন নতুন হৈ-হুল্লোরে মেতে উঠেছে।
প্রায় প্রতি মন্ডপের পাশেই বিভিন্ন স্টল বসেছে,
খাবার ছাড়াও নানান জিনিস সেখানে আছে
তবে ভীড় খাবারের স্টল গুলোতেই বেশি জমেছে
ছেলের দলেরা আজ থেকেই পূজার আনন্দে মেতে উঠেছে।
তবে ওখানে ওটা রাস্তার এককোনে কে বসে আছে?
ছেঁড়া-ফাটা জামা পরা জীর্ণ চেহারার একটা বাচ্ছা ছেলে যে !
বিকেল-সন্ধ্যার মিলনক্ষেত্রে চোখটা অনেকটা ধোঁয়াশাবৃত্ত হয়ে উঠেছিল,
ল‍্যাম্প-পোস্টের আলোটা জ্বলে উঠতেই বুঝলাম আমার চোখ ভুল দেখেছিল
বৃদ্ধ লোকটি এতটাই জীর্ণ যে তাকে বাচ্ছা ছেলে ভেবেছিলাম,
দূর থেকে তো!নয়তো আলো-অন্ধকারের খেলায় ধোঁয়াশার ধাঁধায় হারিয়ে গিয়েছিলাম !
সে যাই হোক,আলো জ্বলতে ও তার কাছে আসতে বুঝলাম বয়স ৭০ পেরিয়েছে
সবাই যখন আনন্দে মাতোয়ারা , এমন করে রাস্তার এককোনে কেন সে বসে আছে?
বৃদ্ধকে প্রশ্নটি করা মাত্র বৃদ্ধ হেসে উঠল,
আমি হতবাক হয়ে উঠলাম সে আমার দিকে স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখল
আমাকে সে বলল ,আমি ভিখারী এখানেই আমার ঘর
আমি প্রশ্ন করলাম,এখানে বলতে কোথায় তোমার ঘর?
সে আবার হেসে বলল,এই যে তুমি দেখতে পাচ্ছ না রাস্তা,আকাশ এগুলো তো সব আমার ঘরের অংশ
মুখটা ছোটো হয়ে গেল আমার, বুঝলাম বুড়োটির কোনো ঘর নেই রাস্তাতেই কাটায় বোধহয় এই ভিখারীর বংশ !
আমি মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছিলাম সে হঠাৎ ডাকল
আমি বললাম কী টাকা চাইত? দাঁড়াও, সে মুখের ওপর না বলল
বুঝলাম না ব‍্যাপারটা,রাগে গা কস-কস ক‍রতে লাগল
ভাবলাম ভিখারীটা আমায় এমনভাবে অপমান করল !
তারপর বললাম, তাহলে তোমার কী চাই?
সে বলল, ১০টা মিনিট আমায় সঙ্গ দেবে ভাই !
আমি মনে মনে ভাবলাম, এক বুড়ো ভিখারীর সাথে শেষে রাস্তায় গল্প করব
সবাই কী ভাববে,দাঁড়াব না চলে যাব !
তবুও উদ্বিগ্ন মন নিয়ে ভিখারীর কাছে দাঁড়িয়ে গেলাম
সে বলল, আমায় অনেকে ভিক্ষা দেয় আবার কেউ বলে "মাফ করো চললাম"!
কিন্তু কেউ কোনোদিন সঙ্গ দেয় না, পাশে এসে কথা বলে না
দয়া সবাই দেখাতে জানে তুমি কী বলতে পারো, সম্পর্ক গড়তে কেন পারে না?
শুধু আমার ঘর নেই, দামি পোশাক নেই আর তাদের ঘর, দামি পোশাক আছে নাকি তারা মনুষত্ব জানে না?
নাকি পৃথিবীর সকল মানুষ আমার ভাই,বন্ধু এই কথা মিথ্যা হয়ে গেল
তার প্রত্যেক কথা আমার বুকে তীরের মতো বিধলো।
তবে তার শেষ কথাটি শুনে আমার মান-সম্মান, অপমান,ভয়, ঘৃণা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, লজ্জা প্রায় নিমেষে উধাও হল সর্বস্ব
কারণ শেষ কথায় সে বলেছিল, তবে আমি কীসের তরে সারা পৃথিবীকে ঘর বানিয়েছি আর সারা পৃথিবীবাসীকে
আমার এই ঘরের সদস‍্য ?
যেখানে কেউ পর নয় সবাই মোর আপন,
প্রতি মানুষ মোর আত্মীয়, প্রতি মানুষ মোর স্বজন।
এর পরক্ষনেই বুড়োর হাঁপাতে হাঁপাতে কী যেন একটা হয়ে উঠল ?
আমি তখনও তার কথাগুলোয় বিভোর হয়েছিলাম, পাশ দিয়ে কারা চিৎকার করল ?
হঠাৎ ওই বাক্যালাপের ঘোর কাটতে শুনলাম ,সবাই বলছে
যা-যা শ্যাম বুড়ো মনে হয় হার্টাট্যাকে মরেছে !
হাসব না কাঁদব ভেবে পাচ্ছি না, আমি হয়ে উঠলাম প্রায় পাগলের মতো
যে মানুষটির চিন্তাধারা এত বৃহৎ, যে মানুষটির মন কোটি মানুষের চেয়ে মহৎ সেই মানুষটি আজ মনের আঘাতে মৃত ?
হে ঈশ্বর তোমার একি শাস্তি, নাকি বুঝিয়ে দেওয়া পৃথিবীকে !
যেখানে কোটি মানুষ দ্বগ্ধে দ্বগ্ধে মরে সেখানে বৃদ্ধটি মরল এত শান্তিতে
তবে কোটি প্রনাম তব চরণে,ওই বৃদ্ধের আমি আজ ছাত্র হয়ে গেলাম,
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের কাছে আমি আজ সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা পেলাম।।
--- গোবিন্দ চক্রবর্তী







ছুটি
             

মস্ত এক বাজ ডানা মেলে উড়ে চলে
তার ওপর ভর করে হাঁটে টুকরো টুকরো নতুন আকাশ
নীল আকাশ।
চোখে আঙুল দিয়ে চোখ বুজে থাকলে 
ছাদে শুকোতে দেওয়া আমের আচার ও  বিশ্বকর্মা পুজোর ঘুড়ি 
উড়ে চলে যায় মনের কল্পনার দরজা ছাড়িয়ে 

বাস্তবের 
পোড়া মাটির গন্ধে মেশানো থাকে
রাত দুটোর ভয়, কাঁচা ইলিশের আঁশটে গন্ধ 
লন্ঠনের মৃদু লালচে আলো। 
সিড়ি ভেঙে এক জোড়া রোদ্দুর এসে পড়লে
ছোটছোট চোখ হাসি হয়ে মিলিয়ে যায় 
মনখারাপে আবার ফিরে আসে সন্ধ্যার আবছায়।

                                     --দিব্যায়ন সরকার




গল্প-গাথা


রঙীন চশমার রাজত্ব
 কিংশুক সাঁই
এক রাজ্যে শেষপ্রান্তে কয়েকটি বন পাশাপাশি ছিল। সেই বনগুলির একটি ছোট বন ছিল মেঠোবন। সেই বনে থাকত একটি সিংহ। কিন্তু, সিংহ বনের রাজা ছিল না। অর্থাৎ সে তার প্রভুত্ব ফলাত না। সে নিজের গুহায় শান্তিতে থাকত। কোনো ঝামেলা করত না। বনের রাজত্ব ছিল কিছু শেয়ালের উপর। তারা নতুন দায়িত্ব পেয়ে নিজেদের অহংকারে মত্ত ছিল। সিংহ সব দেখত, কিন্তু কিছুই বলত না। সে কেবল মনে মনে হাসত। সিংহ বনের শেষপ্রান্তে গিয়ে অন্য বনের পশুদের খেত, কিন্তু সে সকলকে মারত না। আর নিজের বনের পশুদের উপর আক্রমণ করত না। একসময় সেই রাজারা চরম অত্যাচার শুরু করে। বনের অন্য পশুরা সিংহের কাছে গিয়ে নালিশ জানায়, ওই শেয়ালদের বিরুদ্ধে, এবং তাকে বলে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু সিংহ কোনো ব্যাপারে কান দিত না। কারণ সে এসব পছন্দ করত না। তাদের অহংকার ও সীমা একদিন চরমে পৌছায়। একদিন তারা সিংহ এর উপর প্রভুত্ব ফলাবার চেষ্টা করে। তারা সিংহের যাবার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। একবার গুহার দরজায় বৃষ্ঠ্যা ত্যাগ করে আসে। তারা ভুলে যায় নিজের পরিচয়। সিংহের উপর নিজের অধিকার কায়েম করার চেষ্টা করে। সিংহ মনে মনে হাসে আর ভাবে, " অহে আমার তোমার মধ্যে কি পার্থক্য তুমি নিজেই জানোনা। " নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা কর।" একদিন রাজারা সব সীমা লঙ্ঘন করে। সিংহ একটা শিকার করে খাচ্ছিল, তখন তারা সিংহের খাবারের উপর গিয়ে দলবলে বৃষ্ঠা ত্যাগ করে। শান্ত সিংহ এবার ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, " বলে অনেক সহ্য করেছি। তোরা কি ভেবেছিস তোরা আমার খাবার বন্ধ করবি, তোদের মতো আহাম্মক আর চুনোপুঁটিরা যদি আমার মতো সিংহের খাবার বন্ধ করে মেরে ফেলতে পারিস তাহলে তো জগৎটা মিথ্যা হয়ে যাবে। অতই সহজ ব্যাপার। " ক্রুদ্ধ সিংহ গর্জন করে ওঠে। তার সেই ভয়ানক গর্জনে কিছু শেয়াল সেখানেই ভয়ে মারা গেল। আর বাকি কিছু শেয়াল হুড়োহুড়ি করে পালাতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই আছড়ে পড়ে মারা গেল আর বাকি কয়েকজন নেতাগোছের যারা ছিল, সিংহ তাদের বুক চিরে হত্যা করল। বনেরা অনান্য পশুরাও এসে জড়ো হয়েছে তখন। তারা সকলে খুশি হল এবং বলল, এতদিনে শান্ত হল বনটা। তারা বলল, এই জন্য বলে রাজত্ব রাজারই মানায়। যাকে তাকে, আহাম্মককে দিলে এই হয়। ক্ষমতা পেয়ে তারা নিজেদের আসল চরিত্র ভুলে যায়। আর এই হয় পরিণাম। সিংহ নিরব থাকলেও সে রাজাই থাকে। তবে সিংহ সকলকে বলল, তোমরা এতদিন সব সহ্য করে যাচ্ছিলে,কবে আমি প্রতিবাদ করব। কিন্তু কে কবে প্রতিবাদ করবে এটা ভেবে বসে থাকলে হবে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ সকলকেই করতে হবে এবং সঠিক সময়ে। নয়ত ওরা এভাবেই লাফিয়ে বেড়াবে, এবং এই রকম সকল বনই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। " সকলে শান্তিতে বনে বসবাস করতে লাগল....



দিদির পত্র
শ্যামাপদ মালাকার


ভাই শ্যাম,
               এই বিবেচনা করিও না, যে দিদি অনেক কাল পর স্মরণ করেছে তোমায়।
বেশী কিছু বলবো না--, না পড়ে অধিক ভেবে দিদির অন্তরের কথা কখনো ত্যাগ করো না।
তুমি আমার জীবনে সত্য,-- তাই দুটো কথা বলে যাব ভেবেই- তোমাকে আজ এই পত্র লিখতে বসা।

পূর্বে উদিত নিত্য অরুণীর ন্যায়- এই রুঢ়া-রসহীনা সিদার বুকে আর পাঁচটা মেয়ের মতোই আমার জীবন কাটছিল।
আমি কখন ভাবিনি-- এই হতবাক হতশ্রী 'সিদা' কোনোকালে আমার বসবাসের উপযোগিনী হয়ে উঠবে।
সর্বক্ষণ একটা স্তব্ধ পরিস্হিতি আমার চারিপাশে ঘুরে যেন বেড়াত।
মনে মনে ভাবতাম,-আমার বালিকা স্বভাব বলেই কি সকল বস্তু আমার সংস্পর্শে এমন স্বাদহীন হয়ে উঠছে! নাকি,--সকল বস্তুর স্বাদ ও গুণাগুনের সঠিক বিচার শক্তি আমার মধ্যে অনুপস্হিত? অর্থাৎ, এইরকম তর্ক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে আমার জীবনপ্রবাহ অবিচ্ছেদ্য ভাবে বয়ে চলছিল।

কিন্তু আমি আজও নিঃসাড়-নির্বাক! আমি কেন নিঃসাড় কেনই বা নির্বাক! তা তোমাকে ব্যক্ত করতে পারবোনা,
কারণ সেই শীর্ণাপল্লী সিদা- আমার মরমে যে লাজের বাঁধ বেঁধেছে তা শিশিরসিক্ত দূর্বার ন্যায়, মুখ তুলে আজও তার পানে চাইতে পারিনা।

সেদিন দেখলাম,--রক্তিমাভা ত্যাগ করে রবি যে পূর্ব হতে  অধিক তফাতে গিয়েছে তা নয়,- তফাৎ কিঞ্চিৎ, শুধু এইটুকু সময়ের ব্যধানে- - -আমি বড়ই চঞ্চল বড়ই অস্হির হয়ে উঠলাম!।
সেদিন আমি পরিষ্কার করে দেখেছিলাম, সমটা ছিল- শীতের শেষ বিদায়বার্তা ও বসন্তের আগমন বার্তার ঠিক মধ্যবর্তীক্ষণ। যখন সারাদিনের ক্লান্তি নিবারণার্থে রবি পশ্চিম দিগন্তে-- লাল আসনে বসবার লাগি সবেমাত্র উদ্যোগ করছে- সেই ক্ষণে গ্রামের নিকটস্হ- শুভ্র, অপ্রশস্ত দীর্ঘিকার তীরে গিয়ে বললাম।
অভ্যন্তরস্হে কান পেতে শুনলাম-- একটা সাজ সাজ রবের প্লাবন বয়ে চলেছে! কার সাজ - কিসের সাজ - কেই বা সাজবে! আমি লোভ নিবারণে অসমর্থ হয়ে, সাধ পুরণের জন্যে নিকটস্হ অন্তরাল হতে পুরোটাই দেখতে লাগলাম!।

দেখলাম-- আমার এই ক্ষীণাপল্লীর অন্তর মহলে অজস্র কক্ষে-- হীরক দীপ, ফটিক দীপ, রত্ন দীপ, আপন আপন গুণ প্রকাশ করে উজ্জ্বল এক আলো বিকীর্ণ করে চলেছে, আর সেই স্হলে, সকল শ্রেণীর বৃক্ষ এসে এক একটি কক্ষ অধিকার করে নিচ্ছে। কক্ষমধ্যে দাস-দাসীর সংখ্যাও কম নয়, ওরা মধ্যে মধ্যে কেউ কেউ আবার মুকুলিত তরুর শাখা প্রশাখায়- কেউ স্নিগ্ধবারি সিঞ্চন করছে, কেউ বা রজত দীপের সেক- কেউ বা গন্ধবারির ছটা, কেউ বা আবার তীব্র করছে- রত্ন দীপের শিখা!।
আজ কেউ কারু প্রতি চেয়ে আর দেখছে না, কারু প্রতি অভিযোগ তুলে মন ভারী করছে না,-- আজ দেহ যত্ন করার দিন- আজ দেহে গন্ধবারি ছিটাবার দিন,- সবাই আপনার ভাবে বিকশিত - আপনার লাজে মুকুলিত, আজ সবাই সকলের প্রতি চেয়ে নিজ নিজ অঙ্গরসের গন্ধে টল-টলায়মান ঢল-ঢলায়মান!।

সকল কক্ষান্তর বাহিত- রুপ, রস, গন্ধ, বর্ণ একত্রিত হয়ে কক্ষসংলগ্ন দীর্ঘ প্রাঙ্গণ এক রাম-ধণুর ন্যায় অনন্ত তরঙ্গের সৃষ্টি হতে লাগল।
এই রহস্য বিন্দুমাত্র আমি উপলব্ধি করতে পারলাম না। তাছাড়া কেনই বা সকল বৃক্ষলতাদি অনন্ত রঙ্গরসে মেতে উঠেছে! আমি আরো নিকটে গেলাম। গিয়ে, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কিছু কথোপকথন শুনতে লাগলাম।
কেউ বলল,--"এইবার আমি অধিক পুষ্পিতা হবো।" কেউ বলল,--"আমার দেহে আর একটু রঙ ছড়ায়ে দাও।" কেউ বলল,--"অধিক পুষ্পিতা হয়ে কাজ নেই, অন্তর শুকিয়ে যাবে!"।
আমি আর বিলম্ব করলাম না, সকল দর্শনই আমার নিকট অপরিষ্কার হয়ে উঠতে লাগল। তাই রঙে-রসে-লাজে রাঙা এক মল্লিকাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম,--"ভাই, আমি তোমাদের কাজ কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা, এই সকল কর্ম কি? এবং কেনই বা করছো কার জন্যে করছো,-তা যদি অল্প কথায় প্রকাশ করো-- বড় প্রীতা হবো।"

সে বলল,--"আজ তো আমাদের শাখা-প্রশাখা যত্ন করার দিন, যত্ন না করলে- বসন্তে তার সম্মুখে মুখ দেখাবো কি  করে?"।
আমি সেদিন বলেছিলাম--"'তারে' মুখ দেখায় বা তোমাদের লাভ কি হবে?"
সে বলল,--"বা! দেহ সুন্দর করে বিকশিত না করলে-- যদি সে আমায় ত্যাগ করে!"।
সেদিন একথার অর্থ না বুঝলেও, শব্দটা অন্তরস্হল পর্যন্ত ধ্বনিত হয়েছিল! সে কথার অর্থ আমি আজ বুঝেছি, আজ আমিও সেজেছি- সাজতে শিখেছি- সাজাতেও শিখেছি।
এখন শুধু একটাই ভয়- ভাল করে সেজে- দেহ বেশ করতে না পারলে সে যদি আমায় ত্যাগ করে!
যেদিন প্রথম সাজ সেজে শুধু তার জন্যে ঘরের বাইরে এলাম- সেদিন হতে আমার সাজবার কারণ খুঁজে, বড় বড় সমাজ পতিরা সমালোচনার ঢেউয়ে সমস্ত গ্রামকে একত্রিত করতে লাগলেন। সেদিন কিছুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে-- সকল সমালোচনার ঢেউ দু'পায়ে মাড়িয়ে নব নব সাজে সেজে শুধু চরণে মরার বাসনা রাখলাম।
সেদিন হতে আজ পর্যন্ত যে পথে হেঁটে চলেছি- তার অনেকখানি পথ অতিক্রম করে ফেলেছি।

লোকমুখে শুনে আসছি-"ভালবেসে ঘর বাঁধলে নাকি সুখের মাত্র কমে যায়!"
সেদিন হয়তো পারবোনা তরুর ন্যায়--শাখা-প্রশাখায় রঙ লেপে গা'-গতর সুন্দর করতে।
সেদিন নিশ্চিৎ সে আমায় ত্যাগ করবে জানি।  যাকে নিয়ে এতকাল মরেছি, তাকে ছাড়া আর বাঁচতে চাইনা।
আমি জানি,- সে আমায় ত্যাগ করলেও-- "সে" আমায় কখন ত্যাগ করবেনা!

তাই মরার আগে তোমাকে দুটো কথা বলে যায় ভাই, সেদিন তাকে বলিও,--" দিদি যতবার সাজিয়াছে- শুধু তোমারি জন্য-- দিদি যতবার হাঁসিয়াছে শুধু তোমারি জন্য!"

মৃত্যুর সময় তোমাদের কাছে পাবোনা, শুধু মনে করো,-"মৃত্যুর পূর্বে দিদি হয়তো-- হিরাপুর শিয়রে ঢলিত সপ্তর্ষির প্রতি একবার নিবিড় ভাবে চেয়েছিল!"।।

দিদির দ্বিতীয় পত্র
"""''''''''''''''''''''''''
শ্যামাপদ মালাকার

দিদির প্রথম পত্র পাওয়ার পর অনেক কাল উনার কোনো সংবাদ পাইনি। সংবাদ পাইনি বলে যে দিদির  সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কের অভাব গড়ে উঠেছিল তা নয়,
দু'জন দুইমেরুতে থাকলেও- আমাদের সম্বন্ধ ছিল নিত্য।
কিন্তু আমি এমনেই এক হতভাগা,- দিদির সাক্ষাত লাভ হতে চিরকাল বঞ্চিত রইলাম!
শুনেছি, তিনি নাকি এক অভূতপূর্ব রুপের ছটা নিয়ে সিদাগ্রামে এসেছিলেন। এটাও শুনেছি, উনি সিদাবাসী এক নব যুবার প্রতি গভীর প্রণয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।
এক অনন্ত রুপরাশির ছটা-- দুই প্রণয়াবদ্ধকে অবলম্বন করে গ্রামস্থ সকল কামিনীগণও উানার- চরমতম শত্রু হয়ে উঠেছিল।

যাই হোক, তিনি আমায় দূর থেকে দেখে কেমন করে চিনে নিয়েছিলেন, তা আমি আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।

- আর বিলম্ব না করে,-- দিদি দ্বিতীয় পত্র যে আমাকেই লিখে গিয়েছেন, তা আমি লোখমুখে টের পেয়েছিলাম। সেই পত্রের কথায় আজ আমি ব্যক্ত করতে চলেছি। যা উনার মৃত্যুর কয়েক মুহুর্ত আগে --আমার বন্ধুু- অচিন্তর হাতে সেই চিঠি তুলে দিয়ে গেছেন । পরবর্তী ক্ষেত্র খবর পেয়ে আমি, বন্ধুর নিকট হতে সেই পত্র উদ্ধার করি।






নীলমন ও লালমন
লেখক –পবিত্র চক্রবর্তী

চন্দ্রগড়ের দুই রানীর এমন ভাব সত্যিই বিরল ! তারা প্রায় সব কাজ নিজেদের মধ্যে যুক্তি পরামর্শ করে সমাধা করতেন ।  তাদের মধ্যে যে গুটিকয় ঝগড়া বেধে যেত তা নিতান্তই বাচ্চাদের মত । এই তুমুল ঝগড়া তো পরক্ষণেই রাজপ্রাসাদ মাত করে হাসাহাসি , এ ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার । রাজা এদের নিয়ে পরম সুখে রাজ্যের প্রজা পালন করতেন ।
কিন্তু এত সুখ মানুষের কী সয় ! বড়রানীর সন্তান হওয়ার পর থেকেই ছোটরানীর মনে লাগে আঘাত আর তা ক্রমেই ঈর্ষায় পরিণত হয় । বড়রানী কিন্তু ছোটকে যতই কাছে টানতে চান ততই সে ছিটকে বেড়িয়ে যান ।  রাজা কথা বলতে চাইলে অসুখের ভান করে শুয়ে থাকে । ক্রমশ সুখের চন্দ্রগড়ে নেমে আসে দুঃখের ছায়া !

