Saturday 13 January 2018

বর্ষ - ১ ইস্যু - ২



অপরাজিত বর্ষ -১ , ইস্যু - ২

                   সম্পাদক - সন্দীপ দাস 
    সহ সম্পাদক - নিজাম উদ্দিন মোল্লা

সম্পাদকের কলমে 

প্রথম ইস্যুতে ব্যাপক সাড়া পেয়ে আমরা যথেষ্ট আনন্দিত ও সকল পাঠক / পাঠিকাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই ।। অপরাজিত কোন ভেদাভেদ জানে না আর তাই তো এই পত্রিকা নতুন ও পুরাতন কে সঙ্গে নিয়ে আবার হাজির আপনাদের মাঝে ।। এই পত্রিকায় এবারে আমার লেখা নেই কিন্তু প্রচুর ভাল ভাল লেখা আছে , আছে স্পর্শনন্দন এর ওপর ধারাবাহিক ইন্টারভিউ এর প্রথম ভাগ , আছে সিনিয়র কলম , আছে শিশুদের বিভাগ ।। আসা করব এবারেও আপনাদের সঙ্গ নিশ্চই পাব ।।
ধন্যবাদ ।।

সম্পাদক 


১. কবিতা লেখক সূচি 

 শাল্যদানী  ,অর্ঘদীপ পানিগ্রাহী , সন্দীপ ভট্টাচার্য,

অমিত পাত্র, প্রবীর রায় , নাজিমা পারভীন , 

আহাম্মদ কবীর হিমেল, আরিয়ান প্রিয়স,

আর্যতীর্থ, রণজিৎকুমার মুখোপাধ্যায়, নন্দ দুলাল রায়,

তৈমুর খান , পৃথ্বীশ ঘোষ , শিবাজী  সান্যাল,নারায়ণী দত্ত,

 সুচরিতা এবং জা মা ল  দ্বী ন  সু ম ন  ।।



কবিতা




পুনশ্চ
ক্লান্তি পরখ করে দেখুন
নোনতা লাগবেই ঘামে।
নিস্পন্দ তারাবাজি  চুল্লীর তলায়
কে আগুন জ্বালবে। কবরে শান্তির ঘুম
অলসতায় একপ্রাণ কবিতা
অক্ষরেখা বরাবর ক্যানভাস
পানের পিকের দাগ আমার সাদা তুলিতে
এ ভীষণা জীবনেতিবৃত্ত তারে তারে বেজে ওঠে গান
সেই ঝরাপাতার গান শুনবে প্রমিকা বিকেলের ছায়ায় বসে
নতুনের ডাক দিয়েছে বনবাসী বালিকাবধূ
আমার সন্ধ্যে নামে ঠিক দুপুরবেলা
বন্ধ ঘরেরকথা খাটের চাদর শোনে একলা বসে।।

#শাল্যদানী
.............................


#উচ্ছ্বাস
নাক্ষত্রিক প্রতিধ্বনি,
একটি আওয়াজের তাড়নায় বিলম্বিত লয়,
অন্য তারে শব্দঋণ ঝনঝনিয়ে উঠলো।
চেটেপুটে খাওয়ার জন্য একটু সময়,
এক-দুই-তিন।।
পর্দা খসা পররাষ্ট্র শরীরেরগাঁট!
হাউমাউ করে হাহাকার,
হাহুতাসের নষ্টালজিক স্ট্যাটাস,
মেটাফেজ দশায় মেটাফোর মহাতরঙ্গ,
ঝুমঝুমি শোনায় মেলানকলি গজল।
চমকে বীর্যপাত ঘটে কবিতার প্রুফে!
'ঘুম ভেঙেছ' এর দেশে জন্ম নেয় উচ্ছ্বাস!

#শাল্যদানী





উত্তর লেখে ধের্য্য

অর্ঘদীপ পানিগ্রাহী 



ময়দান জুড়ে জীর্ণ পাতা । কপোত কপোতীর ভিড়,

লালচে হলুদে ঠেসবেঞ্চ , খুশির রাঙানো নীড়.. 

সিক্ত প্রান্তর প্রভাতী আভায় দুটো কিঃবা তিন বা চার,
কর্নকুহরে কারা যেন শুনিয়েছিল, ১/২ পেরিয়ে বসন্ত ফেরার,

উড়নচন্ডী তুমি তো তখন ,হয়ত তোমার ২৫ এ পা-
ছেঁড়া চটি অফিস যাত্রী আমি ,ওই ভেতো বাঙালির নামচা..

কোমরে কলসি কাপড়ে গিঁট সে যে গৃহবধুর উদাহরণে,
আড়চোখে খেয়েছি লজ্জার মাথা ,দেখেছি ফিরে মন কেমনে..

কপালে সিঁদুরের জায়গা পরিত্যক্ত , নতুবা অপেক্ষায় সময়,
কিন্তু কিন্তু মনে ফিরে যেতে চেয়েছি , আমি স্বপ্নময়..

উত্তুরে হাওয়ায় দোলা দেওয়া বুক , ঘোমটার জালে নিয়ম মত,
হেঁচকা টানে সেই একবার সেঁকেছি, যৌবনের জমাটি ক্ষত..

পরিক্রমার ১/৩ পেরিয়ে, বাস্তবের মাটি যেই ছুঁয়েছি,
কখন যেন জড়িয়ে তোমায়, সেই যে সময় ভালবেসেছি..

শতাব্দী পেরিয়ে হারিয়ে গেছে সেই বসন্ত , ন্যাড়া জীবন আজ অনিবার্য,
হেমন্ত তখন বসন্ত রাগে , আমার পরীক্ষায় উত্তরের নাম শুধু ধৈর্য্য l



দুইবন্ধু
সন্দীপ ভট্টাচার্য

কয়েক হাজার কিলোমিটার জুড়ে,
যে মাটিটার রং হয়ে থাকে লাল।
যেখানকার আকাশে দিনে বা রাতে
ছোটে ফুলঝুড়ি, জ্বলে রংমশাল।
যেখানকার বাতাসে শুধুই বারুদ
আর পোড়া গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
যেখানকার আকাশে ধোঁয়াটে
হয়ে থাকে সূর্যাস্ত আর সূর্যদয়। 
যেখানে ভারি জুতো থাকেনা থেমে,
চলে প্রতিমুহূর্তে নিদ্রাহীন প্রহরা।
যেখানে দাঁতে দাঁত চেপে
চলে মাতৃভূমি বাঁচানোর মহরা।
যেখানে বুকের মাঝে দানা বাঁধে
রোজ, অতর্কিত হামলার ভয়।
যেখানে সম্প্রীতির অর্থ শুধুই মৃত্যু
ভাইফোঁটা বা রাখি-বন্ধন নয়।
যেখানে  প্রতিমুহুর্তে অপেক্ষা চলে
মৃত্যুর, আঘাত প্রত্যাঘাত বারবার।
সেখানে শুধুই দুইটি বন্ধু 
একজন সীপাহি র একজন কাঁটাতার।



ক্যালাইডোস্কোপ
অমিত পাত্র

আমার জীবনের সাতরং...
যা তোমার উদাসীন তাচ্ছিল্যে 
আজ কাচের ভাঙা চুড়ির টুকরো.....
তবু তো মনের গহীন অন্ধকারে
খুদে খুদে স্বপ্ন চুমকির মতো ঝিলিক মারে৷
আমি যেন দুর্ভাগ্য, ব্যর্থতা আর নিরাশার ত্রিবিধ দর্পন৷
আমার খাঁটি ভালবাসাও এখন
তোমার কাছে ঘষা কাচের মতোই অস্পষ্ট....
তাই তো সাদা কাগজের মতো নির্মল সম্পর্কের মাঝেও
সুস্পষ্ট হয়েছে বিন্দুর ন্যায় ছিদ্র৷

তবু একটি বারের মতো তুমি এসো;
এই ভাঙা চুড়ি, চুমকি, দর্পন, ঘষা কাচ আর ছিদ্রপর্দায়
বানিয়ে তুলি একটা স্বপ্নময় ক্যালাইডোস্কোপ৷
তোমার জীবন হয়তো কোনোদিন রাঙিয়ে তুলতে পারব না,
তবুও জীবনের রংমহলের নক্সা তো দেখাতে পারব....৷



প্রথম কবিতা
- প্রবীর রায়
এ আমার জীবনের প্রথম কবিতা
কি লিখি,কি জুরি সর্বক্ষন ভাবিতা।
জীবনের পথে এগোতে হলে,করিতে হবে কর্ম
মম প্রান অর্পণ করেছি তাতে,কবিতা লেখাই ধর্ম।
কত কবি হরেক রকম লিখেছেন কবিতা
তাই আমি তাঁদের মানি,করি মান্যতা।
জীবনের শুরু অজস্র কঠোর ধাপে-ধাপে
লিখিতে বসিয়া ভাবি,ছন্দ মেলাবো কেমনে খাপে- খাপে।
হুদয় মাঝে বহু অনুতাপ, হাহাকার এই বুক
জোছনার সাঁঝে স্বপ্ন দেখি,লভি অপার সুখ।
নেই কষ্ট, নেই চিন্তা, নেই কভু ব্যর্থতা
শব্দ জুরি, ছন্দ গড়ি লেখি কবিতা।
শিশু আমি ধরনীর কোলে
প্রেমের ছোয়ায়, মোন আভাস দোলে।
অবনী শিখিয়েছে ভালোবাসিতে
তোমরা শেখালে আলো করিতে।
প্রথম লেখনিতে হানাদিল
রবিরশ্মি খাতায়
প্রানে জাগে অলিক অনুভব
তাঁ পুঁথি করি কবিতায়।
সৃষ্টির কাছে সবি ক্ষুদ্র- তুচছ
প্রানের কাছে সবই ঘৃত- অমৃত।।



     - শৈত্যানুভাব -
   নাজিমা পারভীন

""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
শৈত্যবেলায় কুয়াশার ভিড়ে 
হারিয়ে যায় তালগাছের উঁচু মাথা, 
হলঘরের জানালার পর্দা ভেদ করে 
ঢুকে পরে আর্দ্রপ্রবাহ, 
কাঁচের বাষ্প আস্তরণ
আঁকে দৃশ্য, 
শিশির ভেজা স্যাঁতসেঁতে  ঘাসে 
মিটিমিটি হাসির ঝলক বাড়ায় উষ্ণতা ,
চীনামাটির কাপে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া
ভাঙায় তন্দ্রা, 
কিছুটা নিরবতা পালন শেষে, 
আবার শুরু হয় রোজকার 
সেই ঘ্যানঘ্যানে রুটিন ।

তবুও বেঁচে থাকি
আহাম্মদ কবীর হিমেল

যাপিত দিনে ক্রমাগত খেলে যাই
অন ইচ্ছাকৃত সাপলুডু খেলা
নিয়তির চক্রবৃদ্ধি অভিলাষে।
কামার্ত চোখ খোঁজে গোলাটে সুখ
নিরেট আগামীর দুর্ভেদ্য দূর্গে, 
নিকোশ আধাঁরে দেখি ছায়া নেই পাশে।
অবাঞ্চিত সংকটের উইপোকা
গ্রাস করে নিতে চায় প্রাণ ভোমড়া
রাজকীয় উল্ল্যাসে।
বিবেকের বন্ধ কপাট খুলে
মনুষ্যত্বের রাজটিকা পড়ে
তবুও বেঁচে থাকি বেঁচে থাকার আশে।



হিসেবী নামতা
  আরিয়ান প্রিয়স

শুকনো পাতায় উঠবে ধ্বনি, 
শব্দ কুড়োয় চোখের জল ৷
খুব সকালে ভোরের আলোয়, 
হারিয়ে গেছে পাখির দল ৷

রদ বদলে কাঁপছে শহর, 
ধুঁকছে কেবল মাটির ঘর ৷
তোমার আমার রক্ত দিয়ে, 
সাজায় ওরা সয়ম্বর ।।

ছুটছে প্রেম,একলা গলি, 
বিষাদ খোঁজে নতুন দেশ ৷
নতুন করে চুল্লি সাজুক 
আশার খেয়া নিরুদ্দেশ ৷৷


বিজ্ঞাপন।
আর্যতীর্থ

সহাস্য এক লাস্যময়ী বলেন মধুর ভাষ্যতে
এই ক্রিমটি মাখলে মুখে থাকবেনা দাগ আস্যতে।
জাগলো আশা ফেকলু বুকে.
রাত্রে দিনে মাখনু মুখে
পাঁচখানা দাগ এক হপ্তাতে বদলে গেলো পাঁচশোতে
মুখ হয়েছে ক্ষেতের মতন বাকি শুধু ঘাস হতে।

বাচ্চা আমার সাচ্চা নাকি বাড়বে দিনে ইঞ্চি করে
সকাল বিকেল সেই আশাতে স্বাস্থ্যগুঁড়ো গেলাই ধরে
যেই বলি তা ডাক্তারকে
মারতে শুধু বাকি রাখে
বলেন নাকি ডাল ভাত মাছ সেটাই দেবে স্বাস্থ্য গড়ে
আর ওমুখো হচ্ছি না হে, খুব চটেছি ওঁর ওপরে।

মাখলে ডিও ফুসুর ফুসুর চিপকে যাবেন সুন্দরী
বলেন নায়ক, সব বামনের স্বপ্ন থাকে moon ধরি।
যেই বেরোলাম গন্ধ মেখে
মেয়েরা তাকায় আমার দিকে
চাউনি দেখে গুটাই যেন জোঁকের মুখে নুন ধরি,
প্রেমের নৌকা ভাসলো না আর ,ডুবে গেলো বন্দরই।

পেস্ট দিয়ে কি ভাত মেখে খায় নুন যে লাগে দন্ততে?
কাঠকয়লা , ছাইও ঢোকাস ,এবার বাপু ক্ষান্ত দে
বলেন এসে মুনি ঋষি
তাঁদের মাজন শুদ্ধ দেশী
পুরাকালের ফর্মুলা সব জানেন ধ্যানের মন্ত্রতে
ভাবছি বসে ডেন্টিস্টই হাসবে নাকি অন্ততে।

মৃত্যু বেচেন জীবনবীমা, অসুখ বেচেন মেডিক্লেম
বিপদ এলে যায় হে বোঝা কোনটুকুনি তার এলেম
বিজ্ঞাপনে মগজ ঢাকা
মাসের শুরু, পকেট ফাঁকা
বুঝে গেছি, আমি তো নই, আমার টাকায় তাঁদের প্রেম
প্রিয়জনের ক্ষইছে জুতো, তাকিয়ে দেখে ফটোর ফ্রেম।



পরাণ যায় জ্বলিয়া 
রণজিৎকুমার মুখোপাধ্যায়

মন্ত্রীরা আগে সম্মান পেত ,
এখন কেন পায় না ?
শিক্ষকদের একটা সামাজিক মর্যাদা ছিল 
এখন কেন পায় না ?
পুলিশদের আগে মানুষ ভয় পেত
এখন কেন পায় না ?
আগে একটা সমাজ ছিল 
সমাজের একজন মাথা ছিল 
সকলে তাকে মেনে চলতো 
এখন সেরূপ কেন দেখি না ? 
কারা এই সমাজটাকে করলো খান খান ? 
যারা করলো তাদের জন্য 
কেন শাস্তির দাবি ওঠে না ?
খুন ধর্ষণ নারী নির্যাতন করছে যারা 
তারা যেমন দোষী , 
এদের দোষ দেখার জন্য 
এদের শাস্তি দেওয়ার জন্য 
এ সমাজে মানুষ কই?
এখন  চলছে  দেশে কেলোরকীর্তি ,
চোখ দিয়েছে দেখ ,কান দিয়েছে শোনো , 
মুখে বলো না কিছু ,
বললে তোমার জায়গা হবে শমন ভবনে ,
তোমার সংসার মরবে অশেষ দুখে ।
তাই মুখ ফুটে কেউ বলছে নাকো কিছু , 
ভেসে যাচ্ছে গড্ডলিকা প্রবাহে ; 
এই রোগে ঘোড়া মরছে 
প্রাণ জ্বলছে দাবদাহে ।

                       

স্মৃতির পাতায় তুমি গাঁথা
নন্দ দুলাল রায়

তোমাকে কাছ থেকে কভু দেখিনি
যতদূর দেখেছি ততটাই মুগ্ধ হয়েছি,,
তোমার সরল হাসিটা খুব ভালবাসি
ভুলতে পারি না তোমাকে মনে পড়ে।

আমি ভালবাসি শ্রদ্ধা রাখি নিরবধি
তোমার সুদীর্ঘ আদলে কত যে ধৈর্য!
আমি মুগ্ধ চোখে তোমায় শুধু দেখি,
আর তোমারই পদাঙ্ক অনুসরণ করি।

তুমি বীর, ধীর সাম্য সমতায় বিস্ময়
বিজয় তোমার হস্তগত নিত্য আনন্দ,
তোমার কথা ভাবতে বড্ড ইচ্ছে হয়
তুমি আমার সেরা উপহার কবি ছন্দ।

তুমি দেশ প্রেমিক মহান নির্ভীক বীর,
অতুল্য তোমার বাচন ভঙ্গিমার ছন্দ,
বাতাস সেথা বহে অভিরাম নিরন্তর
মৃদুমন্দ চাহনিতে দুরন্ত নীল সুনীল।

তুমি ছিলে নিরভিমান ঐ সাদাসিধে
খাঁটি দেশ প্রেমিক বাঙ্গালী বড় নেতা,
টুঙ্গিপাড়ার পবিত্র মাটির গড়া মানুষ
খোকা থেকে তুমি এই জাতির পিতা।

শুধু একবার যদি তুমি ফিরে আসতে
এই সোনার বাংলা হতো না পিছ-পা,
তুমি আছো বাংলার আকাশ বাতাসে
অন্তরীক্ষে তুমি হৃদয়ে নিভৃতে অনন্য।

হে বরেণ্য নেতা-তোমার তুলনা হয় না-
তুমি ছিলে আমার মনে হৃদয়ের গহীনে,
আজও মনের গভীরেই তুমি জাগরুক
তুমি দৃঢ়তায় মুগ্ধকর সুক্ষ্ণতম অপার।

শুধু মাঝ পথে এক সূক্ষ্ণ নিচ্ছিদ্র বাঁধা
তবু আমার স্মৃতির পাতায় তুমি গাঁথা।


বাড়ি ফিরছি 
তৈমুর খান 

সারা গ্রাম ডাকছে আমায় 
গাছপালা ফুল আকাশ পাখি 
ডাকছে নদী পুকুরঘাট 
জল থই থই বিলের মাঠ 
গোরুর পাল , ভোরের নাও 
ডাকছে সবাই 

স্টেশনে চেয়ে আছি 
ট্রেন আসবে বাজবে বাঁশি 
কতক্ষণ আর ? 
ওই তো আলো সবুজ হল 
সরে দাঁড়াও লালপাগড়ি   ! 
আমার এখন পুজোর ছুটি 
মায়ের কাছেই ফিরে আসি    ।

রাঙাদিদির সেই শিউলি 
ফুটবে ছাতে  
পায়রা নামবে  জোট বাঁধবে 
ধান শুকোবে উঠোন রোদে ।
আবার নতুন গল্প শুনব 
গল্পের গোরু গাছে উঠবে  ।
কী হাসি !  কী হাসি  ! 
সাঁতার দেবো 
হেলাফুল রাশি রাশি 
তুলে আনব  ।
কথা বলব তাদের সাথে    ।

মেঘকে বলব — যা  , ছুটি যা ! 
বৃষ্টি দিস না   ! 
কাজ যে বাকি কতই   না ! 

সেই টিয়াটি লঙ্কাখেতে 
নেমে এলে ডাকব কাছে 
আদর করব... 

ট্রেন এল গো  —
বাড়ি ফিরছি 
বাড়ি ফিরছি... 


দ্রৌপদী
পৃথ্বীশ ঘোষ

বহু ঘরে ঘরে আজ দ্রৌপদীর দেখা মেলে 
তারা কষ্ট সহ্য করে  
হাসিমুখে মেনে নেয় সব অন্যায়
নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে হাসিমুখে জীবিকা অর্জন করে ।।

সেদিন গোটা রাজসভায় 
যখন দ্যূতক্রীড়া পরাজিত পান্ডুপুত্ররা 
মাথা নিচু করে ছিল তখন কি তারাই ছিল নাকি তথাকথিত আজকের সমাজ ।।

অট্টহাসিতে হাসছিল জৈষ্ঠ কৌরবপুত্র সহিত হস্তিনাপুরের রাজা ধৃতরাষ্ট্র
কি অধিকারে আজ সমাজের 
নিষিদ্ধ পল্লীতে ভীড় করে সকলে !!

রাস্তা দিয়ে রাতের বেলায় 
কোন একলা মেয়ে বেরোতে পারবে না 
তবে কেন যেদিন কর্ণ মহাবীর ভীষ্ম আর 
গুরু দ্রোণের সামনে তাকে " বেশ্যা " বলেছিল ???

আজও কত দ্রৌপদীর ভ্রূণে 
যাজ্ঞসেনীরা জন্ম নিতে পারে না 
সমাজ তাও নাকি " মা " নামক বস্তুটাকে ঈশ্বর সমান মনে করেন ।।

কিভাবে পেরেছিল দুঃশাসন 
দ্রুপদ কন্যার পবিত্র কেশে হাত দিতে 
আজ তো কত বিবাহিত নারীর সাথে অনিচ্ছাকৃত আক্রমণ হয় শুধু সিঁদুরের ভন্ডামি দেখে ।।

সেদিনও কোন একজন অনুপস্থিত ছিল সেই রাজসভায় 
যে দূর থেকে সম্মান ও 
ঐশ্বর্যের বস্ত্রে আবৃত করেছিল দ্রৌপদীকে ।।

দুঃশাসন সেদিন হাঁফ ছেড়েছিলো 
তার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়
আজও সেই পাঞ্চালীকে জানাই বাসুদেব আছে তার সাথে কোনও এক রক্ষাকবচ হয়ে ।।


দুঃখ ভার 

শিবাজী  সান্যাল

এমনই হয় , অনেক কষ্ট ধীরে ধীরে জমে
    কত আর  চেপে রাখা যায় 
              মিথ্যে হাসিতে ,
                  সবার চোখ বাঁচিয়ে ?

যে গোলাপ এনেছিল স্বপ্ন জ্যোৎস্না 
সেই কাঁটা হয়ে ঝরায় রক্ত হৃদয়ে অদেখা 
       তিলে তিলে তুলে রাখা রঙিন  মুহূর্ত 
             আজ শুধু এক মিথ্যের যন্ত্রণা । 
       বহতি নদী দাঁড়ায় থমকে
                 বক্ষ ভরা অতীতের ভার
                 অতর্কিত দীর্ঘশ্বাসে । 

সুনন্দা , এ অশ্রু রেখো না ধরে
         একে বইতে দাও তোমার দুচোখে  
                  ধুয়ে যাক কিছু স্মৃতির দাগ
                         সময়ের এই স্রোতে  ।


কণ্যাভ্রূণ
                      (নারায়ণী দও)
মা গো ! তুমি কি আমায়
করছো  অনুভব ?
তোমার গর্ভে অন্ধকারে 
আমি রয়েছি  যে নীরব
তোমরা আমাকে বাঁচতে দাও
আমায় মারতে চাইছো কেনো ?
জন্মের আগেই ফেলবে মেরে
দেখতে দেবে না আলো ?
মাগো ! তোমাকে যারা দিচ্ছে জ্বালা
মারতে বলছে আমায়
ওদের কঠোর হাতে করো দমন
ভয়ে যেন পালায়
 মন্দিরে পূজিতা দেবী তিনি এক নারী
সমাজে নির্যাতিতা রক্তমাংসের নারী 
তোমাদের নারীকে কেন এত ঘৃণা ? কেনো করো এত ভয় ?
কণ্যা ভ্রূণ হত্যা করে  কিসের সুখ হয় ?
নারী বিহীন এ জগৎ একি ভাবা যায় ?
সৃষ্টির হবে যে বিনাশ ! হবে অবক্ষয় !
ঠাম্মি ও ঠাম্মি !
তুমিও তো এক নারী
তোমার মা ও দেখিয়েছেন তোমাকে এই পৃথিবীর আলো 
তাহলে তোমার কিসের বিরোধ 
এ নয় তো মোটেই ভালো  ৷
 লক্ষ্মী তোমার আসেই যদি ঘরে
তাতে দুঃখ কিসের ?
করো আনন্দ বাজাও শঙ্খ
প্রদীপ জ্বেলে তাকে নাও আপন করে ৷


ওদেরও প্রাণ আছে 
সুচরিতা 

পাথরে মেরনা ঘা 
জেনো ওদেরও প্রাণ আছে ,
শাহজাহানের তাজমহলের অন্তরালে 
ওদেরও কিছু দাবী আছে ।।
তারা চায়না কোন রাজপ্রাসাদ 
কিংবা ভাবেনা আকাশ কুসুম 
তাই বলে কি তারা চিরকাল 
মেনে যাবে তোমার হুকুম ?


♦ঘর ছাড়া মন♦

জা মা ল  দ্বী ন  সু ম ন
===================
যাবো বললেই যাওয়া যায় না
এই ঘর সবুজের বন্ধন ছিঁড়ে
চাই না চলে যেতে অন্য কোথাও
অন্য লোকালয়ে অন্য কোন ঘরে।

যাবো বললেই যাওয়া যায় না
দুরন্ত জীবনের শেকল ছিঁড়ে
টিনের চালাঘর মাঠান জমি
এই সংসার গৃহস্হালী ফেলে
কোথায় ফিরে যাবো আমি।

সাজানো ঘরে প্রেমের বুনিয়াদ
শ্বেতপাথরে গড়া প্রেমের মিনার
বড় শক্ত করে ধরে রাখে আমায়
সেখানেই পড়ে আছে শিশুকাল
যৌবনের দুরন্ত স্বপ্নবিলাস
এসব ফেলে কোথায় যাবো আমি।

প্রকৃতি কেন মায়াডোরে বেঁধেছো আমায়
আকাশ কেন স্বপ্ন দেখাও
নীড়ে নীড়ে পাখিদের ঘর
একদিন ওরাও উড়ে যায়
দূরের কোন বনে বাঁধবে খড়কুটো ঘর।

কবিদের ঘর ছাড়া মন
ভ্রমন শেষে ক্লান্ত দু'চোখ
তবুও কাটে না জীবনের ঘোর
রাত শেষে আসে না ভোর
একদিন তোমাদের ভালবাসা নিরুদ্দেশ হবে
তারপর চলে যাবো না ফেরার দেশে।
_______________________________


২.গল্প ও অনুগল্প - লেখক সূচি 

পিনাকি , সৌমেন সরকার , জ্যোতির্ময় রায় , 

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় , শ্যামাপদ মালাকার ,

শুভদীপ মহাপাত্র , বিশ্বজীৎ ইষ্টবেঙ্গলিয়ান ভৌমিক ।।


গল্প ও অনুগল্প 


অযাচিত অতিথি 
পিনাকি 
                                                                        ১
আজ সকাল থেকেই খুব সুন্দর রোদ উঠেছে । টানা তিন দিন  বৃষ্টিতে  দেবগিরির বুকে শায়িত অরণ্য , অনবরত  অনায়স স্নানে  জর্জরিত হয়ে উঠেছিল ; এই রোদ তাকে  আশ্বস্থ  করল - পৃথিবীতে এখনও  সূর্য নিজের সময় মতনই দেখা দেয় , প্রকৃতি নিজের খেয়ালে চলে , সময় আর অপেক্ষা সত্য শব্দ গুলোর মধ্যে অন্যতম । পর্ণকুটিরের  মাটির উঠানে জমে থাকা জলে যখন আলোর খেলা শুরু হল , ঐরাবত বুঝতে পারল --- আজ শিকারে যেতেই হবে । ভাণ্ডারে  যে  খাবার  রয়েছে   তা প্রায়  নিঃশেষ ।  অবশ্য  এখনো  সংগৃহীত  খাবার দিয়ে  আরও  কয়েক দিন  চালিয়ে  নেওয়া  যাবে  , ঘরে  বসে থকাতে  মন  চাইছে   না । শিকার  না করলে   শরীরটাও  ম্যাজ  -  ম্যাজ  করে  ।  
ঐরাবত  ঠিক  করল  , আজ  সে  আর বিম্ব  একান্তে  উত্তর  দিকে   খাদ্যের  সন্ধানে   যাবে । এই যাত্রায়  সে আর কোন অতিরিক্ত  সঙ্গী  চাইছে  না।   ঐরাবত  ব্যাধ জাতির  নেতা  ।  তাদের জনবসতি  এই  দেবগিরি  পাহাড়ের কোলে , সবুজ  গভীর  অরণ্যের  ফাঁকে । পশু শিকার  করে  নিজেদের  বেঁচে থাকার জন্য  ।  তাই  নতুন  স্থান  সন্ধান  করতে  হয়  ।
ঐরাবত  কুটিরের  বাইরে  পা রাখল ।  বিম্ব  অনেক  আগেই  প্রস্তুত ছিল ।  দুজনেই  কালো   বর্ণের ,  গায়ের  ত্বক  শুকনো ।  বিম্ব বলল  
-  প্রস্তুত  ? 
-এটা ব্যাধেদের জীবনে   নতুন  কিছু নয় । এই ধনুকই  আমদের  সাথী । আর সময়   হলে  এই ধনুকই  দেহ রক্ষী হয়ে  ওঠে ।  তুমি  প্রস্তুত  হয়ে  নাও । সূর্য  এখনো   নিজের স্ব – মহিমায় ।     

আকাশে রাজপাট  পাতেনি ।  সময় থাকতেই  বেরিয়ে  পরতে   হবে । আর  সময়  নষ্ট করা  উচিত হবে  না  । এসো ।  
বিম্ব  মাথা দু’পাশে  ঝাঁকিয়ে  সম্মতি  দিল  ।  
ঐরাবত স্ত্রীকে   ডাকল ।  

চাপা  রঙের  হাল্কা চেহারার  বছর তিরিশের   তিন সন্তানের  জননী  ,  সংগ্রহশালা  থেকে   এই দিকে  এসে   ঐরাবতকে বলল -  তুমি  আজকেই  যাবে ?
-না গিয়ে   উপায়  নেই  ।   আমাদের শিকার  না করলে   চলবে  না। তুমি  এটা  জানও । আজ  ন  হয়  কাল ,  যেতেই  হবে  নতুন শিকারের সন্ধানে  । আমরা  ভাবছি আজ  উত্তর  দিকে যাব। যদি  নতুন  কিছুর   স্থানের সন্ধান  পাওয়া  যায় ।
-তোমরা  দু’জনে  কেন  ?  আরও  লোকজন  নিয়ে  যাও ।
-আমি  চাইছি  নিজেদের  মতন  আগে  দেখে  আসি  । তারপর  না  হয়  শিকারে যাওয়া  যাবে। এমনিতেও  এই  অঞ্চলে  ,  তেমন  ক্ষত্রিয়দের  উপদ্রব  নেই  ।  
-হস্তিনাপুরের  কাছাকাছি  জঙ্গলে   ক্ষত্রিয়রা   ব্যাধেদের  জীবন  অতিষ্ঠ  করে  তুলেছে  ।   ওখানকার  অবস্থা  বেশ  উত্তপ্ত ।  যে কোন  সময়  আক্রমণ  আসতে  পারে !
-দেখো  , হস্তিনাপুর  থেকে   দেবগিরির  দূরত্ব  অনেকটাই ।  আমার  মনে  হয়  না  ,  হস্তিনাপুর  এই দিকে  আক্রমণ  চালাবে ।  অবশ্য    যদি  আক্রমণ  করেও  কিছু  করার  নেই  ।  আমি  চাইছি  নির্জনে  আমরা   শিকারের  উপযুক্ত  স্থান  নির্বাচন  করতে  ।  তারপর  ক্ষত্রিয়দের   বিরুদ্ধে  নতুন  কিছু  ভাবা যাবে  ।    

ঐরাবতের  কথা শুনে  চপলা  ইচ্ছা না থাকলেও , সম্মতি দিল ।  সে জানে ব্যাধেদের জীবন অরণ্য আশ্রয়ী ।  বিশ্রাম তাকে  মানায় না  ।  এই  স্থানে  শিকারযোগ্য  পশু  -পাখি প্রায়  নিঃশেষ। এই  অবস্থায়   নতুন   স্থানের  সন্ধান   ভীষণ  ভাবে  দরকার  ।
                                                     ২
ঐরাবত একটা টিলার  পিছনে দাঁড়িয়ে ,  কাঁধে ঝোলানো  ধনুকে   তীক্ষ্ণ  ফলার  তীর  রেখে , লক্ষ্য স্থির  করল ।  টিলার  উল্টো  দিকে   সরু  পাহাড়ি  নদী ,  ওই পাড়ে  সবুজ – সবুজ  ঘাসের  উপর  নরম – নরম  তুলতুলে  খরগোস ।  ঘুরছে ।  আজকের  মতন  ওটাকেই  শিকার  করা  যেতে  পারে  । সেই দিয়ে   রাতের   উদর পূর্তি   হবে  মসৃন ভাবে । 
সেই  সকালে  বাড়ি  ছেড়েছে ।  টানা দীর্ঘ পথ  বিনা  বিশ্রামে   পেড়িয়ে  এসেছে  , সামনে  নদীর  বুকে পাতলা  জলের স্তর , কানে   ভেসে আসছে  ।  এই  সারাদিনের  পরিশ্রান্ত  দেহ ,  ক্ষিধে  কাতুর  পেট ,  নয়ন  আদৃত   ঝর্ণার  জলে  পুষ্ট  নদীর   ধ্বনি , শরীর  আর দিচ্ছে  না।  ওরা  দু’জনেই  ভাবছিল ,  শিকার  পেলে  মন্দ  হয়  না।  এই  সামান্য  প্রাণীটি  আজ রাতে  দুই’ ব্যাধকে   প্রাণ  ভিক্ষা  দেবে  ।  কেননা    জঙ্গলে রাত  বাড়লে ঠাণ্ডা  লাফিয়ে  বাড়ে , আর  সাথে – সাথে  জঙ্গুলে ক্ষিধে  চেপে  ধরে ।  অনেক  সময়  এই  ক্ষিধে  প্রাণ  অব্দি  নিতে পারে  ! 
আচ্ছা  ঐরাবতের  নাম   ঐরাবত  হল কেন  ?  শোনা  যায়  , কোন  এক  সময়ে  তার  পরিবারের  কেউ  একটা   উন্মাদ  হাতিকে  হত্যা  করেছিল ।  এই  বীরত্বের  কাজ  থেকেই  ঐরাবত  নাম  তারা  পরম্পরা  ভাবে  নিয়ে এসেছে  ।   পিতার  পর  ঐরাবত নিজে সেই  গর্বের  ধারক । 
ঐরাবত  খুব   দৃঢ়বদ্ধ  ভাবে  তীর   ছুড়ল ।  বিম্ব  কাঁপছে ।  

অনেক সময়  মানুষের  কর্মফলের  জন্য  তার  কাজ দায়ি  থাকে  না ।  পরিস্থিতি  একটা   ভূমিকা নেয় ।  তীর  টা   খরগোশের  কানের  পাশে  এসে বিঁধল ,  পশুটির  কানে  খোঁচা  লাগল , সে  পালিয়েছে ।  
এই  অবস্থায়  দু’জনের  দীর্ঘশ্বাস  পড়েছে ।  তারা দেখল , নিশানা  তার  লক্ষ্যে পৌঁছাতে  ব্যর্থ,  লক্ষ্য  পালিয়েছে , সাথে আরেকটা  অঘটন ঘটে  গিয়েছে   ইতিমধ্যেই । পশ্চিম আকাশে  সূর্যের  ডুবে  যাওয়ায় , কেউ যেন  আঁচল  ভরা  অন্ধকার  দিল  ছড়িয়ে  ! জঙ্গলের  ক্ষিধের  থেকেও  অন্ধকার  আরও  তীব্র ।  
চারপাশ  অন্ধকারে  ভরে  গিয়েছে ।  এখন  নদীর  জলের শব্দ  কানে  আসছে ।  সামনের  ঘন  অরণ্য  যেন   দুর্ভেদ্য  কারাগার  !  প্রবেশ  করা  ছাড়া আর উপায়  নেই ।  বিম্ব  বলল 
-এই স্থানে  কোন  খাদ্য  নেই ।  খোলা  স্থান , ঠাণ্ডা  নামছে  ।  দ্রুত  আমাদের  ঘেরা  কোন  স্থান  খুঁজে  নিতে  হবে  । নচেৎ  ঠাণ্ডায়  মারা  যাব  ভায়া  ।  

ঐরাবত  বুঝতে  পারছে  ,  বিম্বর  কথা  ফেলে দেওয়ার  নয় ।  বিম্ব  শুধু  তার  সহযোগীই  নয় , সে  জঙ্গলের  পথ খুব  ভালো  করে  চিনেছে  , এমন  অনেক সময়  হয়েছে  , আবহাওয়ার  আগাম   আভাস তারা  শিকারের  সময়  পেয়েছিল ,  প্রাণ  বেঁচেছে ।  বিম্বর  অনুমান  আর   অভিজ্ঞতার উপর  কোন  সন্দেহ  নেই ।   ঐরাবত বলল 
-এখন  কী  করা  যায়  ?
-আপাতত  আলো  জ্বালিয়ে  ,  নদী  পার  হতে হবে  ।  তারপর  দেখব  , আমাদের  জন্য ওই  অন্ধকারে  নতুন  কিছু অপেক্ষা  করছে  কি না  ! 
-কোন ভয়ানক  জন্তুর  দেখা এখনো পাইনি । মনে  হয়  এই স্থান ওই রকম  বিপদজনক  জন্তু  বর্জিত ।
-বন্ধু , আমরা  যে  পথটুকু  অতিক্রম  করলাম , সেখানে  বিপদ  ছিলনা   , ঠিকই । তবে সামনেও  বিপদ  থাকবে  না , বলা  যায়  না  ।   আমাদের বিপদের  চিন্তা না করে  পথের  চিন্তা  করা  আবশ্যক ।  এগিয়ে  যেতে  হবে  । 

পাথরে – পাথর  ঠুকে  আগুন  জ্বালিয়ে  নিয়েছে  , শুকনো  কাঠ  সাথেই  ছিল ।  এই  আলো  দণ্ডটি  সাথে থাকলে  অনেকটাই  আত্মবিশ্বাস  বেড়ে  যায় । 

বেশ  কিছুক্ষণ  হাঁটছে  , ঐরাবত  আর  বিম্ব  বুঝতে  পারল  তারা  ,  সমতল  থেকে  উঁচু  জায়গায়   পৌঁছিয়ে  গিয়েছে  । আলো  স্পষ্ট  হয়ে  ওঠা  গভীর  জঙ্গলের  পথ  ঘাসে  ভরা ।  পিছনের  দিকে তাকিয়ে  তারা   টের  অব্দি  পেল  না , বহুদূরে  সেই  পাতলা  নদীটি  পেড়িয়ে এসেছে !  তাদের  শরীরে  আর  শক্তি  নেই  ।  
-বিম্ব  , আমি আর  পাচ্ছিনা  ।  আমাদের সাথে যে ফল  ছিল , তা  খুব  দ্রুতই  খেয়ে ফেলেছি !
বিম্ব  হাসতে – হাসতে  বলল 
-না  ।তখন  যদি আমরা  ফলটুকু  না খেতাম  । তা  হলে  এই  পর্যন্ত  আসতে ও পারতাম না। সবই  ভাগ্য  ।  তোমার  হাত থেকে  , শিকার  ফস্কে যাওয়া টাও ।   
-আচ্ছা  , এখানে  সত্যিই কোন   স্থান নেই ! আমাদের  ভোর  অব্দি  অপেক্ষা  করতে  হবে  ।  
-ঠিকাছে ।  
বিম্ব  দেখেল  সামনে  কিছুটা  দূরে  হলুদ  ফুলকি  দেখা  যাচ্ছে ! জনবসতির  চিহ্ন ।  

-আমাদের  আরেকটু  কষ্ট  করতে  হবে  । ওই  দিকে  গিয়ে দেখি ।  
-তোমার  মনে হচ্ছে সুরাহা  হবে  ?
-কেন  ?
-বিম্ব , ভালো করে মনে করে দেখো । আমরা  এই স্থানে  আগেও এসেছি । এখানকার   সমস্ত  পায়রা  কে  শিকার করেছিলাম  । শুধু  তাই  নয়  , আমাদের  দল  ওদের  অনেকের  সাথে সংঘর্ষে  লিপ্ত  হয়েছিল ।

বিম্বের  মনে  পড়ে  যাচ্ছে  ।  বলল – হ্যাঁ ,   ওদের  কাছে  প্রচুর খাদ্য আছে  । আমার  মনে  হচ্ছে  । আমাদের উচিত ধনুক – তীর  আর  মাথার পালক এখানেই রেখে  যাই ।  নচেৎ  ধরে  ফেলবে  । আমরা  ওখানে  গেলে  আশ্রয়  পেতে  পারি । 
ঐরাবত  বলল – শুধু  আশ্রয়  কেন  ?   ভবিষ্যতের  খাদ্য সংকট থেকে  মুক্তিও  পাব  । আজ  রাতে  প্রাণ  রক্ষা  হলে  , কাল  গোটা দিন এই  অঞ্চল ঘুরে  দেখা  যাবে  । 

ওরা  দু’জনেই ধনুক – তীর -  আর  নিজের কপালের   ডানদিকে  থাকা  পালক লুকিয়ে দিল , গাছের  উপর ।   সামনে  এগিয়ে চলেছে  । ওরা জানেনা  , সামনে  কিছু  অপেক্ষা  করছে  । এই  অঞ্চলে  যারা  বসবাস  করে , তারা  পাখি সংগ্রহ করে  রাজাদের  কাছে  বিক্রি করে । পায়রার  জন্য  এই  জঙ্গলের  শুকনো  পাতার  নিচে  ওঁত  পেতে  থাকে  ফাঁদ । রাতে এই চত্বরে   মাংসাশী প্রাণী  শিকারের  সন্ধানে  চলে আসে  ।  বিম্বরা  ক্ষুধা আর  শত্রুদের  হাত  থেকে  বেঁচে  গেলেও ,  মাংস  সন্ধানি পশুদের  থেকে  রেহাই নেই !

                                                      ৩
কতক্ষণ  এমন  ভাবে  থাকতে  হবে  জানা  নেই ! ক্ষিধে ,  দুর্বলতা  আর  মৃত্যু  ভয়  ঐরাবতদের  কাবু  করে  ফেলেছে  ।  শুকনো  পাতার  ভিতর  অপেক্ষমাণ ফাঁদে পা আটকে  গিয়েছে ।  আচমকাই  ওরা  খেয়াল  করল  গাছ  আর  স্মতলের সমতলের মাঝে  জালে  জড়িয়ে  ঝুলছে  !  এই  ঘটনা  এত  দ্রুত  ঘটে  গিয়েছে ,  বুঝতে  পারল  না  ।  তারপর  বেশ কিছুক্ষণ  বাদে     কালো  রঙের , বেঁটে  আকৃতির  মানুষেরা   তাদের  তুলে  নিয়ে  গেল । 

কতক্ষণ  ঘুমিয়ে  ছিল  জানা  নেই ,  ঐরাবতই  প্রথম  বিম্বকে  ডাকল ।  
-দেখো , আমরা  বন্দী নই !  আমাদের জন্য  পাতার  এই  ঘরের ব্যবস্থা  করা  হয়েছে  ।  শুধু তাই  নয় , এখানে  ঠাণ্ডা  নেই  ,  আমরা  বেহুঁশ  হয়ে  পড়েছিলাম । এখানে  যারা  থাকে  , তারা   আমাদের  জন্য  শীতের   হাত  থেকে  রেহাই দিয়ে  , পাতার  ঘরের  ব্যবস্থা  করেছে ।  খাবার  দিয়ে গেল ।  আমার  মনে  হচ্ছে  , ঘর  বন্ধ  করে  গিয়েছে  পাছে আমাদের  ঘুমোতে অসুবিধা  না হয় । 
-এটা  ,  হত্যার  পূর্বে অতিথি  অপ্যায়নও  হতে  পারে  ! আজ ভাগ্য টা   আমাদের  সাথে   নেই । আচ্ছা  বন্ধু ,  পাতার দেওয়ালে  কান রেখে দেখো , আমার মনে  হচ্ছে   বাইরে  কিছু  একটা  হচ্ছে  ।

ঐরাবত  আর  বিম্ব কান  পেতে রাখল ।  পাতার  ঘরে  ছিদ্র রয়েছে , সেখান  থেকে  বাইরে দৃষ্টি যেতেই দেখল  অনেক  মানুষ  জড়ো  হয়েছে ।  বাচ্চাকে  কোলে  নিয়ে স্ত্রী  , জোয়ান  মরদ ,  যুবতী আর কিছু বয়স্ক মানুষ । তবে এদের দেখেই  বোঝা  যাচ্ছে যুদ্ধে  সকলেই  ব্যাধেদের   থেকে  অনেক পিছিয়ে  ।

বিম্ব  বলল -  যদি আজ  রাতে   বেঁচে  যাই ,  সত্যি বলছি  আমরা  এই স্থান  আক্রমণ করব ।   দেখো  ওদের  সভার   বাঁদিকে  যেখানে  আগুন জ্বলছে , তার পাশেই কত  পাখি ! উফঃ একবার দখল  করলেই  , খাবারের  চিন্তা  থাকবেনা  । 
ঐরাবত  চোখ  বড় – বড়  করে  বলল – আগে  আমরা  উদ্ধার  পাই  । তারপর ...


সভার  মাঝখানে  একদল  যুবক হাতে    বর্শা  নিয়ে  বলল – ভিতরে  যারা  আছে  , ওরা    শত্রু । যতই  পরিচয়  গোপন  করুক  , ওরা ব্যাধ । এখানে  এসেছিল  আমাদের  স্থান  দখল  করতে । এখনই  ওদের  হত্যা  করতে  হবে  । তা  না হলে  , আমাদের  আক্রমণ  করবে । আর আমরা  ওদের  কাছে  পরাজিত  হব  । এই  স্থান  এখনো  পাখি  পরিত্যক্তা   নয়  । ব্যাধেরা  এসে   গেলে  , আমাদের গোষ্ঠী  না  খেতে  পেয়ে  মারা  যাবে । 

এই  কথা  শুনে  বিম্ব  বলল- আমি আর  শুনতে  পাচ্ছিনা  । আমার হাত কাঁপছে । আমি   শুয়ে  পড়ছি । মরবার  আগে   বিশ্রাম  নিয়ে  নিচ্ছি  । 

বিম্ব  গিয়ে   শুয়ে  পড়ল ।  ঐরাবত  কাল  খাঁড়া  করে  শুনছে  ।  

যুবক  দলের  প্রস্তাবে  একদল  সমর্থন করল । 

এর  মধ্যেই  , বয়স্ক  একজন  উঠে  দাঁড়িয়ে  বলল – আমি সব মানছি । আমাদের  প্রতি  রাতে  যে  কথা  শুনে ঘুমোতে যাই  , সেই  কথা  বলা  হবে  । সেটা  শুনে তারপর যা  সিদ্ধান্ত  নেবে।

এখানে , যে  স্থান  দেবগিরি  নামে  পরিচিত । এক সময়   তা  ব্রক্ষ্মগিরি  নাম  ছিল । সে  এক নতুন  পৃথিবী ।  এই  গল্প  সেখান  থেকেই শুরু ।

সভায় উত্তেজিত  জনতা  নিজেদের   স্থান  নিল । গল্প শুরু হয়ে  গেল । ঐরাবত  হাঁটু  মুড়ে  বসল , কান  দিয়ে   শুনছে ...

 এক  ব্যাধ   সারাদিন শিকার  সন্ধান  করে  জাল  ভর্তি পাখি  ধরেছিল ।  সাথে    পশুও  শিকার  করে , দেহ টিকে  বহন করে  নিয়ে  যাচ্ছিল ।  এমন  সময়  বৃষ্টি  নামল ।  ঝড়  উঠল । নিজেকে  বাঁচাবার  জন্য  একটা  বড়  গাছের  তলায়  বসল ।  সারাদিন  পরিশ্রম আর   ক্ষুধার্ত  হয়ে   সেখানেই  ব্যাধ   ঘুমিয়ে  পড়ল ।  গাছের  উপর  এক  পুরুষ  পায়রা  নিজের সঙ্গিনীর  ফিরে  আসা  নিয়ে  খুব  চিন্তিত ,  কেননা  সন্ধ্যা  হয়ে  গিয়েছে  , এতটা  সময়  কেউ  বাসা  ত্যাগ  করে  থাকেনা  ! সেই  পুরুষ  পায়রা  মুখে  বলছিল , তার  চিন্তার  কথা  ।  আচমকাই  শুনতে  পেল  , ব্যাধের  পুঁটুলি  কথা  বলছে !   সে  নীচে নেমে  এসে  দেখল  , ভিতরে  তার  প্রাণের চেয়েও প্রিয়  সঙ্গিনী !
 সঙ্গিনী  বলল – আমি  এই  এখানে  বন্দী ।
সঙ্গী – কেন  ?  আমি তোমায় উদ্ধার  করব  ।
সঙ্গিনী  - আজ  আমি  এই ব্যাধের  খাদ্য । আমার বেঁচে  ফিরে  যাওয়া  অসম্ভব । তুমি  বৃথাই  কাঁদছ । মন  কে শক্ত  করো ।
সঙ্গী  পায়রা বলল – আমি  তোমায়  মুক্তি দেব  ।  তারপর আমরা  পালাব  ।  
সঙ্গিনী  মুখটাকে  কাচুমাচু  করে বলল – সে  নিশ্চই পারি ।  কিন্তু একটা  কথা ভাব , আজ  নয় কাল  মৃত্যু  আমাদের ছোঁবেই ।  সেই মৃত্যুর  হাত থেকে  রেহাই  পাব  বলে  ধর্ম থেকে  সরে আসব  !
-মানে  ?
- এই  ব্যাধ  অন্যায়  কিছু  করেনি  ।  সে  তার কাজ  করেছে  । আমার ভাগ্যে  আজ  ওর  শিকার  হওয়া  ছিল , হয়েছি । দেখো  ব্যাধ আমাদের  অতিথি  । আমরা  যদি অতিথিকে সেবা   না দিয়ে  শত্রু   ভেবে  ছল  করি ,  তা পাপ  হবে  ।  জঙ্গলের  বিরুদ্ধে  যাবে  । তাই  তুমি  আগুন  জ্বালো । আমি  নিজে  ওর  জন্য  খাদ্য  হব । 

ব্যাধের  ঘুম  ভেঙে  যেতেই  , দেখল  সঙ্গিনী  পায়রা  নিজেকে  আগুনে  আত্মহুতি দিল । সঙ্গী পায়রা টি  নিজেও ঝাঁপ  দিতে  গেলে  , ব্যাধ  জানতে  চাইলে   সব কিছু জানাল । ব্যাধ তাকে বাধা  দিল , সে  বলল –সঙ্গিনী  ছাড়া   এই জীবন অর্থহীন । সেও ঝাঁপ  দিল । ব্যাধ চোখের সামনে  এই আত্মত্যাগের   উৎসব  দেখল ! তার  নিজের  প্রতি  ঘেন্না  জন্মেছে । নিজেকে  বলল – প্রাণীর  ভিতরে  যে  উদারতা  আছে  । মানুষ  হয়েও  আমার  মধ্যে  এক ফোঁটাও  নেই ! 