দিন যায় । যায় কাল । বড়রানীর পুত্র সময়ের তালে বড় হতে থাকে । ভাগ্য বিড়ম্বনায় ছোটরানীর আর সন্তানই হয় নি । রাজকুমারও কিন্তু এই ছোটমাকে বেশী ভালোবাসে । বড়রানী বা রাজার সাথে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও কুমারকে ছোটও দূরে ঠেলে দিতে পারতেন না । তবুও ভাল ! এই মনে করে রাজা মনে শান্তি পান ।
চন্দ্রগড় রাজ্যের শেষপ্রান্তে বাস করতেন এক সাধু । একদিন সাধু রাজমহলে এসে সবার সাথে সাক্ষাৎ করেন , আহার সমাপন করে অতি তৃপ্ত হন । বিদায়কালে বলে যান , “ বিপদ আসন্ন !” কিন্তু কীসের বিপদ তা জানার পূর্বেই সাধু অট্টহাসি হেসে বিদায় নিলেন ।

কিছুদিন পর থেকেই চন্দ্রগড়ে শুরু হয় অশান্তির মহামারী । কাতারে কাতারে প্রজারা অযথা মারামারি কাটাকাটি সামান্য কারনেই শুরু করে দেয় । এর রেশ মহলেও পরতে শুরু করে । রানীদের মধ্যে সেই পুরনো বিবাদ আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয় । এমনকি প্রিয় রাজকুমারও ছোটরানীর দু’চোখের বিষ হয়ে যায় ।
বিষণ্ণ রাজাকে তখন রাজকুমার জানায় , সে এ রোগের ওষুধ আনবেই । রাজা বৃদ্ধ হয়েছেন । সম্মতি প্রকাশ করাতে সেই পূর্ণিমার রাতেই অশ্ব নিয়ে রাজকুমার বেড়িয়ে পরে ।
বলল তো বটে কিন্তু এ হিংসা-অশান্তির ওষুধ কী ! তা সে নিজেও জানে না । আগে কেউই বার করতে পারে নি ।  অনেকটা পথ অশ্ব ছুটিয়ে শ্রান্ত হয়ে পরে আদরের রাজপুত্র । শেষে ক্লান্ত রাজপুত্র অশ্ব থেকে নেমে এক গাছের কোটরে সে রাতটা কাটায় ।
পূব আকাশ লাল হতেই রাজপুত্রের ঘুম ভাঙে কিছু কিচির মিচির শব্দে । ভাল করে কান পাততেই শোনে লালমন ও নীলমন দুই পাখী নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে –
“ টি টা টই টুরুল –
রাজা বড়ই সরল ।
নরম হাতে মিষ্টি ভাষা –
সংসারে এ নিয়ম ভাবাই দুরাশা !”
এ কথা শুনে রাজপুত্র কোটর থেকে বেড়িয়ে পাখীদের বলে –
“ লালমন নীলমন –
কথা বল এ কেমন !
দিলে ভালোবাসা –
রাজ্যে শান্তি এটাই আশা ।”
 এ কথা শুনে পাখীরা হেসে রাজপুত্রের কাঁধের উপর উড়ে এসে এক পরামর্শ দেয় । নানারকম শলা-আলোচনা শুনে রাজপুত্রের মুখ খুশীতে ভরে ওঠে । হয়ত ওষুধ পেয়েছে , দেরী করা উচিৎ হবে না । তাই সে প্রবল বেগে অশ্ব ছুটিয়ে টগ বগিয়ে তৎক্ষণাৎ রওনা দেয় রাজপ্রাসাদের দিকে । আর ফিরেই সে রাজাকে সব ঘটনা বিস্তারিত বলে । রাজাও বুঝতে পারেন সব । চমৎকার ওষুধ । তিনি ঘোষকদের বলে দেন তার বার্তা রাজ্যবাসীকে জানিয়ে দিতে ।
পরদিন সকালেই ঘোষকের দল রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করে –
“ শোন শোন সবে শুন দিয়া মন –
যে মাতা-পিতা হত্যা করিবে সন্তান আপন ,
মহারাজা দিবে তাকে সহস্র কোটি ধন...।”

ঘোষণা শুনে প্রজারা ভাবল রাজা উন্মাদ হয়ে গেছেন ! তখনই তারা একত্রিত ভাবে হাতে হাত মিলিয়ে রাজসভায় আসে । এসেই শুরু করে দেয় প্রবল প্রতিবাদ ।  এমন সিদ্ধান্ত মহারাজের অন্যায় ! নিজ সন্তান হত্যা ! রাজা তাদের ক্ষান্ত করে বলেন –
“ ঘোষকের ঘোষণায় কেন এত বিচলিত ?
আপন সন্তানের প্রানের তরে মন বিগলিত !
পূর্বে , শুধুই সকলেই অপরকে হানিত –
আজ দেখ , সব ভুলে সবে হয়েছ মিলিত ।”
রাজার এহেন কথায় রাজ্যের সকলে বুঝতে পারে সংসারে দুঃখ থাকতেই পারে । কিন্তু তার অর্থ হিংসা নয় ! জীবন অতি মূল্যবান । আর সম্মিলিত প্রয়াসেই সব সমাধান হয় । এত বছর পরে রানীরাও বোঝেন  তাদের ভুল । লজ্জায় ছোটরানী মাটিতে মিশে যাবার যোগার । কিন্তু ছোটর এই ভুলকে বড়রানী , রাজা ক্ষমা করে দেন ।
ছোটরানী বুকে জড়িয়ে ধরেন রাজকুমারকে পুনরায় । ধীরে ধীরে ফিরে আসে শান্তিধারা গোটা রাজ্যে ।।



বনসাই     
সৌগত চ্যাটার্জি
হলুকাকুকে পাড়ার সবাই প্রফেসর হলু বলে ডাকলেও আমরা কয়েকজন হলুকা বলেই ডাকি।শুনেছি কাকা অন্য এক রাজ্যে গবেষণা করতে গেছিল।ওখান থেকে গ্রামে ফিরে নিজের বাড়িতে একটা গবেষণাগার তৈরী করে।সেখানে কিসের গবেষণা যে হয়, তা নিয়ে আমাদের গ্রামের সবারও গবেষণা কম ছিল না।আসলে এ’পাড়াতে থাকলেও হলুকা গ্রামের সবার সাথে সেরকম ভাবে মিশত না।মাসে মাত্র একবার বাড়ির বাইরে বের হত, তাও ঘড়ি ধরে ঠিক সকাল আটটা বেজে সাতাশ মিনিটে।দু’মিনিট হেঁটে আসত অসকা নাপিতের সেলুনে।চুল ভালোভাবে কাটা হোক কি না হোক, কাকা ঠিক সাড়ে এগারো মিনিট পরে চেয়ার ছেড়ে অসকাদার হাতে একটা পঁচিশ টাকার চেক গুঁজে আবার দু’মিনিট হেঁটে বাড়ি মানে গবেষণাগারে ফিরত।আমাদের অসকা নাপিত প্রথম প্রথম এই পঁচিশ টাকার চেক পেয়ে অবাক হয়ে দু একটা প্রশ্ন করলেও হলুকা একই উত্তর দিত,‘তুমি বুঝবে না, দিনকাল খুব খারাপ, নো ক্যাশ ট্রানজাকসন, ওনলি চেক সব হিসাব হিতে হয়।’শুনেছি কাকা আমাদের পাড়াতে আসার পরে প্রথম কয়েকমাস সব্জিকাকু, বা দোকানকাকুদের কাছে প্রতিদিনের জিনিস কেনার সময় চেক পেমেন্ট করতে আরম্ভ করেছিল।শেষে সবাই মিলে কাকিমার কাছে ব্যাপারটা জানাতে তার উদ্যোগে সব কিছু ঠিকঠাক হয়।
একদিন খেলার সময় মাঠ থেকেই গবেষণাগারের জানলা দিয়ে ধোঁয়া উঠতে দেখে আমারা সবাই মিলে কাকুর বাড়িতে যাই।কাকিমা তখন নিচে ছিল।তাকে ব্যাপারটা জানাতে আমাদের সবাইকে নিয়ে গবেষণাগারে ঢুকিয়ে দেয়।আমাদের ওভাবে দেখে কাকু প্রথমে রেগে গেলেও পরে আমাদের সঙ্গে খুব ভাব হয়ে যায়।তারপর থেকে আমারা প্রায়ই কাকুদের পেল্লাই বাড়িতে পৌঁছে যেতাম।কাকু-কাকিমার কোন ছেলে মেয়ে না থাকাতে আমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসত।কাকুর বাড়ির মধ্যে গবেষণাগারেই আমাদের যাতায়াত ছিল সব থেকে বেশি, কাকুর ঐ ঘরটাও ছিল অদ্ভুত রকমের।নানা রকমের যন্ত্রপাতি, সেই সঙ্গে খাঁচার ভিতর বিভিন্ন ধরণের জন্তু।পরে কাকুর মুখে শুনেছি,‘যন্ত্র আর জন্তু দুটোই এক, সুযোগ পেলেই ব্যাস।’
আমাদের খেলার মাঠটা ছিল কাকুর গবেষণাগারের জানলার এক্কেবারে সোজাসুজি। মাঝে মাঝেই ঐ জানলা খুলে আমাদের কারোর নাম করে কিছু না কিছু নিয়ে যেতে বলত।এই তালিকায় সাপ, টিকটিকি, গিরগিটি, মশা, মাছি, ব্যাঙ,ইঁদুর, আরশোলা কোন কিছুই বাদ যেত না।এই সবকিছু নেওয়ার চক্করে নিজেরা যে কত রকমের সমস্যাতে পড়েছি তার আর হিসাব নেই।তবে কাকার বলা কোন জন্তু ধরে গবেষণাগারে গেলেই, আমাদের হাতে অদ্ভুত আকৃতির একটা চকলেট দিয়ে বলত, ‘এটা খেলেই এক পার্সেন্ট বুদ্ধি বেড়ে যাবে।’আমরা তার পরের দিনেই কার কত পার্সেন্ট বুদ্ধি বাড়ল আর বাড়া বুদ্ধির জন্যে সহজে কি পড়া দেওয়া গেল, তার গবেষণা আরম্ভ করতাম।একবার কেন্নো দিতে গিয়ে কাকাকে জিজ্ঞেস করি,‘তুমি ঠিক কিসের গবেষণা করছ আমাদের একটু বলবে?’কাকা হেসে উত্তর দেয়,‘বনসাই প্রানির।’
-মানে?
আমাদের সবার প্রশ্নটা নন্টে করে।কাকা সঙ্গে সঙ্গে একটা মাটির চায়ের ভাঁড় বের করে আমাদের দেখিয়ে বলে,‘এটা কি বলত?’
-এটা তে চায়ের ভাঁড়।
-তার ওপর?
-একটা প্ল্যাস্টিকের গাছ।
-না।ভালো করে দেখ।এটা প্ল্যাস্টিকের গাছ নয়।
কাকার কথা শুনে ভালো করে দেখতেই আমার চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেল।চায়ের ভাঁড়টাতে একটা বটগাছ পোঁতা, তাতে আবার ঝুড়ি নেমে আছে।আমি কাকুর কথাগুলো বিশ্বাস না করে ভাঁড়টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলাম।ভাঁড়টার ওজন খুব কম, আমার হাতে কিছু যে আছে সেটাই মনে হলনা।তাও আবার ভালো করে দেখে বললাম,‘এটা প্লাস্টিকের গাছ।’কাকা হেসে চায়ের ভাঁড়টা আমার হাত থেকে নিয়ে গাছের পাতাতে হাত দিতে বলল।আমি হাত দিয়ে বুঝলাম, প্লাস্টিক নয়।আসল পাতা।
-এটা একটা সত্যি গাছ।কাকা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল।
গাছটা ইঞ্চি পাঁচ লম্বা, অথচ চারদিকে ঝুড়ি নেমে আছে।আমরা সবাই ঐ গাছটার দিকে ওরকম ভাবে দেখছি দেখে হলু কাকা বলে,‘ভাবছি এবার বনসাই প্রাণি করব।’
-বেঁটে মানুষ তো আছে।আমি বললাম।
কাকা হাসতে হাসতে বলে,‘হাতি আছে?বাঘ আছে? আমি বনসাই হাতি, বাঘ তৈরীর চেষ্টা করছি।ধর যদি একটা বনসাই হাতির জন্ম দেওয়া যায়, কি সুন্দর হবে।ঘরে ঘরে সবাই বাঘ পুষবে, হাতি পুষবে।কেউ ভয় পাবেনা, আবার কথায় কথায় হাতি পোষার গর্বও করতে পারবে না।পোষার খরচও কমে যাবে, বাঘ খাবে একটা মাছ বা একটা ব্যাঙ, হাতি খাবে একটা শসা বা একটা কলা।বাড়িতেই থাকবে, ঘুরবে ফিরবে।’
-তাহলে আমরা বিড়াল আর বাঘের সাথে কিভাবে পার্থক্য করব?
আমার প্রশ্নটা শুনে কাকা উত্তর দিল,‘কেন ম্যাউ আর হালুম দিয়ে।’
এর পরের কয়েকটা দিন আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় বস্তু হয়ে উঠল বনসাই বাঘ আর বনসাই হাতি।হলুকাকে আমরা তার গবেষণার জন্যে অনেক ভাবে সাহায্য করেছি এবং করছি।সবাই ঠিক করলাম হলুকার কাছে একটা করে বনসাই বাঘ বা হাতি চেয়ে নেব।রাতেও স্বপ্ন দেখলাম আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনসাই বাঘ, সিংহ বা হাতি।শুঁড় তুলছে, হালুম হালুম করছে।তবে খিদে পেলে হাতি খাচ্ছে একটা শসা বা একটা কলা আর বাঘ খাচ্ছে একটা ব্যাঙ।
এমনি ভাবেই অপেক্ষাতে আমাদের দিন কাটছিল।একদিন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।খেলার মাঠে ছোট্টু এসে বলে,‘জানিস খেলতে আসবার আগে হলুকাকার বাড়িতে গেছিলাম, কাউকে দেখতে পেলাম না।’ কাকা কাকিমার কেউ বাড়িতে নেই এঘটনাটা বিরাট ঘটনা।দুজনের কেউই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না।তাও আমি বললাম,‘কাকা হয়ত তার গবেষণাগারে, আর কাকিমা কোথাও গেছে।’
-তা তো কখনোও হয়না, কাকিমা তো বাড়িটা ছেড়ে কোথাও যায় না।
আমাদের সবার মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করতে আরম্ভ করল।ঠিক করলাম কাকার বাড়ি এখনিই যেতে হবে।যাওয়ার পথে অসকাদার সঙ্গেও দেখা হল। ‘কোথায় যাচ্ছিস রে এমন ভাবে দল বেঁধে?
-হলুকার বাড়ি।পটাই বলে উঠল।
-কাকার গত কাল চুল দাড়ি কাটতে আসার কথা ছিল, কি ব্যাপার হল কে জানে আসেনি।গেলে একটু জিজ্ঞেস করবি তো।
আমাদের চিন্তা হতে লাগল।এমনিতে হলুকার বাইরে বেরোনো বলতে এই অসকাদার দোকানে আসা, তাও আবার মাপা দিনে, ঠিক দেড় মাস পর পর।গত কালই সেই দেড় মাসের দিনটা ছিল।আমাদের মধ্যে ছোট্টু বলে উঠল,‘কাকা একটা সলিউসনের কথা বলছিল, মাথায় লাগালে আর চুল বাড়বে না, আবার চুল পড়েও যাবে না।মানে বনসাই হয়ে যাবে।সেরকম কিছু লাগাতেও পারে।’আমরা মাঝখানে ছোট্টুকে থামিয়ে পায়ের গতি বাড়ালাম।সবাই কম বেশি চিন্তিত ছিলাম।বনসাই হাতি, বাঘের জন্যে হলু কাকাকে দরকার।
কিছুসময়ের মধ্যে আমরা হলুকাকার বাড়িতে পৌঁছালাম।অত বড় বাড়ি এক্কেবারে ফাঁকা।আমারা কেউ না কেউ হলুকা হলুকা বলে চেল্লাতে লাগলাম।কেউ কোথাও নেই।কাকিমাকে বাইরে বসে থাকতে দেখতে পেতাম।কিন্তু তাকেও না পেয়ে সোজা কাকার গবেষণাগারে চলে এলাম।আমরা মোটামুটি গবেষণাগারের কোথায় কি আছে জানতাম।কিন্তু চারদিকটা ভালো করে খুঁজেও কাকাকে না পেয়ে আমরা আরো চিন্তিত হয়ে পড়লাম।সেইসময় একটা চাপা শব্দ শুনে বাঁ’দিকে একটা খাঁচার পিছনে তাকিয়ে দেখি কাকিমা একটা বড় টুলের উপর বসে আছে। কিন্তু একি! কাকিমা যে এক্কেবারে  ছোট্ট হয়ে গেছে।ছোট বলে ছোট মাত্র ইঞ্চি দশ লম্বা।আমরা সবাই হাঁটু ভাঁজ করে বসে তবে কাকিমার কথা শুনতে পেলাম।কাকিমার কাছ থেকে শুনে হলুকাকাকেও খুঁজে নিয়ে এলাম।কাকিমাকে ‘কি হল?এত ছোট হয়ে গেলে কি করে?’কাকিমা খুব রেগে রেগে উত্তর দিল,‘সবটাই তোদের কাকার জন্যে, কি একটা গেলালো, নিজেও গিলল, তার পরেই এই অবস্থা, দেখ কত ছোট হয়ে গেলাম।তিনদিন ধরে এই টুলটা থেকেই নামতে পারছি না।’ কাকিমার কথা শেষ হতে না হতেই হলুকা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,‘নিজেও তো লোভে লোভে খেলে তার বেলা?’আমাদের নন্দু দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,‘তোমাদেরও বনসাই!’


হাড়ে দুব্বোঘাসের নাটক
ঘটনা বর্নণায় ----- সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী
------------------------------------------------------
                   স্থান – রাস্তার চারমাথার মোড় দুই অটোস্ট্যান্ডের মধ্যবর্ত্তী
                   কাল – সম্প্রতি ও ভূত কাল
                      পাত্র – ঝিমলি,ও তার মেয়ে , ফুচকাওয়ালা ও সবুজসাথীগন
                      বিষয় – ফুচকার টকজল ও ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল …

                   
সময় – একদা…....
                           

 ফুচকা ঝিমলি হাভাতের মতো খায়, রোজ খেলেও একই রকম কাঙাল মনে করে নিজেকে টকজলে আর আলুতে | সুতরাং যখন তখন যেখানে সেখানে বাটি হাতে দাঁড়িয়ে পড়ে ঝিমলি  | তেমনই এক নতুন মুখ পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে , স্থান বলাই আছে | ঝিমলি বেশ বকবক করা পাবলিক | শাক মাসি, ফুল দিদি, রিক্স কাকু , দোকান দাদু কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয় সে | উদ্দেশ্য তাদের কথা শোনা যেনতেন প্রকারেণ !! ফুচকা দাদাও স্বভাবত বাদ যাচ্ছে না আপাতত | গন্ডেপিন্ডে ফুচকা গেলার মধ্যেও তার কথার চর্বিত চর্বন |

           _____     তা দাদা নতুন তো মনে হচ্ছে এপাড়ায় , কোথা হইতে আসিয়াছ দাদা ? তোমার ঘর কোথ্থেক গো ? ১০ টাকায় কটা দিচ্ছ ?
              ____   মেদিনীপুর , গড়বেতা , দিদি ঝাল টা একটু বেশি দেব ?
             ____  তা দাদা তো দিদির খাসতালুক সম্পর্কিত , হ্যাঁ দাও একটু বেশিই ঝাল , এমনিতেও তো জ্বলছে | তোমার ছোঁয়ায় জ্বলি আরও ,,
                  ফুচকা দাদা হাসে !! কালো চেহারার সপ্রতিভ যুবকের হাসি টা মাকুদের প্রতি কিনা বোঝে না ঝিমলি বা হয়ত তার এমন কথা বলার প্রতিভায়ও হতে পারে !!
এভাবে ঝিমলির ফুচকার বাটি আর ফুচকাদাদার গল্প শুনে খানিক জীবন মেপে নিতে থাকে রোজ | দাদাও কম যায় না , আলুতে বেশ করে ঝাল আর পুরোনো তেঁতুল গোলাজলে তার কলকাতার দিদিকে আনন্দে রাখে সাথে চলে টুকটাক জীবনের গল্প ……….
মাস খানেক পর ………
আর পায় না কদিন ঝিমলি তার ফুচকা দাদা কে , উধাও !! বেশ কিছুদিন পর তা প্রায় মাস দুয়েক হলো হঠাৎ ঐ যে সেই দাদা যাচ্ছে যে ফুচকার ঠেলা নিয়ে ঝিমলি স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ,
    ----- ও দাদা হাওয়া খেয়ে উড়ে গেলে যে ! আসছ না আর আমাদের তল্লাটে ?
   ----- না মানে , দিদি একটু গিরামে গেছলাম , ওদিকটাও তো দেখতি হয় …
    ---- আচ্ছা বেশ বেশ , তা সব কুশল মঙ্গল তো ? আসছ তো আবার ?
    ----- হুম , দিদি , আসব , আসতি তো হবেই !!
আসতে হবে বলার মধ্যে আরও কিছু যেন রেখে গেল সে …..
তারপরও দিনদশেক কোনো খবর নেই তার
আবার একই জায়গায় পেয়ে ঝিমলি খুশি হয়ে বাটি হাতে গল্প খাবে বলে দাঁড়িয়ে পড়ে , প্রায় রাত ৮ টা হবে সাথে তার মেয়ে রিনি , রিনি জানে তার মায়ের স্বভাব , বলে বসে  এই শুরু হলো তোমার তাই না মা ? কান দেয় না ঝিমলি ….
   ------ তা দাদা বলো তোমার ব্যবসা কেমন চলছে , ঠিকঠাক লাভ করতে পারছ তো ?
  ---- হ্যাঁ দিদি তা হচ্ছে বটে , কিন্তু …… গলার স্বর খাঁদে নামায় সে
----- কিন্তু কি গো ? কোনো সমস্যায় পড়েছ ? বলো কি হয়েছে ?
    ------ বাঘের ভয়ে গিরাম্ ছেড়ি একানে আসা , একানি তো দেখছি ঘোঘির বাসা !
   ------ সেটা কিরকম ? ঝিমলি টকজলে চুমুক সারে জলদি
    ------ আমি সামান্য ফুচকা বেচি , আমাকে ইরা দাঁড়াতি দেয় না , হপ্তা চায় , ফিরিতে ফুচকা খেয়ি যায় , খুব সমস্যায় পড়িছি গো, তাই অন্যদিকি বসার চিষ্টা করছিলাম তাও পারছি না …
     ---- ওমা সে কি !! কতলোকেই তো তোমার মতো রয়েছে , তারা বহুদিন ধরে একই জায়গায় আছে , কই তোমার মতো তো …………… কই কারা কি বলেছে বলো আমায় , দেখি কিছু করতে পারি কিনা |
   ------ ওরা সব ” সবুজসাথী “ আপনে এসবির মধ্যি যেতি হবে না , আপনে একলা মানুষমানুষ , রাতবিরেত বাচ্চা মেয়ে নিয়ে চলাফেরা করতি হয় , আপনে ছাড়ুন |
   ---- আচ্ছা তা নয় ছাড়লুম , তা নিতান্ত যদি সমস্যা হয় আমাদের কাউন্সিলর কে বলো , সামান্য তো তুমি রাস্তায় দাঁড়াবে , তাও সারাদিন তো নয় ,
    ------ বলেছিলুম গো দিদি , তাতি আরও জটলা ,মারধর, বাড়ি পর্যন্ত ……… যাক্ গে বাদ দ্যান

সময় ---- এখন ……

রাত প্রায় ৯টা , মেয়ের টিউশন থেকে ফেরার পথে , চল যাই মনা একটু ফুচকা গিলি ,
----- দাও দাদা , জম্পেশ করে মাখো , আজ মেয়ে খাবে , ঝাল কম দিও
---- আচ্ছা দিদি , তা মনার কোন কিলাস হলো , আমার বড়োটার তো কিলাস  আট , বড্ড খরচ পাতি গো দিদি , পেরে উঠি ………….

চার অটোদাদার আগমন ……
অটোদাদা(অ) ফুচকাদাদা ( আ)
অ – দে ভাই লঙ্কা দিয়ে মাখ ভালো করে , কাচালঙ্কা দিবি কিন্তু
আ- দাদা আজ কাচালঙ্কা ফুরিয়ে গেছে , শুকনো ঝাল দিই ? তবে এট্টু দাঁড়ান , এই দিদি রে ছেড়ে নি ….

 ঝিমলির ফুচকা দাদা ইশারায় বোঝায় কিছু
ঝিমলি বুঝতে পারে এনারা হলো একদা কাহিনীর নাটের গুরু …..
ঝিমলি চোয়াল শক্ত করে ফুচকায় মন দেয় …
 অ- দে ভাই , দে , দেরি করিস না ববেশি , ঐ লাল্টু আয় ফুচকা খেয়ে যা , আজ তো গিলে রয়েছিস গলা পর্যন্ত , টকজল খা , কেটে যাবে নেশা
আ – তা দাদারা আইজ আমারে কিছু দেবেন তো , আসলে আজ আপনারা পাঁচজন , আমি তো চাপে পড়ি যাবো …
অ – ওমা তুই যে বুলি কপচ্ছাছিস , ভুলে গেলি নাকি ? শোন তোরে যদি পয়সা দিয়েই ফুচকা খাবো তবে আর এলাকায় ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল পার্টি কি এমনি এমনি মারাচ্ছি ? চাপ নিচ্ছিস কেন ভাই , তোর হাড়ে দুব্বোঘাস আর ফুল গজিয়ে দেব চুপচাপ দে , বলে হাত রাখে কাঁধে ….

ঝিমলি শক্ত হয় চোখের সামনে এসব, সাথে মেয়ে ……
ঝিমলির দাদা ইশারা করে
চলে যেতে বলছে সে , যাতে “বুড়ো  হার্মাদরা” নিরাপদে …………
ঝিমলির নাদাভর্তি আর কুল কুল পার্টির ফুচকার দাম আন্দাজ করে টাকা গুঁজে ফেরত চলে ঘরমুখো, মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে , মাথায় ঘুরতে থাকে তার ফুচকাদাদাও যাতে নিরাপদে ব্যথা না পেয়ে তার ঘরমুখো হতে পারে ……..


গ্রামের বাড়ির খোলা ছাদ,
২৯শে অক্টোবর, ২০১৭

ফিরোজ আখতার


আমার দূর আকাশের ছোট্ট তারা,
     তুই কি আমায় দেখতে পাচ্ছিস আকাশ থেকে ? আমি কিন্তু এতদূর থেকেও তোকে চিনেছি । আগের মতোই প্রাণোচ্ছ্বল, ঝলমলে আছিস তুই । ঐ যে ঈশান কোণে আকাশের গায়ে বসে আছিস তুই, আমি প্রতিদিন দেখি তোকে । সাঁঝ হয়ে গেলে আমার একটিই কাজ । ছাদ থেকে বসে বসে তোকে দেখা ।

     তোর নিশ্চয়ই মনে আছে, পড়াশুনায় কত ভালো ছিলি তুই ! কাবেরীর সাথে কি রেষারেষি ছিল তোর...! পরীক্ষায় কোনবার ও ফাস্ট হত তো কোনবার তুই ফাস্ট হতিস । জানিস, কাবেরী এখন বড় সরকারী অফিসার । পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে একবারেই পেয়ে গিয়েছে চাকরীটা । কয়েকদিন আগেই এসেছিল আমাদের বাড়ি । ওর সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারছিলাম না রে...! আজ তুইও এমন সরকারী অফিসার হতে পারতিস যদি তোকে সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে না দিতুম ! তুই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কাবেরীর থেকে চার নম্বর বেশি পেয়েছিলি তোর মনে পড়ে ? স্টার পেয়ে যেদিন বাড়ি এসেছিলি সেদিনই তোকে দেখতে এসেছিল ঐ নরপিশাচগুলো...

     তুই আমাদের কত করে বুঝিয়েছিলি তুই আরও পড়াশুনা করতে চাস – আরও বড়ো হতে চাস । কিন্তু আমরা তোর কোন কথাই শুনি নি । জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম তোকে । অভিমানে তুই আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলিসনি অনেকদিন ।

আট মাস পরে এলো সেই অভিশপ্ত দিনটি । তোর শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোনটা পেয়ে আমরা ছুটেছিলাম পড়িমড়ি করে । হাসপাতালে যখন পৌঁছেছিলাম, তখন সব শেষ হয়ে গেছিলো । পোড়া অঙ্গার হয়ে পড়েছিলি তুই মর্গে । তোর শ্বশুরবাড়ি থেকে বলেছিল তুই নাকি গায়ে আগুন দিয়েছিলি ! আমরা জানতুম তুই শত কষ্টেও গায়ে আগুন দিতে পারিস না । তুই তো আগুনের কাছেই যেতে ভয় পেতিস ! জানিস আমরা ওদের ছাড়িনি । তোর শ্বশুর, শাশুড়ি আর বরটা এখন জেলে । কিন্তু কি লাভ হল বল তো ? শান্তি আমরা পেলাম না ! আজ দুবছর হল, তোর বাপি আর কথা বলে না কারো সাথে । শুধু আমার মতোই আকাশের দিকে চেয়ে বসে থাকে । বোধহয় তোকেই খোঁজে জানিস !

রাত প্রায় বারোটা হয়ে গেলো ! এবার যাই রে ! নাহলে তোর বাপি ঘুমাবে না । আজকাল আর ঘুমের ওষুধ খেয়েও আমাদের ঘুম আসে না ! আবার কাল কথা বলবো কেমন ! যাই...


                                                                                                                                                                                                 ইতি
                                                                                                                                                                                       তোর হতভাগিনী মা






তিয়াসা_তুমি

উজ্জ্বল_দাস


লাশ টা ঘরের মেঝে মার্কিং করতে করতে পুলিশ অফিসার মি: পাকড়াশি বললেন

"যা মনে হচ্ছে বছর পঁয়তাল্লিশ বা একটু বেশিই তো কম নয়। কিন্তু যে ভাবে চারদিকে টাটকা রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘন্টা কয়েক আগেই আততায়ী এখান থেকে চম্পট দিয়েছে। একটু খুঁজে দেখলে দুদিনেই কেসটা সলভ হয়ে যাবে।" সাগরেদদের যথাযথ ইন্সট্রাকশন দিয়ে খটাখট বুটের আওয়াজ তুলে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলেন। পেছনে হোটেলের মালিক গনেশদা আর কনস্টেবল গুলোও নামতে থাকলো একে একে।

হোটেলের রেজিস্টার আর গনেশদার মুখ থেকে যেটা জানা গেলো তা হলো, গতকাল শনিবার দুপুর ঠিক বারোটার একটু পরেই দীর্ঘ দিনের বোর্ডার শ্রীযুক্ত ভাস্কর মৌলিক মহাশয় হোটেলে এসে ঠিক বরাবরের মতো কোনের তিন নম্বর ঘরটাকেই বেছে নিয়ে ছিলেন, অবশ্য টেলিফোনে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ওটা যাতে খালি থাকে। অনেক পুরোনো কাস্টমার, তাই এই অধিকারটা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।


(দুই)

ঝাড়খণ্ডের সিংভূমে, প্রায় ৮২০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে সারান্ডা। ঘন জঙ্গল ঘেরা এই অতিথি নিবাসে একবার কেউ আতিথেয়তা গ্রহণ করলে সে আর অন্য কোথাও থাকার কথা ভাবতে পারে না। যেন নেশা হয়ে যায়। যেমন খাওয়া দাওয়া তেমনি তার চারপাশের সৌন্দর্য্য।  জঙ্গলের ভেতরে কিভাবে এই অতিথি নিবাস করা সম্ভব হলো তা বোধহয় স্রষ্টাই বলতে পারবেন। চার দিকে সারি সারি গাছ। একটু সন্ধ্যা নামলেই এই বিলাস বহুল রিসর্ট ঢাকা পড়ে যায় ঘন মিশমিশে অন্ধকারে। ঝিঁ ঝিঁ আওয়াজ। সারাদিন গাছ পালায় মুড়ে থাকে সবকটা ঘরের ব্যালকনি। একটা ব্যালকনি তে দাঁড়ালে পাশের টা থেকেও কেউ দেখতে পাবে না কে দাঁড়িয়ে।

ভাস্কর নিজেই ড্রাইভ করে এসে উঠেছে শনিবার দুপুর বেলা। তিয়াসা গাড়ি চালিয়ে ওবেলা পৌঁছে যাবার কথা আছে তা সে যত রাতই হোক না কেনো। মাঝখানে আর কোনো কথা হয়নি। পৌনে পাঁচটাতেই ঘুটঘুটে অবস্থা তার ওপর শীতকাল। ইজি চেয়ারটায় বসে পায়ের উপর পা তুলে কালো চায়েই চুমুক দিচ্ছিলো ভাস্কর আর মনে মনে তিয়াসার কথা ভাবছিলো।

প্রায় বছর সতেরো আগে প্রথম আলাপ তিয়াসার সাথে। মিষ্টি একটা অদ্ভুত সুন্দরী ললনা। যে কেউ আটকে যাবে ওর চোখে। টিকালো নাক। গায়ের রং যেন এই সতেরো বছর পরেও ফেটে পড়ে। শুধুমাত্র হাতের একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্য যেন সবাই একটু গা ঘেঁষে চলার চেষ্টা করতো। আর লম্বাও বেশ খানিকটা। শরীরের সমস্ত অঙ্গ থেকে যেন মাখন গলে পড়ছে। লম্বা ঘন হালকা বাদামি চুল কোমরের নিচ পর্যন্ত দুলছে। যেমন বুকের ওজন তেমনি ক্ষুধার্ত চোখ চলে যায় গভীর ক্ষতের মতো উন্মুক্ত নাভিতে। কুঁচি দিয়ে শিফন শাড়ি সুন্দরীর সারা শরীরে লেপ্টে আছে। ডার্ক নেভি ব্লুর উপর ছোট্ট ছোট্ট কাজ করা, সঙ্গে মানানসই রঙের ব্লাউজ। শাড়ির কুঁচিটাও ঠিক নাভির পরেই শুরু হয়েছে তাতে বিভাজন গুলো খুব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

বারো বছর পর আবার ভাস্করের সঙ্গে সেদিন এক শপিং মলে হঠাৎ দেখা, পুরোনো সম্পর্ক টাকে উস্কে দিয়ে গেল। কানের দুলটা ঝাড়বাতির মতো কাঁধের দুপাশে ল্যান্ড করেছে। এখন আর নাকছাবিটা পরে না তিয়াসা। এতো গুলো বছর মাঝে কেটে গেলেও রূপের ঔজ্জ্বলতা আজও অমলিন। ভগবান খুব মন দিয়ে নিখুঁত হাতে বানিয়ে ছিলেন ওকে। সুন্দরী নারীর ফিগার বলতে এখনও শুধু তিয়াসাকেই বোঝে ভাস্কর। গায়ে পাগল করা বিদেশি পারফিউমের মিষ্টি সুবাস, নাকে যেন লেগে আছে। ম্যাচিং করা রিস্ট ওয়াচ সঙ্গে চটি জোড়াও খুব মানানসই। হঠাৎই চোখে চোখ পড়ে গেলো ভাস্করের। ভাস্কর অবাক হয়ে একটু তাকাতেই তিয়াসার ডাকে ঘোর কাটলো,

--আরে ভাস্কর না! কেমন আছো ? কোথায় আছো বলোতো এখন ? সেই যে কোথায় হঠাৎ গা ঢাকা দিলে ব্যাস আর পাত্তাই নেই!

--তিয়াসা! ওহ মাই গড!

--চমকে উঠলে! আশা করোনি তাই না ? ভেবেছিলে মরে গেছি। ওপর ওয়ালা বুঝলে, ওপর ওয়ালা। যেতে দিলো না। রেখেই দিলো।

--তিয়াসা!

--অনেক গুলো বছর কেটে গেছে। অনেক খুঁজেছি তোমায়, কিন্তু পাইনি। কোথায় আছো এখন ? নাকতলার বাড়িতে আমি বার কয়েক গিয়েছিলাম। তালা বন্ধ পেয়েছি।বাড়ি ওলাও কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

--চলো না একটু ফুড কোর্টে বসা যাক, অবশ্য যদি তোমার টাইমে কুলোয়।

-- ওরকম বলছো কেন ?চলো বসাই যায়। ফ্রি আছি।

--না! যদি তোমার হাতে সময় না থাকে তাই। ওকে চলো। কি খাবে বলো ?তোমার মেনু টাই নিই?

--নাহ থাক আজ ফিঙ্গার চিপস নাও। সাথে দুটো কফি নাও, ব্যাস...

--ওকে, তুমি যা বলবে।

মনে মনে ভাস্কর ভাবলো   "তিয়াসার কি টেস্ট পাল্টে গেলো, যে নাকি কোনদিন আলুর কিছু খেত না, ফ্রায়েড কিছু খেত না। সেইই কিনা! যাই হোক।

--কোথায় আছো তোমরা এখন তিয়াসা?

--আমরা তো আসানসোল শিফট করলাম, বাবা রিটায়ার করার পর ফিরে গেলাম ওখানেই। নিজেদের বাড়িতেই। তোমার হঠাৎ চলে যাওয়ার পর আমি প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে গেলাম মাস ছয়েক। বার তিনেক আত্মহত্যা করতে যাওয়ায় বাবা আমাকে মেডিটেশন এ ভর্তি করে দিলো। ভালো সাইক্রিয়ার্টিস্ট দেখালো। আস্তে আস্তে আমি রিকভার করলাম। আর কি। তুমি বলো ভাস্কর ,কেমন আছো, বিয়ে করেছো নিশ্চয়ই ? ছেলে পুলে?

--না তিয়াসা বিয়ে করা হলো না আর। কারুর মধ্যে তোমায় খুঁজে পেলাম না। তাই আর করি নি। একটা কথা জানতে চাইবো, বলবে?

--এটাই তো? তোমার ছেলে না মেয়ে? কেমন আছে সে? সেটাই জানতে চাইবে তাইতো?  বুঝি ভাস্কর। নিজের সন্তান তো!

--বলো না তিয়াসা। খুব মন চায় জানতে। আদৌ আমি বাবা হয়েছিলাম নাকি তোমার বাবা জোর করে সেটা!!

--থাক ভাস্কর, আর খারাপ কিছু উচ্চারণও করো না আমার মেয়ে কে নিয়ে।

--তোমার মানে? সে তো আমারও মেয়ে।

--ওর দিকে এক পলকও যদি তাকাও তোমার চোখ দুটো জাস্ট উপড়ে  নেব ভাস্কর।

--তিয়াসা!

--হ্যাঁ ভাস্কর। সেদিন যদি তুমি আমার মেয়েকে তার পিতৃ পরিচয় টা দিতে, তাহলে আমায় অন্ততঃ ওই দিন তোমার দেওয়া উপহার নিয়ে সমাজকে এত রকম কৈফিয়ত দিতে হতো না। সেদিন তুমি যদি আমায় নার্সিংহোমে ফেলে না পালিয়ে যেতে, তাহলে সেদিন আমায় আমার বাবার কাছে এতো ছোট হতে হতো না। পাড়া প্রতিবেশীর মুখে মুখে শুনতে হতো না  “ ওই তো নষ্টা সুন্দরী”

--সেই দিনটা অনেক আলাদা ছিলো তিয়াসা।  সবটাই জানো। আমার নতুন চাকরি, সংসারের দায়িত্ব, ভাড়া বাড়ি। বৃদ্ধা মা, হঠাৎ তোমার ওই অবস্থাটা,,,,,,,,

--ওফ্  ভাস্কর, সাট আপ!! তাহলে ভালোই বা বেসে ছিলে কেন ?আমায় বিছানায় ফেলে ছিলে কেন ?আমার বুকে মুখ দেবার সময় মনে পড়েনি তুমি ভাড়া থাকো !আমার সালোয়ারের দড়ির ফাঁস খোলার সময়ে মনে হয়নি যে তুমি নতুন চাকরিতে ঢুকেছ ? লজ্জা করেনি সেদিন, কাপুরুষের মতো আমায় অন্তঃসত্ত্বা করে দিয়ে পালিয়ে যেতে ?

--উফফফফ তিয়াসা, চুপ করো, চুপ করো, দয়া করে ক্ষমা করো দাও আজ। হাতজোড় করছি। আজ তুমি কি চাও বলো। আজ চলো আমরা এক সঙ্গে থাকি,,,,,,,,,,

****
অন্ধকারের বুক চিরে আলোর ঝলসানি আর গাড়ির বুকফাটা হর্নে ভাস্করের সম্বিৎ ফিরলো। ততক্ষনে চা টাও শেষ। তবে কি তিয়াসা ঢুকলো ?ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ভাস্কর। আরে হ্যাঁ, সাদা রঙের ডিজায়ার টা নিয়ে রিসর্টের গা ঘেঁষে দাঁড় করলো। খট করে দরজা টা খুলেই ডান দিকটা দিয়ে নামলো সুন্দরী। সানগ্লাস টা মাথায় তোলা। পরনে জিন্স আর টপ। হাইহিলের জুতো। হালকা আলোয় নেমেই হাত টা দোতলার দিকে নেড়ে চলে গেল রিসেপশনের দিকে ফর্মালিটিস পুরণ করতে।

সেদিন শপিং মলে দেখাটা না হলে হয়তো তিয়াসা কে কখনোই আর নিজের মতো করে পাওয়া হতো না ভাস্করের। সেই দেখা হওয়া থেকেই আবার কথা বলা শুরু। মেসেজ, ফোন কলস...

অবিবাহিত ভাস্করের শারীরিক ক্ষিদে ক্রমশ বাড়তে থাকে তিয়াসার সাথে কথা বলতে বলতে। একদিন বলেই বসে ডে-ট্রিপে যাওয়ার কথা। তিয়াসাও রাজি হয়ে যায় তাদের চেনা, বহু পরিচিত জায়গায় আসার জন্য। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। আর কি ক্ষতি হবে!সহজ ভাবেই নেয় হয়তো ভাস্করের প্রপোজাল টা।

****
দীর্ঘ্ক্ষন গাড়ি চালানোর ফলে বেশ ক্লান্তিও ছিলো মনে। সোজা ওপরে এসে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ঢুকে গেলো বাথরুমে। গিজার টা অনই রাখা  ছিলো। গরম জলে সারা শরীর একবার ধুয়ে নিলে ক্লান্তি টা বেশ কমে যায়।
বিলাস বহুল অতিথিশালার বাথরুমে, ঘষা কাঁচের দরজার এপারে বসে নারী দেহের সঞ্চালনে হারিয়ে গেলো ভাস্কর। পুরোনো অনেক স্মৃতি এই ঘরেই জড়িয়ে রয়েছে তিয়াসা কে নিয়ে। এভাবেই বছর বারো আগে তিয়াসার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো। হঠাৎই সারান্ডায় এসে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। তারপর ওই অবস্থাতেই ভয়ে নার্সিংহোমে ওকে ফেলে গা ঢাকা দেয় ভাস্কর।

খট করে ঘসা কাঁচের দরজা টা খুলে গেল। বেরিয়ে এলো রূপসী। ভিজে হালকা বাদামী কালার করা ঘন চুলটা একবার ঝাঁকিয়ে নিলো। ফর্সা মুখের ওপর তার দুটো লকস্ এসে পড়ায় সৌন্দর্য্য যেন আরো জাঁকিয়ে বসেছে। মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রইলো ভাস্কর।

--কি হলো ভাস্কর, আরে পেগ টা বানাও।

--ও হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কবে থেকে...

-এখন সবই চলে গো। চলো বানাও। “গানের” সঙ্গে “পান” টা এখন আমার নিত্য সঙ্গী।

হালকা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরটা। ভালো করে সব কিছু দেখার মোটেই জো নেই। তার মধ্যেও পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক লাগানো ঠোঁটটা যেন সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। একটা ডাস্টি পিঙ্ক রঙের ট্রান্সপারেন্ট নাইটি পরে তিয়াসা, তাও অন্তর্বাস বলে কিছু নেই। পেগ বানানোর আগেই নেশাচ্ছন্ন ভাস্কর মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে।

ঢক ঢক ঢক ঢক গ্লাসে ঢালা হলো। সঙ্গে জল, সোডা।
চিয়ার্স। ঠং ঠং দুটো গ্লাসে আওয়াজ করে ঠোঁটে উঠলো লাল রঙের পানীয়। পরম তৃপ্তি, এই অন্ধকার। সঙ্গে সুন্দরী, আবছা আলোয় অর্ধন্মুক্ত  তিয়াসা।

****
ঠক ঠক ঠক। হঠাৎ ঘরের দরজায় তিনটে টোকা। নেশাচ্ছন্ন মন টা কিছুতেই দরজা খুলতে চাইলো না। কিন্তু উপায় কি! হয়তো চিকেন পকোড়া এসেছে। দরজাটা উঠে গিয়ে খুলল ভাস্কর। তিয়াসা নিজেকে লুকিয়ে নিলো। হ্যাঁ, কম বয়সী একটা ছেলে হালকা গোঁফ উঠতে শুরু করেছে মাত্র। দুহাতে ট্রে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পকোড়া আর স্যালাড নিয়ে। চট করে তার হাত থেকে ট্রে টা নিয়েই আবার ঘরের দরজা বন্ধ।

টেবিলে ট্রে টা রাখার আগেই পেছন থেকে জাপটে ধরলো তিয়াসা। উফফ কি গন্ধ। সারা শরীর অবশ হয়ে এলো।অদ্ভুত এক আমেজে ভরে উঠল ভাস্করের মন। দুটো শরীর আর আলাদা করার জো নেই। সামনে ঘুরেই চারটে ঠোঁট একাকার। অনেক্ষন ধরে পরম আস্বাদে নরম ঠোঁটের পরশে চকাম চকাম করে শব্দ কিছুক্ষন। তারপর ভাস্কর পাঁজাকোলা  করে তিয়াসা কে নিয়ে গিয়ে ফেললো সাদা চাদর পাতা নরম বিছানায়। তিয়াসা কে মিশিয়ে দিলো চিৎ করে। কতদিনের সুপ্ত ক্ষিদে শরীরে। আবছা অন্ধকারে অন্তর্বাসশুন্য নারী শরীরের মাদকতায় বিভোর ভাস্কর যেন কুল করতে পারলো না ঠিক কি ভাবে শুরু করবে। তিয়াসা ঝঁপিয়ে পড়ে  ভাস্করকে উল্টে ফেলে দিলো সাদা শয্যায়। ভাস্কর চিৎ হয়ে হাতদুটো কে কাঁধের দুপাশে পরম কমনিয়তায় এলিয়ে দিলো আদর খাবার অছিলায়। সেই যেন শেষ আদর।

হঠাৎ বুকে প্রচন্ড যন্ত্রনা অনুভব করলো ভাস্কর। চোখের সামনে ক্রমশই আবছা হয়ে আসছে তিয়াসার নেশা। একে অন্ধকার। বুকে হাতটা দিতেই ভাস্কর বুঝতে পারলো লম্বা মতো কি একটা তার বুকে গেঁথে রয়েছে। আর যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছে বুক। কান মাথা ভারী হয়ে আসছে। হাত, পা অসাড় হয়ে পড়ছে আস্তে আস্তে। শেষ বারের মতো তিয়াসার দিকে তাকিয়ে যথাসম্ভব শক্তি দিয়ে ঘাড় নেড়ে জানতে চাইলো ভাস্কর,

“তিয়াসা,,,,,,,,,, কেন!!”

****
শুরু করলো তিয়াসা। যা বললো সেটা এইরকম।
"বারো বছর আগে যখন ভাস্কর একজন সদ্য তরুণীকে অন্তঃসত্ত্বা করে একটা অনামি নার্সিং হোমে ফেলে রেখে চলে যায় এবং তখন সেখান থেকে খবর যায় তিয়াসার বাবার কাছে। তড়িঘড়ি এসে মেয়েকে ওই অবস্থায় দেখে আর সব শুনে অজ্ঞান হয়ে যান মনোময় বাবু। সে জ্ঞান আর কোনোদিন ফেরেনি অশীতিপর বৃদ্ধর। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলে আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। তিয়াসার থেকে ঘন্টা খানেকের ছোট মেয়ে অন্বেষাকে নার্সিং হোমে আসছেন জানানো থাকায় বাবাকে খুঁজতে অসুবিধা হয়নি তার। অনেকক্ষন বাবা ফিরছেনা দেখে অন্বেষা নিজেও নার্সিং হোমে এসে পৌঁছোয়। পৌঁছতেই জানতে পারে যে তার বাবা আর নেই..."

এই টুকু বলার পরেই ভাস্করের শরীর টা নিস্তেজ হয়ে আসে। বিছানার ধারে চলে আসায় বডিটা ঝপ করে পড়ে যায় মাটিতে। বেরিয়ে যায় প্রাণ টুকু।

****
তারপর কোন রকমে পোশাক পাল্টে প্রায় টলতে টলতে গাড়িতে উঠে সুন্দরী। গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে সোজা হাইওয়ে ধরে নেয়। অনেকক্ষন নেশার ঘোরে গাড়ি চালানোর পর মনে কিঞ্চিৎ ভাবাবেগের উদয় হয়। তৎক্ষণাৎ গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে বেশ অনেকটা পথ পিছিয়ে এসে সোজা থানায় ঢোকে আত্মসমর্পণ করার জন্য।


(তিন)

সমস্ত ঘটনাটা টা সাব ইন্সপেক্টর কে বলতে বলতেই বড়বাবু মি: পাকড়াশি ঢুকলেন।

--এতক্ষন সবই শুনলাম ম্যাডাম। চমৎকার ম্যাডাম তিয়াসা। চমৎকার। দারুন গেমপ্ল্যান আপনার প্রতিশোধ নেবার।

উল্টোদিকে বসে থাকা সুন্দরী অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছেন ততক্ষনে।

--আমার মেয়েকে বাঁচান অফিসার আমার মেয়েকে প্লিজ বাঁচান। আমার হাজতবাস হলেও আমার মেয়েকে দেখার আর কেউ থাকবে না। অনেক কষ্টে তাকে এই সব থেকে অনেক দূরে রেখেছি অফিসার। ইচ্ছে করলে আপনারা ওকে বাঁচাতে পারেন।

--দেখুন আপনার অবস্থাটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছি। কিন্তু ম্যাডাম আপনার পরিচয় টা যতক্ষন না পাচ্ছি ততক্ষন কিন্তু কথা দিতে পারছিনা ঠিক কি করা উচিত। কারণ আপনি সারেন্ডার করতে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এখনো হিসেবটা ঠিক মিলছে না। আপনাকে লকাপেই থাকতে হবে, আমরা মহিলা পুলিশদের ডেকে পাঠাচ্ছি।

এবার উল্টো দিকে বসে থাকা কান্নারত রূপসী অঝোরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।

--দেখুন অফিসার আপনারা সবাই এতক্ষন শুনলেন। কিভাবে আজ আমি আমার মেয়েকে মানুষ করছি, কি ভাবে বাবা কে হারালাম বা মেয়ে কিভাবে আমার কোলে এলো।

--ম্যাডাম তাহলে আমার হাতে যে পরিচয়পত্র টা আছে (বলে একটু থামলেন)। মানে যেটা আমি রিসর্টের তিন নং ঘরের মাটি থেকে কুড়িয়ে পেলাম সেটা তাহলে আপনার নয়?

অবাক হয়ে তাকিয়ে মি: পাকড়াশির দিকে চেয়ে উত্তর দিলো,

--হ্যাঁ অফিসার, ওটাই আমার আসল পরিচয়।রিসোর্টে আমি তিয়াসার পরিচয় দিয়েছিলাম। আমি সেদিন যখন নার্সিং হোমে পৌঁছলাম, প্রথমেই জানতে পারলাম বাবা আর নেই। আর আমার দিদি মানে তিয়াসা এই মানসিক ধকল সহ্য করতে না পেরে, মেয়ে হওয়ার সময়েই মারা যায়। অগত্যা, ওর মেয়ে আমার কাছেই বড়ো হতে থাকে। আমাকেই মা বলে জানতে থাকে। কিন্তু ওই লম্পটটার সঙ্গে আমার পূর্বে আলাপ থাকায় ওর ওপর আমি নজর রেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। কিছুদিন আগে মনে সাহস নিয়ে আমি সেদিন ওর সাথে শপিং মলে, হঠাৎ দেখার ভান করি। তারপর বাকি টা আপনার জানা। যেটা জানা নেই সেটা হলো আমি আর আমার দিদির বয়সের পার্থক্য মাত্র ঘন্টা খানেক হওয়ায় আমরা যমজ। সেই সুযোগটাই কাজে লাগালাম। নারী শরীরের প্রতি ভাস্করের যে নেশা, যে দুর্বলতা, সেটাকেও কাজে লাগাই। আমার অসময়ে বাবা আর দিদির চলে যাওয়াটা আজও মেনে নিতে পারিনা। হ্যাঁ আমিই সেই অন্বেষা। খুন টা আমিই করেছি তিয়াসা সেজে যাতে আমার মেয়ের গায়ে আঁচ না লাগে।

--এই নিন আপনার পরিচয় পত্র। যেটা আপনি অজান্তে ফেলে এসেছিলেন। নাহলে আমাদেরও খুঁজতে সময় লাগতো যথেষ্ট। দেখুন পুলিশ বলে আমরা আমাদের কর্তব্যে গাফিলতি করতে পারিনা। কিন্তু কখনো কখনো কিছু মুহূর্ত আসে যেখানে নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিতে ইচ্ছে করে। নাহয় আরো একবার প্রমান করি আমরা মানুষ, মনুষ্যত্ব, বিবেক এগুলোরও উর্ধে নয় আমরা। জয় হোক বিবেকের। তদন্ত চলুক তার নিজের পথে। আপনি এই অবস্থায় পারবেন ড্রাইভ করতে?