কথা  শেষ  হতেই  , সভায়  নিস্তব্ধতায়  ভেসে   গিয়েছে!  যিনি গল্পটি  বলছিল , সে  বলল – যারা আমাদের  সংস্কৃতি  দখল  করে , আমাদের  উপর  তাদের  মতামত  চাপিয়ে   দিয়েছে  । আর  বলেছে  আমরা  পিছিয়ে  আছি , তাদের  থেকে  আমাদের  সভ্যতা  , সংস্কৃতি  কোন  অংশেই মলিন নয় ।  সব  কিছু  দখল  করা  যায় ,  কিন্তু  কোন জনগোষ্ঠীর  চিন্তা ,  সংস্কার ,  মানসিকতা   দখল  করা  যায়  না  । আমরা  নিজেরা  যদি না  নিজেদের  পরিবর্তন  করি । 
লোকটি  থেমে  আবার  বলতে শুরু  করল ------ 
পৃথিবীতে  সব  কিছুই  পাল্টাবে  ,  তাতে  কিছুই যাবে  আসবে  না  । তবে  আমরা  যদি   আমাদের  চিন্তা  পাল্টিয়ে  ফেলি ,  তা হলে  একটা  সভ্যতার  ভিতরে  লুকিয়ে থাকা   ত্যাগের  হত্যা  হবে ! আমরা  তাই  চাই ?    শত্রু   তক্ষণই  আমাদের  কাছে  বিপক্ষ  , যতক্ষণ  সে  যুদ্ধ ক্ষেত্রে  থাকে । আমরা  পাখি  পোষণ  করি  । তাদের   বিক্রি  করে  জীবিকা  নির্বাহ  করি । ব্যাধেরা আমাদের  ব্যবসার  ক্ষতি  করে  , সেই  পশু – পাখি  হত্যা  করে  । সব  ঠিক । তবে  অতিথি শুধুই  অতিথি  হয় । শত্রু  বা বন্ধু  , ধর্ম ভেদ বা জাতি ভেদ  । আপন বা পর  । এই সব কিছু অর্থহীন ।     আমার  কথা  শুনলে । এইবার  জানাও   , এখানকার   লোকেদের  মতামত  কী ? যারা  অতিথি  , তাদের  প্রাণ  রক্ষা  করে  ভুল  করেছি  ? নাকি  তাদের  মেরে ফেলে  আমরা  আমাদের  পূর্বপুরুষদের  ত্যাগ আর ভাবনা কে  অস্বীকার  করব  ? যারা  শক্তিশালী  জনগোষ্ঠী  তারা  নিজেদের  মতন  করে   সমাজ  আর  সভ্যতাকে  প্রভাবিত  করে। তাই  বলে  , আমরা  নিজেদের  হীন  ভেবে   প্রতিহিংসার  হাতে  আত্মসমর্পণ  করতে  পারিনা! আমার  মতে  , ওদের  অতিথি  সৎকারে  যেন  ত্রুটি না থাকে  ।  আর  আমাদের এই  গোপন  বৈঠকের  কথা  যেন  জানতে  না পারে  । ক্লান্তিতে  অতিথিরা  ঘুমোচ্ছে । ওদের  ঘরের  বাইরে  আমরা   পাহারায় থাকব , পাছে  কোন  আক্রমণ  না হয় । আমি  আমার  মতামত  চাপিয়ে দিচ্ছিনা  । মিলিত ভাবে   এখানকার   সবাই  যেই সিদ্ধান্ত নেবে  , তাই হবে  । আমি কথাকার। যে  কথা পরম্পরাগত  ভাবে চলে  আসছে   , তাই  বললাম  । এরপর আপনারাই   ঠিক  করবেন । 
                                                    

                                                          ৪
ঐরাবত  সামনে  ।  বিম্ব  পিছনে  ।  তারা   শেষ  পর্যন্ত  রেহাই পেয়েছে  । যাদের  শত্রু  ভেবেছিল , তারা  ক্ষতি  করেনি !  বসতি  থেকে  অনেকটা  দূরে  যাওয়ার  পর  , বিম্ব  বলল 
-কাল রাতে  তুমি অনেকক্ষণ  জেগে  ছিলে  ।  কিছু  বুঝতে  পারলে  ?  
-কি  বুঝব  ? 
-মানে  , এদের এত  সাহস  হল  কী  ভাবে  ? মানে  আমরা শত্রু পক্ষ  ।ব্যাধ । এই সব  কিছু  জেনেও , আমাদের  আপ্যায়ন  করে  , মুক্তি  দিল !  সত্যি , এরা  ভীষণ   ভীতু । ভেবেছে  আমাদের  ক্ষতি  করলে  , আমরাও  আক্রমণ  করব  ।

ঐরাবত  চুপ  করে  ছিল । বিম্ব  বলল – তুমি  অনেকক্ষণ  ধরে  চুপ  করে  আছও । কাল রাতের  ঘটনা কিছু  বললে  না তো । কাল  অনেকরাত  অব্দি  জেগে  ছিলাম  ।  কিছু  জানতে  পারলে? 
-হ্যাঁ । 
-ওদের  চোখে  আমরা  কী ? মানে আমাদের  ওরা  কেমন মানুষ  মনে  করে  ?  মুক্তিও বা দিল  কেন  ?
ঐরাবত বলল – আমরা  ওদের  আক্রমণ  করেছি  ,  ওদের  সম্পত্তি  দখল  করেছি ।  এমন কি  , এই স্থান  থেকে  ফিরে  যাচ্ছি  শিকার   সংগ্রহের  আকাঙ্খা  নিয়ে  ।
-হ্যাঁ । কিন্তু  ওরা  আমাদের  নিয়ে  কী  ভেবেছে  ?
- আমরা  ওদের  কাছে  অযাচিত অতিথি ...  





 রাত বারোটা পাঁচ
----সৌমেন সরকার

টিং টং!টিং টং!টিং টং!টিং টং!
হঠাৎ মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল।
ধুত্তেরি!আর ভাল লাগেনা।এত রাতে আবার কে এল?কলিং বেলটা আরও বার কতক বাজার পর লেপকাথা থেকে নিজেকে বার করলাম।মাঘ মাসের শীতে মাঝরাতে যদি লেপকাথা ত্যাগ করে দরজা খুলে বাইরে যেতে হয়,তবে কেমন বিশ্রী অবস্থা হয় ভাবতে গেলেই চোখে জল চলে আসে।মেঘা তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।নাঃ, ওকে এত রাতে আর জাগাব না।আমিই উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।
দরজা খুলেই চমক!দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অমর।আমার কলেজের প্রিয়বন্ধু অমরেশ বসু।আমি তো অবাক!কিছুক্ষণ হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম।তারপর চটকা ভাঙলে তাড়াতাড়ি ওকে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।ড্রয়িংরুমে বসালাম ওকে।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত তখন বারোটা পাঁচ বাজে।ও বলল-"চিনতে পেরেছিস তাহলে?"
আমি বললাম-"চিনব না মানে!পাঁচ বছর একসাথে পড়েছি।প্রথমে ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি,আর তারপর এম.এ তে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি।আমাদের বন্ধুত্ব দেখে সবাই আমাদের মানিকজোড় বলত।সেসব দিনের মধুর স্মৃতি কি কেউ ভুলতে পারে।"
-"যাক,আস্বস্ত হওয়া গেল যে পুরোন বন্ধুকে তবে পুরোপুরি ভুলে যাসনি।"
-"কিন্তু এম.এ পাশ করার আগেই আমি পুলিশে চান্স পেয়ে গেলাম।পরে অবশ্য আবার পড়ে পাশ করি।আর তুই এম.এ কমপ্লিট করলি।তারপর কি হল বলতো?কোথায় চলে গিয়েছিলি?"
-"কোথায় আবার,বর্ধমানে আমার নেটিভ ভিলেজে।তোকে কিছুই জানাতে পারিনি শিবু।সরি,কিছু মনে করিস না।"
-"একটা ফোন,বা চিঠি কিছুই তো দিলি না
কোন যোগাযোগই রাখিসনি।"
কথা বলার ফাঁকে অমর উঠে গিয়ে একটা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।জানালা খুলে দিল।আমি বাঁধা দিয়ে বললাম-"করছিস কি অমর।এত শীতে করছিস কি?শালা নিজেও মরবি আর আমাদেরও মারবি!"
-"নারে।আমি চলে গেলে আবার লাগিয়ে নিস।"
এবার ওকে দেখে একটু চোখ কুঁচকে গেল আমার।মহা গপ্পোবাজ অমরকে কোনদিন চুপ করে থাকতে বা হতাশাজনক মুখ নিয়ে বসে থাকতে দেখিনি।মনে কেমন একটা সন্দেহ হল।আমি বললাম-
"কি হয়েছে তোর অমর?তোকে কেমন একটু অস্বাভাবিক লাগছে বলে মনে হচ্ছে!কি হয়েছে বল আমায়।"
ও ঠিক একই ভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল।আমি ওকে এককাপ কফি আর কিছু মিষ্টি,পকোড়া ইত্যাদি দিলাম।কফি ফ্লাস্কে থাকে সবসময় আর বাকি জিনিসগুলো ফ্রিজেই ছিল।পেটুকঠাকুর অমর এসবের দিকে না তাকিয়ে সেই একইভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল-"তোর নীলিমাকে মনে আছে?"
-"হ্যাঁ,কেন মনে থাকবে না।তোর ফিয়নসে ছিল।কেন নীলিমার আবার কি হল?কি হয়েছে,একটু খোলসা করে ঝেড়ে কাসোনা ভাই।"
-"আমরা পালিয়ে যাব বলে ঠিক করেছিলাম।কারণ,ওরা ছিল ব্রাহ্মণ।তাই ওদের বাড়ী থেকে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে গভীর আপত্তি ছিল।তারপর তুই আমাদের কি সব উপদেশ দিয়ে পালাতে বারণ করেছিলি।বলেছিলি পালায় ভীতুরা।আমরা যদি পরস্পরকে প্রকৃত ভালোবাসি তবে পালিয়ে পরিবারের মুখে চুনকালি লাগাবো না।যদি না মানে তবে ওদের অমতে বিয়ে করব।ওদের আশেপাশেই থাকব।তাবলে মূর্খের মত পালাব না।"
-"তারপর ওরা মানেনি বলে কালিঘাটে গিয়ে আমি নিজে তোদের বিয়ে দিয়েছিলাম।ঘর ভাড়া করে দিয়েছিলাম,টিউশনিও দেখে দিয়েছিলাম।পার্টটাইম কাজও জুটিয়ে দিয়েছিলাম...আরে এগুলোতো সবাই জানে।তাতে কি হয়েছে।"
-"তাতেই তো সব ভাই।নীলিমা আর নেই শিবু!"
কি সব যাতা বলছে ও!ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।কিন্তু ওর কথায় আর ব্যবহারে মাথা খারাপ বা পাগলামির কোন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না তো।ও বলল-"আমাদের ওবাড়ী থেকেও কেউ মেনে নেয়নি।আমি হঠাৎ বর্ধমানে ফিরে গিয়েছিলাম তার কারণ হল বাবার অকস্মাৎ মৃত্যু।আসলে এই শক নিতে পারেনি।বাবার মৃত্যুর পর আর বাড়ীতে স্থান হয়নি আমার।আবার কোলকাতা চলে আসি।জুটমিলে কাজ শুরু করি।অভাবের সংসার কোনরকমভাবে চলতে থাকে।কিন্তু নীলিমা আমায় সত্যি সত্যিই ভালোবাসত।তাই এই অভাবকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল।তাই তোকে আর জ্বালাতন করিনি।ওই আমায় বারণ করেছিল।এতকিছু করেছিস আমাদের জন্য।"
                             (১)
-"কি সব বলছিস?নীলিমা মারা গেল কি করে?"
-"যখন সুখের মুখ একটু দেখতে শুরু করেছি,মিলে প্রমোশন পেয়ে পারচেজ ডিপার্টমেন্টে গিয়েছি ঠিক তখনই থ্রম্বোসিসে মারা যায় নীলিমা।প্রথমে কেউ কিছুই বুঝতে পারিনি।যখন ধরা পড়ে তখন ওকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করি।গ্রামে গিয়ে সকলের হাতে পায় ধরি।কিন্তু কারও মনে কোনরকম দয়ার উদয় হয়নি।ফিরে এসে দেখি সব শেষ।আমার সব সম্বলটুকু বিক্রি করেও ওকে বাঁচাতে পারিনি।তবে একটু খারাপ কাজ তখন আমি করে ফেলি।গ্রাম থেকে আসার সময় মায়ের আর রুমকি দিদির গয়নার বাক্স আমি চুরি করে নিয়ে আসি।কিন্তু কোন কাজে লাগেনি।আর এখন আমার যা অবস্থা তাতে এগুলো আমার কাছে মূল্যহীন।তাছাড়া কাঁকড়াবিছের মত হুল ফোঁটাচ্ছে প্রতিনিয়ত।কি অসহ্য যন্ত্রণা তা তোকে বলে বোঝাতে অপারগ আমি শিবু।"
ওর কথায় আমি খুবই দুঃখ পেলাম।ছেলেটা কি ভয়ানক মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে আছে তা ভাবতে গেলেও গা শিউরে ওঠে আমার।
-"তা এতরাতে এইগল্প শোনাতে হয়ত আসিসনি আমায়।কোন জরুরী কাজ আছে নাকি?বল আমায়,আমি যতটা সম্ভব তোকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।"
-"না না,তোকে তেমন একটা কষ্ট দেবনা।শুধু একটা অনুরোধ।তুই এই গয়নার বাক্সটা যদি মাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসিস তবে খুব উপকার হয়।আমি খবর নিয়ে দেখেছি,বাবার মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের অবস্থার শোচনীয়ভাবে অবনতি ঘটেছে।রুমকি দিদির বিয়েটা পর্যন্ত দিতে পারছেনা।এতে লাখ পাঁচেক টাকার মত গয়না আছে।ওদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।এই উপকারটুকু করবি ভাই?"
-"কেন করব না।নিশ্চয়ই করব।আমি আর তোর বৌদি মেঘা আগামী সপ্তাহে বর্ধমান যাচ্ছি।ওখানে ওর মামাবাড়ি।মামাতো বোনের বিয়েতে।তোর ঠিকান দে,আমি নিজে হাতে করে দিয়ে আসব।কিন্তু তুই নিজে হাতে দিলে..."
কথাটা শেষ করার আগেই দেখলাম ও একটু চমকে উঠল।তারপর বলল-
"না না,আমি যাব কোন মুখে বল।একেতো পরিবারের মুখে চুনকালি দিয়েছি,তার ওপর গয়না চুরি।কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াব।তার থেকে তুই দিয়ে আয়।আর যদি না দিতে চাস তো থাক।আমি জোর করব না।"
ও মুখটা নীচু করে রইল।
ওকে আজ যতটা বিমর্ষ লাগছে ততটা আর কোনদিন লেগেছে কিনা সন্দেহ।ওকে দেখে আমার মনের ভাবটা কেমন যেন হয়ে গেল।কিছু একটা তো হয়েছে,নাহলে...
ও একটা গয়নার বাক্স কাঁধের ব্যাগ থেকে বার করে খাটের ওপর রাখল।তারপর হঠাৎ আমার দুহাত নিজের দুহাতের মধ্যে টেনে নিল।দুচোখে গভীর অনুতাপের ছায়া।কিন্তু তা আমার তখন খেয়াল হচ্ছিল না,কারণ ও যখন আমার দুহাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিল তখন অস্বাভাবিক শৈত্যে আমার পুরো শরীর কম্পিত হতে লাগল।যেন একটা বরফের চাঙড়ের গর্তের মধ্যে বরফের কিছু ছুরির ওপর হাত রেখেছি।ও আনন্দিত হয়ে কি সব বকছে তা আমি একেবারেই বেমালুম ভুলে গেলাম।ঠকঠক করে কাঁপছি তখনও।
শেষে "থ্যাঙ্ক ইউ" বলে দরজা খুলে হনহন করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল।আমি তখনও বিহ্বলিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুই বুঝতে পারছিনা।খাটের ওপর গয়নার বাক্সটা তখনও পড়ে আছে।আমি সম্বিত ফিরে পেতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম।অমরের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে এলাম।চারিদিক শুনশান।কিছু নেড়িকুকুর কেবলমাত্র শুয়ে আছে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে।কুয়াশায় ব্যাপ্ত চতুর্দিক।কেউ কোত্থাও নেই কোনদিকে!
        কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকলাম।গয়নার বাক্সটা দেরাজে রেখে বেড রুমে গিয়ে লেপের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।তখনও ঠকঠক করে কাঁপছি।হঠাৎ মেঘার ঘুম ভেঙে গেল।'ওমা!কি ঠাণ্ডা!' বলে লেপ ঠেলে খাটের ওপর উঠে বসল।আমি তখন কাঁপছি।ও কিছু একটা ভেবে বলল-
"ও,তোমার হাত এত ঠাণ্ডা!তা এত রাতে এই মরা ঠাণ্ডায় কোথায় বেরিয়েছিলে।"
আমি আমতা আমতা করে অমরেশের ব্যাপারটা সব খুলে বললাম ওকে।মেঘা শিক্ষিতা আধুনিক মনস্কা মেয়ে।আমি একটু বেশী ভাবছি বলে আমাকে একটু বকা দিল।তারপর লেপের মধ্যে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।আমিও দুহাতে গভীরভাবে আলিঙ্গন করলাম ওকে।ও বলল-
"বর্ধমানে যাই আমরা আগে,তারপর ভাবব কি করা যায়।"
আমি তখন একটু ধাতস্ত হয়েছি।আরও কাছে টেনে নিলাম মেঘাকে।ও কোন প্রতিবাদ করল না।বরং আমার আদরে সাড়া দিয়ে শীতল দেহমনকে উষ্ণ করে তুলল।শুধু বলল-
"কিছু ভেবোনা গো।সব ঠিক হয়ে যাবে।"
                               (২)
কিন্তু কামের উন্মাদনা ও উত্তেজনা তো সাময়িক।কিছু সময় পরে ও ঘুমিয়ে পড়ল।আমার কিন্তু ঘুম আসছিল না।কি হয়েছে অমরের।তখন হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তেই বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটতে শুরু হল।ওর চোখ!ওই নিষ্পলক দুচোখ!যতক্ষণ ও ছিল চোখের পলক পড়তে দেখিনি,আর চোখের চাহনি ছিল নিষ্পৃহ।সাধারণ মানুষের পক্ষে...
যাইহোক,এখন ভেবে লাভ নেই।মেঘা ঘুমিয়ে পড়লেও আমাকে তখনও অজগরের মত আলিঙ্গন করে আছে।আর আমিও বুকে জড়িয়ে আছি।
এক সপ্তাহ পর।
বর্ধমানের হরিহরপুর গ্রামে অমরের নেটিভ ভিলেজ।অমরের বাবা পৃঁথ্বীশ বসুর বাড়ী খুঁজে বার করতে তেমন বেগ পেতে হলনা।সকলে চেনেন দেখলাম ওদের।
একটা পুকুরপাড় পেরিয়ে বামদিকে মুড়তেই দেখতে পেলাম অমরদের ছোট একটা একতলা বাড়ী।মেঘা বলল-"এই কি তোমার বন্ধু অমর বাবুর বাড়ী?"
ওকে আমি সেদিন রাতের ঘটনাটা বলেছিলাম।প্রথমে একপশলা ধমক শুনিয়ে দিল।তারপর একটু বুঝিয়ে বলতেই শান্ত হয়েছিল।অমর যে ওকে জাগাতে বারণ করেছিল তা বলতেই এমন একটা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল যে ভষ্ম করতে পারত হয়ত করত।পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ওদের বাড়ী।তবে বাড়ীতে একটু বেশীই জীর্ণতার ছাপ পড়ে গেছে।গেটটায় মরচে পড়েছে,বাড়ীর বাইরের রং এর জৌলুস আর নেই।চুন,বালি খসে খসে পড়ছে।কার্ণিসে বট,অশ্বত্থ,আগাছা ইত্যাদি জন্মেছে।গেটটা একটু ঠেলতেই একটা দীর্ঘ ক্যা-অ্যা-অ্যা-চ্-চ্ শব্দ করে খুলে গেল।গেট থেকে পাথরকুচি বিছানো পথের শেষে বাড়ীতে প্রবেশের প্রধান দরজা।আমি এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দেখি কলিং বেল নেই।দরজার কড়া নেড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।মেঘা বলল-"বোদহয় বাড়ীতে কেউ আর..."
আমরা পিছনঘুরেছি ফিরে আসার জন্য,হঠাৎ খুট্ শব্দে দরজা খুলে গেল।আমরা আবার পিছন ফিরে দাঁড়ালাম।একজন বিধবা ভদ্রমহিলা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-"কাকে চাই?"
আমরা একে একে তাঁকে প্রণাম করলাম।তারপর নিজের পরিচয় দিতেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।বললেন-"বাবা শিবু,তোমার কথা কত শুনেছি অমরের হাতে।কিন্তু..."
তারপর হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন।তার কান্না শুনে একজন রোগা ভদ্রমহিলা বাইরে বেরিয়ে এলেন।বুঝলাম ইনি রুমকি দিদি।কোলকাতায় তার সাথে আলাপ করিয়েছিল অমর।তিনি আমাদের সকলকে সাদরে অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে গেলেন।মেঘা রীতিমত লজ্জা পাচ্ছে।তাকে বৌমা বৌমা করছে আর কেঁদে ভাসাচ্ছে অমরের মা।সাথে রুমকি দিদি মুখ টিপে কান্না ঢাকার ব্যর্থ প্রয়াস করছে।
আমি আর বেশী ভনিতা বা সময় নষ্ট না করে সরাসরি আসল কথায় চলে এলাম।আমি বললাম-
"গয়নার বাক্সের ঘটনাটা আমি জানি রুমকি দিদি।আমিও জানতাম না,জেনেই ছুটে এসেছি।"
রুমকি দিদি একটু বিমর্ষ মুখে বললেন-"আর ওসবে কি হবে ভাই...যা হবার তাতো..."
বুঝলাম অমরের বিচ্ছেদ এর জন্য এইসব কথা তাদের মনে দাগ কেঁটে বসে গেছে।আমি তখন মেঘার ব্যাগে রাখা গয়নার বাক্সটা বার করে রুমকি দিদির হাতে দিলাম।সেটা হাতে দিতেই এক মুহূর্তে রুমকি দিদি আর মাসিমার চাহনিতে এক অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখলাম।ভীষণ অবাক হয়ে মাসিমা জিজ্ঞাসা করলেন-
"এ তুমি কোথা থেকে পেলে বাবা?ও তো এটা নিয়ে গিয়েছিল!"
আমি বললাম-"ও গত সপ্তাহে রাতে এসেছিল।"
তারপর আমি আনুপূর্বিক সব বলে গেলাম।শুনেই চমকে উঠলেন ওনারা।মাসিমা কাঁদতে কাঁদতে কিছুই বলতে পারলেন না।রুমকি দিদি জিজ্ঞাসা করলেন-"সে কি করে সম্ভব ভাই?"
-"সম্ভব নয় কেন দিদিভাই?"প্রশ্নটা করল মেঘা।
-"ও যেদিন গয়নার বাক্সটা নিয়ে যাচ্ছিল সেদিন মোটর অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়।এখানেই ওর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।পরে জানতে পারি ওর স্ত্রীও..."
আমি অনুভব করলাম মেঘা আমার হাত চেপে ধরেছে।আমার হাল একবার ভাবলেই বোঝা যাবে কি অবস্থা হয়েছিল আমার।
এও কি সম্ভব!যে মারা গিয়েছিল সে কি করে কোলকাতায় এসে আমার সাথে দেখা করতে পারে!আর গয়নার বাক্স?সেটা তো স্বপ্ন নয়।রুমকি দিদি আমাদের বললেন-"এদিকে এসো একবার।"
আমরা পাশের ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম।একটা দেওয়ালের দিকে আঙুল নির্দেশ করে বললেন-"ওই দ্যাখ।"
দেখি একটা ফটো ফ্রেমে অমরের ছবি বাঁধানো।আর তাতে সদ্য পরানো হয়েছে একটা রজনীগন্ধার মালা!


এবং তারপর আমি 


জ্যোতির্ময় রায় 


(প্রথম পর্ব )

নীহারিকা তোমায় 


                               এক 

"I love you "
কথাটা খুব ছোট্ট না  ? আচ্ছা ভালোবাসাটা কি ওতো সহজ ? 
এমনি এমনি কি ভালো বাসা হয় .... চাইলেই ? 
একটা space চাই ....  খোলা উৎমুক্ত একটা আকাশ ,খাঁচার পাখি মেলবে ডানা ,অবাধ ঢেউ আছড়ে পড়বে তীরে ... হিমালয় বেঁয়ে গঙ্গোত্রী নামবে ,সবুজ ফসলে ভরে যাবে মনের প্রান্তর । 
কই সেই সেই যায়গা ... "নীহারিকা " যাও তোমার নাম নীহারিকা দিলাম । 
উল্কা পাত না হয় হলো ... না হয় আমার পৃথ্বীর বুকে ক্ষত চিহ্নে প্রেম আঁকা হলো .... তাতে ক্ষতি নেই কোনো  ॥ 
ভালোবাসা শব্দটা সত্যি সহজ , সরল ,  বলো ?
হয়তো সহজ ,সরল রেখা একটা ... বক্ররেখা হয়ে বৃত্ত বানায় তারপর কেন্দ্রে  থাকে হিসাব ... কে কতোটা আকাশ পেল ,কে কতো টা মাটি ? চাওয়া পাওয়া এন্টি log এ ... সমাকলন  সাজায় শূন্য থেকে ইনফিনিটি... ॥ 
তবুও প্রেমে পরে  ,প্রেম হয়... ভালো বাসে ... ঘর সাজায় ,স্বপ্ন  সাজায় মনের ব্যালকনিতে গল্প হয় কথা ... । 
আচ্ছা নীহারিকা তুমি বলো কোন দিকে যাবো আমি ... বাম অলিন্দে  না ডান  অলিন্দে  ... কোন সেই পথ ? যে পথ এভারেস্ট এর গায়ে লিখে বেনামী চিঠি ... রক্তে চাপ বাড়ে , কিছু ... বারুদ আছে কি বলো তাতে ... আগুন ?
হৃদয় জ্বলবে ... ভালোবাসা কি পাবে  ধর্ষিত মন ... ॥ 

                                ( দুই)
        
" তুই কি পাগল হলি নাকি ? কি সব বলছিস ? কিছুই তো  বুঝতে পারছি না  ,সত্যি তোর মাথা গেছে ডাক্তার দেখা গিয়ে  ... । 
ঠিক বলেছো নীহারিকা মাথা গেছে হয়তো আমার ,হয়তো আমি আমি এই পৃথিবীর কেউ নই ,এই বদ্ধ খাঁচায় আমার জায়গা হবে কি ? আমি তো উড়তে চেয়েছি ,ভালো বাসতে... কাছে আসতে ,শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যেমন বাক্য হয় আর তাতে দিয়ে কবিতা ... সমুদ্র ... পাহাড় ,নীল আকাশ 
মেঘ ,বৃষ্টি ... হ্যাঁ আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি আরও আমার শরীরে প্রতিটি লোম কূপ জানবে তার ছোঁয়া ,সুড়সুড়ি দেবে ,আর আমার লোম খিল খিল করে হেসে উঠবে ... । 
"বুঝলাম না কিছু  ,যা তো  আমার অনেক কাজ আছে ,তোর ভাট বোকা এবার একটু থামা please । কাল  আবার অ্যাসাইমেন্ট জমা দিতে হবে ,তোর তো সব কমপ্লিট তাই না রে ? " 
" জানি তুই বুঝবি না আমার কথা ,আমার নামের সামনে যে কবি শব্দটা যুক্ত হয়ে গেছে ,কবিরা কখনো সহজ কথা কঠিন করে বলে ,আবার কখন কঠিন কথা সহজ করে বলে যে ,আমি সহজ কথা গুলো না হয় কঠিন করে বললাম।  এই কবি শব্দটা যে কতো ওজন আগে জানতাম না ,জানলে কোনো দিন কবিতা লিখতাম না ... আসলে কি জানিস আমি হয়তো লিখছি না কবিতা গুলো ,মনের মধ্যে যখন কথা জমে ,প্রশ্ন জন্মায় ,উত্তর মেলে না বেশির ভাগ সময় ... ঠিক তখনি ভূমিকম্প হয় ,ঝড় উঠে ,ডিপ্রেষণ ,শব্দ মালা বলে ভাষা দাও ,থেটিস থেকে হিমালয় জেগে উঠে তখন ,কেউ যেন লিখিয়ে নেয় কথা ,আর আমি লিখতে থাকি । আসলে যে আমি মনের কথা সবার মতো সহজ করে বলতে পরি না ,তাই কবিতা হয়ে যায় কথা ... ॥ " 
"আমি যে বললাম অ্যাসাইমেন্ট লেখা হয়েছে  ? "
রোজ তো লিখছি আমি ,জীবন নিয়ে ,ব্যর্থতা নিয়ে 
'আরে পাগলা seminer আছে যে ,তার ?'
"নাহ !"
আমি বলেছি না আমি এই পৃথিবী বন্দী খাঁচায় ,একটা মুক্ত আকাশ চাই ,একটা স্পেস কথা বলার ? কই সে জায়গা ? আমি তারই খোঁজ করি শুধু “



                     (তিন)

"হলো তোর ভাট বোকা ,আমাকে বিরিয়ানী খাওয়াবি কবে বল ? "
"খাওয়াবো তবে শর্ত আছে "
"কি শর্ত শুনি" 
"কিছুই না শুধু তুই আমার পাশে বসে আমার সামনে খেতে হবে ,আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো শুধু ,আর নিজের পৃথিবীটা খুঁজবো "
"যা তো এখান থেকে ,তোর গলা টিপবো আমি ,আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার লোক আছে ,আর তোর তো আছে ডেকে নে ওকে ,ও জানলে কিন্তু... "
"জানবে জানবে কি হবে ,break up ,তা তো রোজ হয় ,আবার ঠিক হয় ,"
"বাহবা !এতো প্রেম ? "
"হম্ম ! এতো টাই ,তবে সেই জায়গাটা নেই ... একটা মুক্ত আকাশ ,একটা প্রান্তর ,একটা সমুদ্র নেই ... একটা ছক কাটা সাদা কাগজে আটকে গেছে কথা গুলো ,ভালো লাগা গুলো কিন্তু গোলাপ ফোটায় ,ভালোবাসাও আছে একটু টুকরো বরফ নীল কাঁচের গ্লাসে ভাসছে ,টাইটানিক কিন্তু এখনো ডুবে যায়নি ... অন্তরীপ খুঁজছে ... একটা প্রবাল প্রাচীর ডিঙিয়ে ॥ "
"কি যে বলিস কিছুই বুঝি না !"
"বুঝবি না ... আচ্ছা কবিরা কি সত্যিই পাগল ? সত্যি কি আবোল তাবোল বকে ? যুক্তিহীন ... নাকি আবেগে ? শুনেছি কবিরা প্রেমিক হয় ? তবে আমি কি কবি নই ? নাকি প্রেমিক নই ? ... তবে কেন চশমা খুললেই দেখি বদ্ধ খাঁচায় ইঁদুর দৌড় ... হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা রোজ ,চারিদিকে শুধু যন্ত্রনা ,কান্না আর ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি ... তার মাঝেই শুকনো গোলাপের পাপড়িতে ইতিহাস লিখছি ..... । আর হৃদয়টা জমে হিমালয় । তবে এই নয় যে ভালোবাসতে জানি না  ... ভালো তো রোজ বাসি তাকে ,রোজ প্রেমে পড়ি ,তার চোখে পৃথিবী আঁকি ... কিন্তু মুক্ত আকাশ পাই না । " 
"তোর মাথা সত্যি গেছে ... । চল কাল viva আছে, পড় গিয়ে ,আমার কিছুই পড়া হয়নি ,আমাকে পড়তে হবে ,বাই টাটা "

"টাটা "



##
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো প্রিয়মের । 
১১ .৩০ এই যা !অফিসে যেতে হবে তো  । আজও লেট । কালকে পেটে পড়েছিলো তো ঘুমের সঙ্গে ,স্বপ্নটাও বেশ জমে উঠেছিলো ... । 
একি  একটা অতি চেনা অথচ পুরোনো একটা নাম্বার  ,দুটো misscall । 
লাস্ট কত বছর আগে কথা হয়ে ছিলো মনে নেই হবে পাঁচ-ছয় বছর ,তারপর ইতিহাস ,কতো চেনা এই নাম্বারটা  ... অথচ আজ পুরোনো অনেক ,তবে হঠাৎ কি মনে করে বেঁচে আছি না নেই সেইটাই জানতে কি ,তবে ? 
নাকি ..... । 
             

                          (চার )


"ফের বলবে কি রে তোর প্রেম কেমন চলছে ,কেমন আছে অনামিকা ,আর শ্রেয়সী এর খবর কি ,ফোন করে ? " 
আর আমার সেই এক উত্তর ..." সব ভালো আছে ,শুধু পৃথিবীতে আকাশটা  নেই উড়ার মতো " 
" তুই না ... সত্যিই  ,দেখ ভালো বাসা ও ভাবে হয় না ,যে কোনো এক জন কে ভালো বাসতে হয় , ও ভাবে কোনো সম্পর্ক টিকে না । তুই ডিসাই কর কাকে তুই চাস ? শ্রেয়সী নাকি অনামিকা ? শ্রেয়সী তো চলে গিয়েছিলো তোকে ছেড়ে। এখন তোর নাম হয়েছে ,অনেক পরিচিতি । আর এসে সে এসে আবার চলে যাবে না তার কোনো গ্যারান্টি কি আছে । আর অনামিকা খুব ভালো মেয়ে ,তোকে ভালো বাসে খুব । দেখ তুই কি করবি ? "
"আমি একটা নিজেস্ব পৃথিবী চাই,একটা নিজেস্ব আকাশ ,উড়বো বলে ... । "

আজ একটা ছোট্ট মেডিকিন কোম্পানীতে চাকরি করে প্রিয়ম । হঠাৎ নীহারিকার নক্ষত্র পতন হবে কে জানত ? হঠাৎ ৬ বছর পর  কি মনে করে ? 
নাহ ,ফোন করেনি ঘুরে তাকে । 
একটা নিজেস্ব পৃথিবী চেয়েছিলাম ,পাইনি  ,আবার সেই এক ঘেয়েমী জীবন ,অফিস ,বাড়ি ... ট্রাম বাসে পিসে যাওয়া জীবন । নাহ আর কবিতা পায় না ,না আর জোর জবরদস্তি করে লিখে না কবিতার আজ মৃত অনুভূতির সাথে সাথে । আজ শুধু রক্ত উঠে মুখে কথার পাহাড় হিমালয় হয় ,বরফ জমে ,গঙ্গোত্রী ... ভাসিয়ে নিয়ে যায় বুক রোজ ,বৃষ্টি কিন্তু হয় না  আর ,মেঘ জমে ,জমাট কালো মেঘের আড়ালে নীহারিকা ,বা শ্রেয়সী বা অনামিকা এক একটা বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে হারিয়ে যায় মুখ ... । আর আমি নৌকা বানাই ফের ,আবার বেনামী চিঠি ... আর গোলাপ সিগন্যাল ……। 


                  (পাঁচ )


আজ একটা সত্যি কথা বলবো তোমায় । নীহারিকা ... ও নীহারিকা ? শুনতে পাচ্ছো কি ? হয়তো না। তুমি তো অন্য পৃথিবীর মানুষ এখন । আমি ভিন দেশী তারা । তোমায় আমি ভালো হয়তো বাসি না ,প্রিয় বন্ধু যে তুমি ,সেই যে প্রেম বলে লোকে ন্যাকু ন্যাকু কথা ,এসবের উর্দ্ধে তোমার অবস্থান । এভারেস্টের চূড়ায়  টাইটানিক পোজ তোমাতে মানায়  ॥ খাঁচার পাখি আকাশ পায় ,কথা গুলো ভাষা পায় । অথচ সত্যি বলছি তোমায় ভালো বাসি না আমি  ,সেই ক্ষমতা হয়তো আমার নেই । তবে তোমার চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়তো বারণ নেই ,তোমার শরীরের গন্ধটা গোলাপের গন্ধকে হার মানায় । তাই রহস্য আমার কাছে তোমার শরীর ,তোমার মন ,তোমার সব কিছুতেই ॥ তোমার ঘামের গন্ধে পারফিউম হতেও ইচ্ছে করে আমার । তোমার হৃদয়ে মাথা রেখে ইচ্ছে করে তোমার পাহাড়ে হেঁটে বেড়াই  । তোমার নাভি পদ্মে হয়ে ফুটতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে ,নদীতে সাঁতার কাটি 
আমার ঘাম বৃষ্টি হয়ে যায় ... রহস্য সমাধান হয় না । দূর্বা ঘাসের সুড়সুড়িতে খিলখিল করে উঠা শরীরের বিষাক্ত লাভায় .... শেষ চিঠি লেখা । নীহারিকা তুমি থেকো ভালো আকাশে ,তুমি বলতে না  মেঘ সরিয়ে সূর্য উঠবে 
উঠছে ... ঘন গাঢ় লাল রঙ্গা একটা সূর্য আমার আকাশের  বুকে ,রাতের তারারা সেই সূর্যের আড়ালে হারিয়ে যাবে একদিন ॥ 
রহস্য তবুও থেকে যাবে হয়তো .... । । 

ভূত ও বর্তমান
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

হস্টেলে অনেকেই কোনও অশরীরির অস্তিত্ব টের পেয়েছে। ছাদের ওপর হাঁটা-চলার শব্দ, কখনও বা গুনগুন করে কথা বলার আওয়াজ। রাত্রি এগারোটার পর প্রায় বারোটা একটা পর্যন্ত ছাদ থেকে আওয়াজ শোনা যায়। কোনও কোনও দিন তারও পরে।
এখন তারাবাগে যা শাখামৃগের দৌরাত্ম, এই শব্দ তাদের পদধ্বণি কিনা সেই প্রসঙ্গ তুলতে তা তৎক্ষণাৎ খারিজ হয়ে গেল। হনুমান নিশাচর প্রাণী নয়। আর পাঁচটা সাধারণ পশু-পাখির মতো সন্ধ্যার পর নিজেদের ডেরায় ফিরে শান্ত হয়ে যায়। এই শব্দ আর ফিসফাস গুঞ্জন তেনাদের না হয়ে যায় না। ভূতের বদলে বাঁদরের হয়ে কথা বলায় আড্ডা তথা আলোচনা সভায় অনন্যার নাস্তিকতা মোটামুটি সিদ্ধ হয়ে গেল।
মেয়েটা কোনও অঞ্জাত কারণে সঙ্গীহীন। ছাত্রীসংখ্যার তুলনায় ছাত্রী নিবাস নেহাতই অপ্রতুল হওয়ায় যেখানে এক একটা ঘরে দুটো তক্তপোশে দুজনের বদলে অবস্থা বিশেষে চারজনকেও গাদাগাদি করে শুতে হয়, সেখানে ঘর সংখ্যার তীব্র আকালের মধ্যেও একটা ঘরের পুরোটা একা দখল করে থাকার বিরল অভিজ্ঞতার অধিকারী সে। গরমে ঘুম আসতে না চাইলেও কথা বলার সঙ্গী না থাকায় অনন্যা প্রায় রাতেই হস্টেলের ছাদে গিয়ে খানিক বসে বা মূলত পায়চারি করে নিজের সঙ্গে কথপোকথন সেরে আসে। এটা তার অন্যতম অবসর যাপন। 
ব্যাপারটা বুঝেও বোঝাতে সাহস হল না। কারণ অত রাতে ছাদে যাওয়ায় কোনও বিধিবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কেউ যায় শুনলে জারি হতেই পারে। একটা মেয়ে অন্ধকারে একা একা – না না এটা মেয়েদের আবাসন। সবাই বেশ ঘাবড়ে আছে; রহস্য ফাঁস হলে রেগেও যেতে পারে। 
গা যে অনন্যারও একেবারে ছমছম করে না, তা নয়। সিঁড়ির দরজা দিয়ে ফিরে আসার সময় প্রায় রোজই মনে হয় এই বুঝি একটা ঠাণ্ডা হাত পেছন থেকে কাঁধে রাখল কেউ। পায়চারি করার সময় যত না ভয় করে তার চেয়ে বেশি করে নেমে আসার ঠিক আগের মুহূর্তে। যতই অবিশ্বাসী হোক কয়েক হাজার বছরের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটা আজন্মের সংস্কার মন থেকে যুক্তি দিয়ে সম্পূর্ণ দূর যায় না। তাছাড়া অনন্যা ঠিক অবিশ্বাসী নয়, বরং প্রেতের সাক্ষাত অভিলাষী। কত সময় ছাদে বসে একাই প্ল্যানচেট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মশার জ্বালায় স্থির হয়ে বসা যায় না, উঠে পায়চারি করতে হয়। ফলত মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। ভূতেরা ভীতুদের দেখা দিতে পারে, কিন্তু অমনোযোগী সাক্ষাতপ্রার্থীকে অনুগ্রহ করে না।
একদিন সত্যিই কাঁধে একটা স্পর্শ লাগল। অনন্যা আঁতকে ধড়ফড়িয়ে ওঠায় নরম লম্বাটে বস্তুটা ঘাড়ে চকচক খচখচ শব্দে ঘুরে ফিরে সরসর করে নাইটির ভেতর দিয়ে গা বেয়ে কিছুটা নেমে লাফ মারতে গিয়ে জামার ঘেরে আটকে গেল। “আঁ ---উ---ই...”
সিঁড়ি দিয়ে যে পড়ে যায়নি অনেক ভাগ্যি। রাত বারোটায় পেত্নীর চিৎকার আর ধুপধাপ শব্দের উৎস খুঁজতে কিছু মেয়ে বেরিয়ে এসে আর বেশির ভাগ ঘরের ভেতর থেকে বিকট চেঁচামেচি শুরু করল। চারপাশ থেকে যুগপৎ শাসন ও জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে অনন্যা বলল, “ছাদে ভূত নেই, সিঁড়ির দরজায় একটা টিকটিকি বর্তমান। আঁ ---”


  বিজয়া প্রণাম
---------------------
শ্যামাপদ মালাকার

গ্রামের দিকে বিজয়ার বিকেলই বেশীর ভাগ পরব লাগে। তাই
মা' ঐ রুম হতে হাক দিয়ে আমায় বলল,-"খোকা তুই মণ্ডপে যাবি না?" --আমিও মায়ের প্রশ্নানুসারে উত্তর দিয়ে বসলাম,-আজ-কাল দুগ্গা দেখতে মণ্ডপে যেতে হয় না মা'-পথের ধারে দাঁড়ালে অনেক দুগ্গা দেখতে পাই, --তারমধ্যে পুরানোও দু'একটি পাই,-আমার কথা শেষ হতে না হতেই,-মা' রেগে বলে উঠল,--"এতো ইয়ারকি এতো বাড় ভাল নয় খোকা! তুই উচ্ছন্নে গেছিস্ তুই একেবারে জাহান্নামে গেছিস্।"

আমি চিরকালই একটু নাস্তিক, তাই ভাবলাম আজের দিনে মা'কে কাঁদিয়ে আর লাভ নেই, তার বিশ্বাস ও মর্য্যাদা রাখার প্রয়াসে বিজয়ার শেষ প্রণামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম,-অশুভনাসিনীর খোঁজে।

সেখানে পৌছে শুনলাম,-উলু আর শঙ্খধ্বনির মহা সমারোহে,-এই মাত্র "মা"কে নিয়ে বেরিয়ে গেল,--সংঘের ছেলেরা।

আর কোলাহল নেই, নেই উড়া ধুলির নিবিড় গন্ধ। অপূর্ণ ভাঙ্গা বিধুর দেহ হতে নিংড়ে নিয়ে গেল ওরা,- মহাবিজয়ার শুভ ক্ষণ।
সদর দ্বারে ভাঙ্গা বাতির ম্লান রশ্মিটা বিসর্জনের শেষ ভাষণের দীর্ঘ পূর্ণচ্ছেদ দিল বলে! নিভে যাওয়া সমস্ত উৎসাহ-উদ্দম অভাগার দখলেই রইল।

তবু মাথা নোয়াতে হবে বিশ্বের দ্বারে, শূন্যবেদীর সমুখে দাঁড়িয়ে অঞ্জলীবদ্ধ করে প্রণাম করতে যেই যাব,--হঠাৎ এক বিভীষিকাময় কণ্ঠে কে যেন ডেকে উঠল,--"খোকা!"। মুহূর্তে চোখ খুলে দেখি, --বিদ্ধস্ত মণ্ডপের পিছে কি একটা নড়ে! আর বিলম্ব না করে,-গিয়ে দেখলাম,-এক বৃদ্ধা।
অপরিচতা সম্পূর্ণ, দৃষ্টি-শক্তির প্রখরতা তেমন আর নেই বললে চলে। নেই উঠে দাঁড়াবার কোনো সামর্থ্য,--পরনে মলিন ফাটাশাড়ীর গিটে,--পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাস যেন ঐখানে পরাজিত।

উপেক্ষা করতে পারলাম না, তাছাড়া ভুবন ভুলানো ডাক,-"খোঁকা।"
জিজ্ঞাসা করলাম,-- কিছু বলছো?-- সে বলল,--"হ্যাঁ বাবা, সকাল হতে কিছু খায়নি।"
জিজ্ঞাসা করে আরো জানলাম,-সকালের দিকে মায়ের সম্মুখ ভাগেয় ছিল, কিন্তু মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার্থে কমিটির ক'জন ছেলে, মণ্ডপের পিছনে রেখে দিয়ে গেছে।

রাত গভীর হতে লাগল, তাই আর বিলম্ব না করে দশটি টাকার একটি নোট হাতে ধরিয়ে,--তার দীর্ঘপথচলা ধূম্রধুসর ব্যথাভরা কোমল শ্রান্ত দুই চরণে যখন একটি প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালাম--দেখি অসূরনাশিনীর চোখে জল।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে মনের অজান্তে ভেতর হতে শুধু বেরিয়ে এল,--কে বলে মায়ের বিসর্জন হয়ে গেছে! জগজ্জননী
মণ্ডপের পিছনে রয়ে গেছে।


হরি মাস্টার:-
শুভদীপ মহাপাত্র 
বাড়ির দরজায় সাইকেলটা কোনো মতে ঠেসিয়ে ক্লান্ত,বিধ্বস্ত অবস্থায় নিজের ছোট্ট দশ বাই আট এর রুমে ঢুকলো হরি মাস্টার।হরি কোনো স্কুল বা কলেজের মাস্টার না,একজন ছাপোষা সাধারণ টিউশন মাস্টার,তাও লোকে তাকে হরি মাস্টার বলেই ডাকে।হয়তো কিছুটা বিদ্রুপের ছলেই।পুরো ব্যাপারটা খুলেই বলি,হরি একজন তিরিশ বছর বয়সি শিক্ষিত বেকার।হায়ার সেকেন্ডারি,গ্র্যাজুয়েশন,এমএসসি সবেতেই ভালো রেজাল্ট আছে তার,নেই কেবল একটা চাকরি।ছোট্ট একটি একতলা বাড়িতে মা আর তার বাস।তাদের সংসার চলে তার দু চারটে টিউশনের জোরে।আজ অনেক আশা করে চাকরির ইন্টারভিউর রেজাল্ট দেখতে গিয়ে ফিরতে হলো সেই হতাশ হয়ে ।এক মাস আগে হওয়া ইন্টারভিউটা সে খুব ভালো ভাবেই দিয়েছিলো ,তবে এখন চাকরি তো আর ইন্টারভিউর জোরে হয় না।হয় মামা-কাকা,আর ওপরমহলের জোরে,যা তার নেই।তাই এবারও হলো না।বাড়ি ফিরেই নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে পড়লো সে। আর তার মাথায় ভিড় করতে থাকলো পুরুনো দিনের সবকথা, সেই মাধ্যমিকে লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করে সায়েন্সে পড়ে, স্টার মার্কস নিয়ে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার কথা,তারপর ভালো নম্বর পেয়ে অঙ্কে অনার্স করা,অনেক অর্থাভাব নিয়েও নিজে টিউশন পড়িয়ে এমএসসি করা। পুরোনো শিক্ষকদের কথা,বিশেষ করে অঙ্ক শিক্ষক মেঘনাদ বাবুর কথা,কতো আস্থা ছিলো তাদের হরির ওপর।মনে পড়ে যায় পুরানো বন্ধুদের কথা তাদের অনেকই আজ বিদেশে সেটলড,বাকিদের অনেকেই বড়ো বড়ো পোস্ট এ।এমনকি এখন তো তার অনেক ছাত্রেরও চাকরির খবর আসে,তাতে তার আনন্দ,গর্বই হয়,কিন্তু মনের মধ্যে একটা চাপা গুমোট জমে যায় যখন শোনে কোনো অভদ্র,পড়াশোনায় একদম শূন্য ছাত্রও শুধু টাকার জোরে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত্ই ঘুমে তার চোখ জড়িয়ে এলো,আস্তে আস্তে স্বপ্নলোকে প্রবেশ করতে থাকলো হরি মাস্টার। 

মোবাইলের alarm এর বিকট আওয়াজে হঠাত্ ঘুমটা ভেঙে গেলো হরির।ছটা বেজে গেছে,টিউশন পড়াতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে,পুজোর আগে ক্লাস নাইনের আজই শেষ টিউশন।পুজোর পর পরই আবার ইউনিট টেস্ট,আজ ওদের সাজেশনস দিতেই হবে।স্থানীয় সরকারি স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক আগের বছর থেকে টিউশন শুরু করায় হরির ছাত্রসংখ্যা দিন দিন কমছে ,কি এক অদৃশ্য জাদুবলে তার সাজেশন এর একটি প্রশ্নও ফ্লপ হয় না!এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বেশ বিরক্ত হয়েই উঠে পড়লো সে।হাতমুখ ধুয়েই, মাকে বলে সেই পুরোনো সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো হরি মাস্টার।তার টিউশন রুম বাড়ি থেকে মাইল দুয়েক দূরের স্থানীয় বাজারে।সাইকেলে মেরে কেটে আট,দশ মিনিট লাগে।তবে আজ সাইকেল চালাতে চালাতেও হাজার রকম ভাবনায় ডুবে যাওয়ায় বোধহয় একটু বেশিই সময় লাগলো।সেখানে পৌঁছেই দেখলো সাকুল্যে যে বারোজন ছাত্র পড়ে তারও পাঁচজন absent,পুজোর হাওয়া লেগেছে আর কি!এতে তার মেজাজ আরও বিগড়ে গেল,সাজেশনস দিয়েই টিউশন ছুটি দিয়ে দিলো হরি,একেবারে দশ দিনের লম্বা পুজোর ছুটি।এরপর সেই ফাঁকা রুমে আবার ভাবনার দুনিয়ায় ডুবে যেতে থাকলো সে।বাবার কথা, মারা যাওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে হাসপাতালে বাবার সেই আবেগঘন চাউনির কথা,কলেজ প্রেমিকা
রাধার তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা,মায়েরও ইদানিং খুব শরীর খারাপ হচ্ছে মাঝেমাঝেই,মা যখন থাকবে না তখন কতোটা একা হয়ে যাবে সে, এসব ভাবতে ভাবতেই হরির গাল বেয়ে জলের ধারা নামতে শুরু করল।