--পারবো। আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা ব্যবহার করে আপনাকে ছোট করবো না। আমার কার্ড টা রাখুন। পারলে দেখে যাবেন আমার মেয়েটাকে একবার। আপনার মতো মানুষের আশীর্বাদ যে ওর আগামীকে সুরক্ষিত করবে স্যার।

বলে অন্বেষা উঠে পড়ল। মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতে ধীরে ধীরে গাড়ির সিট বেল্টটা লাগিয়ে নিলো। গাড়ি গড়াতে শুরু করলো নিজের বাড়ির পথে।


চোখের ভুল

ইন্দিরা ব্যানার্জী

সুমন সদ্য রেলে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকুরী পেয়েছে। ওর বাবার রেলে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হওয়ায় ডাই-ইন-হারর্নেস গ্রাউন্ডে ওর রেলে চাকুরী পাওয়া।

    সংসারে এখন ওরা শুধু মা আর ছেলে। সুমন অফিসে বেরিয়ে গেলে ওর মা বড় একাকীত্বে ভোগেন। এই নিঃসঙ্গতা কাটাবার উপায় হিসাবে সুমনের মা ওর বিয়ে দিতে খুবই আগ্রহী।

     মার আবদারে সুমনও বিয়েতে মত দিয়েছে। পাত্রীর সন্ধানে ওরা কাগজে সাপ্তাহিক পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞপ্তি ফলো করছে। সুন্দরী-ঘরোয়া-শিক্ষিত মেয়েই ওদের কাম্য। তাই প্রতি রোববার দুই তিনটি কাগজের পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপণ ওর মা ঘাঁটতে শুরু করলেন।

    ওদের অন্য কোন অভিভাবক নেই, সুমনের মা ফোনে কথা বলতে সাবলীল নন, তাই বাধ্য হয়ে ওই মার পছন্দের বিজ্ঞাপণ গুলোতে ফোন করে খোঁজ-খবর নিতে হত। রবিবারে সকালে কাগজ ফলো করে বিকালে মা-ছেলেতে কাছে পিঠে মেয়ে দেখতে বেরোতো।

     এমনি এক রবিবার একটি বিজ্ঞপ্তিতে চোখে পড়ল কাছেই এক সুযোগ্য পাত্রীর ঠিকানা। ফোন করে ঐ দিন বিকেলেই মেয়ে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ওরা।

     সুমনদের মধ্যমগ্রামে নিজস্ব ফ্ল্যাট, পাত্রীর বাড়ি সোদপুর। বিকেল চারটে নাগাদ মা-ছেলেতে পৌঁছে গেল নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বাড়িতে ঢুকতেই সুমনের চোখে পড়ল দোতলায় পর্দার ফাঁকে কাজল কালো দুটো চোখ। কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের দেখছিলো।

      চা-নিমকি-ফল-মিষ্টিতে আপ্যায়ন শুরু হলেও বাবার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ না হবার অজুহাতে ওরা সব রকম আপ্যায়নই প্রত্যাখান করে শুধু জলই খেলো ওরা।

    মিনিট পনেরো বাদে পাত্রী নামলো; কোমর ছাড়িয়ে একঢালা কালো চুল, সবুজ ব্লাউজ-হলুদ শাড়িতে। গমরাঙা শরীরে কণে দেখা রোদ পড়ে মেয়েটিকে মোহময়ী করে তুলেছিলো। ওর চোখই সুমন ঢুকতে গিয়ে পর্দার ফাঁকে দেখেছিলো।

     নাম-পড়াশুনা-পছন্দ ইত্যাদি জেনারেল কথা সেরে সুমনের মা ই ওদের আলাদা করে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলল। মেয়েটি সুমনকে ওদের দোতলায় নিয়ে গেল। কোইনসিডেন্টলী মেয়েটি আর সুমন একই কলেজে পড়তো। সুমন ভূগোল বিষয়ে  B.A পাশ করে তারপর B.tech পড়েছিলো। মেয়েটি এখন ভূগোল নিয়ে M.A পড়ছে। ফলে দুজনার মধ্যে আলোচনায় বার বার কমন সাবজেক্টই আসছিলো। নদী-পাহাড়-মালভূমি-সমভূমি থেকে শিল্প-বানিজ্য-অর্থনীতি কিছুই বাদ থাকছিলো না ওদের কথোপকথনে।

     যাই হোক, মেয়েটিকে মন্দ লাগছিলো না সুমনের। তাও সুমন বার বার জানিয়ে দিচ্ছিলো চাকুরীরতা মেয়ে ও কখনই বিয়ে করবে না, বিয়েটা কেবলমাত্র ওর মায়ের নিঃসঙ্গতা ঘোচাবার উপায়। মেয়েটিও দুই-তিন বার ssc তে ব্যর্থ হয়ে চাকুরী করার সব আশা ত্যাগ করেছে। মেয়েটিও বলছিলো চাকুরী নয় মন দিয়ে সংসার করতে চায় ও। গৃহবধূর সব দায়িত্ব সামলাতে ও মানুষিক ভাবে প্রস্তুত।

    এমন ভাবে ঘন্টা খানেক কথা বার্তা সেরে সুমনরা বাড়ি ফেরার আগে জানিয়ে দিল ওরা ফোন করে খবর দেবে। মেয়েটি হাত নেড়ে বিদায় জানাবার সময় চোখে চোখেই যেন বুঝিয়ে দিল ওর পছন্দের কথা। বাড়ি ফিরে মা-ছেলেতে আলোচনা করে ঐ পাত্রীর সাথেই বিয়ের কথা এগোবার সিদ্ধান্ত নিল।

    পরের সপ্তাহে পাত্রীর বাড়ির লোক আসল সুমনদের বাড়ি। পছন্দ হল উভয়পক্ষের। বিয়ের কথা এগোতে লাগল, দিন-ক্ষণও ঠিক হয়ে গেল। এরই মধ্যে দশম স্কুল সার্ভিস কমিশনের রেজাল্ট বেরোলো। মেয়েটি এই বার ঐ চাকুরীর পরীক্ষায় সফল হয়েছিলো।

         রেজাল্ট বেরোবার দিনই সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবা ফোন করে জানায়; ওরা বিয়ে দিতে রাজী নয় আর। বিয়ের কথা অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ায় সুমনের মন জুড়ে গভীর হতাশা-বিষন্নতা জাঁকিয়ে বসল।

  অনেক রাতেই স্বপ্নে ঐ পর্দার আড়ালে ঐ দুটো চোখ দেখে ঘুম ভেঙে গেছে সুমনের। এখন সুমন বোঝে মেয়েটির চোখের ভাষা আর মনের ভাষার বিস্তর অন্তর ছিলো...



মৃত্যুর  মিছিলে  প্রেম 
পিনাকি 
                                                              ১
উত্তমকুমার  মেট্রো  স্টেশনের  বাইরে   দাঁড়িয়ে   ক্ষিধে  পেয়ে  গেল  পুকানের  ।   সেই  সকালবেলা  ঘর  থেকে   গ্রামের  রাস্তা   ধরল , ঘড়িতে    সকাল  সাতটা ।   স্টেশন    থেকে     চল্লিশ   মিনিটে  ট্রেন  ধরে   শিয়ালদহ ।  সেখান থেকে   বাসে  করে   মেট্রো  স্টেশন ।  পেটে এখনো   কিছু  পড়েনি ।   খালি পেটেই  সে  এতদূর  চলে এসেছে ।  পকেটে  যে  টাকাটা  আছে  , তা দিয়ে  হয়ত   সস্তার   টিফিন হয়ে  যেত ,  অন্তত  পেট  খালি থাকত  না  ।    পুকান সেই  টাকা  বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছে  ।   এখানে  কতদিন থাকতে  হবে  জানেনা ।  হাতে  যে  টাকাটা  আছে  তা  বাঁচিয়ে  রাখতে  হবে  ।   এখানে  দাঁড়িয়ে  নিজের  অসহায়তার  কথা   ভাবতে   - ভাবতে  ঘড়ির  দিকে  চোখ  চলে  গেল  ! ঘড়িতে  বেলা  এগারোটা ।  পুকানের  মনে  হচ্ছে  এখন আরেকবার   ফোন  করা  যায় ।   স্টেশনে  নেমে  ফোন করতেই , এই  ঠিকানায় অপেক্ষা  করতে  বলেছিল । একজন  বছর  চল্লিশের  লোক ,  নাম   শক্তি পাত্রের  সাথে   দেখা  করতে  হবে  ।   মিস কল  মারল ।
-হ্যালো ।
ফোনটা  ধরে  শক্তি  কেটে  দিল ।   পুকান  দেখছে , ব্যালেন্স    মাত্র   তিরিশ টাকা ! মিস  কল  দিতে  গিয়ে  , শক্তি  রিসিভ  করে  ফেলেছে । আবার  শক্তি  ফোন করছে ।  এইবার  পুকান ফোন  এর  লুকোচুরির পর  রিসিভ  করে বলল
-হ্যাঁ ,  বলুন ।
-পুকান  ?
-দাদা  ,  আমি  মেট্রোর  বাইরে  একটা   ফলের  দোকানের  সামনে  দাঁড়িয়ে  আছি ।
-আচ্ছা  আমি আসছি ।  এখানেই  আছি , তোমায় ...  হলুদ রঙের   গোল  গলার  টি  শার্ট পড়ে  আছো ?
-হ্যাঁ ।

উল্টো  দিক  দিয়ে  রাস্তা   পেড়িয়ে  একজন  রোগা  লোক  পুকানের  দিকে  এগিয়ে  আসছে ন ।  মধ্যবয়স্ক । গালে    দাঁড়ি ।  চোখ  দুটো  অনুজ্জ্বল ।  গায়ের  রঙ  চাপা  । হাসতে – হাসতে  হাত  নাড়িয়ে  এসেছে ।
-নমস্কার দাদা  , আপনি   শক্তি  পাত্র ?
-আমাকে  আপনি  বলবে  না  ।  আমি  তোমার  দাদার  মতন ।   শক্তি  দা  বলবে । 
-ঠিকাছে দাদা  ।
-সামনেই  আমার  বাড়ি । 
-তুই  বললেই  ভালো । আমি  তোমার  থেকে  অনেক  ছোট । 
-আমার নাম  শক্তি পাত্র  ।  এখান থেকে  কাল  সকালে  গাড়িতে  তুলে  দেওয়া  পর্যন্ত  আমার দায়িত্ব । 
-আমার  নাম  পুকান  বাড়ুই ।   থাকি    শ্যামনগর ।  লক্কাদা  আপনার ...
চোখ  দুটো বড় –বড় করে  বলল – এই   কান  মুলে  দেবো ।  আমাকে  আপনি  বলবি না  । তুমি বলবি । এখন  ওইসব লক্কালক্কি  ছাড় । আগে  কিছু  খেয়েনি ।
পুকান  এই  কথাটা  শুনে  বেশ  চিন্তায়  পড়ল ।  পকেটে  নিজের  খাওয়ার   জন্য  তেমন  টাকা  নেই । ভদ্রতার খাতিরে লোকটির  কাছ থেকে  টাকা  নেওয়া  যাবে না।  অবশ্য এইসব  বাড়তি খরচ  সে  পেয়ে  যাবে   । তবুও  তার মতন  আর্থিক অনটনে  থাকা  ছেলের আছে  , এটা  খুব  অস্বস্থি   । 
শক্তি বলল – ভাবছিস  কী ?
মাথা  নামিয়ে  পুকান  বলল  - কিছু  নয় ।
-চিন্তা  করিস  না  , যতদিন  এখানে  থাকবি  টাকা  নিয়ে  ভাববি  না  । কাজ  নিয়ে  ভাব ।  চল ,  খেয়েনি । তারপর  তোর  সাথে  গল্প  করব ।
                                                                    ২
  পুকান একটা  ছোট্ট  ঘরের  দ্বোতলায়  খাটের  উপর  চিত  হয়ে  শুয়ে  আছে  । সামনে  ডানদিকে  জানালার ধারে  দাঁড়িয়ে   শক্তিদা  বিড়ি  ফুকছে ।  ধোয়া  জানালার  জং  ধরা  গরাদের   পরিখা  পেরিয়ে   যাচ্ছে  ।   বাইরে  এখন  সন্ধ্যা  ।   শাঁখের  আওয়াজ কানে আসছে  ।    বাড়িটা  প্রায়  ভগ্নদশা  ।   দু’চার ঘর  ভাড়াটে  আছে  ।   দুপুরে  জমিয়ে  খাওয়ার  পর  কিছুক্ষণ   ওরা  ঘুমিয়ে  নিয়েছে ।  কিছুক্ষণ আগেই  শক্তি  বিড়ি  টানা  শুরু  করেছে ।
-হ্যারে ,   এখানে  কি  মনে করে  ? মানে  ,  পরিচিত  কেউ  আছে  ? এইসব কাজ  ভীষণ  রিস্কের ।
-শক্তিদা  , দিন দিন  বেঁচে থাকাটাই  সবচেয়ে  বড়  রিস্ক হয়ে উঠছে যে  ।
-ধুস  পাগল , মাত্র  তিরিশ   । এখনই  ভেঙে পড়বি ? আমাদের  মতন  হলে ,  কোথায় যেতিস ? শালা  কেউ  নেই  ।  একা  । দুনম্বরী  দালাল ।  নেতাদের  হয়ে  ফাইফরমাশ খাটি ।  ইজ্জত  নেই  ।  লক্ষ্য  নেই   !
পুকান   উঠে  বসল । হাঁটুর  উপর  থুতনি  রেখে  বলল -  এই  বাড়িটা  তোমার  নিজের  ?
পুকানের  দিকে  তাকিয়ে  শক্তি বলল – তাই  মনে হচ্ছে  ?
-না  এমনি  বললাম ।
-শোন  এই  বাড়ির  মালিক  বেঁচে  নেই  । তার ছেলের  বউ  এখন মালিক । সেই  তোকে  এখানে  থাকতে  দিয়েছে । আমি  খিদিরপুরে  থাকি ।  নিজের  বাড়ি  আছে  , তবে  পার্সোনাল  অফিসেই  বেশীর  ভাগ  সময়  কেটে  যায় ।   নিউটাউনে   আমাদের  অফিস  আছে  ।   বাদদে  ।  তুই  নিজের সম্বন্ধে  বল ...
-আমি   বাংলায়  এম এ ।
-বাপরে ... বাপ  !  পায়ের  ধুলো দাও ।
-দাদ ,  ডিগ্রি  নিয়ে  ফ্যাল ফ্যাল  করে  ঘুরছি । 
-কেন 
-দাদা   সর্বভারতীয়  পরীক্ষায়  বসেছি । অনেক  চেষ্টা  করেও   চাকরী  জোটাতে  পারলাম  না   ।
-দেখ  এতও  ভেঙে পড়িস  না  । তুই  বেসরকারি কাজ খুজতে পারিস ।
-অনেক  খুঁজেছি । আমার  মতন  গ্রামের  ছেলেকে    কে  সুযোগ  দেবে  বলও । ইংরাজিটাও  ভালো  মতন  বলতে     পারিনা  ।  মাঝখানে  , এক বছর  একটা কোম্পানির  নিরাপত্তা  রক্ষীর  কাজ  করেছিলাম  । শরীর  খুব  খারাপ  হয়ে  যায় । ছেড়ে  দিতে  বাধ্য  হই ।
-সত্যি  দিন দিন  শিক্ষিত  ছেলে  গুলোকে  ঘুরতে  দেখে  খুব   খারাপ  লাগে  ।   আমি  পার্টীর  দাদাদের  বললেও ,  তোকে  চাকরী  দিতে  পারব না  রে  ।  নোট  ছাড়া  কেউ  কোন কথাই   শুনতে  চায় না  । 
-বাড়িতে  বাবার  সেরিব্রাল এ্যাটার্ক    এক দিক  ধরে  গিয়েছে  ।  পঙ্গু ।  মা    বাধ্য হয়ে  বিড়ি  বাঁধে ।  ছোট  ভাই , বোন  আছে । আমিই  বড়ও  দাদা  ।  বুঝতেই  পারছ , আমার দায়িত্ব । 
-তা  এইসব কাজে  কেন  ?
-দাদা  বলেছেন , এই  কাজটা  সফল  ভাবে  উতরে  দিলেই   আপার  প্রাইমারিতে   আমাকে    সুযোগ  দেবেই  ।  আমি  আপারে  পাশ  করেছি ।   সেখানে  সুপারিশে  যদি  কিছু  পাওয়া  যায় ।  এমনিতে  সম্ভব  নয় ।
-সে  বুঝেছি ,   গুটি কয়েক  পদ  সামনে  থেকে  নেওয়া  হবে  । কম্পিটিশন  প্রচুর ।   অশিক্ষিত  হলেও  সরকারি  চাকরীর  দরদাম সম্পর্কে  বেশ  ওয়াকিবহাল । 
-এর জন্যই  শ্যামনগর  থেকে  এতদূর  এসেছি ।  দাদা  জানিনা   কাজটা  হবে  নাকি  ?
-কাজটা  হয়ে গেল  ধরে  নে  । 
-দাদা  , এটা অনেক  কিছু আমার কাছে ।
- একজন  শিক্ষক  হবি । নিজেই এমন  কাজের  সাথে   থাকবি  ? ছাত্রদের  বলবি কী ?
পুকান  হাসল ।  হাসি নিজের   অসহায়তা  আরও  প্রকাশ  করছে  ।
-দাদা  আগেতো  পেট  ভরে  খেয়ে  জীবনে  বেঁচে  থাকি  , তারপর নৈতিকতা  নিয়ে  ভাবব !  শিক্ষক  সমাজের  মেরুদণ্ড – আমি  মানছি ।   তার থেজেও  এখন  চাকরীর  ভূমিকা  আরও বেশি  ।    তুমিতো   জানও    এই  চাকরীর  দরদাম , এই  বাজারে  !  একজন  ছেলে   অনেক  কিছু  দিয়ে   শিক্ষিত  হয় । তারপর যখন  ছয়  বছর পরীক্ষা  ঝুলে  থাকে  , আর  দেখি   বাবা-মায়ের  চোখে যন্ত্রণা ; বিশ্বাস কর  সহ্য  হয়না । এরপর পাশ  করেও যখন  দেখি  চাকরী   পেলাম না  আর পাড়ার  ফেল করা  ছেলেটা  বাজি  মেরে  নিল !—বুক  ফেটে  যায় ! সরকারি  চাকরী  আমাদের  মতন  বেকারদের  জন্য  নয় । ওটা  রাজনৈতিক  দলের  সম্পত্তি   ।  এরপরেও  আমি  বিশ্বাস করিনা ,  নিজেকে  বাঁচানোর  জন্য  আপোস করাটা  পাপের  । এই সব  ধারণা  অচল ।
শক্তি  কথা    গুলো  শুনছিল ।  সহসা  এই  সব  কথাই  চড়ের  মতন  গালে  এসে  পড়ছে ।  নিজেকে  আরও  ছোট    লাগছে ।  এই  বেকারের   জীবনের  সাথে  আরও  অনেক  জীবন  জড়িয়ে  আছে , 
পুকান  বলল – আমি বাধ্য  হয়েই  এই  কাজে  রাজি  হয়েছি  ।   দুলালাদা  আমাকে  বলেছেন , যদি   উতরে  দিতে  পারি  তবে  তিনি  আপারের  জন্য  সুপারিশ  করবেন ।  যদি  আপার না  হয়  , তবে  গ্রুপ  ডি  পাকা  ।  পাঁচ লাখ  দাম  উঠেছে  ।  দাদা সবাই  নিজের  নিজের  খুঁটি পুঁতছে । আমি   ভাবলাম , একবার  চেষ্টাই করে  দেখি । 
শক্তি  উদাস ভাবে  বলল -  বিপদ ।
এই  কথা  শুনে  , পুকান  হেসে  ফেলল ।
-রুলিং  দলের  হয়ে  অন্যায়  কাজ  করলে , শাস্তি  হয়  নাকি  ?  তাহলে  ভারতবর্ষের  সব  রাজনৈতিক  দল  গুলো উঠে  যেত ।এখানে  সবাই  ব্যবসা  করতে  আর আমাদের  দিয়ে  করাতে এসেছে  ।   আমাদের  এটাই  ভবিতব্য ।  অনেক  বছর  হলও ।  এখন আর সরকারী  নিয়োগ  কোথায়  হয় !
-তুই  অন্য কিছুতো ......
-দাদা  আমি  যে  কাজ টা করছি , তার  ফলাফল  মাথায়  রেখেই  করছি । আমার কাছে  আর  পথ  নেই  ।
-তুই অন্যভাবেও  ভাবতে  পারতিস  ।
-এটাই  দুঃখের  কথা  দাদা  ,  ক্ষিধে   মানুষকে  একরকম  ভাবেই  ভাবতে    শেখায় ।  তা  হচ্ছে  , ক্ষিধে  মিটবার  পথ ।  আর কতদিন  অপেক্ষা  করব ।তাছাড়া  এটা খুন  নয়  চুরিও  নয় ,   শাসক  দলের  হাতেহাত  রেখে  সাহায্য  করা ।
এই শেষ  কথাটায়   শক্তি  খুব  জোরে  হেসে  উঠল । এমন  হাসির  শব্দে   পুকান  কিছুটা  ঘাবড়ে    গিয়েছিল ।! বলল
-হাসছ কেন  ?
-ক্ষমতায় থেকে  যাওয়াটা   শাসকের  অধিকার  বল ? না   মানে  আমি  বলছি , শাসক   একটা  সময় পেয়ে  রাজত্ব  চালায় ।  সেই  রাজত্বে যারা  থাকে  , তারা  এত  সহজে  হারবে  কেন  ? মানে  জনগণ  না  চাইলেও  তাদের  একটা  দায়তো  থেকেই  যায় ,  জংনের জনগণের সামনে এটা প্রমান  করানোর  যে  জনগণ চাইছে  ।
- সব   দলই  সমান  দাদা  ।   আমি  তাহলে  কেন  ...
-না  রে  , আমি  তোকে  প্রতিবাদ  করতে  বলিনি । আর  সব  রাজনৈতিক  দল  সমান । তাইতো , দেখ  আমরা  চুরি  ,  লুঠ  অন্যায়  কেমন ভাবে  মেনে  নিচ্ছি  !
-আমি  এত  কিছু  বুঝিনা  । এই  কাজটা করলে  একটা  হিল্লে  হবে  । আমি এই  কাজটা  করতে  এসেছি । 
-আমি  বলছি  সাবধানে  । 
-দাদা  ,  ক্ষমতাসীন    দলের  প্রশ্রয়ে   কাজ  হবে  ।  ভয় কি ?
-দেখ  এরা  এদেরই  বিশ্বাস করেনা । তাই  বাইরে  থেকে  অচেনা   মুখ আনিয়েছে । কাজ  করে  কেটে  পড়বি ।  ভয়  নেই  ,  কিছুই  হবে  না  । তবুও  দাদা  হিসেবে  সাবধান  করছি । 
 পুকান  হাসল । এই  হাসি  নিজের  সামাজিক  অবস্থানের  জন্য  ,   আবার এই  হাসি  নিজের  ভাগ্যের  জন্য  । ভাগ্য  বলে  কিছু  আছে  , সেই  থাকাটা  টের  পাচ্ছে  ।  সমাজের  এমন  অবক্ষয় মুহূর্তেও   সে  সবপ্ন দেখছে  !   স্রোতের   বিপরীতে   ফিরে  আসবার  স্বপ্ন । 
পুকান  জীবনের  থেকে  এতো  যন্ত্রণা ,  অবজ্ঞা  পেয়েও ---  জীবনমুখী  ।  এতদূর  ছুটে  এসেছে   নতুন  সুযোগের  লোভে । সে  এতটুকু  বুঝেছে ,  জীবনে  এই  সুযোগ তাকে  কেউ  দেবেনা  ,  সুযোগ  শিয়ালদহ   স্টেশন  চত্বরে   ছড়িয়ে  থাকা  হরেকরকমের    দ্রব্য নয় --  দরদামে  যে  হাতে  চলে  আসবে ।  আচমকাই   এসেছে ,  পুকান  চেষ্টা  করছে  নিজেকে  বদলানোর ।
শক্তিদার  কথা  কানে  আসতেই ,  পুকান  ঘাড়  ঘুরিয়ে  বলল -  আমি  খেয়ে নেবো ।  আমাকে  নিয়ে  চিন্তা  করতে  হবে   না  ।      আমি আর  নামলাম  না  । 
শক্তি  জামাটা  পড়ে  নিল ।  বলল – দরকার  নেই  । আমি  রাত  নটায়  খাবার  পাঠিয়ে  দেব । 
কাছে  এসে   , মাথায়  হাত  বুলিয়ে  বলল -  টেনশন করিস না  ।
-কালকের  কাজ  উতরে  গেলে , সরকারী  চাকরি  জুটবে ? 
-বলতে  পারব না  । আমি  নেতা  নই ......
                                                                       

আজ রাতে  ঘুম আসবে  না  ।  পাশের   চুন  ওঠা ক্ষতবিক্ষত  দেওয়ালে  একটা মানচিত্র  ফুটে   উঠেছে !   সেই  দেওয়াল  খদিত   স্থানের  দিকে  তাকিয়ে  ,  পুকান  অতীতের  বালুতটে  ফিরে  চলেছে ।  এখন  রাত  এগারোটা ।  চারপাশ  একদম  থেমে  আছে  ।  রাতে  শক্তিদা  ভালো  খাবারের    ব্যবস্থা  করেছিল ।    বিরিয়ানি ,  চিলি চিকেন ।  মুখে  একফোঁটাও      রোচেনি  ।  কেন  ?  পরের  দিন      পরীক্ষা  আছে , সেই  টেনশনে ?   এটাও অনেক বড় ,  জীবনে  এম এ   পরীক্ষার  ফাইনাল   পরীক্ষার  দিন  যে  ভয়  ছিল , বা  এস এস সি  পরীক্ষার  ফলাফলের  দিনের  থেকেও  অনেক  বেশী ।
 কপালের উপর    রেখে  ,  চিত    হয়ে   সিলিন সিলিং এ  ঘুরতে  থাকা  পাখার  ব্লেড  দেখছে ।   অতীতের  অনেক  ছায়া   চোখে  এসে  ঝাপটা  মারল  ।   শেষ  পর্যন্ত  সম্পর্কটা  টিকিয়ে  রাখতে  পারল না ! অবশ্য  চাকরীটা  পেলে  হয়ত ,  নতুন  ভাবে  ভাবাই  যাবে ।  অরুনিমা   ফিরিয়ে  দেবেনা  ।  ছেলেদের  বয়স   বাড়লেও ,  বিয়ের জন্য  সময়  থাকে  ,  অপেক্ষা  থাকে  ।  মেয়েদের  জন্য  এই  বরাদ্দ  সময়টুকুই  অনেক  বেশি  বলে মনে  হয় ।    এই  কথাতা কথাটা সে  নিজেও বুঝতে  পেরেছিল    , শেষ  তিনমাসে ।
দীর্ঘ  পাঁচ  বছরের  সম্পর্ক  মাত্র  আধ ঘণ্টায়  ঠিক হয়ে  গিয়েছে  !  এই  সময় , সত্তর বা  আশির  দশকের  মন্থর  সময়  নয় ।  দিন –রাত  ছুটছে , এক  সীমা  হীন , সীমানা হীন  ,  অনন্ত  ছুটে  চলা ;  যেই  দৌড় এর  কোন  শেষ  নেই  ।  চুপ  করে  থাকলে  কবিতা  লেখা  যায় ,   তারপর  স্থির  পরিবেশ  থেকে  যখন  ভিড়ে  ডুবে  যাওয়া  কোলাহল এর  দিকে  তাকিয়ে  মানুষের  ব্যস্ততা  চোখে পড়বে ,  কিছু পূর্বে  লেখা  কবিতা  তখন  অর্থহীন  হয়ে  যাবে ।  পুকানের  প্রেম  আর  অনুভূতি  এখন   শান্ত  পরিবেশের  নাগরিক ।    যে  তাকে  বাতিল  বলে  দিয়েছে , সে     ভিড়ের  ভিতরের   যাত্রী ।   এখন  শুধুই  পুকান  বলতে  পারে  -  তোমার  যাত্রা  শুভ  হোক ...
তাও  পেরেছে  বলতে ?  মনে  হয়  না  ।  বিকেলের  বিদায়ী  আলোর  শেষ প্রলেপের আঁচ  টুকু অরুনিমার  মুখে এসে  পড়ছিল ।   এক পীঠ  খোলা  চুলে  শ্যাম্পুর  গন্ধটা  এখনো  মিইয়ে  যায়নি ।  হাঁটুর  উপর থুতনি  রেখে  অরুনিমা  বলল -   পুকু , আজকের   পর থেকে  ফোনে  কথা  হবে  । আর  দেখা   হবে  না   । বাপি  বিয়ের  জন্য  ছেলে  দেখছে ।
-আমাকে  একটু  সময় ...
-এত  ছেলে –মেয়ে  , সরকারের  গা  ছাড়া  ভাব  , দুর্নীতি ,  এখনো  ভাবো  মিডিওকার   ছেলেদের  জন্য  !  সরকারী  চাকরিরই  ভরসায়  থাকা  যায়  না  । এখন  তোমার যে  বয়স তাতে  বেসরকারির  জন্য খাটলেও  , আমার  আর  সময়  নেই ।
-আমার  মতন  মধ্যমানের   কাছে  মনের  মতন   বেসরকারি     চাকরি  পাওয়াটা   বেশ  কঠিন । আমি  শিক্ষক  হতে  চাইছি  বাবাও  চাইছেন ।
-আমার  পক্ষে  আর  অপেক্ষা  করা  সম্ভব  নয় ।   আমি  আমার  অসহায়তা  বলে দিলাম  । চাকরি  না  পেলে  আমাদের  সম্পর্ক  পরিণতি  পাবেনা  । 

অরুনিমা   চলে  গিয়েছে । সূর্য  ডুবে  গিয়েছে ।  এখন  রবিবাররে   অন্তিম  সন্ধ্যা ,  মাঠের  উপর  একা  বসে  আছে  পুকান  । বিপর্যস্ত  বেকার  ।  প্রেমিক ।   এলোমেলো  জীবনে , আজ  পাশে  কেউ  নেই  ! অরুনিমা  যাওয়ার  আগে  খুব  জোরে  ঠোঁটে  কামড়   দিয়ে  গিয়েছে ।  ঠোঁটে  রক্ত  বিন্দু  ফুটে  উঠছে । 
অতীতের এইসব  ভাবতে  - ভাবতে  , দুটো  চোখের  পাতা   লেগে  গিয়েছে  । 
                                                                                 ৩
সাদা  রঙের   টাটাসুমো   তাদের   নিয়ে  এগিয়ে  চলেছে  ।   গাড়ির  জানালার  বাইরে  থেকে  দেখে  বোঝাই  যাচ্ছে  আজ  ভোট  আছে  । সাদা  পোশাকের  পুলিশ  রাস্তায়   টহল দিচ্ছে ।  পুকান  দেখছে  আর  ভাবছে ,  এই  পুলিশ  থাকতে সে  বুথের  ভিতরে  ঢুকে  ভোট  করবে ।  ভোট  করানোর  জন্য  গোটা  পশ্চিমবঙ্গের  নানা  অঞ্চল  থেকে  অল্প ব বয়সী      ছেলে দের   ভাড়া  করে  আনা  হয়েছে ।   গাড়িতে  ড্রাইভার  আর  একজন  হেল্পার  বাদে   আরও  তিনজন  ছেলে  আছে  , সাথে  পুকান  ।   একজন  বলল -  কালিকাপুরেই  নামিয়ে   দাও  আমাদের  ।  এখানে  একটা  কে  এমডির    বুথ  আছে  ।  অ্যাকশন   হবে  ।   
চালকের পাশে  বসে  থাকা  বছর  পঞ্চাশের  লোকটি  বলল – সাবধান  , আমাদের  কিছু  লোক  আছে ,  পিছন  দিকের   দরজা  খুললেই  হুড়মুড়িয়ে   ঢুকে  ইভিএম  দখল করবি ।  বেশি  সময়  খাবি না  ।  এক এক  মুহূর্ত  খুব  রিস্কি ।   বিরোধীরা  বুথ  পাহারা  দেবে  বলেছে  ।  পুলিশে  ভয়  নেই  ।  মিডিয়া  দেখে  ফেললেই  বিপদ ।  তখন কিন্তু  তোদের  আমরা     চিনিনা  ।  কাজ  শেষ করে  এখানেই  আসবি   , আমার  কাছে  ।  দেখ  দেড় ‘ঘণ্টা  অপারেশন  চলবে  । এই  গাড়ি  করেই  ফিরব । মনে রাখবি ধরা  পড়লে  পুলিশের   হাতে  পড়বি , তাহলে  আমরা  কিছু  করতে  পারব  । 
এইবার  পুকানের  বুকের   বাঁদিক  ঢিপ  ঢিপ  করছে ।   মনে  হচ্ছিল  ,  অতগুলো  ভোটারকে  বঞ্চিত  করবে ! এটা  নিজের  হাতেই  গণতন্ত্রকে  হত্যা  করা ।   সে  শিক্ষক  হওয়ার  স্বপ্ন  দেখেছে ।   সুস্থ  সমাজে   বেঁচে  থাকবার  স্বপ্ন ।   আজ  নিজের  স্বপ্নের  বিনিময়ে ,  জীবনে বেঁচে  থাকবার   লড়াই – পুকানের  কাছে  অনেক  বেশি দামী ।   আদর্শ  শুধু  মাত্র  বেঁচে  থাকবার  অনুভূতি ।     জীবন  চালানো যায়  না  ।   পথ  খুব  শক্ত ।



গাড়ি  থামল কালিকাপুর  বাস স্টপে ।   
পুকান  গাড়ি  থেকে  নামল , সাথীদের  নিয়ে সামনের  গলিতে  ঢুকল ।     মুখেই  লম্বা লাইন ।  ওদের  মধ্যেই  একজন  হাল্কা  করে   বিশৃঙ্খলা  তৈরি  করল  ।  পুকান  খুব  দ্রুতই  নিজের  পরিচয় পত্র না  দেখিয়ে   বুথটির   ভিতরে  ঢুকবার  চেষ্টা  করতেই ,  কয়েকজন  কনস্টেবল  ঘিরে  ধরলেন ।  শাসক  দলের  ছেলেরা   এগিয়ে  গিয়ে  ঘিরে  ধরল ।  পুকান  যেমন  ভাবেই  হোক  যাবেই ।  বুথে  ঢুকে পিছনের দরজা  খুলে   দলের  ছেলে  গুলোকে  ঢুকতে  দেবে  ।  ভিতরে  এগিয়ে যেতেই  আচমকা  দু’পক্ষের  মারপিট  শুরু  হয়ে  গেল  !
  আজ  তাকে  সমস্ত  কিছুর  বিনিময়েও  নিজের  কাজ  করতে  হবে  । ইতিমধ্যেই   বেশ  হইচই     শুরু  হয়ে  গিয়েছে   । এই  এলাকার  লোকেরা  দলবেঁধে  এদিকেই    আসছে  । পুকান  আরেকবার  দেখে  নিল  । 


পুকান  প্রস্তুত  ,  সে  এগিয়ে  চলেছে ।     ভারতবর্ষের  গণতান্ত্রিক  উৎসবে  সেও  অংশীদার ।  আজ আর  কোন  বিপদই  পুকানকে   আটকে   রাখতে  পারবে  না  ।  সে  এইমুহূর্তে    শুধু মাত্র   একটা  কথাই  মনে  করছিল ,  কথামতন   ই  ভি এম   গুলোর  ব্যবস্থা  করতে  পারলেই ,   সরকারি  চাকরী । শিক্ষক ।  পরিবারের  স্বপ্ন  সফল । অরুনিমাকেও  ফিরিয়ে  আনতে  পারবে  । 


 পরের  দিন ,  শক্তি পাত্র   খবরের  কাগজে   শান্তিপূর্ণ  ভোটের  বর্ণনা   পড়ছিল ।  চমকে  উঠল । 
 একজন বাংলা  এম এ পাশ  করা  ছেলে  ,   অন্যের  হয়ে  ভোট  করাতে  এসে  গণপিটুনিতে   মারা  গিয়েছে  ! পুলিশে  ত্রিশের  কাছাকাছি  বয়সের  ছেলেটির  পরিচয়   জানতে পেরেছে  ।   এই এলাকার  ছেলে  নয় । শ্যামনগরে  বাড়ি । 

পুকানরা  মরতে  পারেনা  ।  ওদের  বেঁচে  থাকতে  হয়  ।  মৃত্যুর  মিছিলেও  প্রেম  অপেক্ষা  করে  আছে  তাদের  জন্য ।  প্রতারিত   যৌবন  ভালবাসা  খুঁজেছে ,   বাঁকা  পথেই   মিলেছে  সন্ধান  ! 

শক্তি  পাত্র  খবরের   কাগজ  পড়া থামিয়ে  দিল  ।  একটা  ছোট্ট  নিঃশ্বাস  ফেলে  আবার  শুরু  করল  । 




 ভুলের বোঝা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
                    (১)

        প্রায় দু'যুগ পর প্রাণের বন্ধু অতীনের সাথে দেখা।অতীন দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,"কতদিন পরে দেখলাম তোকে।হঠাৎ কি এমন হয়েছিলো যে কাউকে কিছুই না জানিয়ে বলতে গেলে পালিয়ে গেলি ?"
---তোদের কাছ থেকে পালায়নি রে!পালিয়েছিলাম নিজের কাছ থেকে।ছাড় ওসব কথা, কেমন আছিস বল।
---আর কেমন থাকবো বল ? পরিবারের সবাইকেই তো হারিয়ে ফেলেছি।বোনের  ক্যানসার ধরা পড়ার পর ডাক্তার বললেন ছ'মাস;কিন্তু বোন তিন মাসের মধ্যেই চলে গেলো। তারপর মা সেই শোক সামলাতে না পেরে আমায় ছেড়ে গেলেন।
---কি বলছিস কি তুই ? অতসীর ক্যান্সার হয়েছিলো আমায় জানাসনি তো?
---কি করে জানাবো?যেদিন জানতে পারলাম তারপর থেকে তো আর তোকে দেখতেই পাইনি।কোথায় আছিস এখন?
--দিল্লী।
                      (২)
       মনে পড়ছে সুদীপের-অতসী যেদিন ডাক্তার দেখাতে যাবে বলেছিলো ঠিক তার পরেরদিন ওদের দেখা হলে অতসী ওকে প্রত্যাক্ষান করেছিলো।কারনও দেখিয়েছিলো সুদীপ বেকার।বেশ অপমানজনক কথাও বলেছিলো।সুদীপের সেদিন কষ্টের থেকে অভিমানটা বেশি হয়েছিলো।পিতৃমাতৃহীন সুদীপ থাকতো একটা মেসে।খরচ চালাতো টিউশন করে।পরদিনই সে মেস ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।মনের ভিতর অতসীর প্রতি একটা ঘৃনা থেকে পুরো নারীজাতির প্রতি  ঘৃনায় আজীবন একাই থেকে যায়।আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। কতটা ভালবাসলে একজন মৃত্যুপথযাত্রী তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে এরূপ ছলনার আশ্রয় নিতে পারে।ছি! ছি! এতটা নির্বোধ আমি? একটু তলিয়ে ভাবতেও পারলামনা?এতদিন ধরে অতসীকে ভুল বুঝে শুধু ঘৃনায় করে গেলাম!আমায় ক্ষমা কর অতসী।তোমার ভালোবাসাকে আমি চিনতেই পারিনি।তুমি যেখানেই থাকো শান্তিতে থেকো।পরজম্ম বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে তোমার সাথে দেখা করে আমি ক্ষমা চেয়ে নেবো।একটু অপেক্ষা কর ধর্য্য ধরে -আমাদের মিলন হবেই।


গল্প- 'সম্রাট'
গোয়েন্দা সিরিজ।
-নিজামউদ্দিন মোল্লা

বেশ কিছু কাল আগের ঘটনা। রহস্য টা এখনো ভালোই মনে আছে। আমার বন্ধু মানে একই সাথে কলেজের বন্ধু সম্রাট  তার যে অদ্ভুত বুদ্ধি তা আমি সেদিন অক্ষরে অক্ষরে টের পেয়েছি। তা তো হবেই, সম্রাট নিজেই বিজ্ঞানের ছাত্র এছাড়া সে প্রচুর বই পড়ে। রহস্য  তার প্রিয় বিষয়।তার বাড়িতে একদিন আমি হটাৎ উপস্থিত হয়েছিলাম, তখন দেখি নিজের পড়াশোনার সিলেবাস এর বই না কিনে সে রহস্য ও গোয়েন্দা বই তার ঘরের চারিদিকে সাজানো। সে বিশ্বসাহিত্যের সব গোয়েন্দা কাহিনী তার পড়া। আর সেদিন গিয়েছি, কলেজ  শেষ করে ইউনিভারসিটি শেষ হয়েছে সবে মাত্র, কোনো বিশেষ কারণ ছিল না, তবুওও ভালো বন্ধু তাই সেই খাতিরে চলে গেলাম তার বাড়ি। হাওড়া থেকে নেমেই বাস ধরে আন্দুল এ তার বাড়ি, সেখানেই গেলাম। বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই সম্রাট দরজা খুলেই বেশ সজোরে হেসে উঠল, আর বলল, " হাহাহা  কিরে ভাই প্রিতম! না খবর দিয়েই সোজা বর্ধমান থেকে এখানে?"
 আরে ভাই কি আর বলব, তোর কথা মনে পড়ল তাই ছুটে এলাম।
আমাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল। দারণ বাড়ি, সামনেই রাস্তা, বেশ সুবিধাজনক। কিছুক্ষণ দুজনই চুপচাপ, তারপর সম্রাট নিজেই বলল," তা! তুই এখন কি করছিস? কাজ না চাকরি!
দেখে তো মনে হয়, বেশ কয়েক কাল মুখে হাসি ফোটেনি। তা কি হয়েছে সব খুলে বল। আর এখানে এসেছিস, কিছুদিন আমার সাথেই থাক। " আমি গম্ভীর! সেকি! তুই কিভাবে বুঝলি আমার দুঃখ? - আমি নির্ভয়ে বললাম।
" তা আর বলতে হয় নাকি! তুই এই একবছরে অনেক রোগা হয়ে গেছিস। তাছাড়া চোখের নীচে ও গোড়ায় কালো দাগ দেখে বোঝা কি অসম্ভব,  যে তুই বেশ কিছুদিন হয়ত কাঁদছিস বা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিস! হয়ত অল্পঘুম।  কিন্তু কান্নার কারণ?"
আমি মুদ্ধ হয়ে গেছি,কিভাবে জানল এসব ওকি অন্তঃযামী  নাকি! তাও আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, " ভাই ওসব কথা ছাড়! তুই এখন কি করিস?"
প্রশ্ন টা করতেই সম্রাট তার পুরাতোন রহস্যের হাসিতে হো হো করতে করতে বলল," তুই এই প্রথম এখানে এলি, আগে কিছু মুখে দে!" এই কথার শেষের পর,জোড়ে  ডাকতে লাগল, "শম্ভু! ও শম্ভু!  এখানে আয় জলদি" আবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে,"ওহ বুঝেছি। শম্ভু টা হল আমার চাকর ও সহযোগী সমস্ত কাজ করে আমার। আসুক পরিচয় করাচ্ছি।"  একজন বেশ মোটাসোটা  লম্বা, বছর ২৫ এর ছেলে হবে আমাদেরই বয়সী সে এলো আর এসে সম্রাট কে বেশ সন্মানিত ভাবে বলে," জি বাবু! আমায় ডাকছেন?"
আরে হ্যা। তুই এই ছেলেটার সাথে আলাপ কর এ আমার বন্ধু প্রিতম।  এখানে এসেছে, এর খাবার এর ব্যবস্থা কর। কিছু দিন এখানেই আছে আমার মত এই মানুষ টিও মালিক তোর!, সম্রাট বলল।
এদিকে শম্ভু, মাথা নেড়ে জানায়। আর আমার সাথে নমস্কার,টমস্কার করে রান্না ঘরে চলে গেল।
এমন সময় জলের বোতল টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল সম্রাট," মুখ টা ধুয়ে আমার সাথে চল।আমি কি করি সবই নিজের সচক্ষে দেখে নিস!"
বিকাল ৫ টা গরম একটু কমেছে গ্রীষ্মকাল এ বেলা বড়। তাই খেয়ে উঠে দুজনে বেরলাম রাস্তা দিয়ে, আমি প্রশ্ন করব ভাবছিলাম! কিন্তু সম্রাট আগেই উত্তর টা দিল," এখন আমরা যাব সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে।" আমি আবার প্রশ্ন করব,ঠিক ঐ সময়ে আবার বলল, " সকালে ফোন করেছিল, দয়ানন্দ সেন।  তিনি তলব করছে। দেখি ওনার মনটা সযত্ন রেখে মন টা জয় করতে পারি কি!" আমি চুপ। বাস ধরে প্রায় ২০মিনিটে পৌছে গেলাম।

রাস্তার ধারে, একটা গোলাপী রঙের নতুন বাড়ি। বাড়ির দরজায় বড় বড় করে লেখা, শ্রী দয়ানন্দ সেন। কলিং বেল টিপতেই এক আধবয়সি মহিলা দরজা খুলে দিয়ে আমাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,   আপনারা কে?
তখনই সম্রাট উত্তর দিয়ে বলেন,' দয়ানন্দ বাবু আমাকে তলব করেছিলেন। সকালে ফোন করে ডেকেছিলেন। তাই এলাম।আমার নাম শ্রী সম্রাট গায়েন। " ওদিকে হয়ত দয়ানন্দ বাবু আমাদের কথা শুনতে পেয়েছে তাই ভিতর থেকে আওয়াজ দিলেন, "গিন্নি ওনাদের ভিতরে আসতে দাও!"  ভিতরে একটা আরামকেদারায় বসে এক রোগা কুৎসিত কালো মর্কট এর মতো একজন। আমাদের সোফায় দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বসতে বললেন। সম্রাট চারিদিকে তাকাতে তাকাতে প্রশ্ন করল, " তা আপনার এতো জরুরি তলব কেন?"
সে বলল, " হ্যা আমিই দয়ানন্দ সেন। আপনাকে ডাকার কারণ হল, আমাকে  মারার চেষ্টা করছে কে বা কারা! কিন্তু তাদের  বুঝতে পারছি না কে এই কাজ করছে। আসলে পুলিশের সাহায্য নিতে পারতাম কিন্তু তাতে হবে না।তাই আপনাকে কষ্ট দিলাম।" দেখি সম্রাট এর ভ্রুকুটি উপরে, সে বলল, " সব খুলে বলুন। কিছু লুকাবেন না। আপনার সমস্যা আমি সমাধান করার চেষ্টা করব।" তাহলে শুনুন সম্রাট বাবু, বেশ কষ্টের স্বরে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললেন দয়ানন্দ।" বেশ কয়েক দিন হল, আমার খাবারে বিষ মিশানো হচ্ছে। কিন্তু আমার স্ত্রী রান্না করে না তখন একটা মেয়ে থাকত। রুপালী নাম।প্রায় ৩বছর কাজ করছে । এই সামনের সপ্তাহে তাকে ছুটি দিলাম কি জানি সন্দেহজনক হয়ে।তাই এখন রান্না আমার স্ত্রী করে। কিন্তু সে চলে যাবার পড়ে কেউ বাড়িতে আসে না। শরীর খারাপ আছে তাই ডাক্তারবাবু আসে!.. ..... সম্রাট হটাৎ বলে, তা ডাক্তার বাবুর নাম কি?
দয়ানন্দ বাবু, " বলছি,(সজোড়ে কাশিতে কাশিতে) ডাক্তার অচীন বিশ্বাস। তিনি প্রতিদিন আসে আমাকে চেকয়াপ করার জন্য। এছাড়া কেউ আসে না। আর আমি ও বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিই না। কিন্তু কি বলব সম্রাটবাবু(কাশিতে কাশিতে) তাও ডাক্তার চলে যাবার পর আবার আমার শরীরে বিষক্রিয়া ঘটে। বুঝে উঠতে পারছি না কে আমাকে মারার প্রচেষ্টা করছে।  রান্না ঘরে আমি সিসিটিভি ও লাগিয়েছি তাও হয়নি কে দিচ্ছে, কিভাবে দিচ্ছে  কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন সময় আপনিই ভরসা। প্লিজ কিছু একটা করুন।" সম্রাট গম্ভীর ভাবে বলল," আপনি কিছু চেষ্টা করবেন না। আজ রাত টা কাটতে দিন আমি কাল আর বিষক্রিয়া হতে দেব না। আজ শুধু একবার কষ্ট টা সহ্য করুন।" আমি সম্রাট এর এই ব্যবহার দেখে অবাক। আরে ভাই কি লোক তুই।তুই কিভাবে রক্ষা করবি! এই কথা টা বলতেই সম্রাট আমাকে বলল, "প্রিতম তুই এখানেই বস আজ তুই দয়ানন্দ বাবুর সাথেই থাক। আমি কাল এসে এর রহস্য উদ্ধার করব কেমন!"
এ কেমন কথা,  আমি আজই এলাম আমাকে কাজে লাগিয়ে দিল। তাও রইলাম, সম্রাট ও বেরিয়ে গেল, যাওয়ার সময় বলল,"কিছু ঘটলে ফোন করবি।"

     দয়াবাবুর বাড়িটা বেশ সুন্দর। বাড়ির দালানে একটা ছবি দেখে, দয়ানন্দ পত্নীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম" এটা কে?"
আমাকে বলল, "এই মানুষ টাকে এখন চেনা দায় মাত্র ২সপ্তাহে এই অপরূপ মানুষ,কালো হয়ে গেছে।আর রোগা ও হয়েছে। এটা আমার স্বামীর ছবি।"
এই মানুষ টা মাত্র পনেরো দিনে,এতো টা পরিবর্তন। কি ভয়াবহ!  মানুষ গিরগিটির থেকে রূপেও এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হয় এটা দয়ানন্দ বাবু কে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়  না।বেশ কিছুক্ষণ আমার সাথে গল্প হল দয়ানন্দ ও তার পরিবারের সাথে। পরিবার বলতে কেউ নেই। সন্তান নেই। দুজনেই  সুখে জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার জন্য তাদের সুখে ব্যাঘাত ঘটেছে। সেন বাবুর ব্যবসা  তাই বন্ধ কিন্তু বেশ বড়ো ব্যবসায়ী  তিনি এলাকায় নাম আছে। কথা বলতে বলতে সন্ধে নেমে  রাত নামতে আরম্ভ করল প্রায় সাতটা নাহলে একটু বেশি হবে, তখন ডাক্তারবাবু এলো। এসে বেশ হেসে আমার দিকে তাকিয়ে তার পর,দয়ানন্দ বাবুর স্ত্রীকে বলে, "বৌদি এটা কে!" উত্তরে বলেছিলেন, "ঠাকুরপো!  এটা আমার দূরসম্পর্ক এর আত্মীয় হয়। এখানে এসেছে তাই দেখা করতে এলো।"
কথার ভাব দেখে বুঝলাম, ডাক্তারবাবুকে বুঝতে দিতে চান না। ডাক্তার দয়ানন্দ বাবুকে দেখে জ্বর মেপে চলে গেল। আমি কোথাও যেতেও পারছি না।সম্রাট একটা বড়ো দায়িত্ব দিয়েছে।আমার ভুলের জন্য একটা মানুষের প্রাণ চলে যেতে পারে, তাই আমি সবসময় দয়ানন্দ বাবুর কাছেই আছি একটুও চোখের আড়াল হয়নি। তবুও একি।দয়ানন্দ বাবু কাশি হচ্ছে খুব অদ্ভুতভাবে, কয়েক সেকেন্ড পর, একমুখ রক্ত। সারাশরীর কাঁপছে,  ডাক্তারের একটা ওষুধ খেতেই দয়ানন্দ বাবুর ঘুম দিলেন। এই ঘটনাটা  ফোনে সম্রাট কে বলতেই সম্রাট, পাগলের মতো হাসতে লাগল, আর বলতে লাগল,"হা হা হা হা, বাহ নাটক টা,বেশ। তুই বাস ধরে ফিরে আয়। আর দয়ানন্দ বাবুর বাড়ির নম্বর টা নিতে ভুলিস না যেন! "
সম্রাট গুরু আর আমি তার একনিষ্ঠ ভক্ত,তার অর্ডার পেলেই আমি কাজে লিপ্ত হব এটাই মনভাব হয়েছে। তাই তার কথামত কাজ করে ফিরি। আমি বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রাই, সম্রাট এর তীরমুখী প্রশ্ন, "কি হয়েছে সব খুলে বল! যা  যা  ঘটনা ঘটেছে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ বল।" আমিও বলা শুরু করলাম, সম্রাট একটা খাতা নিয়ে কি বিশেষ বিশেষ কিছু নোট করছে। তার পর কথা শোনা শেষ হওয়া মাত্র।আমাকে বলল, " যা  তুই খেয়ে নে, অনেক কাজ দিয়েছি তোকে। শম্ভু খাবার রেডি করেছে। খেয়ে আমার বিছানার পাসে তুই শুয়ে পড়বি। তার পর আমি দেখছি।আজ এই রহস্যের সমাধান এর জাল ভেদ করতেই হবে।" 
আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই ওর কথা মত কাজ করে, সারাদিনের পরিশ্রম এর কারণে বোধহয় ঘুমটা ভালো হল। সকালে যখন ঘুম ভাঙে তখন বেলা ১১টা বাজে। পাশে সম্রাট নেই। শম্ভুকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল,  "বাবু তো ভোরের বেলা উঠে কোথায় বেরিয়েছে এখনো আসেনি।" কে জানে বাবা কোথায় সে। আমি স্নান করে উঠে সম্রাট এর বই ভান্ডার থেকে একটা বই তুললাম, বই টা পড়া শুরু করে দিলাম।আহ গোয়েন্দা গল্প। প্রায় একঘন্টা লাগল একটা গল্প শেষ করতে। বইটা নতুন, নাম' শতাব্দীর সেরা ১০০ গোয়েন্দা '। ছোট বেলার গোয়েন্দা বলতে, ফেলুদা, কিরিটি বা ব্যোমকেশ টাই জানি। কিন্তু জগতে কত যে গোয়েন্দা আছে তা আমার কাছে অজানা। বেলা তিনপ্রহর। সম্রাট রুক্ষমূর্তির মতো আসল।এসেই আমাকে প্রশ্ন করল,"কিরে ঘুম কেমন হল? (মুচকি হেসে) ভালো মনে হয়। তা দুপুরের খাবার খেয়েছিস? " আবার" তুই দশ মিনিট দাঁড়া আমি রেডি হয়ে একসাথে খাব!"
আমি সম্রাট কে দেখেই অবাক,এই সেই সম্রাট যে হাজার কথার একটা জবাব দিত, শান্ত চুপচাপ ছেলেটা আজ এই রকম। প্রকৃতি মানুষকে কিভাবে পরিবর্তন করে তা বেশ টের পেলাম।

 খেতে বসেছি, " আজ শম্ভু তোর রান্না খুব ভালো হবে মনে হয়।" - সম্রাট বলল। ওদিকে শম্ভু বলল," বাবু আপনার কাজ সফল হল নাকি! নাহলে তো খাবার আগে সুনাম হয় না!"
এদের দুজনের কথা দেখে আমি অবাক। আমি সম্রাট কে বলি, "আচ্ছা  এর পর?" উত্তরে, (হো হো হেসে) আর কি ভায়া, এবার চল আজ একটা নাটক পরিবেশন করি।" আমি, "নাটক! সেকি?" সম্রাট এবার উচ্চস্বরে, " খাওয়াটা শেষ হলেই দেখতে পাবি!"