আচমকা রুমের আলোটা নিভে যাওয়ায় আবার সম্বিত ফিরে পায় হরি।লোডশেডিং হয়েছে, এদিকে আটটা বেজে গেছে,সে তাড়াতাড়ি রুমের চাবি বন্ধ করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কৃষ্ণদার চা দোকানে যাওয়ার জন্য।প্রতিদিনই টিউশন ছুটির পর কৃষ্ণদার চা দোকানে কিছুটা আড্ডা দেয় সে,আরও অনেক টিউশন মাস্টাররাও আসে,এই সময়টা কৃষ্ণদার দোকানটা গমগম করে।কেটলির ফুটন্ত চা আর সিগারেটের ধোঁয়া পরিবেশটাকে জাঁকিয়ে তোলে।আর চলতে থাকে সেই চিরপরিচিত আলোচনা গতবারের batch টা ভালো ছিলো না কি এবারের টা,গ্রুপ ডি র প্রশ্ন টা বেশ standard ছিলো।তবে আজ মুড ভালো না থাকায় হরি একদম কোনার ফাঁকা বেঞটায় গিয়ে বসলো।আজ কারোর সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করলো না হরির।সেই একই একঘেয়ে গল্প,হয়তো এই বাংলার হাজার হাজার কৃষ্ণদার দোকানে লাখ লাখ মাস্টারের আড্ডা চলছে এই সময়,কিন্তু গপপো ওই এক!এসব ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপে চুমুক দিলো হরি।চুমুক দিয়েই মুড খানিকটা চাঙ্গা হলো ওর,নাহ্ এলাচ দিয়ে চা টা বেড়ে বানিয়েছে কৃষ্ণ দা,যে কারোর মুড ভালো করতে পারে এই চা।ভালো মেজাজে ভালো চিন্তা আসতে বাধ্য,হরিরও মনে পড়লো কাল ষষ্ঠী।মাকে গতবছর পুজোর পর একটাও শাড়ি কিনে দিতে পারেনি সে।আজ দুজন ছাত্র বেতন দিয়েছে,তাই হরি ঠিক করে ফেললো আজ মায়ের জন্য শাড়ি নিয়ে ই বাড়ি ফিরবে।এই ভেবে চায়ের কাপে শেষ চুমুকটি দিয়ে উঠে পড়লো হরি।কাউন্টার একদম ফাঁকা থাকায়,কৃষ্ণদাকে তাড়াতাড়ি করে চায়ের দাম মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো সে।বাইরে বেরিয়ে সাইকেল টা নিতে গিয়েই হরির চোখ পড়লো কৃষ্ণদার চা দোকানের সামনের মদ ভাটির দিকে।সেখানে একটি সাদা মারুতি গাড়ি এসে থেমছে,আর গাড়ি থেকে নামছে চারজন কমবয়সী ছেলে।তাদের মধ্যে একজনকে হরি চেনে,স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান নারান মন্ডলের ছোটো ছেলে সুভাষ।বাকিরা বোধহয় ওর বন্ধু,সুভাষ এখনো স্কুলে পড়ে,তাতেই এলাকায় তার নামে কত কি শোনা যায়!সত্যি প্রধানের আস্কারা তে দিন দিন দাপট বাড়ছে ওর,অথচ প্রধানের বড় ছেলে রঞ্জিত আজ এক নামকরা কলেজের প্রফেসর,ঠিক উল্টো বাপ আর ছোটো ভাই এর থেকে।হরির জন্যও কিছু ব্যবস্থা করবে কথা দিয়েছে রঞ্জিত।এসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাইকেলে চড়ে বসলো হরি।

হরির সাইকেল থামলো চৌমাথার সামনে শিবানী বস্ত্র কুটিরে।দোকানটা এই কয়েক বছর হলো খুলেছে,দোতলা বেশ বড়ো দোকান।তবে এই কয়েক বছরে এলাকায় বেশ নাম হয়ে গেছে।এই দোকানে আসার অবশ্য আরো একটা কারন আছে হরির,দোকানের মালিক অবনী বাবুর ছেলে নিমাই হরির ছাত্র,অবনীবাবু অমায়িক ভদ্রলোক,হরিকে বেশ খাতির টাতির করেন।আর এলাকার সবচেয়ে পুরানো শাড়ির দোকান,আদি বস্ত্র বিপণনীতে বেশ কিছু টাকা ধারও আছে হরির,তাই এখন আর ওদিকে যায় না সে।হরিকে ঢুকতে দেখেই অবনীবাবু ওর কুশলাদি জানতে চাইলেন।তারপরই ছেলের পড়াশোনার মতিগতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে,এ নিয়ে হাল্কা অভিযোগও করলেন।হরি হালকা করে মার্কামারা উওর দিয়ে সে সব উতরে জানালো তার আসার কারন।সে মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছে শুনেই অবনীবাবু জোরে ডাক দিলেন এক কর্মচারীর দিকে।কর্মচারী এসে হরিকে নিয়ে ওপর তলায় চলে গেলো।এই কর্মচারীটি বোধহয় নতুন এসেছ, হরি কিছু বলার আগেই সে অনেকগুলো রঙিন দামি দামি শাড়ি নিয়ে এসে তার সামনে হাজির করলো।সারা দিনের ধকলে হরি এমনিতেই খুব বিরক্ত ছিলো,শেষ অবধি সে বেশ অসহিষ্ণু গলায় বললো,"দাদা রঙিন শাড়ি না,সাদা থান,লাল পাড় ওরকম দেখান।"এই শুনে সে ধীরে ধীরে তিন চারটে শাড়ি বের করে আনলো বেশ হতাশ ভাবে।হরি ওর দিকে মন না দিয়ে একটা শাড়ি পছন্দ করে তার দাম জানতে চাইলো।সে এবার বেশ হতাশার সাথেই বললো,"দাম সাতশো চল্লিশ মতো,তবে ডিসকাউন্ট নিয়ে আপনার ছশো ষাট পড়বে।" সেই শাড়িটিই পছন্দ করে হরি নেমে এলো কাউন্টারে অবনীবাবুর কাছে।অবনীবাবু অমায়িক হাসি হেসে হরির কাছ থেকে টাকা নিতে নিতে আরো একবার জানতে চাইলেন,ছেলের ব্যাপারে।ঠিক তখনই হঠাত্ একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় হরি স্তব্ধ হয়ে গেলো।হরির মনে পড়ে গেলো সুভাষ আর ওর বন্ধুদের সাথে নিমাইও তো ভাটিতে ঢুকেছিল।অথচ হরির তখন যে কেনো মনে পড়েনি নিমাই এর নাম,এটা ভেবেই সে বিস্মিত হয়ে গেলো।নিমাই তিন বছর যাবত্ তার কাছে টিউশন পড়ছে,সেই ক্লাস সেভেন থেকে এবার মাধ্যমিক এর টেস্ট অবধি,এই দুদিন আগেই ওদের পুজোর ছুটি দিয়েছে সে,অথচ নিমাই কে বেমালুম চিনতেই পারলো না তখন!সত্যি,দিনদিন স্মৃতিটাও পাতলা হয়ে আসছে।এদিকে অবনীবাবু শাড়ির পাকেট ধরে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন হরির দিকে,তিনি এবার একটু গলা খাঁকরালেন।সম্বিত ফিরে পেয়ে হরি শাড়িটা নিয়ে,তাকে দায়সারা গোছের একটা উওর দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।ঘড়িটা একবার দেখে নিলো হরি,সাড়ে নটা বাজে,এবার বাড়ি ফেরা দরকার।

সাইকেলে যেতে যেতে বারবার আনমনা হয়ে পড়ছিলো হরি,এলাকাটা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।খোলামেলা ভাবে নেশা,অসভ্যতা,জুয়া আরো কত কিই না চলছে এখন চারপাশে।নিমাই ছেলেটাই তো পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলো,অথচ এত কম বয়সেই এরা বখে যাচ্ছে।এমন সময় আচমকাই একটা গাড়ির তীব্র আলো পড়লো হরির চোখে,খুব জোরে হর্নের আওয়াজ,আর সাথে সাথে ই ব্রেক কষার শব্দ।হরি সরে যাওয়ার চেষ্টা করলো, যদিও সে পিচ থেকে নেমেই সাইকেল চালাচ্ছিলো,কিন্তু সাদা মারুতিটা গতি কমাতে না পেরে সোজা ধাক্কা মারলো ওর সাইকেলে।ঠিক সেই মুহূর্তেই সাইকেল ছিটকে পড়লো একপাশে,আর খুব জোরে পিচ রাস্তায় আছড়ে পড়লো হরির দেহটা।মারুতিটা কিছুটা দূরে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে,আবার ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলো।এরপর কয়েক সেকেন্ডে সব চুপচাপ,তারপর শুরু হয়ে গেলো মানুষের
কোলাহল,চিত্কার,আশেপাশের দোকান থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকলো।কাছে এসে তারা দেখলো রাস্তার একপাশে পড়ে আছে একটা সাইকেল,একটু দূরে শিবানী বস্ত্র কুটির এর সেই শাড়ির পাকেট,রাস্তাজুড়ে রক্ত,আর হরি মাস্টারের নিথর দেহ।ঠিক এইসময় হঠাত ভিড়ের মধ্যে থেকে কে যেনো চেঁচিয়ে উঠলো,"প্রধানের ছেইলাটা মাস্টার কে খুন কইরলো,কদ্দিন আমরা পইড়ে পইড়ে মাইর খাবো।আজ শালা পোধানের একদিন কি হামাদের একদিন!!"(সমাপ্ত)।


--------------রক্তের টান গভীর-----------
বিশ্বজীৎ ইষ্টবেঙ্গলিয়ান ভৌমিক


বছরের শেষ রাত তাই অনল আর দিয়া সকালেই প্ল্যান করেছিলো অন্যান্য বারের মতো এইবারটা আর ঘরে বসে কাটাবে না। এবার ওরা সন্ধ্যা হতেই পথে মিশে যাবে। সবার সাথে ভাগ করে নেবে শীতল রাতের উষ্ণতা।

ওহ্...! আলাপ করানোই হলো না! অনল আর দিয়া হলো এই গল্পের দুই চরিত্র। অনল রায় একটা মাল্টিন্যাশানাল কম্পানীর পদস্থ কর্মি। আর দিয়া হলো একজন স্কুল শিক্ষিকা। বছর সাতেক হলো ওদের বিয়ে হয়েছে। আলাপ অবশ্য আরোও তিনবছর আগের। কোন সন্তানাদি নেই ওদের।

যাই হোক, প্ল্যান মাফিক ওরা বিকেল হতেই বেড়িয়ে পড়েছিলো কোলকাতার উদ্দেশ্যে। দিয়া ঝলমলে নীল চুড়িদারে শারদীয়া প্রজাপতির মতো লাগছিলো।

মুচকি হেসে অনল বললো,"ও ম্যাডাম, বলি আজ কি কোলকাতায় যানজটের জন্য আমায় সবাই প্যাঁদাবে নাকি?"
দিয়া ঠোঁটের কোন দিয়ে একটু মুচকি হেসে বললো "ধ্যাত্"।

ট্রেনে চেপে কোলকাতা যেতে যেতে গোটা রাস্তাটা অনল একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো দিয়ার দিকে। আজ যেন সেই দশ বছর আগের প্রথম দেখা দিয়ার কথা মনে পড়ছিলো অনলের। হাওড়া থেকে বাসে করে ধর্মতলা যেতে গিয়ে ওদের হালত খারাপ হয়ে গেলো।

দিয়া বিরক্ত হয়ে বললো," কি ভীড় বাপু এই শহরটায়! গোটা রাজ্যের মানুষ কি আজ কোলকাতার রাস্তায় নেমে পড়েছে নাকি? কি গো...! বাস তো আর এগোচ্ছেই না...!" 

অনল ঠাট্টা করে বললো," চলো দিয়া, আজ আমরাও পাগল হয়ে যাই। হেঁটে হেঁটেই সারারাত ঘুরবো।"

দিয়াও যেন এটাই চাইছিলো। সে আর কিছু না বলে বাস থেকে নেমে পড়তে লাগলো। অনলও তার পিছে পিছে নেমে পড়লো বাস থেকে।

"আরেহ্! তুমি কি সত্যিই হেঁটে হেঁটে বছরের শেষ দিনটা উদযাপন করবে নাকি?"

দিয়া আবদারের সুরে বললো,"হ্যা, তাই অনল। আমরা হেঁটে হেঁটেই ২০১৮ তে পৌঁছে যাবো !" 

অনল কিছু না বলে দিয়ার আঙুলগুলো চেপে ধরলো শক্ত করে। মধ্য কোলকাতার এই অংশটায় বছরের শেষ সপ্তাহটা সরগরম থাকে। লক্ষাধিক মানুষ আসে পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে।

“আজকে ঠান্ডাটা একটু বেশী, তাই না দিয়া?” অনল আরোও একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে হাঁটতে শুরু করলো। দিয়ারও যেন একটু শীত শীতই করছিলো। দুজনেই রাতের উষ্ণতা মেখে নিচ্ছিল।

“চলো কিছু খেয়ে নিই অনল। আমার খিদে পাচ্ছে।” দিয়া প্রায় জোর করেই ধর্মতলার একটা ফুডস্টোরে ঢুকে পড়লো। সেখানে ওরা দুজনে মটন বিরিয়ানি খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো। 

“দ্যাখো দিয়া, বছরের শেষ রাতটা কেমন মায়াবী হয়ে উঠেছে!” বলতে বলত অনল একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। খেয়ালই করলো না যে দিয়া পেছনে রয়ে গেছে। হুঁশ ফিরতে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে দিয়া নেই। অনল বেশ ঘাবড়ে গেলো! দিয়ার তো এরকম ভীড়ে এই প্রথমবার ঘুরতে বেরিয়েছে। অনল পাগলের মতো রাস্তার এদিক ওদিকে খুঁজতে লাগলো দিয়াকে।

"দিয়া... দিয়াআআআআ...!" অনলের চিৎকার যেন ফালাফালা করছিলো বছরের শেষ সন্ধ্যার আঁচলটাকে।কয়েক মুহূর্ত পরে অনল দেখলো খানিক দূরে রাস্তার মোড়ে যে ল্যাম্পপোস্টটা আছে দিয়া তার ঠিক পাশেই দাড়িয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে মন দিয়ে।

দিয়ার খেয়ালই ছিলো না যে অনলের থেকে অনেকটা পেছনে রয়ে গেছে সে। হঠাৎ অনলের হাতটা তার কাধে পড়তেই হুঁশ ফিরলো।

"আরে দিয়া, কি ব্যাপার বলোতো? তুমি কিছু না বলেই এখানে দাড়িয়ে পড়লে যে? হারিয়ে গেলে কি হতো বলোতো? আজ এত্তো ভীড় কলকাতায়!"

দিয়া তখনও খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো ল্যাম্পপোস্টটার গোড়ায়।

"আরে কি দেখছো সখী ওখানে? গোলাপী নোটের বান্ডিল খুঁজে পেলে নাকী?" ঠাট্টা করে বললো অনল।

দিয়া মুখটা ঘুরিয়ে বললো, "ফাজলামো কোর না অনল ! আচ্ছা, একটু ভালো করে দেখো না পোস্টের গোড়ায় একটা প্ল্যাস্টিকের পুঁটলীর মধ্যে কিছু একটা নড়ছে বলে মনে হচ্ছে যেন!"

এবার অনলও সিরিয়াস হয়ে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো হ্যা, দিয়া তো ঠিকই বলেছে। ল্যাম্পপোস্টের গোড়ায় একটা বড়ো কালো পুঁটলীর মধ্যে কিছু একটা নড়ছে বলে মনে হলো ওরও। হাঁটুর ওপর ঝুঁকে অনল আরোও ভালো করে দেখলো পুঁটলীর ভেতর থেকে কিছু একটা বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে মনে হয়।

"কোন কুকুর বা বিড়ালের ছোট বাচ্চা হবে মনে হয় দিয়া। কেউ হয়তো বিরক্ত হয়ে বাড়ির আপদ ভেবে এখানে ফেলে দিয়ে গেছে।" অনল সোজা হয়ে বললো।

"যাই হোক,মনে হয় এখনও বেঁচে আছে অনল! পুঁটলীর মুখটা খুলে দেবে?"

"বুঝতে পারছি না যে কাজটা ঠিক হবে কিনা দিয়া? যদি অন্য কিছু হয় তাহলে এই খুশীর সন্ধ্যায় বাজে ঝামেলায় পড়ে যাবো আমরা।"

"ওসব পরে ভেবে দেখা যাবে। আগে একটা প্রানকে তো বাঁচাই।" বলেই দিয়া বসে পড়ে সাবধানে পুঁটলীর মুখের গিঁটটা খুলতেই এক ঝটকায় সরে এলো।

"আরে...! কি হলো দিয়া? কি এমন আছে ওই পুঁটলীটার মধ্যে যে তুমি এমন রিএ্যাক্ট্ করলে?"

"তুমি একবার ঠিক করে দেখতো অনল! আমার চোখের ভুল নয় তো?" বলেই দিয়া ধপ্ করে রাস্তার ওপরেই বসে পড়লো।

তাড়াতাড়ি অনল নীচু হয়ে পুঁটলীটার কাছে যেতেই চমকে গেলো! একটা ছোট্ট বাচ্চা মুখ পিটপিট করে চেয়ে আছে। অনল দ্রুত প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটটা ছিড়তেই একটা ছোট্ট শরীর বেরিয়ে এলো। কিন্তু এ কি দৃশ্য দেখছে অনল আর দিয়া! একটা পুরনো গামছা দিয়ে ভালো করে পেচিয়ে রাখা একট  ফুটফুটে বাচ্চা!

সাবধানে অনল বাচ্চাটাকে দু'হাতের তালুতে তুলে নিলো। বাচ্চাটার অবস্থা দেখে অনলের খুব কষ্ট হলো। ডিসেম্বরের চরম শীতে গরম জামাকাপড় ছাড়া কুঁকড়ে যাচ্ছে।

"তুমি একটু ধরো তো ওকে দিয়া।" বলেই অনল বাচ্চাটাকে সাবধানে দিয়ার কোলে দিয়েই একছুটে রাস্তার পাশে একটা দোকানে ঢুকে পড়লো। 

এদিকে দিয়া তখন ওই শীতের রাতে ঘেমে নেয়ে একসা। জীবনে প্রথমবার এত্তো ছোট বাচ্চা তার কোলে। অনভ্যস্ত হাতেই ওকে বুকের কাছটায় জড়িয়ে রাখলো দিয়া।

একটু পরেই অনল এসে হাজির। তার হাতে তখন একটা প্যাকেট। দিয়ার কাছে এসেই অনল তাড়াতাড়ি একটা ছোট তোয়ালে বের করে বাচ্চাটার শরীর থেকে গামছাটা সন্তর্পনে খুলে আলতো করে তোয়ালেটা দিয়ে পরিষ্কার করে দিলো। তারপর আরেকটা নরম, বড়ো তোয়ালে বের করে তাতে বাচ্চাটাকে ভালো করে চোখ-নাক বাদ দিয়ে জড়িয়ে নিলো।

ততোক্ষনে ইঁতিউঁতি লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। একজন হোমড়া গোছের মানুষ বললো,"দাদা, কি কেস? বাচ্চাটা কার?"

অনল বললো আমাদের নয়। এই ল্যাম্পপোস্টের তলায় কুড়িয়ে পেলাম আমরা একটু আগেই। 

"তাই নাকি, তবে তো এটা পুলিশ কেস দাদা!" এক চ্যাংড়া যুবক মতামত দিয়ে দিলো। আরোও জনা দশ-বারোজন উৎসাহী মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে ততোক্ষনে।

৩১ শে ডিসেম্বরের রাত বলে শহরের এখানটায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকে। তেমনই একজন কোলকাতা পুলিশের অফিসার ইন্সপেক্টর সুদিন ব্যানার্জি। বুকের ব্যাচে লেখা নামটা  নজর এড়ালো না অনলের। 

অফিসার সব্বাইকে সরিয়ে দিয়ে অনল আর দিয়ার কাছে এলো। দিয়ার কোলে তোয়ালে জড়ানো বাচ্চাটাকে দেখে বললো," কি হয়েছে দাদা? ওনার কোলে ওই বাচ্চাটা ওরকম করে তোয়ালে প্যাঁচানো কেনো? এসব কি ব্যাপার?"

অনল ধীরে সুষ্থে পুরো ঘটনাটা বললো অফিসারকে। কিন্তু তার মুখের অভিব্যাক্তি খুব একটা ভরসাযোগ্য মনে হলো না অনলের।

ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি বললেন "দেখুন ব্যাপারটা সহজ নয়। আপনাদের দুজনকেই একবার থানায় যেতে হবে আমার সাথে, চলুন।"

তারপরেই ম্যানপ্যাকে কাকে যেন নির্দেশ দিলেন " জানবাজারের কাছে একটা আন আইডেন্টিফায়েড্ বাচ্চা রেসকিউড হয়েছে। এখুনি একটা গাড়ী পাঠান।"

একজোড়া উৎসাহী চোখ যে একটু দূরে দাড়িয়ে লাস্ট একঘন্টার পুরো ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে রইলো, সেটা কারোরই নজরে এলো না।

দিয়া বেশ ঘাবড়ে গেলো। অনল তবে এসবেরই আশঙ্কাতেই বারন করছিল তখন ওকে! পুলিশের জিপে করেই বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে ওরা থানায় গেলো। ওখানে পৌঁছেই দিয়াকে বাচ্চাটা সহ একটা ছোট ঘরে বসিয়ে অনলকে নিয়ে অফিসার ভেতরের ঘরে গেলো। 

দিয়া বাচ্চাটার দিকে চেয়ে রইলো। কি নিষ্পাপ মুখ!বেচারা কিছুই বুঝতে পারছে না।ওর তো কোন দোষ নেই। এতোক্ষনে বাচ্চাটাও বোধহয় দিয়ার শরীরের উত্তাপ পেয়ে বেশ আরাম বোধ করছিলো।এখন আস্তে আস্তে ছোট ছোট হাত-পাগুলো নাড়াতে লাগলো। দিয়াও পরম স্নেহে ওকে বুকের কাছে চেপে ধরলো।  

হঠাৎ করেই বাচ্চাটা 'ওঁয়া' 'ওঁয়া' করে চেচিয়ে উঠলো। দিয়া বেশ ঘাবড়ে গেলো। এরকম অভিজ্ঞতা তার আগে কখনও হয়নি। কি করবে বুঝতে না পেরে দিয়াও চিৎকার করে উঠলো,
"অনল...অনল? কই তুমি? দেখো বাচ্চাটা কেমন কাঁদছে গো...!" অনল একছুটে ভেতরের ঘর থেকে ছুটে 
এলো।

"জানো দিয়া, বাচ্চাটার মনে হয় খুব খিদে পেয়ে গেছে! কিন্তু কি খাওয়ানো যায় ওকে এখন বলোতো? "

"আমি কি বলি বলতো? তুমি কিছু একটা করো না অনল!" দিয়া করুন ভাবে তাকিয়ে রইলো।

অনলও কিছু ভেবে উঠতে পারলো না। এতোটুকু ছোট বাচ্চাকে তো মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কিছুই খাওয়ানো যায় না। কিন্তু দিয়া তো আর সেই কাজটা করতে পারবে না। এদিকে বাচ্চাটাও ক্ষিদের জ্বালায় ছটপট্ করছে। বড্ড অসহায় বোধ করছিলো অনল। অনলের মানিব্যাগে তখন হাজার পাচেক মতো টাকা রয়েছে। অথচ একটা ক্ষুধার্ত শিশুর সামান্য খিদেও মেটাতে পারছে না! এতোটা অসহায় নিজেকে কখনও লাগেনি অনলের।

থানার এক মহিলা পুলিশ কর্মি এগিয়ে এসে বললেন," আরে কেমন মা আপনি? বাচ্চাটা সেই তখন থেকে কাঁদছে। একটু বুকের দুধ দিন না!"

"আমি ওর মা নই..." মাথা নীচু করে করুন স্বরে বললো দিয়া। অনল লক্ষ্য করলো দিয়ার চোখের কোনটা যেন চিকচিক্ করছে।

এমন সময় ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি এসে হাজির হলেন। "শুনুন, আজকে রবিবার আর বছরের শেষ রাত। আপাতত বাচ্চাটাকে আপনারাই সাথে করে নিয়ে যান। কাল সকাল ১০ টার মধ্যে ওকে নিয়ে আপনারা থানায় চলে আসবেন। প্রয়োজনীয় সরকারী কাজগুলো করবো। এখন বাড়ি যান আপনারা।"

অনল আর দিয়া খুব ফাঁপড়ে পড়ে গেলো। এই দুধের শিশুটাকে নিয়ে তারা এখন কি করবে ভেবে উঠতে পারছিলো না। কিন্তু পুলিশ অফিসারের  নির্দেশও অমান্য করা যাবে না। তাহলে আরোও ঝামেলা হবে। ওরা একটু ঘাবড়েই গেলো।

"চলো দিয়া,আমরা বাড়ি ফিরে যাই।" অনল দিয়ার কাঁধে হাত রেখে বললো।

"সরি, অনল। আমি বুঝিনি যে এরকম হতে পারে।" দিয়া বাচ্চাটাকে বুকের কাছে জড়িয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এলো। 

কিন্তু বছরের এই শেষ রাতে একটা একরত্তি বাচ্চাকে নিয়ে কিভাবে বাড়ি ফিরবে তা ভেবে দিশেহারা হয়ে গেলো ওরা। একটা ট্যাক্সিও যদি পেত।

আসার সময় বাড়ির কাছে বন্ধুর দোকান থেকে একটা কাউ মিল্কের প্যাকেট নিয়ে এসেছিলো অনল। ঘরে এসে সেটাই অল্প করে জলে ফুটিয়ে চামচে করে খাইয়ে দিলো দিয়া। অনভ্যস্ত হাতে খাওয়াতে গিয়ে অবশ্য ল্যাজেগোবরে হয়ে গেছিলো ওরা।

সারাটা রাত দিয়ার বুকের মধ্যেই গুটিসুটি মেরে কাটিয়ে দিলো বাচ্চাটা। অনল বিছানায় ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। কী সুন্দর দৃশ্য!

ওরকম ভাবেই যে কখন চোখ লেগে গেছিলো অনলের খেয়ালই নেই। হঠাৎ কলিং বেলের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। কোনরকমে বিছানা থেকে নেমে দরজাটা খুলতেই এক অপরিচিত মহিলাকে দেখে চমকে গেলো অনল। এক অল্পবয়সি মেয়ে,২১-২২ বছর বয়স হবে বোধহয়।

"কাকে খুঁজছেন আপনি?"

"আজ্ঞে দাদাবাবু একটা কাজ খুঁজছি।"

"এতো সকালে কাজ খুঁজতে বেরিয়েছো! কিসের কাজ? কি নাম তোমার? থাকো কোথায়?"...