খাওয়া শেষ করে পাঞ্জাবী টা পড়ে নিল সম্রাট। আর আলমারি থেকে একই রকম একটা পাঞ্জাবী দিয়ে বলল," এটা পড়! " তার পর বেশ সুগন্ধি মেখে বেড়িয়ে চলল। সাঁতরাগাছি যাবে বলে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করল। যাবার পথেই এক হাসপাতাল থেকে একটা ডাক্তার কে ডেকে নিল। তার পর চলল, গন্তব্য।  সেখানে গিয়ে নাটক উপস্থাপনের জন্য নিজেই চেয়ার সাজিয়ে রাখল।দয়ানন্দ বাবুর স্ত্রীকে সম্রাট বলল, "আপনি এমারজেন্সি, অচীন বিশ্বাস কে ডাকুন এক্ষুনি। " তাই হল,  অচীন বিশ্বাস তাড়াতাড়িই এলো। সম্রাট তার কালে কি কথা বলল, সে দালানে নাট্যমঞ্চে নিয়ে বসালো অচীন বিশ্বাস কে। তার উলটো দিকে বসে সম্রাট। পাসে নতুন ডাক্তার। আর অচীন বিশ্বাসের পাসে আমি। আর ডান দিকে দয়ানন্দ বাবু ও তার স্ত্রী। এখনো একটা চেয়ার খালি। নতুন ডাক্তারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন সবাই কে।  এমন সময়, স্থানীয় থানার দারোগা ও দুই কনস্টেবল কে নিয়ে আসে। আর দারোগা বাবু প্রবেশ করতেই, সম্রাট উচ্চকিত  স্বরে বলে ওঠে ,  "আসুন মহাপাত্র। " আর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে ইনি এই দারোগা থানার। নামই ভবেশ মহাপাত্র। দারোগা বাবু বসলেন।আর দুই কনস্টেবল দরজায় দাঁড়িয়ে রইল।

বিকাল ৫টা বাজে, সম্রাট গলায় ব্যঙ্গ শব্দ করে বলে উঠল," তবে নাটক শুরু হোক।"
মহাপাত্র- " কি নাটক গায়েন বাবু।"
সম্রাট নতুন ডাক্তার কে বলার অনুরোধ করল,( বলুন ডাক্তার বাবু)। নতুন ডাক্তার, অচীন বিশ্বাস এর ওষুধ আর রিপোর্ট দেখে বলে," এটা শরীরের কোষ নষ্ট করার ওষুধ, যা  সুস্থ মানুষ রোগের মধ্যে চলে আসবে। আর প্রত্যেক রিপোর্ট গুলোই ভুল।" অচীন বিশ্বাস আপত্তি করতে যাচ্ছিল,  কিন্তু সম্রাট তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে," এবার শুনুন অচীন বিশ্বাস আসলে ইনি ডাক্তারই নয়,আসলে যাকে বলে ভুয়ো।মেদিনীপুর জেলায় খাসমরা গ্রামের স্কুলে মাধ্যমিক পাশ টা করতে পারেনি এই অচীন বিশ্বাস। কিন্তু কলকাতায় ওষুদের কারখানায় কাজ করত তাই সে ডাক্তার সাজতে পেরেছে।"
কিন্তু এই নাটক করার কারণ কি? দয়ানন্দ বাবুকে হত্যা! তাতে এর লাভ কি! - প্রশ্ন টা মহাপাত্র করেন!
উত্তরে সম্রাট বলে," থামুন স্যার। লোভ জিনিস টা কি জানেন! হয়ত জানেন। এটা টাকার লোভ নয় এটা যৌন লোভ, এককথায় কাম লোভী এই অচীন বিশ্বাস। কারণ দয়ানন্দ বাবুর চোখের আড়ালে , অচীনবাবুর সাথে প্রেমালাপ হয়  দয়ানন্দ বাবুর স্ত্রী বিপাশা দেবীর সাথে। "
এবার মহাপাত্র আবার প্রশ্ন করে, "তা বুঝলাম,  তাহলে অচীনবাবু বিষ এনে দিত, আর মুখে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল বিপাশা দেবীর!"
"আপনি ভুল দিকে চলছেন, বিপাসা দেবী জানেন না যে বিষ টা কিভাবে দিত, কারণ দয়ানন্দ বাবু তার স্ত্রীকে সন্দেহ না করলে ও তার স্ত্রী কিভবে মেশাবে তার সুযোগ ছিল না।" বলল সম্রাট।
 চারিদিক চুপ, হাওয়া বাতাস সব থমকে, বিপাসা দেবী, অচীন বিশ্বাস, আর দয়ানন্দ বাবুর মুখ থমথম করছে, আর প্রতি ক্ষেত্রে  একটা একটা জাল ছিঁড়ছে সম্রাট।
 আবার সম্রাট বলে চলল, " জানেন মহাপাত্র, বিপাসাদেবী কে পাবার জন্য তাছাড়া দয়ানন্দ বাবুকে হত্যা করবার জন্য অচীন বিশ্বাস  এক নতুনত্ব আবিস্কার করল। রোজ জ্বল উঠত বিষক্রিয়ার জন্য, তাই রোজই জ্বর মাপার যন্ত্র,  থার্মোমিটার টা মুখে দিয়ে জ্বর মাপতে হত  অচীন বিশ্বাস কে। তাই সে থার্মোমিটার এর পিছলে লিকুইড বিষ আছে যা গন্ধ হীন ও বর্ণহীন। সেইটার মাধ্যমে রোজ অল্প অল্প করে মরণের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। একেবারে মারলে সন্দেহ করে তাই এই পন্থা আবিস্কার করে। এবার আপনি(মহাপাত্র) কি করবেন আপনার ব্যাপার। আমি এবার চলি!"

বাড়িতে ফিরে এসে এতো কান্ড দেখে সেদিন শুধু সম্রাট কে একটা কথা বলেছিলাম, "আচ্ছা সম্রাট,তুই তো রহস্যের জাল এমন ভাবে ভেদ করলি, যেটা ফেলুদা ব। ব্যোমকেশ কেই দেখেছি। তুই ও কি ওই একই রকম নাকি?" কথা টা  শুনে সম্রাট কিছুক্ষণ চুপ থাকে তার পর বলে, "ওনারা শ্রেষ্ট, আমি নবীন আমার শিক্ষা ওনাদের কর্মের মাধ্যমে। আর তুই ভাবছিস ওনাদের মতো! এটাই ভুল  আমি আমার মতো।"




নীল ভালবাসা
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
জ্বলন্ত অরুন্ধতী
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
         নীল আজ সাত দিন হল ফিরে এল শম্পার ফ্ল্যাট থেকে নিষ্ফল হয়ে।নীলের নিজেকে খুব অস্থির লাগছে।
নীল একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর উচ্চপদস্ত কর্মচারীনীলের যখন একুশ বছর বয়স তখন নীলের বাবা মারা যায়।তারপর থেকে নীল নিজে টিউশনি করে পার্টটাইম জব করে সংসার চালিয়েছে নিজে MBA পাশ করেছে।আরও পড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সে ক্ষমতা ছিল না।বাড়িতে মা আছে ভাই আছে।      নীল নিজে উউচ্চশিক্ষা নিতে পারে নি।কিন্তু ভাইকে সে উচ্চশিক্ষা দেবে ঠিক করেছে।ভাই প্রিয়ব্রত MSC করে PHD করছে।ইচ্ছা আছে বিদেশে গিয়ে পড়ার।নীলের এখন বয়স ত্রিশ বছর।Druk & handsum ব্যাকব্রাশ করা চুল।লম্বা ছিপছিপে শরীর যে মেয়ের কাছে আকর্ষনীয়।নীলের বরাবরই একটু বয়স্ক মহিলা পছন্দ।এর আগে মিতা নামে এক বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল নীলের।নীলের বাড়ি চন্দননগরে।কোলকাতায় দু-কামরার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে।মিতার স্বামীর বদলির চাকরী।মিতার স্বামী বদলি হয়ে যায় ফলে সেই সম্পর্কের ইতি ঘটে সেখানেই।আর নীলের কাছে প্রেমজ সম্পর্ক মানেই শারীরিক সম্পর্ক।এর বাইরে কোনও মানসিক সম্পর্কের কথা নীল ভাবতেই পারে না।মিতার সঙ্গে সম্পর্কপর ইতি ঘটার পর্ নীল কিছুদিন একাই ছিল।তারপরে আলাপ হয় শম্পার সঙ্গে।শম্পাও বিবাহিতা কিন্তু শম্পা একাই থাকে।শম্পার সঙ্গে নীলের আলাপ খুব অদ্ভূতভাবে।শম্পা তার একটা পার্টস্ মেট্রোতে হারিয়ে ফেলে।আসলে যে সীটে বসেছিল সেখানেই  চলে আসে।সেদিন আর খেয়াল হয় নি শম্পার।পাকে-চক্রে সেই পার্টস্ পরে নীলের হাতে।নীল দেখে পার্টসের ভেতরে যাবতীয় জরুরী জিনিস।ভেটার আইডি-প্যান-আঁধার কার্ড।তাছাড়াও অফিসের আইডি কার্ড।সেখানেই নীল শম্পার বাড়ির ঠিকানা ও ছোট একটা সাধারন মোবাইলও পেয়ে যায়।নীল বুঝতে পারে যে এটা হারিয়েছে সে ভালই বিপদে পরেছে।নীল রাতে বাড়ি ফিরে শম্পার মোবাইল থেকেই চম্পাকে জানায় যে সে পার্টসটা পেয়েছে।শম্পা পরের দিন রবিবার নীলকে নিজের ফ্ল্যাটে আমন্ত্রন জানায়।একদম সেজাসুজি দুপুরে খাবার নিমন্ত্রন করে।সেই আলাপ শম্পার সঙ্গে নীলের।
শম্পা বিবাহিতা হলেও একা থাকে।একটা সরকারী অফিসের উচ্চপদস্ত কর্মচারী।শম্পা মফঃস্বলের মেয়ে।বিয়ে হয়েছিল মাত্র আঠারো বছর বয়সে একটা যৌথ পরিবারে। শম্পার শশুরবাড়ি ছিল পুরনোপন্থী ও রক্ষণশীল।আর শম্পা বড় হয়েছিল চূড়ান্ত আধুনিক মানসিকতায়।ফলে শশুরবাড়ির সঙ্গে শম্পার সঙ্ঘাত ছিল অনিবার্য।শশুরবাড়ির নিয়মানুযায়ী সব সময় শাড়ি পরতে হত।মাথায় ঘোমটা দিতে হত।কোনও পাশ্চাত্য পোশাকের কথা শশুরবাড়ির মেয়েদের চিন্তা করাও পাপ।বাড়িতে কোনও কাজের লোক ছিল না।নিজেদের সব কাজ করতে হত।এমন কি বাড়িতে কোনও আধুনিক গ্যাজেট অর্থাৎ মিক্সি-ফ্রিজ -ওয়াশিং মেশিন কিছুই নেই।এবং কিনতেও অনীহা।ওসব নাকি ফালতু জিনিস।এইসব সহ্য করতে করতে শম্পা একদিন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং শশুরবাড়ি থেকে দুই বছরের মাথায় বেড়িয়ে আসে।বাপের বাড়িতে মা-বাবা এই নিয়ে খুব অসন্তুষ্ট হয়।শম্পা যখন শশুরবাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে তখন শম্পার কুড়ি বছর বয়স।বাপের বাড়িতে ফিরে আবার পড়াশুনো শুরু করে শম্পা।শম্পার এখন পঁত্রিশ বছর বয়স।একা থাকে।নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।যদিও দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও স্বামী অমিতের সঙ্গে শম্পার এখনও ডিভোর্স হয় নি এবং কোনও অজ্ঞাত কারণে স্বামী বিয়েও করে নি।
           নীলের পর্টস্ ফেরত দেবার শম্পার সঙ্গে নীলের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হয় এবং সেটা শারীরিক সম্পর্কে পরিণত হয়।দুজনের পছন্দ আচমকাই মিলে গিয়েছিল।দুজনেই সম্পর্ক মানে বোঝে শারীরিক সম্পর্ক।  দুজনেই   রাতের     দিকে ব্লু-ফিল্ম দেখতে ভালবাসে।
সেই সূত্র ধরেই দুজনে সপ্তাহে প্রায় চার-পাচদিন মিলিত হতে শুরু করে।
         প্রথমদিন যদিন প্রথম দেখা হয় দুজনের সেদিনই দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।শম্পার পরনে সেদিন ছিল একটা নীল রঙের সিফন শাড়ী আর স্লিভলেস ব্লাউজ।শ্যাম্পু করা চুল খোলা।শম্পা নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে লজ্জা পাচ্ছিল।নীল শম্পাকে দেখেই যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল।দুপুরে খাবার পরে নীল শম্পাকে বলে
      ম্যাডাম আমি কি আপনার পাশে বসতে পারি।
       আরে বসুন না এত কিন্তু কিন্তু করছেন কেন আমি কি বাঘ না ভাল্লুক।
Thank You Mam.
নীল তারপরেই শম্পার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে।   lশম্পাও নিজেকে আস্তে আস্তে নীলের হাতে ছেড়ে দেয় প্রথম দিন নীলের সঙ্গে শম্পার শুধু চুম্বন পর্ব চলে তার সঙ্গে কিছু স্পর্শ।নীলের হাত শম্পার সারা শরীরে ঘুরে বেড়াতে থাকে।নীল যখন শম্পার স্তন স্পর্শ করে তখন শম্পার সমস্ত ধৈর্য ভেঙ্গে যায়।বাঘ যেমন অনেকদিনবাদে রক্তের স্বাদ পেলে যা হয় শম্পারও সেই অবস্থা তখন।শম্পার পঁয়ত্রিশ বছরের ঘুমন্ত যৌবন তখন জেগে উঠেছে।নীলও উত্তেজিত হয়ে পরে।দু হাতের তালুতে শম্পার স্তন দুটো নিষ্পেষন করতে করতে নীলের পুরষাঙ্গ স্ফীত হয়ে ওঠে।তবু সেদিন নিজেরা দুজনে দুজনকে সংযত করে নেয়।সেদিন রাতে নীলের সঙ্গে শম্পার কথা হয় ফোনে।তখন রাত একটা।
                             হ্যালো কি ব্যাপার এখনও ঘুমোও নি কেন
       ঘুম আসছে না
         কেন
       তোমার কথা ভাবছি
        কি ভাবছ
        তুমি এত সুন্দর
      তাই।তোমার ভাল লেগেছে।
অসাধারন।তোমার ব্রেস্ট দুটো উফফঃ।Just Superb!একটা কথা জিজ্ঞেস করব If You Don't minde plzzz.
বলো
কবে তোমায় সম্পূর্নভাবে পাব
তুমি যেদিন চাইবে
Raealy!
Yes.
WOW!Thankx.তাহলে কাল যদি আমি অফিসের পরে যাই
হুম ok but ক'টার সময়।
এই ধরো সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটা।আমি কি রাতের খাবার নিয়ে যাব।
No.আমি বানিয়ে নেব।তুমি কি খাবে বলো।
রুটি আর চিকেন কষা।তুমি কি ড্রিংক করো।
খুব একটা নয় মাঝে মাঝে।
Ok. তাহলে আমি কি কিছু নিয়ে যাব।
নিয়ে এসো আমি কিন্তু বেশী খাব না।
Ok.no problem.একটা অনুরোধ করব।
বলো।
তুমি কাল Just একটা নেটের নাইটি পরে থেকো ব্যাস্ আর কিছু নয় plzzz.
সব কিছু ওইভাবে দেখার থেকে মোড়ক খুলে দেখাটা বোধহয় বেশী আনন্দের তাই না।
হুম তা ঠিক।Ok তাই হোক্
পরের দিন ঠিক আটটার সময় নীল শম্পার ফ্ল্যাটে চলে আসে।শম্পার ফ্ল্যাটের পরিবেশে তখন স্বপ্নের মত আবেশ।হালকা আলো জ্বলছে।হালকা মিউজিক চলছে।সিডিতে ব্লু ফ্লিম চলছে।শম্পার পরনে কালো রঙের নেটের শালোয়ার-কামিজ ভেতরে শুধু একটা ব্রা।সেটা ডিসেম্বরের শেষ তাই ওপরে একটা হালকা জ্যাকেট।চুলটা খোলা হালকা প্রসাধন।নীল তো ঢুকেই শম্পাকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিল।শম্পা সরে গিয়ে বললো
                           এখন নয় আগে ফ্রেস হও।বাথরুমে সব রাখা আছে।নীল বাথরুমে ঢুকে তো অবাক।সমস্ত ব্যবস্থা করা।  এমন কি নীলের জন্যে একসেট পাজামা-পাঞ্জাবীও রাখা।নীল ফ্রেস হয়ে ঘরে ঢুকে দেখল গ্লাস-বরফ সব রেডি।নীল শম্পাকে জড়িয়ে ধরে একটা হালকা করে চুমু খেয়ে বলল
                  লক্ষ্মী মেয়ে সব ব্যবস্থা একেবারে পাকা।
শম্পা একটু হাসল।
                   সামান্য ড্রিংকসের পরে ওরা রাতের খাবার শেষ করলো।তারপরে নীল বললো
                                            এবারে মোড়ক খেলা যাবে কি ম্যাডাম।
শম্পা শুধু একটু হাসল।
নীল আর শম্পা ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হল।দুজনে নিরাবরন হল।দুটো শরীর মিলিত হল।নীল শম্পার সারা শরীর চুম্বন ও লেহন করলো।নীল যখন শম্পার স্তন ও যৌনাঙ্গে মুখ দিল শম্পার সংযম ভেঙ্গে গেল।সিডিতে তখন উত্তাল ব্লু-ফিল্ম চলছে।নীলের একটা স্বভাব আছে শরীরিক মিলনের সময় প্রচণ্ডভাবে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে।শম্পা নীলের সারা শরীর লেহন করল।তারপরে শুরু হল দুজনের উমত্ত সঙ্গম।শম্পার যৌনাঙ্গ বহুদিনবাদে পুরুষাঙ্গের স্পর্শ পেলো।শম্পার শীৎকারে ফ্ল্যাটের আসবাবপত্রগুলোও যেন সজাগ হয়ে উঠলো।এইভাবে আজ প্রায় ছ'মাস হয়ে গেল নীল আর শম্পার মিলন পর্ব চলছে।
         হঠাৎই এই সপ্তাহে নীল দেখছে শম্পা যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।ফোন করলেও ফোন ধরছে না।আজও নীল হতাশ হয়ে ফিরে এলো শম্পার ফ্ল্যাট থেকে।শম্পার ফ্ল্যাট থেকে ফিরে নীল ড্রিংকস্ নিয় বসল। যখন প্রায় Out হয়ে গেছে তখনই হঠাৎ দরজায় বেল বাজল।নীল ভাবল শম্পা এসেছে বোধহয়।দরজা খুলে দেখল দরজায় স্বপ্না দাঁড়িয়ে।
          স্বপ্না মফঃস্বল থেকে পড়তে এসেছে কেলকাতায় এ্যাকাউন্টেন্সি পড়তে এসেছে। মাঝে মাঝে নীলের কাছে পড়তে আসে।নীল ফ্রি সার্ভিস দেয়।গায়ের রঙ্গটা চাপা হলেও যথেষ্ট আকর্ষনীয় দেখতে স্বপ্নাকে।বয়স বছর তেইশ হবে।স্বপ্না প্রথমে বুঝতে পারে নি।ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।পরে নীলের অসংযত কথাবার্তা শুনে হতবাক হয়ে গেল।নীল হঠাৎই স্বপ্নাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল
                            শম্পা  My Darling তুমি এসেছ।কেন এইরকম করো বল তো।আমি তোমার গুদে বাড়া না ঢোকাতে না পারলে শালা আমি পাগল হয়ে যাই।শালা আজ সাতদিন হল তেমায় পাই নি।বলতে বলতে হঠাৎই স্বপ্নাকে জড়িয়ে ধরে নীলের বিছানায় শুইয়ে দিল স্বপ্নাকে।স্বপ্নাকে নিরাবরন করতে লাগল।বাধা দেবার সময় পেল না।সেদিন নীলের শরীর ও পুরষাঙ্গ স্বপ্নাকে শোষন করে শান্ত হলআর স্বপ্না প্রথম কোনও পুরুষের সঙ্গে মিলনের স্বাদ পেলক'দিনবাদে শম্পাকে নীল দেখতে পেল কোলকতার একটি রেসটুরেন্টে একটি ছেলের সঙ্গে।পরেরদিন নীল শম্পাকে অনুসরন করে দেখল শম্পা নতুন সঙ্গীর সঙ্গে জোড় বেধেছে।ছেলেটির নিজস্ব ফ্ল্যাট কসবাতে।সেদিনই রাতে শম্পা নিজে নীলকে ফোন করে জানাল শম্পা আর নীলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবে না।শম্পার স্বামী অমিত বসুর সঙ্গে শম্পার সম্পর্ক জোড়া লেগে গেছে আবার। এটাও জানাল শম্পা আগে ভাবত শারীরিক মিলনটাই আসল সম্পর্ক।কিন্তু অমিত বুঝিয়েছে শম্পাকে শারীরিক মিলন নয় মানসিক মিলনই দুটো মানুষের সম্পর্কের আসল ভিত্তি।নীল বিরাট একটা ধাক্কা খেল।
         সেদিনের পর থেকে স্বপ্না আর নীলের কাছে পড়তে আসে না কথাও বলে না।দেখলে মাথা নীচু করে চলে যায়।     নীল দু-একবার কথা বলার চেষ্টা করেছে স্বপ্না এড়িয়ে গেছে।সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল নীল হঠাৎই জানতে পারে নীলের ভাইয়ের প্রেমিকা হল স্বপ্না।   নীল এরপর থেকে উদভ্রান্তের মত ঘুরতে থাকে।শেষ পর্যন্ত নীলের সঙ্গে আলাপ হয় ওর থেকে দশ বছরের বড় শর্মিলা নামে এক মহিলার সঙ্গে। তার সঙ্গেও শারীরিকভাবে মিলিত হতে চেয়েছিল নীল।শর্মিলা একজন সাংবাদিক বিবাহিতা।স্বামী বাইরে থাকে।একটি ছেলে বাইরে থেকে পড়াশোনা করে।শর্মিলা সেই পথে না গিয়ে দিনের পর দি নীলের সঙ্গে আড্ডা দিতে থাকে।তারপরে ধীরে ধীরে নীলকে বই পড়ার নেশা ধরায়।নীল প্রচুর বই পড়তে শুরু করে।
       শর্মিলার সঙ্গে আলাপের প্রায় এক বছর বাদে নীল বুঝতে পারে শরীর নয় মনই মানুষের আসল যা  হল যে কোনও সম্পর্কের ভিত্তি।এইবার নীলের আসল খোঁজ শুরু।আজ নীল এমন একজন মানুষ খুঁজছে যে নাকি নীলকে সত্যিই ভালবাসতে পারবে।

৫২ গেটের খিড়কি
সন্দীপ দাস
১।।
"ভাই , ক্যায়া কেহ রহে হো ।। আটশো রূপাইয়া , শেয়ারিং মে ।। চারশো হোতা হ্যায়" ।। ভোপাল থেকে ইন্দোর আহল্যাবাই বিমানবন্দরের পথে অবশেষে ওই পাঁচশো টাকায় যাত্রা শুরু হয়ে গেল ।। দুপুর দুটো কুড়ি তে উড়ে চলব ঔরঙ্গবাদের পথে ।।
ইতিহাসের এক অন্যতম যোগসূত্র এই ঔরঙ্গবাদ আর খুবই উৎসাহিত আমি এর অঙ্গ হয়ে উঠতে পেরে ।। কাল রাতেই সমস্ত কিছু প্যাকিং করে রেখেছিলাম ।। আজ সকাল সকাল উঠে পড়েছি , ঘুরতে বেরোলে ঘুম এমনিও ভেঙে যায় ।। বাঙালি প্রাণ , অভ্যেস এমনই ।। আমিও ব্যতিক্রম নই ।।
উঠেই দেখি আসিফ এর অটো ফোন করছে , কাল বিকেলেই বলে রেখেছিলাম , ভোপালে এত দিন থাকার সুবাদে এই টুকু পরিচয় তো হয়েই গেছে আমার ।।
যাই হোক পৌনে সাতটা নাগাদ যাত্রা শুভ সূচনা করলাম আর এখন জাতীয় সড়ক 13 ধরে আমার ; সরি আমাদের ( শেয়ার করা ) গাড়িটি ছুটে চলেছে ।।

                                                          ২।।
অবশেষে বিমান বন্দরে পৌঁছাল গাড়ি ।।  দীর্ঘ 3 ঘন্টার পথ পার করে এগিয়ে এলাম , এখনো অনেক যেতে বাকি ।। রাস্তার দুদিকের প্রকৃতি আজ অনেক ঠান্ডা , কাল বিকেলে যে বৃষ্টি হয়েছিল তারই ফল ।। রোদের উত্তাপ কম তাই একপ্রকার ক্লান্তি হীন শরীর ।।
আসার এই দীর্ঘ পথে অবশ্য একবার থেমেছিলাম , সুজলপুরের কাছে একটি ধাবায় ।। স্যন্ড্ডুইচ আর চা এই ছিল আজকের ব্রেকফাস্টের মেনু ।। এরপর আবার যাত্রা শুরু 9.30 নাগাদ ।। আর থামতে হয় নি ।। দুপাশের ক্ষেত , বায়ু সমস্ত ভেদ করে শুধু মাত্র ঘোরার টানে এগিয়ে চলেছে গাড়ি ।। গন্তব্য অহল্যাবাই বিমানবন্দর ।।
এরপর এখান থেকেই উড়ে যাব মুম্বাই হয়ে গন্তব্য ঔরঙ্গবাদের দিকে ।। এবার বোর্ডিং পাস ও এয়ারপোর্ট এটিকেটের পালা ।।

                                                             ৩।।
সময়ের অনেক আগেই সিকুরিটি চেকআপ সেরে ভিতরে চলে এসেছি ।। কিন্তু ঝামেলা এখানেও পিছু ছাড়ল না ।। মুম্বাই গামী জেট এয়ারওয়েজের বিমান অস্বাভাবিক দেরি , যার ফলে যেটা হতে পারে যে মুম্বাই ঔরঙ্গবাদ বিমান গ্যারেন্টি নিয়ে মিস করব ।। চিন্তা বাড়তে থাকল , যতই দেরি বাড়তে থাকল ।। হঠাৎ একটা অচেনা কলে শান্তি ফিরল ।। কলটি এসেছিল জেট এয়ারওয়েজ থেকে ।। তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাকে ফোন করে এবং আমার টিকিটটি ইন্ডিগোর সাথে বদলে আনে , যার ফলে 2.20 নয় , আমার নতুন যাত্রা সূচি দাঁড়াল দুপুর 1টা ।।
ইন্দোর এয়ারপোর্টের ভিতরটা খুব সুন্দর সজ্জিত আর সবচেয়ে বিশেষ ভাবে আমার নজর কারল দুটো জিনিস আজ বিমানপোতে এসে ;
প্রথমত ; হঠাৎ কানে ভেসে আসা সত্যজিতের ফেলুদা সিনেমার সেই পরিচিত বিখ্যাত মিউজিক ।। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু বুঝতে পারলাম না যে কোথায় এই মিউজিক চলছে , অবশেষে প্লেনে ঢোকার মুখে আবিষ্কৃত হল এক অদ্ভুত বিষয় ।। মিউজিক টি এয়ারপোর্টে বাজানো হচ্ছিল ।। এমন ভাবে এই মিউজিকের সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ হওয়াতে বাঙালি হিসাবে বেশ গর্ব হচ্ছিল ।।
আর দ্বিতীয় হল , সেই অচেনা মেয়েটি ।। আমাকে দেখতে পেয়ে নিজেই এগিয়ে এল আমার দিকে , পরিচয় দিয়ে বললো তার নাম পুনম এবং আমার লেখা নাকি ফেসবুক মারফত সে পড়েছে এবং পড়ে থাকে ।। ব্যাঙ্গালোর নিবাসিনি কলকাতার এই মেয়েটির কথায় আমি বেশ অবাক হলাম ।। যাই হোক সময় কম তাই এটুকুতেই বিদায় জানাতে হল তাকে ।। তবে , ফেসবুকে বন্ধুত্ব রিকোয়েস্ট পাঠানোর অনুরোধ রইল এই কাহিনীর মাধ্যমে ।।
ইতিমধ্যে বোর্ডিং এনাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে , তাই লাইন দিয়ে বিমানে উঠতে ব্যস্ত হয়ে পড়ব , অবশ্য তার মাঝখানেই কিছু লোক এসে ভিড় জমালো যারা হায়দ্রাবাদ যাবে কিন্তু এই বিমান মুম্বাই যাবে ,হায়দ্রাবাদ নয় ।। তাদের বিমান 10 নম্বর গেট থেকে ছাড়বে ।। সেটা বোঝাতে এয়ারপোর্ট এ দাঁড়িয়ে থাকা ইন্ডিগোর লোকেদের বেশ সময় লাগল ।। অবশেষে তাদের সঙ্গে নিয়ে একজন রওনা দিল 10 নম্বর গেটের দিকে আর এদিকে আমি , মুম্বাই গামী সকল লোকেদের ভিড়ে এই 4 নম্বর গেট দিয়ে রওনা দিলাম বিমানের ভিতরে নতুন উৎসাহে এগিয়ে যেতে ।।
বিমান ছাড়তে আর কিছু মিনিট , তার ফাঁকেই বলি বাই বাই মধ্য প্রদেশ ।।

                                                                 

                                                                ৪।।
আকাশে ওঠার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল , নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান ।। বিমান আজ বেশ ফাঁকা , এমন নয় যে প্রথম বিমানে চাপছি , কিন্তু আজ বিমান বেশ ফাঁকা ।। মেঘের ওপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে এই যে এগিয়ে চলেছি মুম্বাইয়ের দিকে তা সত্যি এক দারুন অভিজ্ঞতা , সবটা ছবি তুলে বোঝানো সম্ভব নয় তবে যেটুকু পারলাম তুলে রাখলাম ।।
বিমানের মধ্যে ইতিমধ্যেই অন বোর্ড সেলস শুরু হয়ে গেছে ।। জিনিসটা আর কিছু নয় রেলে যেমন হকাররা জিনিস বিক্রি করে , বিমানে এয়ার হোস্টরেস রা সেজেগুজে জিনিস বিক্রি করতে আসে সিটে সিটে ।। অনেক দাম , এদিকে খিদেও পেয়েছে তাই একটি স্যান্ডউইচ ও কফি কিনেই নিলাম ।। ওদিকে কিছু বিদেশিনির দল , মাঝে মাঝে উঁকি মেরে আবার মুখ গুটিয়ে নিচ্ছে , জানিনা কি খুঁজে চলেছে আর আমার ঠিক পিছনে এক বিহারী পরিবার , হাবভাবে স্পষ্ট বিমানে নতুন চড়ছে , সিটবেল্ট বাঁধা দিয়ে শুরু হল , এরপর থেকে নানা জিনিস নিয়ে নানা অভিযোগ করেই চলেছে ।। আর তার থেকেও বিশেষ হল , প্লেন টেক অফ করার সময় বিহারী মহিলাটি সিট বেল্ট খুলে সটাং উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন ।। বিমান কর্মীরা কোনভাবে তাকে বসালেও ততক্ষনে সকলের দৃষ্টি তিনি ভালভাবেই আকৃষ্ট করে ফেলেছেন ।।
এই সবের থেকে অনেক দূরে বিমান পরিচালক খুবই যত্নের সঙ্গে বিমান উড়িয়ে নিয়ে চলেছে নিজের গন্তব্যে ।। আর আমি চুপচাপ বসে প্রকৃতি কে চেনার চেষ্টা করছি ।। ভেবে চলেছি , কি সৃষ্টি এই পৃথিবী ; ইন্দোরের মাটিতে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে আর ওপরে উঠতেই রোদ ভরে আছে ।। মেঘেদের এই দুনিয়ায় , গণেশ পুজোর এই দিনে , গণেশ ঠাকুর যখন আমায় পৃথিবীতে খুঁজে চলেছে , ঠিক তখন মাটি থেকে 32000 ফিট ওপরে গণেশ ঠাকুরের দেশের গা ঘেষে পার করে চলেছি আমি ও আমার মত এত ভ্রমন পিপাসু মানুষ ।।
আর অল্প সময়ের মধ্যেই মুম্বাই নামব , ঘোষণা হয়ে গেল এই মাত্র ।।
বিমান থেকে নামতে 2:25 হয়ে গেল ।। সম্পূর্ণ অচেনা এক পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে আমার সামনে , আর তারই মাঝখানে এল পরবর্তী খবর , যা আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল ।। মুম্বাই ঔরঙ্গবাদ বিমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়বে , যেটি বর্তমান অর্থাৎ জাতীয় বিমানবন্দর থেকে প্রায় 5 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।। একে ওকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল সেখানে যেতে হলে বাইরে থেকে ক্যাব বা অটো ভাড়া করতে হবে ।। সরকারি ক্যাবের স্টল দেখতে পেয়ে সেখানেই হানা দিলাম ।। গন্তব্য স্থলের নাম বলার আগেই সেখানে বসে থাকা ভদ্রমহিলা আমাকে জানাল যে , একটিও ক্যাব অবশিষ্ট নেই ।। ঘড়িতে তখন 2:45 , কিভাবে বিমান ধরব সেই চিন্তায় এই প্রচন্ড বর্ষাতেও ঘাম ঝড়তে শুরু করল ।।
যাই হোক আস্তে আস্তে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এলাম ।। কিছু অটো চালক আমাকে দেখে প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এল , কিন্তু ভাড়া !! 500 টাকার কম কেউ বলছে না ।। এদিকে সময় কম , অগত্যা একজন 400 বলাতে রাজি হয়ে গেলাম ।।
"জরা জলদি চলনা , টাইম নেহি হয় " , বেশ গম্ভীর গলায় অটো চালককে আদেশ করে উঠলাম ।। তাতে একটু অবাক হয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল , " বিদেশ যা রহে হো " ?
আমি উত্তর দিলাম , " তুমহে ক্যা , জলদি চলো "।। সে আর কিছু না বলে অটো চালানোর দিকে মন দিল ।।
যখন আন্তর্জাতিক অংশে পৌছালাম তখন ঘড়িতে বাজে 3.10 ।। কোন রকমে নেমে ভাড়া দিয়ে দৌড় লাগালাম ভিতরে ।। কিন্তু কিছুই তো চেনা যায় না , কি বিশাল জায়গা !! এ বিমানবন্দর নাকি কোন মেলা বসেছে !! আর তাছাড়া কোন গেট ও দেখছি না তো , যাই কোথায় !! এবার কি করি !! একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম তো কিছুটা জানতে পারলাম , কিন্তু এখনও এ অনেক জানতে বাকি ছিল তা আমার জানা ছিল না ।। ভদ্রলোকটি আমাকে ইশারা করে বললেন , " উধর লিফট সে 10ওয়ে মনজিল পর চলে যাও , ডিপারচার ওয়াহি হয় " ।। সে টুকু জানা গেলেও লিফট টি খুঁজে বার করতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল আর শেষ মেস লিফট যাও বা পেলাম দেখি বাবাজীবন ওপরে বসে আছে , নীচে আর নামে না ।। অনেক অপেক্ষার পর লিফট বাবাজীবন নামলেন নীচে এবং একটি গোটা আরব পরিবারের সাথে আমিও চরে পড়লাম লিফটের কাঁধে ।। ওপরে পৌঁছে সিকিউরিটি চেক করিয়ে যখন ভিতরে ঢুকলাম তখন ঘড়িতে 3.20 অর্থাৎ আর 10 মিনিটের মধ্যে আমাকে পূর্বনির্ধারিত 85 A গেট খুঁজে বের করতে হবে আর এটিই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ মনে হতে শুরু করল , কারন , যেদিকে তাকাই শুধু দোকান আর দোকান ,  গেট কোথাও দেখতে পাই না ।। যাই হোক , কোন রকমে 3.30 এর একটু আগে নিদির্ষ্ট গেটে পৌছালাম ।। মনে হল জানে জান এল , টিকিট দেখিয়ে বিমানে প্রবেশ করলাম আমি ।। অবশেষে , লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছি এটা নিজেকেই সুনিশ্চিত করে নিজের সিটে বসে সিট বেল্ট বেঁধে নিলাম ।।
বিমানটি বিদেশ থেকে অর্থাৎ সিঙ্গাপুর থেকে আসছে , তাই স্বাভাবিক এর বেশিরভাগই বিদেশি ।। আমার পিছনের সিটটি ফাঁকা , আর সামনে আছেন মুম্বাইয়েরই এক বয়স্ক দম্পতি , তাদের মধ্যে ভদ্রমহিলার সদ্য স্পাইন সার্জারি হয়েছে তাই বসতে বেশ অসুবিধে বোধ করছেন ।। বিমান কর্মীদের থেকে একটি বালিশ ও ফুটরেস্টের ব্যবস্থা করা হল , তাতে হয়ত তিনি কিছুটা আরাম পেলেন কিন্তু পরবর্তী সময়ে কি হবে জানা নেই ।।
এদিকে আমি এক নাগাড়ে জানলার পাশে বসে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছি ।।মেঘের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে জেট বিমানটি আর মেঘ বালিকারা তার স্বাগতম কিভাবে জানাচ্ছে তাই দেখছিলাম , এরই মাঝে হালকা টিফিন মানে একটি হটডগ , একটা ক্যাটবেরি ও জলের বোতল নিয়ে হাজির হলেন এক এয়ারহোস্টরেস ।। এটা অবিশ্যি ফ্রি এয়ার সার্ভিস , আন্তর্জাতিক বিমানে এই ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হয়েই থাকে ।।
অবশেষে বিকাল 5.30 সে বোম্বাইয়ের বোম্বেটে ছেড়ে কৈলাসে কেলেঙ্কারি তে হাজির হলাম ।। হোটেল বুক করাই আছে , আপাতত একটি ট্যাক্সি নিয়ে সেদিকেই এগিয়ে চলেছি ।।

                                                               
                                                                  ৫।।
ঘুরতে এসে ঘরে কি মন টেকে ? তাই গাড়ির ড্রাইভার কে ম্যানেজ করলাম , কোন সাইড সিন দেখিয়ে আনার জন্য আর সে রাজিও হয়ে গেল ।। যদিও গাড়িটি ওলা থেকে বুক করা তবু কালকের ঘোরার জন্যও এই ফাঁকে তার সাথে কথা বার্তা বলে নিলাম ।। বললো সারা দিন ঘুরতে 2500 টাকা লাগবে , আপাতত হোটেলে ঢোকার আগে বিবি কা মকবরা ঘুরিয়ে আনবে ।।
এ তো দারুন সুযোগ , তাই কোন ভাবেই না বলার কোন সুযোগ নেই ।। যদিও ইতিমধ্যে উত্তর ভারতের পাঞ্জাব , হরিয়ানা ও দিল্লি তে হিংসার খবর এসে পৌঁছেছে কিন্তু এখানে তার কোন প্রভাব নেই ।। বরং গণেশ পুজোর ধুম বেশ চোখে পড়ল পথে যেতে যেতেই ।। বহু লোক ভিড় জমিয়েছে রাস্তায় গণেশ মূর্তি আনার জন্য , কাল থেকে 10 দিন ধরে উৎসব চলবে ।। একদিকে উৎসবের হাতছানি , অন্যদিকে গাড়ির মধ্যে বসে বসে ঔরঙ্গবাদ শহরের নানা অজানা গল্প শুনে চলেছি আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে ।। আপনাদের সঙ্গে পথে যেতে যেতে সেগুলি ভাগ করে নেওয়া যাক ।।
শহরটির আদি নাম খিরকি অর্থাৎ জানলা ।। মুঘল সাম্রাজ্যে এর নামকরন করা হয় ঔরঙ্গবাদ ।। শহরটি মোট 52 টি গেট দিয়ে ঘেরা ।। এইরকমই একটি গেট হল মকাই গেট , মক্কার দিকে মুখ করে আছে এই গেটটিকে মকাই গেট বলে ।। মকাই গেট থেকে ডান দিকে ঘুরলে ওল্ড ওয়াল পড়ে ।। এই ওল্ড ওয়াল দ্বারাই পুরোনো ও নতুন ঔরঙ্গবাদ শহর ভাগ হয়ে আছে ।। যদিও বর্তমানে এই দেওয়ালটির অনেক অংশ ভেঙে গেছে ।। ঔরঙ্গবাদে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অবশ্যই আছে অজন্তা ও ইলোরার গুফা , তাছাড়া ঔরণগজিবের সমাধি , বিবি কা মকবরা ( যেটি দেখতে এগিয়ে চলেছি এখন ) , দৌলতাবাদ কেল্লা প্রমুখ ।। আরিফ ভাই বলছিলেন , দৌলতাবাদ নামটিও মুঘলদের দেওয়া ; এর আদি নাম ছিল দেবগিরি ।। এই পথে কিছু দূর এগিয়ে গেলে বাবাসাহেব ভিমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে , যেটি ঔরঙ্গবাদের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয় ।। আরো এগিয়ে গেলে পড়বে পানচাক্কি , একটি চাকি যার ওপর জল পড়ছে এবং সেই ঘুরছে আর তার থেকে ফোয়ারার সৃষ্টি হয়েছে ।।
এই সব কিছু পিছনে ফেলে আমাদের গাড়িটি একটি গেটের মধ্যে প্রবেশ করল ।। সামনে তাকিয়ে দেখি আমাদের দিকে ইতিহাসের চিহ্ন হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে বিবি কা মকবরা বা মিনি তাজমহল ।। কথিত আছে ঔরণগজিবের পুত্র এটি নির্মাণ করেন ।। তাজমহলের মত সুন্দর না হলেও এটির আকৃতি তাজমহলের সাথে বেশ মেলে , তাই বোধহয় এটিকে মিনি তাজমহল বলা হয় ।। ভিতরে ঢুকতে গেলে 15 টাকা মূল্যের টিকিট কেটে তবে ঢুকতে হয় ।। ভিতরের দুটি দরজা , প্রথমটি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয় বিবি কা মকবরার দিকে ।। বেশ কিছু ছবি তুললেও ইতিহাসের এই ইমারত প্রকৃত ভাবে মনের কোটরেই জমা হয়ে থেকে যাবে আমৃত্যু ।।
পড়ন্ত বিকেলের রোদ গায়ে মেখে বিদায় জানালাম বিবি কা মকবরা কে ।। হোটেলে ফেরার পথে আসতে আসতে কিছু গণেশ মূর্তি ও তাঁর আহ্বানে অনুষ্ঠিত নাচ দেখে মনটা সত্যিই অন্য জগতে হারিয়ে গেল ।। হোটেলে পৌছালাম তখন সন্ধ্যে সাতটা ।। আজ বেশি রাত জাগা ঠিক হবে না , কারন কাল ভোর বেলাই বেরিয়ে পড়তে হবে খিরকি ও দেবগিরি দর্শন করতে , ইতিহাসের সাথে বর্তমানকে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দিতে , নাজানা তথ্য জেনে নিতে ; আর তাই ডিনার সেরে ঘুম মেরে দেওয়াটাই ঠিক বলে মনে হল আমার ।।

                                                             ৬।।
সকাল থেকে আর তর সইছিল না ।। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই দুবার ফোন করা হয়ে গেছে ড্রাইভার কে ।। অবশেষে , গাড়ি এসে হোটেলের সামনে হাজির হল তখন বাজে সকাল ছটা ।। অধীর অপেক্ষায় হোটেলের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম ।। গাড়ি আসতে দেখেই এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করেই চেপে পড়লাম গাড়িতে ।। আমাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি ছুটল অজন্তার পথে ।। তবে তারও আগে একটি আসল কাজ সেরে নেওয়ার পালা আর সেটি হল , গাড়িতে তেল ভরতে হবে আর তাই পেট্রোল পাম্প থেকে প্রায় 1000 টাকার তেল ভরে গাড়ি ছুটল ইতিহাসের গুফার দিকে ।।
অজন্তা যেতে পথে প্রথমেই পড়ে বরকাল গেট , এটিও 52 টি গেটের মধ্যে অন্যতম ।। বরকাল গেট পিছনে ফেলে ওল্ড ওয়াল কে বামদিকে রেখে আমরা এগিয়ে চললাম ।। কিছু দূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল আর একটি গেট , রঙ্গিলা গেট ।। যদিও নামটি আমার কাছে খুবই আশ্চর্যজনক কারন গেটটিতে কোন রঙই চোখে পড়ল না আমার ।। এরপর কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল বিশাল একটি বাংলো , জানলাম এটি কালেক্টরের বাংলো ।। কিছু দূর যেতেই দেখা দিল আর একটি গেট , নাম দিল্লি গেট ।। সে সব পার করে গাড়ি এগিয়ে চললো দ্রুত বেগে ।। পিছনে পড়ে রইল অনেক কিছুই যেমন তাজ হোটেল , সলিম আলী ঝিল , খেলনা নদী এরাম আরো অনেক কিছু জানা অজানা ।।
আমরা এই মুহূর্তে যে যায়গায় রয়েছি , তার নাম গোলগাঁও ।। অপূর্ব সুন্দর জায়গা , পাহাড়ে ঘেরা , জঙ্গলে মোড়া ।। ড্রাইভার বললেন এই জঙ্গলে নাকি বাঘও আছে , শুনে বেশ চমকে উঠলাম ।। বাঘ !! এখানে !! যাই হোক আপাতত তার দর্শন হয়নি আর ঈশ্বরের দয়া থাকলে হবেও না ।।
" ইয়ে সড়ক জাতা কহা হয় "? ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতে তিনি জানালেন যে এই রাস্তা সোজা জালগাঁও যায় , সেখান থেকে বামদিকে দিল্লি ও ডানদিকে মুম্বাই চলে যায় ।। সবই শুনছি কিন্তু শরীরে ঠিক আগ্রহ পারছি না , কারন সকালে ব্রেকফাস্ট কিছুই করি নি আর সেইজন্য পেটে অনেকক্ষন ধরেই ইঁদুর দৌড়োচ্ছে ।।
সকাল আটটা , পথে যেতে পড়ে হোটেল সাঁই মিলন এ গাড়ি এসে থামল ।। এখানেই কিছু খেয়ে তারপর আবার যাত্রা শুরু করব আমরা ।। অজন্তা যেতে আরও 10 থেকে 12 কিমি বাকি , তার আগে এই ছোট্ট হল্ট ।। হোটেলটি ছোট হলেও এর নাম যে বেশ আছে এই অঞ্চলে তা একে একে এসে থামা গাড়ির লাইন দেখে বুঝতেই পারলাম ।। আমার পিছনেই রাজস্থান থেকে এক ভদ্রলোক এসেছেন , তার পিছনেই এক বাস ভর্তি জাপান ও কোরিয়া থেকে আসা যাত্রী এসে নামল ।। এক ঝাঁক বিদেশি ও দেশি পর্যটকের ভিড়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই হোটেলটি গমগম করতে লাগল ।। একদিকে সবাই নিজেকে ফ্রেশ করে নিতে আবার কেউ কেউ সেলফি ও গ্রুপি তুলতে ব্যস্ত যখন আমি একটা টেবিলে বসে আলু পরাঠা খেতে খেতে মনে মনে গর্ব করছি এই ভেবে যে আজও আমার ভারতের ইতিহাস বিদেশে সমাদৃত ।। এ কি কম গৌরব আমার কাছে একজন ভারতবাসী হিসাবে !! প্রতিদিন হাজারও অভিযোগের মধ্যে আমরা জড়িয়ে থাকি , তবু তো এই গৌরবময় ইতিহাস ভারতে প্রতিদিন টেনে আনে লাখ লাখ পর্যটকদের এই দেশের মাটিতে ।।
চা পানের বিরতির পর যাত্রা শুরু হল আবার ।। কিছুক্ষনের মধ্যে এসে হাজির হলাম অজন্তাগাঁও ।। এখান থেকে পাহাড় বেশি দূর নয় , মাত্র 10 কিলোমিটার ।। আরো 1 কি 2 কিলোমিটার পথ পার করার পর গাড়িটি ঘাঁটি অঞ্চলে প্রবেশ করল ।। পাহাড়ে ঘেরা এই আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি ছুটে চলেছে আর আমি এক মনে প্রকৃতির রূপ ক্যামেরা বন্দি করে চলেছি ।। মনে মনে খুব আনন্দ হচ্ছে প্রকৃতির কোলে ফিরে আসতে পেরে আবার কষ্টও হচ্ছে একে ছেড়েই আবার চলে যেতে হবে তাই ।। তবু শপথ করছি , কথা দিচ্ছি মা , বারবার সুযোগ পেলেই তোমার কাছে ছুটে আসব , তোমাকে জানতে , ভালবাসতে ।।
এভাবেই ভেবে চলেছি হটাৎ চেতনা ফিরল ড্রাইভারের কথায় ।। একটি পার্কিংয়ে গাড়িটি ঢুকিয়ে দিয়ে আমাকে জানাল যে এখান থেকে অজন্তা 4 কিলোমিটার দূরে ওই পাহাড়ের ওপরে ।। ওখানে মহারাষ্ট্র সরকারের বাস নিয়ে যাবে ।। সুতরাং ওই পার্কিংয়েই ড্রাইভারকে একলা ছেড়ে আমি রওনা দিলাম বাসের দিকে ।। বাসের ভাড়া 16 টাকা , টিকিট অন দা স্পট পাওয়া যায় ।। টিকিট নিয়ে বাসে চেপে পড়লাম আর মিনিট খানিকের মধ্যে বাস ভরে গেল , শুরু হয়ে গেল মিশন অজন্তা ।।