"বাবু আমার নাম বর্ষা। আমি চরপাড়ায় থাকি। লোকের বাড়িতে ঘরের কাজ করি। যদি আপনাদের কাছে কাজ দেন তবে বড়ো উপকার হয়।" কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদেই ফেললো মেয়েটা।

সাতসকালে কি ঝামেলায় পড়লো ভাবতে ভাবতে দিয়াকে ডাকতে লাগলো  অনল। "আরে সকালবেলায় তারস্বরে চেচাচ্ছে কেনো রে মানুষটা? ঘরে একটা কচি বাচ্চা আছে সেটা কি রাতের ঘুমে ভুলে গেলে নাকি?" বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে এলো দিয়া।

দরজার কাছে আসতেই অনল সবটা বলে দিয়াকে পরামর্শের সুরে বললো "তোমার তো এখন কিছুদিন একটা সবসময়ের  কাজের লোক লাগবেই দিয়া। বলি কি ওকে না হয় রেখেই নাও। অভাবী মনে হচ্ছে মেয়েটা।" বলে অনল চলে গেলো বাথরুমে।

"তোমার নাম কি গো? আগে কোথাও কাজ করতে, নাকি এই প্রথম?" বলতে বলতে  দিয়া মেয়েটাকে ডাইনিং এ নিয়ে এলো। 

"আজ্ঞে বৌদি আমার নাম বর্ষা। আমি আগেও কয়েক বাড়িতে কাজ করেছি। আমি রান্নাবান্নাও পারবো করতে। আমাকে কাজটা দাও না গো।" বলতে বলতে গলা নীচু হয়ে গেলো মেয়েটার।

"আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এক কাজ করো। বাথরুমের কাছে ফুলঝাড়ু, বালতি আর ন্যাতা আছে। আগে ঘর-বারান্দাটা ভালো করে ঝেড়ে মুছে ফেলতো দেখি।" বলে দিয়া বিছানায় বাচ্চাটার কাছে চলে গেলো।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে অনল দেখলো মেয়েটা বারান্দাটা মুছছে। অনল মনে মনে ভাবলো ভালোই হলো, দিয়ার সুবিধাই হবে। বাচ্চাটাকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারবে কয়েকটা দিন।

বেডরুমে এসে দিয়াকে দেখে বললো" বলি ও ম্যাডাম! আজ কি সকালের গরম চায়ের কাপটা পাবো, নাকি রাস্তায় যাবো?" 

"অনল প্লিজ, আজ তুমিই বরং দু'কাপ চা করো না। আমারও মাথাটা ধরেছে।"

"বৌদি আমি করবো চা?" মেয়েটা হাত ধুয়ে শাড়ির আঁচলে মুছতে মুছতে বললো। "বাচ্চাটার জন্যেও একটু দুধ গরম করে আনবো বৌদি?" বর্ষা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেখলো দিয়া। 

"তুমি পারবে করতে? অভ্যাস আছে? তাহলে করো। আর ওর জন্যেও একটু দুধ নিয়ে এসো অল্প গরম করে।" অনলকে রান্নাঘরে চা পাতা আর ফ্রিজ থেকে দুধটা বের করে দিতে বললো দিয়া।

"নাহঃ, মেয়েটা চা'টা ভালোই করেছে, বুঝলে দিয়া!" চায়ে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজটায় চোখ বোলাতে শুরু করলো অনল।

এমন সময় অনলের মোবাইলটা বেজে উঠলো। এতো সকালে আবার কে ফোন করলো ভাবতে ভাবতে অনলের মনে পড়লো আজ তো পয়লা জানুয়ারী! কেউ বোধহয় শুভেচ্ছা জানাতেই ফোন করেছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা একটা নাম্বার। রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভারী গলায় ভেসে এলো
 "গুড মর্নিং মিঃ রায়। আমি ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি বলছি। বাচ্চাটা ঠিক আছে তো? আজ কিন্তু ঠিক সকাল দশটায় আপনারা থানায় চলে আসবেন ওকে নিয়ে। কিছু সরকারী নিয়ম পালন করতে হবে কিন্তু।"

"গুড মর্নিং স্যার। হ্যা, মনে আছে আমার। ঠিক পৌঁছে যাবো আমরা সময় মতো।"

মোবাইলে আরও কয়েকটা জরুরী কথা বলেই দিয়াকে থানায় যাওয়ার জন্যে রেডী হয়ে নিতে বললো অনল। দিয়া বর্ষাকে বললো ভাত চাপিয়ে দিতে। সাথে কয়েকটা আলুও সেদ্ধ দিতে বললো।

স্নান সেরে খাওয়ার টেবিলে বসে অনল বললো "দিয়া,তুমিও খেতে বসো।"

"তুমি খেতে বসো। আমি বাচ্চাটাকে একটু দুধ খাইয়ে নিই। ওরও তো খিদে পেয়েছে নাকী!"

অনল ভাত খেতে খেতে দেখলো দিয়া একদিনেই মায়ের মতোই আগলে রাখছে বাচ্চাটাকে। ওর নিজের সন্তান হলেও তো এভাবেই যত্ন করতো। হোক না কুড়িয়ে পাওয়া পরের ধন। তবুও তো মায়েরই জাত।

অনল আর দিয়া বেরোবার আগে বর্ষাকে বললো আপাতত বাড়ি চলে যেতে। আবার বিকেলে এলেই হবে। দিয়া যাওয়ার আগে ওকে হাতে পঞ্চাশটা টাকা গুঁজে দিয়ে বললো 
"কিছু খেয়ে নিও তুমি। বিকেলে এসে বাকি কথা বলে বলে নেবো।"

ততোক্ষনে অনল বড়ো রাস্তার মুখে এসে একটা ট্যাক্সিও জোগাড় করে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি দিয়া আর বাচ্চাটাকে নিয়ে উঠে বসলো ট্যাক্সিতে। কয়েক জোড়া উৎসাহী চোখ অনল আর দিয়াকে মাপছিলো।

থানার কাছে এসে ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো ওরা। "ভেতরে আসতে পারি স্যার?"ইন্সপেক্টর ব্যানার্জী ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে বললো অনল।

"ও হ্যা, আসুন। আপনারা ঠিক সময়েই চলে এসেছেন, বসুন বসুন।" আড়চোখে দিয়ার কোলে বাচ্চাটাকে দেখে নিলো ব্যানার্জি। বেশ আছে পুঁচকেটা। একদম মায়ের কোলের মতোই নিরাপদ।

"চলুন মিঃ রায়। আমরা থানার জিপে করেই যাবো।" ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি জরুরী কয়েকটা ফাইল আর ওনার ডায়েরিটা নিয়ে এগিয়ে গেলো। পথে যেতে যেতে ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি ওদের কাছে জানতে চাইলেন যে সরকারী অনুমতি পেলে আপাতত ওরা বাচ্চাটাকে নিজের কাছে রাখতে চান কিনা।

পুলিশের জিপটা একটা বড়ো বিল্ডিং এর নীচে এসে থামলো। তারপর ওরা তিনজন সিঁড়ি বেয়ে দোতলার একটা পর্দা টাঙানো ঘরের সামনে এসে দাড়ালো। বাইরে নেমপ্লেটটা দেখলো অনল আর দিয়া।

"জাস্টিস উর্মিমালা সেন,
 সিটি শেসন জজ্-1"

ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি নক্ করে ঘরে ঢুকে গেলেন। অনল আর দিয়া বাইরেই দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন পরে 
ওদেরকেও ভেতরে ডেকে নেওয়া হলো।
ঘরে ঢুকে সামনের চেয়ারগুলোয় ওদেরকে বসতে বললেন ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি।

জাস্টিস সেন অনল আর দিয়ার পরিচয়পত্র গুলো দেখলেন। তারপরে ইন্সপেক্টর ব্যানার্জিকে ইশারায় বললেন বাচ্চাটা ন্যাপিটাকে একটু সরাতে। একবার উঁকি মেরে দেখলেন তিনি। তারপর অনল আর দিয়ার কাছে জানতে চাইলেন যে বাচ্চাটার প্রকৃত বাবা-মায়ের খোঁজ পাওয়া অব্দি ওরা ওকে নিজেদের কাছে রাখতে চান কিনা? অনল আর দিয়া তাতে সম্মতি জানাতেই জাস্টিস সেন খসখস্ করে কিছুক্ষন লিখে তারপর বললেন "আমি প্রভিশনাল ইন্টারিম ওর্ডার করে দিলাম। বাচ্চাটার আসল মা-বাবার সঠিক সনাক্তকরন না হওয়া পর্যন্ত আপনারাই ওর আইনি অভিভাবক থাকবেন। মাসে একবার থানায় এসে ইন্সপেক্টর ব্যানার্জির কাছে বাচ্চাটা সহ হাজিরা দিয়ে যাবেন।" তারপর ইন্সপেক্টর ব্যানার্জির দিকে তাকিয়ে নির্দেশ দিলেন," ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি, বাচ্চাটাকে একটা ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন কোন সরকারী হাসপাতাল থেকে।"

ওখানে সব সরকারী কাগজপত্র ঠিক মতো গুছিয়ে বেরোতে বেরোতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেলো। সেখান থেকে একটা হাসপাতালে গিয়ে বাচ্চাটাকে থানায় এসে জাস্টিস সেন এর ওর্ডারের একটা সার্টিফায়েড কপি অনলের হাতে দিয়ে ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি বললেন "আমার অভিজ্ঞতা বলছে এসব কেসে আসল বাবা-মা কখনও সামনে এসে ক্লেইম করে না লোকলজ্জার ভয়ে। কাজেই আপনারা নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে যান ওকে নিয়ে। একটা ভালো নাম রাখবেন। সকাল থেকে এতোক্ষন ধরে আপনার মিসেস আর বাচ্চাটার কেমিষ্ট্রিটা আমি বুঝে গেছি। পুলিশও কারোর বাবা বা স্বামী। তাই বাচ্চাটা আপনাদের কাছে ভালোই থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। আর হ্যা, আমার মোবাইল নাম্বারটা তো আপনার কাছে রইলোই। কোন প্রবলেম হলে আমায় ফোন করবেন। এ মাসে আর আসার দরকার নেই। সামনের মাসে একবার চলে আসবেন ওকে নিয়ে ঘুরতে।

ওখান থেকে ছাড়া পেয়েই অনল আর দিয়া একটা ট্যাক্সি করে ওদের বাড়ির কাছে আসতেই দেখলো একটা জটলা তৈরী হয়েছে ওখানে।

"কি ব্যাপার? কি হয়েছে এখানে?" অনল চেঁচিয়ে জানতে চাইলো। 

হঠাৎ জটলার মধ্যে থেকে বর্ষা বেরিয়ে এসে বললো "দেখুন না দাদা, দুজন ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা আপনারা বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট দশেক পরে এখানে এসে চিৎকার করে আপনাদের নামে কিসব আজেবাজে কথা বলছে!" 

জটলা থেকে একজন বছর তিরিশের মোটা মতো লোক বেরিয়ে এসে অনল আর দিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো "আপনারা কাল আমার সদ্যোজাত বাচ্চাকে চুরি করে নিয়ে এসেছেন। ফেরত দিন ওকে।"

"তাই নাকি? আপনাদের পরিচয়টা আগে শুনি। আর বাচ্চাটা যে আপনাদের সন্তান তার প্রমান আছে তো?" অনল বললো।

"আমি ওর বাবা এটা প্রমান করতে আমার কোন অসুবিধা হবে না বুঝলেন দাদা!" লোকটা ঠান্ডা গলায় বললো। ওর আত্মবিশ্বাস দেখে অনল চমকেই উঠলো।

এদিকে চিৎকার,চেঁচামেচিতে বাচ্চাটা হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলো জোরে জোরে। তা শুনে ভীড়ের মধ্যে থেকে বছর ২৫ এর এক মহিলা বেরিয়ে এসে হাত-পা ছুড়ে চেঁচাতে লাগলো "দিন আমার বাচ্চাকে আমার কোলে। দেখছেন না ও কাঁদছে"।  বলে প্রায় একপ্রকার জোর করে ছিনিয়েই নিলো বাচ্চাটাকে।

"আরে করছেন কি আপনি? ওইটুকু দুধের শিশুকে কেউ অমনভাবে টানে!" প্রায় আর্তনাদ করে উঠলো বর্ষা।

বাচ্চাটাকে কিছুক্ষন ধরে চুপ করাবার চেষ্টা করলো ওই মহিলাটি। কিন্তু, নাহঃ, কিছুতেই ওর কান্না থামে না। আরোও জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো বরং।

"কি হলো? ও না আপনার বাচ্চা?  তাহলে আপনার কোলে গিয়েও কাঁদছে কেনো। নিজের সন্তানকে শান্ত করতে পারছেন না! কেমন মা আপনি?" এবার চিৎকার করে উঠলো দিয়াও।

আমতা আমতা করে মহিলাটি বলতে লাগলো "আসলে জন্মের পর থেকেই আমায় তেমন একটা কাছে পায় নি তো, তাই ঠিক করে নিজের মাকে চিনতে পারছে না...এ হে হে...ধূত্তোর আবার শাড়িটাও ভিজিয়ে দিলো রে!"

"ওসব বাজে কথা রাখুন তো! দিন ওকে আমার কোলে।" বলে বর্ষা ছোঁওও মেরে ওই মহিলার কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে এক প্রকার ছুটেই চলে গেলো।

অনল বললো "দিয়া, আমি বরং ইন্সপেক্টর ব্যানার্জিকে ফোন করে ঘটনাটা একবার জানাই আর ওনাকে এখানে আসতে বলি।" 

"আরেহ্...! এর মধ্যে আবার পুলিশ এলো কোথা থেকে। আমাদের ব্যাপার, আমরাই বুঝে নেবো।" বলতে লাগলো ওই মধ্যবয়স্ক পুরুষটি।

"সে কি মশাই? আপনারা ওর বাবা-মা! তো নিজের বাচ্চাকে তো সঠিক প্রমান দিয়ে তবেই তো নিয়ে যাবেন! আর প্রমানগুলো ঠিকঠাক কিনা সেটাতো পুলিশই বলতে পারবে। দাড়ান দাড়ান, আমি ইন্সপেক্টর ব্যানার্জিকে ডাকি।" বলে অনল ব্যস্ত হয়ে পড়লো মোবাইলে। 

পাড়ার লোকজনকে ততোক্ষনে দিয়া কাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটা বললো। শুনে সবাইই মোটামুটি বিশ্বাস করলো ওদের। এমনিতেই পাড়ায় অনল আর দিয়ার ব্যবহারে কারোরই সমস্যা ছিলো না। বাচ্চাটা বাবা-মা বলে দাবী করা ওই দুজনে ততোক্ষনে পুলিশের নাম শুনে যেন একটু ঘাবড়ে গেছে মনে হলো। পুরুষ মানুষটি তড়পাতে লাগলো 
"ঠিকাছে ঠিকাছে! ওসব পুলিশের ভয় আমায় দেখাবেন না বুঝলেন। আমরা এখন চলে যাচ্ছি। তবে বিকেলে সব দলবল নিয়ে আবার আসবো আমাদের বাচ্চাকে নিয়ে যেতে, তখন দেখবো কে আসে আটকাতে! বাচ্চা না ফেরত পেলে হুজ্জুতি শুরু হয়ে যাবে, এই বলে দিলাম।"

ততোক্ষনে এদিকে অনলের সাথে ইন্সপেক্টর ব্যানার্জির কথা হয়ে গেছে। পুরো ঘটনাটা শুনে ওই দুজনকে আটকে রাখতে বললেন। কিন্তু ওরা পালিয়েছে শুনে টেনশন করতে বারন করে অনলকে কিছু পরামর্শ দিলেন। সব শুনে অনল বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে পাড়ার লোকেদের বিদায় দিয়ে দিয়াকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।

ঘরে ঢুকেই ওদের বাচ্চাটার কথা মনে পড়ে গেলো। "বর্ষা! ও বর্ষা? কই রে?" বলে বেডরুমে ঢুকে যে দৃশ্য দেখলো দিয়া তাতে ওর পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠলো!                             

"অনল! একবার এদিকে এসো। দেখো এঘরে।" বলে হাঁক পারলো দিয়া।
অনল বাথরুম থেকে এক ছুটে বেডরুমে ঢুকে থঁ হয়ে গেলো। ঘরের এককোনে বসে আছে বর্ষা। ওর বুকের কাছে শাড়ীর তলায় বাচ্চাটা পরম আনন্দে শুয়ে পা ছুড়ছে আর বর্ষার দুচোখ বেয়ে পৌষেই শ্রাবণধারা নেমেছে! ওই দৃশ্য দেখে অনল আর দিয়ার বাচ্চাটার আসল পরিচয়টা আন্দাজ করতে পারছিলো।

 অনল একটু লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। দিয়া আস্তে আস্তে এসে বর্ষার পাশে বসলো। বর্ষার তখন কোন হুঁশই নেই! কোন এক পরম তৃপ্তিতে তার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চোখের জল থামছেই না আর।
দিয়া বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সম্বিৎ ফিরে এলো ওর। চমকে গিয়ে হুড়মুড় করে ওঠার চেষ্টা করতেই দিয়া জোর করে বসিয়ে দিলো বর্ষাকে।
"যেটা করছো সেটা আগে করে নেও। তারপর কথা বলবো।" দিয়া অনলের কাছে চলে গেলো।

কিছুক্ষন পরে বর্ষা বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
"বৌদি আপনার ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে, ওকে কি বিছানায় শুইয়ে দেবো?"

দিয়া ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতেই বর্ষা আবার ভেতরে চলে গেলো।

বাচ্চাটাকে বিছানায় ভালো করে শুইয়ে বাইরে আসতেই অনল আর দিয়া চেপে ধরলো বর্ষাকে," এবার তোমার আসল পরিচয়টা বলো দেখি বাপু!" মুখটা পাংশুটে হয়ে গেলো। 

"আমার আসল নাম...নমিতা নষ্কর। বাড়ি তালতলায়।" এইটুকু বলে চুপ করে রইলো মেয়েটা।

"আর বাচ্চাটা?" গম্ভীর গলায় বললো অনল।

এবার চুপ করে রইলো নমিতা। দিয়া লক্ষ্য করলো মেয়েটার বুকের কাছে শাড়ীটা ভিজে গেছে।

"ওকে আমার মা'মরা বোনটা ওকে তিরিশ তারিখ রাতে জন্ম দিয়েছে। কিন্তু ওদের বিয়ে হয়নি। ওর বাবা একটা বাজে লোক। আমি বোনকে অনেকবার সাবধান করেছিলাম। কিন্তু শোনেনি আমার কথা। লোকটা চলে গেছিলো সেই রাতেই। 

"পরেরদিন সূর্য্য ডুবতেই ওই গলিটার কোনে একটা ল্যাম্পপোস্টের নীচে রেখে দূরে দাড়িয়ে কাঁদছিলাম। আমি ওর হতভাগী মাসি!"  বলতে বলতে মাটির দিকে চেয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো নমিতা। 

অতো বড়ো ডাইনিংটা যেন নমিতার কান্নার শব্দে কাঁচের মতো ঝনঝন করে ভেঙে পড়তে লাগলো।

"ওর বাবার নাম কি?  কি পরিচয় তার?" অনল বললো। "ভয় নেই কোন তোমার নমিতা। আমরা আছিতো।"

"আর তুমি একথা কেনো বললে যে ওর বাবা চলে গেছিলো?" এবার দিয়া বলে উঠলো।

প্রশ্নটা শুনে নমিতা ভয়ে কুঁকড়ে গেলো মনে হলো অনলের। 

"কে ওর বাবা, বলো নমিতা?"

"আমি ওই শয়তানটার নাম মুখে নেবো না!" কথাটা বলতে বলতে চোখমুখ রাগে আর ঘৃণায়  লাল  হয়ে উঠলো নমিতার।"ওই অসভ্য মানুষটা আমার বোনটার জীবনটা শেষ করে দিলো। স্বামী-সংসারের লোভ দেখিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিয়ে গেলো একদিন। তারপরে ওর পেটে বাচ্চাটা আসার পর কত্তোবার বলেছিলাম বিয়ে করতে। আজ-কাল করে খালি পিছিয়েই গেলো। তারপর সেদিন বিকেল থেকেই বোনটার অসহ্য প্রসববেদনা উঠলো। আমি ভয় পেয়ে সামনের পাড়ার রমা মাসিকে ডেকে  নিয়ে এলাম। উনি নার্সের কাজ করতেন। মাসিকে সবটা বলার পর সেই রাতে বাড়িতেই মাসি বোনের নাড়ী কেটে ওকে আমার কোলে দেয়। বোনের তখন হুঁশ ছিলো না।জানোয়ারটা খবর পেয়ে অনেক রাতে আসে। পরের দিন  সকালে যখন আমি আমার দেড় বছরের খোকাকে নিয়ে বোন আর ওর ছেলের পাশে চোখ বুজে শুয়ে আছি তখন শুনলাম জানোয়ারটা নিজের সন্তানকে বেচে দেওয়ার মতলব করছে একটা ভদ্রমহিলার সাথে! ওদের আলোচনা শুনেই আমার বোনটা ক্ষেপে উঠলো। নিজের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। ওই লোকটা জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। বাধা দেওয়ায় আমার সামনেই আমার সদ্য নাড়ীকাটা বোনটাকে আর আমাকে মারধর করে বাচ্চাটাকে নিয়ে পালাতে চাইলো ! আমি বাধ্য হয়ে আঁশবটি নিয়ে ধাওয়া করতেই পালিয়ে যায় বদমাশটা। লোকলজ্জার ভয়ে দিশেহারা হয়ে আর মার খেয়ে কুঁকড়ে যায় আমার বোন।সেদিন দুপুরেই প্রচুর রক্তপাত হয়ে..." কথাটা শেষ করতে পারলো না আর মেয়েটা। অঝোরে কাঁদতে লাগলো।"

অনল কিছুক্ষন পরে বললো "তারপর?"

নমিতা চোখ মুছে বলতে লাগলো "আমি সন্ধ্যা হতেই সবার চোখ এড়িয়ে কোনরকমে পালিয়ে আসি। তারপরে ঘটনাটা তো আপনারা সব জানেন।" 

"কিন্তু তুমি আমাদের বাড়ীর ঠিকানা পেলে কি করে?" দিয়া বললো।

"কাল সন্ধ্যায় যখন পুলিশবাবু তোমাদেরকে নিয়ে জিপে উঠলো, আমিও তখন একটা অটো ধরে চলে এলাম তোমাদের পেছন পেছন। সারারাত থানার গেটের কাছেই ছিলাম। সকাল হতেই কনস্টেবল দিদি যখন বেরোলেন তখন আমি ওনার পায়ে লুটিয়ে পরে বললাম তোমাদের ঠিকানাটা দিতে যাতে একটিবার আমার বোনের ছেলেটাকে চোখের দেখা দেখতে পারি। দিদি রাজী হচ্ছিলেন না সহজে। অনেক কাকুতি মিনতি করার পরে বড়ো পুলিশবাবুর ডায়েরী থেকে লুকিয়ে তোমাদের ঠিকানাটা দেয়। তারপর সোজা একটা গাড়ী করে তোমাদের বাড়ি চলে এলাম। ভেবেছিলাম একবার ওকে দেখেই চলে যাবো। কিন্তু আমার মা'মরা বোনটার মা'হারা বাচ্চাটাকে দেখে আর নিজেকে সামালতে পারলাম না গো! রক্তের টান বড়ো গভীর যে! সহজে মোছে না দাদাবাবু।"

"কিন্তু আজ সকালে যে লোকটা এসেছিলো, সে কে?" 

"ওটাই সেই শয়তানটা দাদা" বলতে বলতে হিংস্র বাঘিনীর মতোই ফুঁসতে লাগলো নমিতা। "আরেকবার যদি আসে বাচ্চাটাকে নিতে তাহলে ওকে আমি সত্যিই খুন করে ফেলবো দেখবেন।"

অনল আর দিয়া কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। কি বলবে সেটাই ভেবে উঠতে পারছিলো না।

"আমাকে আর বোনের ছেলেটাকে এখানে থাকতে দেবেন আপনারা?" করুন মুখে বললো নমিতা। 

"না হলে ওকে কেড়ে নেবে ওরা! আমার আর এই অসহায় বাচ্চাটার আর কেউই নেই যে।" নমিতার আকুতিটা অনল আর দিয়ার আত্মাকে চুরমার করছিলো।

কিছুক্ষন পরে অনল বললো "তোমাদের কোন ভয় নেই। আমরা থাকতে ওরা কিছু করতে পারবে না। আমি ইন্সপেক্টর ব্যানার্জিকে পুরো ঘটনাটা জানিয়ে ওই শয়তানটাকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করিয়ে দেবো।"

সেদিন বিকেলে নমিতার বোনের হত্যাকারীটা আবার আসতেই ইন্সপেক্টর ব্যানার্জি আর তার দলবল ওকে ধরে নিয়ে যান থানায়। আর নমিতা আর তার বোনের ছেলেকে জাস্টিস সেনের নির্দেশে একটা সরকারী হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নমিতা সেখানে বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ করে। পরের রবিবার অনল আর দিয়া যায় নমিতা আর বাচ্চাটাকে দেখতে। ওদের দেখেই একগাল হেসে নমিতা ছেলেটাকে নিয়ে এসে দিয়ার কোলে তুলে দেয়। বাচ্চাটা ওর এক রাত্তিরের মাকে চিনতে না পারলেও দিয়ার কোলে উঠে হাত-পা ছুড়তে লাগলো। চলে আসার সময় দিয়ারও চোখের কোনটা চিকচিক্ করে উঠলো। একদিনের মাতৃত্বের স্বাদ ওকে অস্থির করে তুলছিলো। চলে আসার সময় ওর মনটা হুঁ হুঁ করে উঠলো। একবার পিছন ফিরে দেখলো দিয়া। অনল লক্ষ্য করেছিলো ব্যপারটা। দিয়ার বুকের কাছে শাড়ীটা সেদিন ভেজেনি ঠিকই, তবে ভিজেছিলো ওর মনটা! সেখানে অবিরাম রক্তপাত হচ্ছিলো যে!  রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও ভালোবাসার টানতো গভীরই থাকে। কি, থাকে না?

সেদিন সন্ধ্যায় দিয়াই তো ওকে নতুন জন্ম দিয়েছিলো! না হলে ...


প্রবীণ সেকশন ( ধারাবাহিক )


পূর্ণকুম্ভের যাত্রী
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
প্রয়াত দেবকুমার ঘোষাল
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
মাঘী পূর্ণিমা
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
৮/২/২০০২
৪৫/২৪মহেন্দ্র ব্যানার্জী রোড
বেহালা।কোলকাতা-৭০০০৬০
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
        যাবার প্রস্তুতিও ছিল না মানসিকতাও ছিল না।কিন্তু হঠাৎই নিতান্তই আকস্মিকভাবে আবিষ্কার করলাম। আমি পূর্ণকুম্ভের যাত্রী।আমি সমরেশ বসুও নই রাণী চন্দও নই।নিতান্তই মধ্যবিত্ত মানসিকতা সম্পন্ন এক অজ্ঞ ব্যক্তি।       পাপ-পুণ্য বোধ নেই আউল-বাউল নই কোন টানেই ঘর ছাড়ার পাত্র নই।তবু বেড়িয়ে পরলাম।রেলের কামরায় সতেরো জনের এক মাড়োয়ারী দল আর কুড়ি-একুশজনের এক বাঙ্গালী দল।মাড়োয়ারী বাবুদের সঙ্গে সময়টা বেশ ভালই কাটল।কিন্তু বাঙ্গালীবাবুদের ধারেকাছে যাওয়া গেল না।বাঙ্গালীবাবুরা চাটার্ড বাসে অনিমিয়ত যাত্রীদের তুলনায় শেয়ার ট্যাক্সিতে অন্য সহযাত্রীদের তুলনায় আর ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় খুব বড়লোক খুব উন্নাসিক যেন বিল গেটস্ এর সম্বন্ধী।সাড়ে তিন ঘন্টা দেরীতে ট্রেন পৌঁছল।দুপুর আড়াইটে।শ্রী পঞ্চমীর আগের দিন।
যাবার আগে সাবধানবাণী জিরো ডিগ্রী সাবধান।কোথায় জিরো।উণ্ডচিটার নেই সোয়েটার নেইভেতরে একটা মোটা সুতির গেঞ্জি তাতেই ঘেমে একাকার।
একটা হোটেলে অন্নগ্রহন করা হলো।চার থালি চাউল দো থালি অড়হরকা দাল দো থালি ফুলগোবি থোড়াসা সাদা মুলি হারা মির্চ্চা আউর নিব্বু বিরানব্বই রূপিয়া।
হোটেল থেকে বেরিয়ে চলো প্রয়াগ।
স্টেশন চত্বর একটু ছাড়াতেই উত্তরপ্রদেশ বিহার তথা ভারতবর্ষের সনাতন রূপ প্রস্ফুটিত।পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহর করাচি তারপর কলকাতা (Who-Report-1998)কিন্তু এখানে লক্ষ্য কোটির ভিড়ে একটু আড়ালে-আবডালে একটু নির্জনতায় জীবন্ত নরক উপস্থিত।
      এই রিক্সা কুম্ভ যায়েগা -হুঁ ষাট রূপিয়া -বিশ রুপিয়া নিলাম হচ্ছে চল্লিশ রূপিয়া -পথে এসো বাবা-ত্রিশ রূপিয়া -চলো।
      হিঁয়াপর রহনেবালা হ্যায়-নেহী জী উধার সৈদাবাদ মে-নাম কেয়া-আনিসুর রহমান।অতীত দিনের শাসক।কালের কপোলতলে সাইকেল রিক্সা চালক।কেতনা রূপিয়া দিন মে হোতা হ্যায়-একগাল হাসি উত্তর নেই।
কিন্তু এ দাঁড়িয়ে কেন।লীডার রোড তো বটে এলাহাবাদ মানেই তো লীডার-মতিলাল নেহরু-ইন্দিরা গান্ধী-সঞ্জয় গান্ধী-রাজীব গান্ধী-অমিতাভ বচ্চন।কিন্তু এখন জনসমুদ্র সমস্ত ভারতবর্ষ একত্রিত।V.I.P Energency-Food-Medical কতরকমের তকমা লাগানো গাড়ী।আইনের ফাঁকে কতরকমের গাড়ী।বাস-লরি-ভ্যান-ম্যাটাডোর-অটো-সাইকেল-রিক্সা-স্কুটার আর মানুষ।একটা বাচ্চা উটও চলেছে সেও বোধহয় পুণ্যার্থী।চলো ভারতবর্ষ দেখি।সামান্য মাইলখানেক রাস্তা একঘন্টা লেগে গেল।রাস্তা শেষ হবার আগেই হুকুম এল উতর্ যাইয়ে।
       উতরে গেলুম। কেন রে বাবা আর যাবার উপায় নেই।বিশাল জনতা চলেছে-চলেছে তো বটে কিন্তু সেটা চলা নয় নড়া।এলাহাবাদ শহর সাড়ে তিনটে জিনিসের জন্যে বিখ্যাত।এক-সঙ্গমের কাছে আকবরী কিল্লা।দুই-নেহেরু পরিবার।তিন-অমিতাভ বচ্চন।আর আধখানা হলো পৈঠা চলকুমড়োর তৈরী মোরব্বা।নামে এলাহাবাদের আসলে তৈরী হয় কোলকাতার বেলেঘাটায়।সেই প্রাচীন কালের শহর।লীডার রোডে সাহারা গ্রুপের আধুনিক স্থাপত্যের একটা বাড়ি চোখে পরল।এছাড়া রেল স্টেশনের কিছুটা বা দু-একটা সরকারী ভবন ছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়া কোথাও নেই।সেই পূরনো পূরনো বাড়ি গায়ে গায়ে লাগান।আদ্যিকালের গলি এত সঙ্কীর্ন যে কাশীকেও হার মানায়।মাইলখানেক হাঁটবার পর মনে হোল যেন এসে পরেছি।একটা মোর দু দিকে মাঠ সার সার তাঁবু আর্মড পুলিশ Raf হাতে কার্বাইন-মেলা সিধা যাও।
      ক্রমশঃ


৪. স্পর্শনন্দন ইন্টারভিউ ( ধারাবাহিক )

সত্যজিৎ মন্ডল 

                সত্যজিৎ মণ্ডল
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
প্রশ্ন -১)দাদা আপনি কতদিন হলো লিখছেন
উত্তর-পঁয়তাল্লিশ বছর।
প্রশ্ন-২)আপনার লেখা প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়
উত্তর-সকাল নামে একটি পত্রিকায়।
প্রশ্ন-৩)'স্পর্শনন্দন'একটি ব্রেল পত্রিকাটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা হঠাৎ আপনার মনে হলো কেন।
উত্তর-সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে।
প্রশ্ন-৪)আপনার কি মনে হয় না শুধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নয় আরও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়েও কাজ করা উচিত।
উত্তর-অবশ্যই করা উচিত।কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক ত্রুটি থাকার জন্যে আমি কাজটি সম্পূর্ন করতে পারি নি।
প্রশ্ন-৫)আপনি তো পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।এখন না হয় অবসরপ্রাপ্ত।অফিসের কাজ সামলে'স্পর্শনন্দন'এর কাজ করার সময় পেতেন।কি করে দুদিকে সামঞ্জস্য রক্ষা করতেন।
উত্তর-আমাদের চব্বিশ ঘন্টার ডিউটি ছিলো।তা সত্ত্বেও সময় বের করে কাজ করতে হতো।বিশ্রাম বলে কিছু পেতাম না।বাসে উঠে যখন বসতাম ওই সময়টুকুই বিশ্রাম পেতাম।
প্রশ্ন-৬)আপনি তো এই দীর্ঘ জীবনে অনেক বড় বড় সাহিত্যিকের সংস্পর্শে এসেছেন যেমন-শঙ্খ-সুনীল-প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায়-কমল সিকদার-পঙ্কজ সাহা-নমিতা চৌধুরী।এদের সম্বন্ধে আপনার উপলব্ধি কি।
উত্তর-প্রতিনিয়ত আমি সমৃদ্ধ হয়েছি।পরীক্ষার্থি হিসাবে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিয়েছি।প্রেরনা পেয়েছি।কবিতা উৎসবের কবিতা প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা পেয়েছি।
প্রশ্ন-৭)আর এক মহীরুহ ছিলেন মহাশ্বেতাদেবী।তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উত্তর-উনি আমায় ভাইয়ের মতন দেখতন।
প্রশ্ন-৮)আপনার এই পর্যন্ত কটা কাব্যগ্রন্থ বেড়িয়েছে।
উত্তর-চারটি কাব্যগ্রন্থ বেড়িয়েছে। আরও একটি কাব্যগ্রন্থ বের করবার ইচ্ছা আছে কিন্তু সময় ও অর্থের অভাবে হয়ে উঠছে না।
প্রশ্ন-৯)-স্পর্শ নন্দন পত্রিকাটি কতদিন হলো প্রকাশিত হচ্ছে।
উত্তর-১৯৯২ সাল থেকে
প্রশ্ন-১০)এই পত্রিকা প্রকাশ করার সময় কি কি বাধা এসেছিলো।
উত্তর-আমি পাড়ার একটি দোকানে কার্ড বোর্ডের ওপর পেপারে কবিতা চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম।পাড়ার কিছু দাদা টাইপের ছেলে এই নিয়ে গোলমাল করে এবং আশ্চর্যের বিষয় আমার পাড়ার এক বন্ধু সেটা সমর্থন করে।তারপর তারা সেটা গায়েব করে দেয়।
প্রশ্ন-১১)এই পত্রিকা বের করবার সময় আপনি কার কার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন বা কে কে আপনার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
উত্তর-বিভিন্ন দৃষ্টিহীনদের স্কুল থেকে সাহায্য পেয়েছিলাম।অমিয় শতপতি-বিদ্যুৎ পাল-গীতা দাস-বিভাস ব্যানার্জী-অভিজিৎ সাহা-বিশ্বজিৎ ধর-শাশ্বতী কুণ্ডু-শিবু সরকার-বীথিকা সরকার।
প্রশ্ন-১২)কেমন লাগে বিশেষ করে যখন ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন।
উত্তর-বেশ ভাল লাগে। প্রশ্ন-১৩)স্পর্শ নন্দন নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি।
উত্তর-সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাই।
প্রশ্ন-১৪)আপনার অবর্তমানে আপনি কার হাতে তুলে দিয়ে যেতে চান।
উত্তর-স্পর্শ নন্দন অ্যাকাদেমি অফ ব্রেল পোয়েট্রি ফর ভিসুয়ালি ইমপোর্ট্রেট পোয়েটস্(এসবিপি এফভিআইপি)(Sparshanandan Academy Of Braille Poetry For Visually Impaired Poests(SABP FVIP) নামে একটি নতুন সংগঠন তৈরী করা হচ্ছে তার হাতেই স্পর্শ নন্দনের সমস্ত কাজ ভবিষ্যতে তুলে দেওয়া হবে।
প্রশ্ন-১৫)আপনার প্রিয় লেখক ও লেখিকা কে
উত্তর-শঙ্খ ঘোষ-শ্রীজাত-সিদ্ধার্থ সিংহ-বিভাস রায় চৌধুরী-সুবোধ সরকার।
প্রশ্ন-১৬)আপনার প্রিয় মানুষ কে
উত্তর-সবাই আমার প্রিয়
প্রশ্ন-১৭)আপনার এই সাফল্যের পেছনে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশী।
উত্তর-আমার ময়ের ভূমিকা
প্রশ্ন-১৮)আপনার এই সাফল্যের পেছনে আপনার পরিবার অর্থাৎ আপনার মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তানের ভূমিকা কি
উত্তর-আমার মায়ের ভূমিকা তো অনস্বীকার্য।পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে।


৫. 4 লাইনার 

কবি :- 

সুমন কল্যাণ , অমরজিৎ মন্ডল

সংকটকাল
সুমন কল্যাণ

আমাদের মতগুলি ক্রমশ ধূলো হয়ে 
সরে যাচ্ছে পথের দুপাশে
নিভৃত গৃহকোনে চটুল নীতি কথা
অন্ধকার মেখে হাসে, মাতে উল্লাসে।


বিচ্ছেদ
সুমন কল্যাণ

একসাথে হেঁটে এলাম কিছুটা পথ
এখনও অনেকটা বাকী
তুমিও পথ হাঁটো আমিও হাঁটি
একাকী, সমান্তরাল দূরত্ব বজায় রাখি।

অত্যাধুনিক
অমরজিৎ মন্ডল

কবিতা আর কবিতা নেই
গেছে আধুনিকতায় মিশে ।
হয়েছে আজ কবিতার হরন
ছেয়ে গেছে অসভ্যতার বিষে ।


                              শিশু সেকশন 

৬. শিশু নাট্য উৎসব 

লেখক / লেখিকা

ইন্দিরা ব্যানার্জী , শুভঙ্কর রায় 



মূল নাটক 



প্রতিযোগিতার পরিণাম
ইন্দিরা ব্যানার্জী

(দৃশ্য: গুণধর উকিলের চেম্বার

সুকুমার: উকিল বাবু যে করে হোক আমার দীপ কে আপনি বাঁচান; মাত্র বারো বছরের ছেলে আমার...

তিয়াশা(কাঁদতে কাঁদতে): ও তো আমাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতেই পারে না; কিভাবে আছে ও জেলে; ওর ভবিষ্যত পুরো অন্ধকার হয়ে গেল।

গুণধর উকিল: অত চিন্তা করবেন না; আদালতে তো বিচার হবে না; হবে জুভেনাইল বোর্ডে; এখানে বিচার সব সময় অপরাধীর পক্ষেই যায়।বেঁচে গেছেন; আপনাদের দীপ বারো বছরে খুন করেছে আঠেরোয় করলে সত্যিই ওর লাইফ হেল হয়ে যেত...

তিয়াশা: না না....
ও খুন করতে পারে না; যে মশা মাছি মারতে পারে না; ইঁদুর বেড়াল তাড়াতে পারে না;সে মানুষ খুন করবে? কখনও মাংসের দোকানেও যায় না; মাছ কাটাও দেখতে পারে না; আমার সোনার টুকরো ছেলে।

গুণধর উকিল: তবে আর কী? তাহলে কি সব সাজানো? 
আপনাদের ছেলে দীপ মে মাসের আট তারিখে ওরই সহপাঠী অনুপমকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে খুন করে নি বলছেন? অনুপমের পরিবার তবে কি মিথ্যা অভিযোগ করছে?
ঐ দিন আপনাদের ছেলের জন্মদিনের পার্টিতে অনুপম গেছিলো আপনাদের ফ্ল্যাটে; কী হয়েছিল তবে?

সুকুমার: আমাদের ছেলে দীপ জুলিয়ান ডে স্কুলের ক্লাস সিক্সএর ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। গানের গলা খুব ভালো; রাঘবের কাছে তালিম নিচ্ছে; সুইমিং শেখে;সপ্তাহে দুদিন অ্যাবাকাস; ক্যারাটে; ড্রয়িং স্কুল সব জায়গায় ওর performance খুব ভালো।

তিয়াশা: সকাল থেকে আমি আর সুকুমার দীপের পড়াশুনো আর extra curriculum নিয়ে ব্যস্ত থাকি; সুকুমার অফিস চলে গেলে ছেলেকে নিয়েই আমার সময় কাটে।

গুণধর উকিল: সে সব বুঝলুম; এমন ছেলে কী করে এত হিংস্র হল; অনুপমের সাথে দীপের কীসের শত্রুতা ছিলো?কিছু নিয়ে কি ওদের বিবাদ হয়েছিল?আপনারা কি কিছুই জানতেন না...

সুকুমার: অনুপম দীপের best friend। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে ওরা একসাথে পড়াশুনা করছে; কখনও অনুপম 1st হত কখনও দীপ; প্রাণের বন্ধু ওরা দুজনে।

তিয়াশা: জানেন উকিল বাবু; অনুপম পায়েস খেতে ভালোবাসত তাই বাড়িতে পায়েস হলে দীপ এক কৌটো অনুপমের জন্য তুলে রাখত; একবার স্কুলে ছুটির পর অনুপমের বাড়ি থেকে কেউ নিতে না আসা পর্যন্ত দীপও অনুপমের সাথে অপেক্ষা করেছিলো; অনুপমের মা এলে তবে দীপ আমার সাথে বাড়ি ফেরে...

গুণধর উকিল: সব তো গোলমাল হয়ে যাচ্ছে...
এমন হরিহর আত্মা বন্ধুকে দীপ মারল কী করে? দীপ তো কোন কথাই বলছে না;খাচ্ছে না; কাঁদছেও না; কেমন গুম হয়ে রয়েছে; কোন গভীর ক্ষত আছে ওর মনে; তার হদিস পেতেই হবে...

সুকুমার: ছেলের পড়াশুনোর ব্যাপারে তিয়াশা আমি খুব সচেতন; ইদানিং অনুপমের পারফরমেন্স দীপকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল; লাস্ট তিনটে পরীক্ষায় অনুপম দীপের থেকে অঙ্ক ইংরাজী ভূগোলে পাঁচ-ছয় নম্বর করে বেশী পেয়ে যাচ্ছিল; রিসেন্ট একটা ড্রয়িং কম্পিটিশানেও দীপকে হারিয়ে অনুপমই প্রথম হয়েছিল।

তিয়াশা: আমিই বকাবকি করতাম;অনুপমের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আমিই দীপকে বার বার বলতাম যাতে দীপ ভালো পড়াশুনা করে...

সুকুমার: সব ব্যাপারেই দীপের সাথে অনুপমের তুলনা চলে আসত; সব সময় অনুপম খুব ভালো আর দীপ খারাপ এমন একটা ধারনা তৈরী হয়ে যেত।

গুণধর উকিল: বুঝলাম; প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে টিঁকে থাকতে নিজেকে প্রথম করতে প্রধান প্রতিযোগীকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দীপ; সত্যই দীপ তো খুনী নয়; দীপেদের খুনী বানান আপনাদের মত মা-বাবা রা, যাদের সীমাহীন চাহিদা আর স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে দীপেরা নিজের অজান্তেই অপরাধী হয়ে ওঠে।

(সুকুমার -তিয়াশা অঝোরে কেঁদে চলেছে; ভাগ্যকে নয়; নিজেদেরকেই নিজেরা দোষারোপ করে চলেছে)

জুভেনাইল কোর্টের বিচারে দীপকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হল। দীপ আত্মপক্ষ সমর্থনে কোন কথাই বলল না; যখন সুকুমার-তিয়াশা বার বার দীপকে ডাকছিলো; শুধু পুলিশ ভ্যানে ওঠার আগে একবার থুতু ছিঁটালো ঘৃনায়।









৭. শিশুদের কবিতা ও গল্প 

লেখক সূচি :- 

কাকলী দাস ঘোষ


কবিতা 



খুকুর হাসি 

কাকলী দাস ঘোষ

খুকুমণি সোনা রে ,

চুমকির কণা রে ,
টুপটাপ মুক্তায়
তোর হাসি ধরা রে ;

ঠোঁট কেন ফুলালি ,

ও আমার দুলালি ,
এনে দেব জরি ফিতে 
মন আমার ভুলালি ;

আয় সোনা আয় আয় ,

গুটি গুটি তোর পায় ,
খিলখিল কী হাসি 
মুখ দেখা আয়নায় ;

তোর হাসি ধরা থাক ,

ঝিলমিল খেলনায় ,
জলভরা মেঘ দোলা 
আকাশের দোলনায় l 

   

গল্প 



গোধুলিআলোয় 

কাকলী দাস ঘোষ 

মহুল আড়মোড়া দিয়ে উঠলো ভোরবেলা l বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে l তবুও মাঠে যেতে হবে ওকে -প্র্যাকটিস-এ l দুদিন বাদেই ফাইনাল ম্যাচ ওদের শিবাজী বয়েজ স্কুলের সাথে কেসেক্টর বয়েজ স্কুলের l এখনও কুয়াশা কাটেনি ,তবুও ও চলল স্কুলের মাঠে l ফুটবল মহুলের প্রাণ l মহুল বেশ রোগা চেহারার -দেখে বেশ দুর্বল মনে হয় l বাড়িতে  -বাবা -আর ছোট বোন ওর l মা -তিন বছর হল খুব অসুস্থ -হার্ট -এর অসুখ l বাবা একটা প্রাইভেট ফার্ম -এ চাকরি করেন l যা পেমেন্ট -তাতে সংসারটা কোনরকমে ধুঁকেধুঁকে এগিয়ে চলে l

মহুল মনে মনে ভাবে যেভাবেই হোক ওর স্কুলকে জেতাতেই হবে l বাবা -মা-ছোট বোনের মুখগুলি ভেসে ওঠে চোখের সামনে lও ভাবে -খুব তাড়াতাড়ি আরও বড় হতে হবে ওকে -সংসারের হাল ধরতে হবে l মনে আর একটা স্বপ্ন ওর lও ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে খেলেছে -ধীরে ধীরে ওকে পৌঁছতে হবে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে l
মাঠে এসে পৌঁছল মহুল l রাজীব দা মানে রাজীব সেন -ওদের কোচ এগিয়ে এলেন ওর কাছে l বলল -"মহুল -মাই বয় -দেখিস মান রাখিস l তোর উপর অনেক আশা রে l "
"তোমাকে  -আমার স্কুলকে আমি হারতে দেব না রাজীব দা l "-মহুল বলল l 
আজ মাঠে প্র্যlকটিস করতে করতে হঠাত্ বৃষ্টি নামল মুষলধারে l সবাই চলে গেল l মহুল বৃষ্টি ভিজে প্র্যাকটিস করতে লাগলো l রনি ,অর্ণব ,অকীবুর -কারও বারণ শুনলনা ও l 
আজ খুব ক্লান্ত ও l রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল মহুল l মহুল সেন্টার ফরোয়ার্ড -l ও স্বপ্ন দেখতে লাগলো দারুণ এক গোল দিল ও -আর চারিদিকে সবাই হাততালি দিচ্ছে l জয়ের আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে ও l
হঠাত্ ঘুমটা ভেঙে গেল ওর l কী যন্ত্রণা সারা শরীরে l মনে হচ্ছে খুব জ্বর এসেছে l সারা শরীর আগুন হয়ে গেছে যেনো l 
ও পাশেই রাখা বোতল থেকে জল খেল একটু l মনে একরাশ চিন্তা ভিড় করে এলো ওর l ও খেলতে পারবে তো l ওকে খেলতেই হবে l শুধু নিজের জন্য নয় l রাজীব দার সম্মানের জন্য ,স্কুলের সম্মানের জন্য l
পরদিন সকালে যেনো জ্বরে চোখ খুলতে পারছে না মহুল l ওর এ অবস্থা দেখে ওর বাবা রবিন বাবু  আর কাজে গেলেন না l ঘরে একজন পরিচিত ডাক্তার -শ্যামল সেন কে ডেকে নিয়ে এলেন l 
মহুল কে স্টেথোস্কোপ দিয়ে টেস্ট করলেন উনি l শ্যামল ডাক্তারের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখলেন রবিন বাবু lডাক্তার বাবু বললেন মহুলকে খুব বিশ্রামে থাকতে হবে l বেশ জ্বর ,বুকে প্রচুর কফ বসে গেছে ,এ অবস্থায় খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হবে ওকে lমহুল জ্বরের ঘোরে কথাগুলো শুনতে শুনতে কঁকিয়ে ওঠে ,"আমাকে সুস্থ করে দিন ডাক্তারবাবু -আমাকে খেলতেই হবে -আমার স্কুল -রাজীব দার সম্মান রাখতে হবে আমাকেl "-
শ্যামল ডাক্তার ওর মাথায় হাত রাখলেন -প্রেসক্রিপশন লিখে -রবিন বাবুকে সব বুঝিয়ে দিলেন l
আরও একদিন কাটলো l আগামীকাল মানে পয়লা জুলাই ওদের ফুটবল ম্যাচ l গতকাল প্র্যাকটিসে যেতে পারে নি বলে আজ রাজীব দা সোজা চলে এসেছেন মহুলের বাড়ি lআর এসে ওর অবস্থা দেখে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল যেনো l দুইবারের ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন মহুলকে ছাড়া শিবাজী বয়েজ টিম যে অচল -সে কথা আর কেউ না জানুক ,রাজীব সেন বেশ জানেন l কিন্তু তিনি শুধু কোচ নন ,মহুলকে ছোট ভাইয়ের মত ভালোবাসেন l মহুলের মধ্যেও সকলকে আপন করে নেবার মত এক সুন্দর ক্ষমতা আছে lরাজীব সেন মনের মধ্যে বয়ে চলা উদ্বিগ্নতার স্রোত চেপে রেখে বললেন ,"মহুল -ভাই আমার ,সেদিন এত করে বললাম -বৃষ্টিতে ভিজিস না -দেখ তো কেমন জ্বর বাঁধালি -এ বছর আর ডিস্ট্রিক্ট -লেভেলে খেলার চান্স পাবে না আমাদের টিম -সে যাক --এখন শরীর পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে আসবি না কেমন l  "চলে গেলেন রাজীব l 
নির্বাক মহুল ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পথের দিকে l ওর ইচ্ছে করছিল সব শরীরী কষ্ট ছিঁড়ে ছুটে গিয়ে রাজীব দাকে জড়িয়ে ধরে বলে -"পারব -রাজীব দা ,আমরা পারব l "-
আজ ১লা জুলাই l শিবাজী বয়েস এর মাঠ লোকেলোকারণ্য l একটু মেঘলা করেছে আজ l দুই দলের ছেলেরা ওয়ার্ম আপ করছে lরেফারির বাঁশিতে শুরু হল খেলা l মহুল -ক্যাপ্টেন ছাড়া শিবাজী বয়েজ এর টিম স্পিরিট যেনো তলানিতে l চল্লিশ মিনিট কেমন এক একঘেয়ে নিস্তরঙ্গ খেলা চলল l যদিও আজ কেসেক্টর বয়েজ বেশ চনমনে l 
ঠিক একচল্লিশ মিনিটের মাথায় কেসেক্টর বয়েজ এর রিক্তম একটা গোল দিতেই ওই টিমের প্লেয়াররা ফেটে পড়ল আনন্দে l মাঠে ওদের সমর্থকরা খুশিতে নাচতে শুরু করে দিল l হাফ টাইমের বাঁশি বাজলো l রাজীব দা একদম চুপ হয়ে গেছে বেশ ঘামছে আসন্ন ম্যাচের ফলাফলের চিন্তায় l দলের ছেলেরাও বেশ বিমর্ষ -একদম চুপ হয়ে গেছে l 
খেলার দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হতে আর তিন মিনিট বাকী l সব আশা যেনো শেষ -এমন সময় হঠাত্ রাজীব দা দেখলেন  সাইড লাইন ধরে দৌড়ে আসছে মহুল l চিত্কার করতে করতে বলছে ও -"রাজীব দা ,আমি খেলব -আমি পারব l "
রাজীব সেন ওর কপালে হাত রেখে দেখলেন ওর গায়ে বেশ জ্বর l কিন্তু মহুল নাছোড়বান্দা l আজ রাজীব দার কোন কথা শুনবে না ও -ও খেলবেই l অগত্যা দলের সবচেয়ে দুর্বল ছেলে মিন্টুকে সরিয়ে মহুল -কে নামালেন রাজীব দা l ওকে পেয়ে টিম যেনো এক দারুণ স্পিরিট পেল l সবাই জড়িয়ে ধরল ওকে l 
শুরু হল দ্বিতীয়ার্ধের খেলা l আজ প্রথম থেকেই মহুল যেনো অন্যরকম l দুরন্ত পাস -ব্লক দেখে রাজীব অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন l দশ মিনিট পেরোতে না পেরোতেই মহুল এর পা থেকে এক দুর্দান্ত শটে বল ঢুকে গেল প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের ভিতর l সকলে সমস্বরে চিত্কার করে উঠলো,-"গো-ও -ও -ও -ল "l রাজীব দা নির্বাক আনন্দধারায় l 
খেলা চলছে রুদ্ধশ্বাস উত্কণ্ঠায় l বিপক্ষের খেলোয়াড়রা যেনো ঘিরে ধরেছে মহুলকে l যেভাবেই হোক অপ্রতিরোদ্ধ মহুলকে আটকাবে ওরা l প্রয়োজনে অসৎ উপায় অবলম্বন করবে ওরা l