                                                                 ৭।।
বাস এসে থামল পাহাড়ের মাঝখানে একটি সমতল জায়গায় ।। সেখান থেকে টিকিট নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে হবে , সেখানেই সেই গুহা আছে ।। টিকিট কাউন্টারে বেশ ভিড় , অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক এসেছে গুহা দর্শনে ।। ভারতীয় হলে 20 টাকার টিকিট আর বিদেশি হলেই 500 টাকার টিকিট মূল্য ধার্য্য করা আছে ।।
টিকিট কেটে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা শুরু ।। যতই ওপরে উঠছি চারিপাশের সবুজ বনভূমি আমায় ততই মনমুগ্ধ করে তুলছে আর তার থেকেও বেশি অবাক হচ্ছি সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গুহাগুলি দেখে ।। এত বছর আগে পাহাড় কেটে এইভাবে দোতলা কোথাও তিনতলা ঘর তৈরি করা , এতেই সবচেয়ে বেশি অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম ।। ইতিহাসের এরূপ প্রযুক্তি ভারতের বুকে ছিল , তা ভাবতেও কেমন দারুন লাগে ।।
এবার আসা যাক , অজন্তার কথায় ।। গুফাটি 02 শতাব্দীতে সাতবাহনরা নির্মাণ করেন ।। মোট 30টি গুফা রয়েছে এখানে কিছু গুফা অসম্পূর্ণ ।। প্রতিটি গুফা আলাদা আলাদা বৈশিষ্টময় , তবে রক্ষণাবেক্ষণের বেশ অভাব লক্ষ্য করলাম ।।
গুফা নং ১ , ২ , ১৬ , ১৭ এবং ১৯ সব থেকে সেরা কারন এখানেই যাবতীয় চিত্র লক্ষ্য করা যায় ।। এর মধ্যে পাঁচটি গুফা ( ৯ , ১০ , ১৯ , ২৬ ,২৯ ) কে চাইত্য হল বলা হয় আর বাকিগুলো ছিল বৌদ্ধ বিহার ।। গুফার সম্পূর্ণ নির্মাণ একসাথে হয় নি ।। চাইত্য গুফার ৯ , ১০ এবং বিহার গুলির মধ্যে ৮, ১২ , ১৩ , ৩০ খ্রিস্টপূর্ব 02 শতাব্দী থেকে 02 খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ।। বাকি গুলি পঞ্চম শতাব্দী তে নির্মিত ।। এর থেকে বোঝা যায় যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের যে হীনযান ও মহাযান বিভাজন ছিল তাদের মধ্যে প্রথমটি হীনযান নির্মিত এবং পরেরগুলি মহাযান নির্মিত ।।
গুফার মধ্যে শিল্পকর্মের মাধ্যমে জাতকের গল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছে ।। সত্যি এক অবাক করে দেওয়া স্থান অজন্তা ।। ছেড়ে যেতে তো মন চায় না , তাই যতটা সম্ভব চিনে নেওয়া , জেনে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি ।। পাহাড়ের গা ঘেষে যে রাস্তা জঙ্গলের দিকে চলে গেছে , সেদিকে এগিয়ে গেলাম ।। প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার এ এক অপরূপ সুযোগ ।। চারপাশে উঁচু পাহাড় আর জঙ্গল ।। তারই মধ্যে দিয়ে এসে পড়া সূর্যের আলো , পরিবেশটাকে আরও মনোরম করে তুলছে ।।
বয়ে চলা খরস্রোতাকে বাম দিকে ফেলে এগিয়ে চললাম জঙ্গল ধরে ।। উল্টোদিকের পাহাড়ে সারিবদ্ধ হয়ে গুফাগুলি তাকিয়ে আমার দিকে , যেন ভাবছে আমাদের ছেড়ে ওদিকে কে ঘুরে বেড়ায় ।। দুপুর হয়ে আসছে দেখে , 1টা নাগাদ পাহাড় থেকে নেমে এলাম ।। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে চড়ে পড়লাম আর নেমে এলাম আরও নীচে যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সকালে ।। এরপর গন্তব্যস্থল ইলোরা ও কৈলাস ।। সেখানে যাওয়ার আগে বাজারে হালকা কেনাকাটা আর তারপর বম ভোলে বলে পুনরায় যাত্রা শুরু ।।

                                                             ৮।।
অজন্তা থেকে ইলোরা প্রায় 100 কিলোমিটার দূরে ।। ড্রাইভার জানাল সেখানে যেতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় লাগবে ।। পুরোনো আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরে গাড়ি আবার ছুটতে শুরু করল ঔরঙ্গবাদের দিকে ।। অতি উৎসাহী মন তখন চারপাশের পাহাড় দেখতে ব্যস্ত ।। এক অদ্ভুত আনন্দ শরীর জুড়ে ।। কৌতূহল বসত্ব ড্রাইভার ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম , ঔরঙ্গবাদ হয়েই কি আমাদের ইলোরা পৌঁছাতে হবে ।। সে জানাল , ঔরঙ্গবাদের কাছেই গোখলে চৌরাহা পড়বে ।। সেখান থেকে সোজা চলে গেলে মূল ঔরঙ্গবাদ শহর আর আমাদের গাড়িটি ডান দিকে ঘুরে যাবে ।।
কথা মত গোখলে চৌরাহা থেকে ডান দিকে ঘুরে চলতে শুরু করলাম ।। আসে পাশে ক্ষেত আর ক্ষেত ।। নানা গল্পের মধ্যেই জানতে পারলাম যে তুলো আর ভুট্টা লাগানো হয়েছে ক্ষেতে ।। ইলোরা সম্বন্ধে জানতে চাওয়ায় ড্রাইভার জানাল যে অজন্তা পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত হলেও ইলোরা মাটির নিচে গুহার আকারে অবস্থান করছে ।। কথায় কথায় কখন যে গুফার কাছে পৌঁছে গেছি বুঝতেই পারি নি ।। সামনেই দাঁড়িয়ে গুফা নম্বর 16 অর্থাৎ কৈলাস ।। এই সেই কৈলাস যার টানে এত দূর দূরান্ত থেকে লোকে ছুটে আসে আর আমিও তার ব্যতিক্রম নই কোন ভাবেই ।। রাষ্ট্রকুট বংশের তৈরি এই শিবের মন্দির এর সামনে বিশাল দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ।। তারই গা জুড়ে নানা ছবি আঁকা ।। এছাড়া রয়েছে দুপাশে দুটি স্তম্ভ যার মাথায় ভাঙা হাতির মুখ দেখা যায় ।। আর আরও উল্লেখযোগ্য হল মন্দিরের ওপরের ঘর , যেখানে বিরাজমান স্বয়ং শিব শম্ভু ।। সত্যি অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম এটা দেখে যে এত বছর আগে পাথর কেটে এই দেশের বুকে এত সুন্দর একটি ইমারত নির্মাণ করা হয়েছিল ।। ইলরায় রয়েছে মোট 34 টি গুফা যেগুলির মধ্য দিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সুন্দর মিশ্রণ চোখে পড়ে ।। সব কটি গুফা দেখা হয়ে ওঠেনি - কারন ওই একটাই , সময়ের অভাব ।। তবে সুযোগ পেলে তোমার দোরগোড়ায় আবার আসব , আর এবার আসব রীতিমত সময় নিয়ে ।।

                                                                ৯II
এতো গেল খিরকির একটা দিক , কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না ইতিহাসের পাতায় ঔরঙ্গবাদের অপর একটি দিক ও আছে ।। মোঘল সম্রাট ঔরণগজিবের রাজধানী ছিল এই শহর ।। ড্রাইভার জানাল খুব কাছেই সম্রাটের সমাধি আছে ।। সুতরাং সেটা দেখবার নেশায় বেরিয়ে পড়লাম আবার ।।
ঔরণগজিবের সমাধিটি সাদা কাপড়ে মোড়া আর কাঁচা মাটির ওপর তৈরি ।। কথিত আছে সম্রাটের আদেশ অনুযায়ী 12 টাকা 16 আনায় এই কবর নির্মাণ করা হয় ।। আর এই টাকা আয় করা হয় কুরান শরীফ লিখে ও টুপি বুনে ।। ছোট্ট সাদামাটা অথচ ঐতিহাসিক রসে পরিপূর্ণ এই স্থান ছেড়ে যখন বেরিয়ে এলাম , তখন বিকেল ছুঁই ছুঁই ।। সন্ধ্যের আগে ঔরঙ্গবাদ ফিরতে হবে আর পথে যেতে পড়বে দৌলতাবাদ কেল্লা ।। সুতরাং , সেটা দেখার সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায় ।। অতএব , আদেশ করলাম গাড়ি দৌলতাবাদ কে তরফ মোর লেনা !!
                                                                   ১০II

জায়গাটির আদী নাম ছিল দেবগিরি ।। ১১৮৭ সালে যাদব রাজ ভিল্লামা v প্রথম এই ত্রিভুজাকার কেল্লা নির্মাণ করান II পরবর্তী কালে মহম্মদ বীণ তুঘলক দিল্লী থেকে মহারাষ্ট্রে রাজধানী করার নির্ণয় নিলে এখানকার নাম দেন দৌলতাবাদ II এখানকার কেল্লা দেখার জন্য বিদেশ থেকে পর্যন্ত লোক আসে ।। অবশ্য বর্তমানে এই কেল্লার অবস্থা খুবই শোচনীয় তবু এই 750 সিঁড়ি ওঠার আনন্দে এগিয়ে চললাম কেল্লার ভিতরে ।। কেল্লার ফাটকে একটি বড় দরজা ও একটি ছোট দরজা ।। বলা হয় যুদ্ধের সময় এই বড় দরজা বন্ধ করে ছোট দরজা দিয়ে যুদ্ধ করা হত যাতে একসাথে বেশি সৈনিক ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে ।। অন্যদিকে বড় দরজাটি এত মজবুত ছিল যে হাতি দিয়ে মেরেও সেটি ভাঙ্গা সম্ভব হয় নি ।। দরজার দুধারে 7-8টি কামান দাঁড় করানো আছে ।। এগুলি পার করে ভিতরে এগিয়ে যেতেই একলা চাঁদ মহল দাঁড়িয়ে রয়েছে ।। চাঁদ বিবির কাহিনী আমরা ইতিহাসে পড়েছি আর এই চাঁদ মহল তারই চিহ্ন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে ।। এখান থেকে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা শুরু করলাম ।। এক একটা তলা ওঠার সাথে সাথে সিঁড়ি আরও খাড়া হতে শুরু করল ।। দোতলায় কামান ঘর , তিনতলায় গণেশ মন্দির পার করে যখন থামলাম তখন প্রায় 500 সিঁড়ি পার করে ফেলেছি ।। কিন্তু না !! আর ওঠবার ক্ষমতা ছিল না ।। সুতরাং নেমে আসতে বাধ্য হলাম ।।
নিচে নেমে যখন গাড়িতে চাপছি তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে ।। তারা ভর্তি আকাশকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে ।। পরদিন সকালে ফ্লাইট , ফিরে আসতে হবে আবার নিজের ব্যস্ত জীবনে ।। মুখে কীছূ না বললেও হাতে পড়ে থাকা খাতাটায় শেষ বারের মতো ভেসে উঠলো :
“ তোমার কোলে আদিম সৃষ্টি , তাই তো ছুটে আসি তোমায় দেখতে
রাতের তারা গুলো কতো সৌভাগ্যবান , তোমায় ছুঁয়ে যায় বাড়বার II
আমরা আধুনিক ; তবে তুমি চিরস্থায়ী রহস্য – চোখ চেয়ে আজও দেখে চলেছ
মানবিকতার নগ্ন রূপ II
পরজন্মে তারা হবো ; তোমাকে আলিঙ্গন করে হামি খাবো
চিরস্থায়ী হোক সেই হামিটার গল্প ; বাহান্ন খিড়কীর শত দুই পাল্লায় –
আজকে বিদায় II “



দিনান্তের কাহিনী

শুভম গাঙ্গুলী

আজ অনেক দিন পরে আবার ওই মেয়েটির সঙ্গে দেখা। অফিস থেকে ফেরার পথে shuttle এ। ওকে শেষ বার দেখে ছিলাম বছর খানেক আগে অফিস বাসে।
ফর্সা, সুশ্রী দৈহিক গড়ন মাঝারি চোখে চশমা। মোটকথা একজন নিপাট ভদ্র বাঙালি ঘরের মেয়ে যেমন হয়। আমার বেশ পছন্দ হয় ওকে। ও  বোধহয় মনে মনে পছন্দ করে আমায়। তবে সেটা নিশ্চিত নয়। আমার মনের ভুল ও হতে পারে।
দেখা হলেই মুচকি হাসি কিন্তু speakty not যেন মনে হয় অচেনা কারুর সঙ্গে কথা বলতে ওকে কেউ বারণ করেছে। তবে আমিও সেরম কথা বলিনা, আমি একটু লাজুক প্রকৃতির ছেলে। আর তা ছাড়া একটা অবিবাহিত ছেলে একটা অবিবাহিত মেয়ের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলাটা আবার সমাজ অন্য চোখে দেখে। তাই আমি সে সব এড়িয়ে চলি।

যাক গিয়ে ওসব থাক আসল ঘটনা তে আশাযাক। আমি গাড়িতে উঠতে যাবো অমনি দেখি ও বসে আছে। গাড়িতে একটাই সিট খালি তাও আবার ওর পাশে। অগত্যা উঠে পড়লাম। প্রশ্ন এলো "কেমন আছেন চিনতে পারছেন?" আমি তোহ অবাক। আমিও লজ্জা না পেয়ে উত্তর দিলাম "ভালো আছি, কোনো চিনতে পারবোনা? আপনি?" উত্তর এলো "ওই চলছে"। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো প্রশ্নটা যেমন স্বতস্ফূর্ত ভাবে এসেছিল, উত্তর টা তেমন এলোনা। ওহ একটা কথা বলাই হয়নি দেখে কিন্তু ওকে খুব চনমনে ও প্রাণবন্ত মনে হতো তবে আজ নয়। আজ যেন কেমন একটা বিধস্ত রূপ, বিধস্ত চেহারা।
কথায় কথায় আমি নামটা জানলাম নুপুর। বাহ বেশ চমৎকার নাম তোহ। বেশ একটা প্রাণ উচল ভাব নামটায়। শুনলেই কেমন একটা মন ভালো হয়ে যায়।
কথা একবার শুরু হয়েছে তখন আর থামার নাম নেই। সে কত কথা "কোথায় থাকা হয়, বাড়িতে কে কে আছেন" ইত্যাদি। তবে কথা টা বেশি আমিই বলছিলাম ও শুধু হা, না দিয়ে চালাচ্ছিল। এই করতে করতে নামবার সময় এসে গেল। ওর বাড়ী দক্ষিণেশ্বর।  নামবার আগে বললো  "আজ চলি কাল আবার দেখা হবে"।
2
পরদিন আমি আবার যথা সময়ে হাজির shuttle ধরার জন্য। যদি দেখা হয় আজ ওই মেয়েটির সঙ্গে। তাহলে অবশ্যই জিগ্যেস করবো কাল ওর মন খারাপ ছিল কিনা? Shuttle এলো , কিন্তু একি আজ তোহ ওহ নেই। তাহলে কি গাড়ী টা miss করলো আজ? আমার কাছে ফোন নাম্বার টাও নেই যে জিগ্যেস করবো। আমি গাড়ীটা ছেড়ে দিলাম, এই আশায় যে যদি পরের গাড়িতে থাকে। পরের গাড়ী এলো ঠিক 15 মিনিট পর। কিন্তু না এই গাড়িতেও নেই। ওদিকে আমার বাড়ী ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাবার জন্য ওষুধ কিনতে হবে, আর পাড়ার দোকান টা আবার খুব পাঁচুল ঠিক রাত দশটায় বন্ধ করে দেয়। অগত্যা উঠেই পড়লাম গাড়ীতে। তবে ওর কথা খুব মনে হচ্ছিল। কেরম হঠাৎ এলো আবার হঠাৎ ও উধাও হয়ে গেল।  রাতে বাড়ী ফিরে ঘুমাতে পারলাম না, কেন জানিনা শুধু ওর কথা মনে পড়ছিল। তারপর ভাবলাম আজ হয়নি কাল নিশ্চই দেখা হবে। তবে মনে মনে ঠিক করলাম দেখা হলেই ফোন নাম্বার টা চেয়ে নেব। পরেরদিন ও সেই এক অবস্থা দেখে নেই তার। এবার চিন্তাটা যেন আরও চেপে ধরলো। কি হলো মেয়েটার কোথায় গেল উধাও হয়ে। আজ শুক্রুবার, কাল পরশু দুদিন ছুটি। মনে মনে ঠিক করলাম যে করেই হোক এই দু দিন খুঁজে বার করতে হবে তাকে।
শনিবার সকাল, বাজার পত্ত সব মিটিয়ে নিলাম সকাল সকাল। বেলাতে বসে facebook এ খোঁজ শুরু করলাম ওর। ঈশ্বর সহায় না থাকলে হয়না প্রথম নাম টাই ওর।
নাম নুপুর চৌধুরী বাড়ী দক্ষিণেশ্বর, রবীন্দ্র সংগীত এ মাস্টার্স। ভালো ওডিসি নাচ জানে। অনেক ছবিও দেখলাম। বন্ধু সংখ্যা ১২৪৫। এখন একটা কলেজ এর music teacher।  প্রোফাইল দেখে মনে হলো খুব চঞ্চল, বুদ্ধিদীপ্ত এবং সবাই কে আপন করে নিতে পারে এমন একটি চরিত্র। আর একটা খুব অদ্ভুত জিনিষ লক্ষ করলাম ওর প্রায় সব ছবি তেই ওর হাসির প্রশংসা সবাই করেছে। আর সত্যিই ওর হাসিটা ও দারুন, মন ভালো করে দেয়। দেড়ি না করে request পাঠিয়ে দিলাম। ফোন নাম্বারটি পেলাম না। তাই একটা মেসেজ করে রাখলাম "কি বেপার কোথায় তুমি, কেমন আছো, হঠাৎ কোথায় চলে গেলে তুমি"।
রবিবার চলে গেল কোনো উত্তর নেই request টাও accept করেনি। সারাদিন পারলে অনলাইনে হয়ে বসে আছি। কিন্তু না কোন পাত্তা নেই। অথচ messenger এ দেখছে লাস্ট active ছিল ৩ দিন আগে। তাহলে কি হলো এই ২ দিনে?

আজ সোমবার সপ্তাহের শুরু। নতুন উদ্যমে কাজে যোগ দেবার কথা অথচ আমার মন নেই কাজে। মনে শুধু একটাই চিন্তা নুপুর কোথায় গেল, কিহল নুপুরের? তার মধ্যে আছে এই বিচ্ছিরি গরম। কলকাতার গরম আমার একদম ভালো লাগেনা। 
ওহ আপনাদের তোহ আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি। আমি সন্দীপ গাঙ্গুলী বাড়ী বর্ধমান জেলার একটা ছোট্ট শহর চিত্তরঞ্জনে। বাবা রেল কারখানায় কাজ করতেন এখন retired তাই এখন আমার সঙ্গে থাকেন সোদপুর এ। চাকরী সূত্রে কলকাতা তে আসা। আমি একজন Divisional Accountant। 
দুপুর হয়ে গেছে লঞ্চ সেরে সবে বসেছি কাজ করতে হঠাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো। নুপুর এর মেসেজ। লিখেছে, "আমার একটু শরীর খারাপ হয়েছিল তাই ২ দিন কলেজে যায়নি। আজ দেখা হবে ওই সময় shuttle এ"। আমার মনটা তোহ আল্লাদে আটখানা। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে গিয়ে হাজির হলাম বাস স্ট্যান্ডে shuttle এর অপেক্ষায়। যথা সময়ে shuttle এলো আর আমি উঠে পড়লাম। তবে ওর পাশের seat টা আর পেলাম না। তাতে কি messenger এ চালিয়ে গেলাম chat। ফোন নাম্বার টাও নিয়ে নিলাম। খুশি মনে বাড়ী ফিরলাম, রাতের খাওয়া সেরে মোবাইল টা নিয়ে messenger খুলে দেখি ও online। বেস chatting শুরু। এরম বেশ কিছু দিন চলো আমাদের কথাবার্তা, shuttle এ আড্ডা। আমরা দুজনেই বেশ বুঝতে পারছিলাম যে আমরা এক এ ওপরের খুব কাছাকাছি চলে আসছি। ভালোবেসে ফেলেছি দুজনে দুজন কে।
একদিন দেখা করতে বললো ও, আমি রাজি হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম দেখা যেদিন হবে সেদিন প্রপোজাল টা দেব।
ঠিক হলো দক্ষিণেশ্বরে দেখা করবো তারপর বেলুড় মঠ। 
আজ দিন টা রোবিন্দ্রোজয়ন্তী ২৫এ বৈশাখ, ১৪২২। আজ আমাদের দেখা হওয়ার দিন। রবীন্দ্রনাথ ওর খুব প্রিয় তাই এই দিনটাই বেছে নিয়েছিলাম দেখা করার জন্য। 
বলেরাখা ভালো ওর প্রিয় গান হলো" আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে"। ঘটনা ক্রমে আমার ও প্রিয় গান ওটাই। ও বলতো একটা বিশেষ লাইন তার খুব প্রিয় ওই গান টার, দেখা হলে বলবে।

গত ২ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি ওর দেখা নেই।। অবশ্য last 3 দিন ধরে ওর কোনো খবর ও পাচ্ছিলাম না। তাও আমরা যখন ঠিক করেছিলাম এই দিনই দেখা করবো তাই আমি এসেই অপেক্ষা করছি। কিন্তু ওর দেখা নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে এলো, পশ্চিমানতে সূর্য অস্ত যেতেই মনটা কেমন আকুল হয়ে উঠল। কি বেপার এরকম তোহ করেনা কোনোদিন। Atleast একটা ফোন কিংবা একটা message তোহ পাঠাবে আস্তে না পাড়ার কারণ জানিয়ে। রাত 8টা, নাহ আর নয় এবার ফিরতে হবে। দেখি একবার শেষবারের মতো ফোন করে। Switched Off। প্রবল দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম। কিহলো নুপুরের, কোনো বিপদ হলো না তোহ? তারপর থেকে দিন কাটে মাস কাটে ওর কোনো খবর নেই। আস্তে আস্তে নুপুরের স্মৃতি ফিকে হতে লাগলো।
এরম করে বছর 2 এক কেটে গেল। এদিকে আমার মেসোমসাইএর খুব শরীর খারাপ প্রায় যায় যায় অবস্থা ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। আমরা খুব ভেঙে পড়েছি। উনি টালিগঞ্জে থাকেন।
কিছু দিনের মধ্যে মেসোমসই মারা গেলেন। আমার উপর ভার পড়লো তার death সার্টিফিকেট আনার।  তাই একদিন চলে গেলাম কেওরাতলায় সকাল সকাল। সার্টিফিকেট টা নিয়ে শ্মশান অফিসের থেকে বের হচ্ছি, এমন সময় কেউ আমার নাম ধরে ডাকলো, "সন্দীপ দা শুনছেন"? আমি অবাক হয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি একজন ভদ্রমহিলা আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি চিনতে না পেরে বললাম" ক্ষমা করবেন ঠিক চিনতে পারলাম না"। উত্তরে তিনি বললেন "চিনতে পাড়ার কোথাও নয়, আমি সায়নী, নুপুরের বান্ধবী"। নামটা শুনেই কেমন যেন করে উঠলো ভিতর টা। উনি বললেন " অনেক খুঁজেছি আপনাকে। অবশেষে এ পেলাম কাল রাতে ফেসবুকে তবে ভাবিনি আজই দেখা হয়ে যাবে।
আমি বললাম ওহঃ হা হা আপনার নাম শুনেছিলাম ওর মুখে। তা কেমন আছে ও? কোনো খবর নেই ওর, আপনি জানেন ও কোথায়? বললেন জানি, নুপুর পাঠিয়েছে আপনার কাছে আমায়। আসুন ওর সাথে দেখা করাই। আমি বললাম কোথায় ও?? 
কোনো জবাব না দিয়ে উনি একটা জটলার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে দেখালেন। এগিয়ে গেলাম ওই জটলার দিকে, ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখি "লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ী পরে, সিঁথিতে সিঁদুর পরে, ধপধপে সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে, চিতায় ওঠার জন্যে অপেক্ষা করছে ওর নিথর দেহটা।"
আতঙ্কে চিৎকার করে বলে উঠলাম "নাঃ এ হতে পারেনা"। উন্মাদের মতো ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলাম শ্মশান থেকে। পিছন পিছন সায়নী ও এলেন। নিজেকে কিছু তা সামলে নিয়ে জিগেস করলাম কি এমন হলো যার এত বড় প্রতিদান দিতে হলো তাকে? 
সায়নী বললো আজ থেকে ঠিক 2 বছর আগে আজকের  দিনে বাড়ী থেকে জোর করে এক পাত্র ঠিক করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার। রেজিষ্ট্রি marriage। পাত্র সরকারী চাকরি করে ভালো টাকা মাইনে। পাত্র ছিল মাতাল ও জুয়াড়ি। ছেলের বাড়ী থেকে পণ বাবদ 5 লক্ষ টাকা ওহ আনুসাঙ্গিক জিনিষ চাওয়া হয়েছিল। তা দিতে না পারায় নুপুর এর উপর চলতো অকথ্য অত্যাচার। মুখ বুজে সহ্য করে গেছে নুপুর, পাচ্ছে সমাজে কথা ওঠে যে মেয়ে কুলটা স্বামীর ঘর ছেড়ে বাপের ঘরে থাকে। অত্যাচার এর যবনিকা পতন হয় 2 দিন আগে। মদ্যপ স্বামী জুয়ার আসরে পয়সা দিতে না পারায়, নিজের বিবাহিত স্ত্রীর বাজি ধরে। জুয়া তে হেরে যেতেই  তার মদ্যপ বন্ধুরা  নূপুরকে ধর্ষণ করে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। "নিছক পণ না মেলায় স্বামী তার স্ত্রী কে বাজি রেখে জুয়ার আসরে,  এ কোন সমাজে আছি আমরা বলতে পারেন। বলে একটু চুপ করলেন সায়নী।
অনেক চেষ্টা করেও বাচাঁতে পারেনি ডাক্তাররা। এই ঘটনার কিছুদিন আগে, আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলেছিল, যদি কোনোদিন আপনার দেখা পাই তবে যেন এটা আপনাকে দিয়েদি। 
দূর থেকে দেখছি নুপুরের মা হাউহাউ করে করে কাঁদছেন আর বলছেন, ঠাকুর এ তুমি কি সর্বনাশ করলে আমার। 
ঠাকুরের কথা বলতে মনে পড়লো আজ ২৫ এ বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী। এই দিনেই দেখা হবার কথা ছিল আমাদের, তবে এভাবে হবে ভাবিনি।
 নূপুরকে শেষ বিদায় জনাব বলে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেহ ইলেক্ট্রিক চুলিতে উঠতেই আমি চিরকুট টা খুলে দেখি লেখা আছে 
"আমার প্রিয় গানের প্রিয় line তোমার জন্যে সন্দীপ, "..............................…………..............................."আমি হার মানতে বাধ্য হলাম, তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা আমার আর বলা হলো না।
ইতি
নুপুর

নিথর দেহ টা দাউদাউ করে জ্বলতে লাগলো আর কোথা থেকে যেন রবিঠাকুরের সেই বিখ্যাত গানের লাইন ভেষে এলো 
"আমার এই দেহ খানি তুলে ধরা, তোমার ঐ দেবালয় প্রদীপ জ্বাল"।
এটাই ছিল নূপুরে সেই বিশেষ লাইন,।। চ্চুল্লির চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া আকাশ পানে উঠতে থাকলো আর আমি আসায় বুক বাঁধতে থাকলাম আমার নুপুরের সঙ্গে মিলিত হবার , দেবালয়ে।।



রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে

                      রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে                                                                            মিথ্যুক ভা...