খেলা এগিয়ে চলেছে l আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকী শেষ হতে l ম্যাচ বুঝি ড্র হবে আজ l মহুল বল পায়ে আসতেই মহুল এমনভাবে কাটাতে লাগলো যে কেউ আর বল পাচ্ছে না -ও যেনো হাওয়ায় ভেসে চলেছে l কিন্তু স্বপ্ন চোখে মহুলের চোখ কেমন যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে -পা থেকে একটা শট -কোনোরকমে বিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে l গোলকিপার -কে ব্যর্থ করে বল যেই মুহুর্তে ঢুকে গেল আবার গোলপোস্টের ভিতরে ঠিক সেই মুহুর্তে কার যেনো বুটের আঘাতে কঁকিয়ে উঠলো মহুল l বনবন করে ঘুরতে লাগল ওর মাথা l ফেটে পড়া হাততালির শব্দ কেমন অস্পষ্ট হয়ে এলো মহুলের কানে l অসুস্থ মা -বাবা -বোন সব মুখগুলি ভেসে উঠলো ওর সামনে l ওর চারপাশ কী অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে -অস্ফুটে শুধু একটা কথা ছড়িয়ে পড়ল  গোধুলি  আকাশে -"আমি পেরেছি রাজীব দা -হারাতে দিই নি আমি তোমার সম্মান -স্কুলের সম্মান l আমরা খেলব -খেলব -আবার ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে l "-

অস্তরাগের সূর্যের শেষ আলো মেখে ওর শরীরটা শুয়ে পড়ল ধীরে ধীরে মাঠের বুকে l ছুটে এলো সবাই l রাজীব দা ছুটে এসে ওর শরীর টা তুলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন -"মহুল -ভাই আমার -তুই আমার -আমাদের গর্ব -সাবাশ l "-
কিন্তু -মহুল নিরুত্তর -নিরুত্তাপ -নিরুত্তেজ যে -একী নিথর যেনো শরীরটা l রাজীব দা চিত্কার করে উঠল-"কথা বল মহুল -কথা বল -তুই এবারেও ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন হবি -ওঠ -ওঠ ভাই আমার l "
রাজীব দা -র কথা শূন্য উত্তরে ফিরে এলো বাতাসে ভেসে l মহুল আর ফেরেনি কোনদিন l অসুস্থ শরীর চাপ আর আঘাত নিতে পারে নি -লাল ময়দানে দিন -রাতের সন্ধিক্ষণে ওর স্বপ্ন বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে ও l হয়তো একদিন নতুন কোন মহুল জাগিয়ে তুলবে নতুন কোন গোধুলি বেলায় ওর ঘুমিয়ে পড়া  স্বপ্ন -আরও একবার l


৮. প্রতিযোগিতার ফলাফল 


বিষয় : বিশ্ব নবী 


প্রথম :


সৈয়দ আসরার আহমেদ রুমি


হযরত মুহাম্মদ( দঃ  )

তুমি যদি চোখে দেখ শুধুই আধাঁর
সম্মুখে বিশাল সাগর নেই পারাপার
তোমাকে পেরুতে হবে কোন দূর্গম বন?
তখন
শ্বাপদ সঙ্কুল সেই বনে 
ঢুকে পড়ো দ্বিধা মনে
নিমেষে তোমার পাশে দাঁড়াবেন যিনি
মরুপথ পেরিয়েছেন হেলায় সেজন৷

তাঁর পথে চললেই আলোকমালায়

দূর হয়ে যাবে যত আঁধার মলিন
সাগরও দেখবে কেমন করে দেবে পথ
ছুটবে তোমার শুধু বিজয়ের রথ
দূর্গম বন সেও বলবে তোমায়,ভয় নেই
চলে আসো উম্মতে নবী
দ্বীনে মুহম্মদী 
যার পথে চলে বহু মানব সন্তান
হয়েছে সফলকাম তাতো তুমি জানো৷

শুনেছো তো সেইসব শোহরত

মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ
তিনিই তো আল্লার সেরা নিয়ামত
তিনি তো বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ
সাল্লাল্লাহোআলাইহে সাল্লাম ৷
                 -----*----

দ্বিতীয় :

নাজিমা পারভীন

      - ১২ই রবিউল আওয়াল -

""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
আজকের দিনেই নবীজী এসেছিলেন
ধরাধাম আলোকিত করে, 
আজকের দিনেই সারাজাহান অন্ধকার করে 
চলে গেলেন তিনি মোদের ছেড়ে। 
আজকের দিনেই মক্কা সেজেছিল 
নূরের আলো ছড়িয়ে দিয়ে,
আজকের দিনেই সাহাবারা কেঁদেছিলেন
প্রিয় নবীর অকাল গমনে। 
খুশির দিনের পাশাপাশিতে আজ, 
দুঃখের দিনও সমপরিমানে, 
হাসব নাকি কাঁদব মোরা
দোটানাতেই মরি গুমরে।
ইয়া উম্মতি, ইয়া উম্মতি, 
নবীর কণ্ঠে ছিল শেষ কথা। 
সেই উম্মত আজ নবীর তরিকা ছেড়ে ,
সেরেক - বেদাতের নাফরমানীরতা ।।


তৃতীয় : 


নিজাম উদ্দিন মোল্লা 


"বিশ্বনবী"


দুনিয়া তোমার অপেক্ষায় নিয়োজিত ছিল,

নবীকূলের সর্দার তুমি
নবী হবে না তারা,
হতে চেয়েছিল উম্মতে মোহাম্মাদি(স:)।

তুমি শ্রেষ্ঠ, তুমি স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি,

তুমি না আসলে হত না রহমতের বৃষ্টি।
তুমি না আসলে নারী পেত না জান্নাতের সন্মান,
তুমি না আসলে সৃষ্টি হত না দোজাহান।

হে মোহাম্মদ (স:) তুমি সংস্কারক, 

তুমি ন্যায়ের ধারক, চির সত্যবাদী,
দয়ার অবতার, জান্নাতের সর্দার,
বিচারের দিনে,  গোনাহগারকে করিবে আজাদি। 

আল্লাহ-র নামের সাথে যুক্ত মোহাম্মদ, 

যার অপেক্ষায় আছে, উচ্চ জান্নাত।


৯. প্রেম পত্র 



প্রেমির চিঠি
শুভম গাঙ্গুলী

দুশ্চিন্তা টা নিয়েই ঘুমাতে গেলাম। কি জানি কি হয় কাল। আমি তোমাকে যে প্রস্তাব দিয়েছি তা কি তুমি মানবে নাকি বরাবরে মতো আমায় নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে। প্রবল উৎকণ্ঠায় সারা রাত কেটে গেল। ভোরের দিকে কখন যে চোখ লেগে এসেছিল জানি না। ঘুম ভাঙতেই দেখি পাখির দল প্রভাত ফেরী করতে বেরিয়েছে। 
কিন্তু আজ যেন তাদের একটু অন্য সুর, অন্য ছন্দ। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না এ কি সুর। চট করে উঠে পড়লাম অনেক বেলা হয়ে গেছে। অফিসে যেতে হবে তারপর বিকেলে তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা।
কিন্তু দরজা খুলতেই দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো। আমি তোহ অবাক হঠাৎ তুমি কোথা থেকে এলে। ধূর কিসব বোকা বোকা প্রশ্ন করছি। অবশ্যই বাড়ি থেকে এসেছো। কিন্তু কেন সেই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতে থাকলো।
এমন সময় মা এসে আমায় ডাকদিল কিরে পিকু ঘুম থেকে ওঠ, অনেক বেলা হলো আর তা ছাড়াও শতাব্দীকে আর কতক্ষন অপেক্ষা করিয়ে রাখবি। মানে? কি বলছো এইসব? শতাব্দী কোথা থেকে এলো। মা বললেন কোথা থেকে এলো মানে, সেই কোন সকালে এসে মেয়েটা অপেক্ষা করছে তোর জন্যে।
যাক বাবা এতক্ষনে বেপারটা স্পষ্ট হলো এতক্ষন যা দেখছিলাম সেটা হলো আমার ভোরের স্বপ্ন।। ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয় শুনেছি কিন্তু এতটা মিলে যায় সেটা জানতাম না।।
ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি তুমি বসে আছো। আজ খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। খুব ইচ্ছা করছিল দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আদর করি। কিন্তু তার যে উপায় নেই, পাশেই বাবা বসে আছেন। তাই নিজের ইচ্ছাটা কে বরফ চাপা দিলাম। 
তোমার উল্টো দিকের সোফা টা তে গিয়ে বসলাম। অফিসে যাওয়া মাথা উঠলো। কারণ আমি জানি তুমি এতো সকালে কি কারণে এসেছো। 
বাবা আছেন বলে তুমি কিছু বলতেও পারছো না। তাই ইশারা করে আমায় কি যেন বলতে চেষ্টা করলে কিন্তু আমি সেটা বুঝতে পারলাম না। তাই তুমি একটা কাগজে I LOVE YOU লিখে আমায় দেখালে। আনন্দে মনটা গড়ের মাঠ হয়ে গেল অবশেষে আমায় খালি ফিরতে হয়নি। হঠাৎ মা ডাকদিল breakfast রেডি চলে আয়ে তোরা। প্লান করে ফেললাম আজ তোমায় নিয়ে সারাদিন ঘুরবো celebrate করবো।  কিন্তু কেন জানি না আমার পিঠটা শিরশির করে উঠলো কেমন যেন ঠান্ডা জল ফ্রিজ থেকে বার করে খেলে দাঁতের গোড়ায় হয়। সোফা থেকে উঠতে পারছিনা। মাথাটা ঘুরছে, চোখে অন্ধকার দেখছি। 


খানিকক্ষণ বাদে চোখ খুলে দেখি আমি dinning রুমে শুয়ে আছি আর আমাকে ঘিরে বসে সবাই কান্না কাটি করছে। 
ও শতাব্দী কি হলো কাঁদছো কেন, মা ও মা কি হলো গো দেখো এই তোহ আমি ঠিক আছি। কিন্তু পিঠের শিরশিরানি টা এখন আর তীব্র অনুভব করছি। মা আমার পিঠে খুব ঠান্ডা লাগছে একটা কম্বল দেবে। ও মা দাও না একটা কম্বল। কিগো দাও। এত দেখি কেউ কথা শোনেনা। যাই আমি উঠে গিয়ে কম্বল মুড়িদি। 
উঠতে গিয়ে টনক নড়ল আমার, আমাকে কারা যেন বরফের উপর শুইয়ে রেখেছে তাই ওই শিরশিরানি।
ও শতাব্দী আমাকে বরফের উপর শুইয়ে রেখেছো কেন, মা কে বলো না আমার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমাকে এখান থেকে তোলো। ঠান্ডায় মরে যাবো যে।। ও শতাব্দী ও শতাব্দী।
কাঁদতে কাঁদতে মুখ চাপাদিয়ে তুমি চলে গেলে। যাওয়ার আগে একবার শুনেও গেলে না।

I Love You Too My Love..



প্রিয়ন্তী,
           গতকাল বৃষ্টি ভেজা দুপুরে তোমাকে দেখার পর আমার মনে বসন্ত নেমেছে। বুকে প্রেমের জোয়ার তোমাকে ভাবতে বাধ্য করছে। আমাকে  দেখে লজ্জায় তোমার অসহায় আত্মসমর্পণ_ আমাকে পাগল করেছে। তোমার ওই ভেজা চুলের ষোড়শী রুপ আমার প্রতিটা ঘুমের মৃত্যু বরণের কারন হচ্ছে। প্রথম দেখাটা যতবারই ভুলার চেষ্টা করেছি ততবারই তোমার ওই রূপের প্রবল একটা টান অনুভব করেছি। কারণ ছাড়া অজান্তে হঠাৎ যেন এ শ্বাশত প্রেম। ইংরেজিতে যাকে বলে love is the gift of god. আমার বিধ্বস্ত মনের আস্তাকুঁড়ের শূণ্যতা শুধু তোমাকে খুঁজে। আমার রাতের স্বপ্নবিহঙ্গ জোনাক বাতি তুমি আর তোমাতে । আমার নিঃসঙ্গতার মাঝে অস্তিত্ব শুধু তুমি। তুমি পারবেনা আমার মরুবুকে বসতবাড়ি বেঁধে নিতে? তুমি পারবেনা বুকের শুকনো নদে শাপলা পদ্ম পুঁতে দিতে? মৌনতা ভেঙ্গে পারবে না বলতে তুমিও আমাকে ভালোবাসো? পারবেনা আমার স্বপ্নভাসা জীবনটাকে তোমার ভালোবাসার প্লাবনে ভাসাতে? আমার মন_ নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে শুধু তোমাকে পেতে চাইছে। আমার মন তোমার চূড়ান্ত আগমনের প্রহর গুনছে, তুমি আসবে বলে তোমার আশায়।।
        

                                                      ইতি-----------
                                          তোমার পাগল মানুষ
                                                 তোহাদ্দেশ সেখ




প্রিয়,
    বিনোদিনী;
ক্যামন আছো? চিনতে পারলে আমায়?
 তুমি কি সেই আগের মতোই চঞ্চলা, বদমেজাজি, অভিমানীটিই আছো??
নিশ্চয়ই ভাবছো, এতদিন বাদে চিঠি,সেই পুরনো হাতের ছোঁয়ায়; অবাক হলে বিনো... অবাক হলে কী?
আসলে বছর তিনেক তো হলো, আমাদের সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেছে, আমি হিন্দু, তুমি মুসলিম এই মিথ্যে অজুহাতে!
ভুলতে পারিনি তোমায়, তুমিও আমায় হয়তো.. 
জানো, দিনশেষে আজও তোমার ছবিতে হাত বুলিয়ে স্বপ্ন সাজাই, স্বপ্নে তোমায় পাবো বলে...
বুঝলে বিনো... এক দুরারোগ্য রোগ বাসা করেছে আমার শরীরে,
আর বেশীদিন হয়তো এই পৃথিবীতে রইবো না!
তাই বলি;
আমায় একটিবার দ্যাখতে এসো, অপেক্ষায় রইবো-
 ঠিক যেদিন আমার বাড়ির উঠোনে অঘোষিত উৎসবের সূচনা হবে, প্রিয়জনদের অশ্রুজলে যত্ন করে সাজানো চন্দন একটু হবে এলোমেলো.. 
সুগন্ধি ধূপের ধোঁয়ায় কোনো আবেগ কিংবা দীর্ঘশ্বাস থাকবেনা,থাকবেনা কোনো পিছুটান, কোনো আবদার, খুনসুটি!! 
সে'দিন নিজের পরিচয় দিও সকলের সন্মুখে,
উচ্চস্বরে বলে উঠবে, আমিই তোমার প্রেমিকা, নিষ্পাপ এক প্রেমের বিনিময়ে...
সেদিন, আমার মাথার চুলে আঙুল বুলিয়ে বলো- এভাবেই দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়েই কাটাবো সারাটা জীবন!! 
এভাবেই দু'জোড়া ভুরু সাক্ষী থেকে যাবে আমাদের 
 অ-লিখিত গল্পকাহিনীর..

সেইদিনটায়, আমার পছন্দের ওই নীল শাড়ি, ঝুমকো আর কালো টিপ পরে এসো, মন ভরে দ্যাখবো তোমায়, নিষ্প্রাণ এক হৃদয় দিয়ে...
একটু যত্ন নিয়ে খেয়াল করো, আমার ঠোঁটের কোনে দুঃখ নয়, এক আকাশ রোদের মতন হাসি দেখতে পাবে.....
নিশ্চয়ই! সেই দৃশ্য দেখে চোখ মুছে তুমিও হেসে ফেলবে, আর বলে উঠবে,পাগল টা আমার... তাইনা?

যদি প্রিয়জনেরা বলে ওঠে
প্রেমিকের নিথরদেহে কি চাইছো তুমি?
তখন তুমি বলে দিও-
"কেন আমি চাইব কিছু, আমিই তো সে"

সেই কথা শেষে, যদি তোমার খেয়াল হয়, আমার হাতের আঙুল নড়ছে, তবে বুঝে নিও, আমি বলছি,-
"যতটা মরতে পারি, তা তো শুধু দেহের;
প্রেমিকের ততটাই বেঁচে থাকা, প্রেমিকার হৃদ মাঝে"
মহান আত্মা হাঁটে তোমার পিছুপিছু ...."

তারপর, আমার শেষযাত্রাকালে, একটি বার মৃদুস্বরে আমার কানে কানে বলে যেও,
"কবি, আমি তোমায় আজও ভালবাসি"
                                        ইতি,
                                          তোমার প্রেমিক কবি



প্রেমপত্র 
মিতালি রায় 


আমার নীল আকাশ, আমার দীপ,                                                                                            আমি যে কখন তোমাকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেই বুঝতে পারি নি দীপ। কলেজ থেকে ফেরার পথে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে তুমি আমাকে দেখতে, আমি তখন কি বিরক্তই না হতাম। মনে মনে রোড রোমিও বলতাম তোমায়। বন্ধুরা আমাকে ক্ষেপাতো আর আমি রেগে যেতাম। কিন্তু যেদিন বাস থেকে নামতে গিয়ে শাড়ির পাড়ে হোঁচট খেয়ে পড়েগিয়েছিলাম। বাসের চাকায় হয়তো সেদিন আমি…….. তুমি কি ভীষণ ভয় পেয়েছিলে!!! দৌড়ে এসে আমাকে ধরে দাঁড় করিয়ে টেনে এনেছিলে সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। ধমকে বলেছিলে সাবধানে নামতে পার না! আমি সেদিন প্রথম তোমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম আর আমার বুকের মধ্যে হঠাৎ যেন একটা কাঁপন উঠেছিল মুহূর্তে। চোখ থেকে চোখ নামিয়ে আমি বাড়ির পথ ধরেছিলাম, তোমাকে ধন্যবাদটুকুও বলা হয় নি।জানো দীপ সেদিন আমি সারারাত ঘুমহীন কাটিয়ে ছিলাম। বারবার তোমার দুচোখ আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল বাসস্ট্যান্ডে তোমার কাছে। 

পরের দিন থেকে আমার কলেজ যাওয়ার ব্যস্ততা কেমন যেন বেড়ে গেল। নিজেই অবাক হলাম। কিন্তু আরও অবাক হলাম মনের মধ্যে তোমার ছবি নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যখন দেখলাম কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তুমি নেই। একটার পর একটা বাস ছেড়ে দিয়ে সেদিন আমি অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য। আমার দুচোখ সেদিন তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছিল তোমার দুচোখের জন্য। কিন্তু তুমি এলে না। নিজেই নিজেকে শাসন করে ফিরে এসেছিলাম বাড়িতে। সারারাত নিজেকে দোষারোপ করে কেটে ছিল আমার। পরের দিন আবারও কলেজ যাওয়ার ব্যস্ততা, আবারও তোমার দেখা না পাওয়া, আবারও হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরা। 

তারপর হঠাৎ আবার তোমাকে পেলাম সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। সেদিন সকাল থেকেই যেন আকাশটা ছিল বড় বেশি নীল, যে নীল মনকে মাতাল করে দেয় অবলীলায়। শীত শেষ হয়ে এলেও দখিনা বাতাস মন হারানো স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চোখে মুখে। আমি সেদিন হেঁটেই ফিরছিলাম… দূর থেকে দেখতে পেলাম তোমায়… তুমি কিন্তু তাকিয়েছিলে যাওয়াআসা বাস গুলির দিকে। কোন এক অজানা আহ্বানে আমি গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তোমার পাশে। জানতে চেয়েছিলাম, কেমন আছো? তুমি চমকে তাকিয়েছিলে আমার দিকে। সেদিন আমি আমার সমস্ত হায়া দূর করেছিলাম। তোমার চোখে রেখেছিলাম চোখ। হঠাৎ তুমি হেসেফেলে পকেট থেকে একটা মোড়া কাগজ বের করে আমার হাতে দিয়ে বললে, উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। বলেই তুমি হেঁটে গেলে আসার পথ ধরে। 
আমি যেন তড়িদাহতের মতো চেয়ে রইলাম তোমার হেঁটে যাওয়া পথের দিকে। না না আমি ঠিকঠাকই ফিরেছিলাম বাড়িতে। সমস্ত কাজের শেষে রাতের আঁধার নিবিড় হয়ে এলে উঠে এসেছিলাম আমার একলা ঘরের সঙ্গোপনে। টেবিলল্যাম্পের আলোর নিচে সযত্নে মেলে ধরেছিলাম তোমার চিঠি।তুমি আমাকে নিয়ে এত ভেবেছ!!! এতটাই ভালোবেসেছ!!! চিঠির প্রতিটি লাইনে – অক্ষরে তুমি প্রকাশ করেছ তোমার অনুভূতি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেছিলাম বারবার। তারপর সে চিঠি ভাঁজ করে রেখেছিলাম আমার বালিশের ঠিক নিচটিতে। না, ঘুম আসে নি সে রাতে। ছাদে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম কালপুরুষ যেন আকাশটাকে দখল করেছে। না জানি কেন আমার দু চোখ বেয়ে নেমেছিল উষ্ণ স্রোতের ধারা। বার বার চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল আই লাভ ইউ দীপ, আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি দীপ, তুমিই আমার সেই নীল আকাশ, যে নীল মনকে মাতাল করে দেয় অনায়াসে, অবলীলায়। 
ইতি তোমার, 
অনুরাধা। 



খাম, চিঠি আর কবিতা  // দীপকা আঢ্য
------------------------------------------------
প্রিয়তমা,

সাল, তারিখ পদবীর মতো সবকিছু বদলে গেলেও
আজও বদলায়নি বীতকালের স্মৃতি --
দু - দু'মুঠো বছর যেন অঞ্জলি দেওয়া কাল।
তোমাকে শোনানো 'লাস্ট রাইড টুগেদার' - মনে আছে?
যদিও আমাদের একটাই সাইকেল
সবকিছু চলে গেলে পড়ে থাকে বুঝি নির্জাস প্রেম!

তুমি জানো, আজও দক্ষিণের মাঠ ততটাই ফাঁকা
যতটা বুকের ভিতর
কৃষ্ণচূড়ার ছায়াঘেরা পথ, পুকুরের পাড় 
চিলেকোঠার নির্জন ঘর
সর্বত্র উষ্ণ নিঃশ্বাস  -- ছবি হয়ে রয়েছে তোমার

তবুও। তবুও তোমার কাছে ত্রস্তপদে রেখে দিই সকল অবসর
সেখানে বসন্ত আজও
সুখ আর ভালোবাসা সম্পৃক্ত যেন দিগন্তের আকাশ
দূর তবু দূর নয়
হৃদয়ে হৃদয় ছুঁয়ে --
চিরজীবী খাম চিঠি আর কবিতায়!


                            তোমার ---মনন।



প্রিয় স্বপ্না,
তোমাকে লিখছি। তোমার কথা মনে এলে আমার প্রাণে হাজার তারা দোতারা বাজায়। তোমায় আমি কিছু লিখতে গেলে হাত দুটো অবশ হয়ে যায়। কলমের ডগা দিয়ে কত মিস্টি কথা বেরিয়ে আসে। তুমি হয়তো সেকথা বিশ্বাস করবে না। সেটা তোমার ব্যাপার। লিখলেই তোমার কাছে পৌঁছে যাবে লাল গোলাপের পাঁপড়ি হয়ে আর তুমি সেটা চুম্বন করবে। ভাবব আমার গালেই হয়তো কোটি টাকার চেয়ে দামী চুম্বনটা আছড়ে পড়েছে। কিন্তু না, এটা সত্যি নয়। তোমাকে আমি কোনোদিনও ভালবাসি নি, তোমার দিকে চেয়ে থাকলে কি তোমায় ভালবাসা যায়?
আমি আমার আত্মাকে ভালবেসেছি। মনে মনে ছুঁয়ে দেখেছি তোমার ভ্রমর কালো চুল, টিয়ার ঠোঁটের মতো নাসিকা, লাল গোলাপের পাঁপড়ির মতো তোমার ঠোঁট। সেই যে প্রথমশ্রেণিতে একসঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে চট বিছিয়ে বসতাম। শ্রেণিকক্ষ নয়, আমগাছতলাতেই বসার জায়গা। হাঁটুর উপর হাঁটু উঠে পড়ত। তখন প্রেম জাগে নি। তোমার কি মনে হত,বলোতো। এখন তুমি দেখলে আর চিনতেই পারবে না হয়তো। চুলে পাক ধরেছে। দুএক দিন দাড়ি না কাটলে খোঁচা খোঁচা সাদা দাড়ি। তুমি ভাল আছ তো?  সেই আগের মতো।
      তুমি তখন ক্লাস নাইনে। আমি ও তো। কতবার চোখাচোখি হয়েছে। সেকেণ্ড বেঞ্চে বসতাম। তুমি, কণিকা, শ্যামলী আর রুবিয়া থার্ড বেঞ্চে। স্যার পড়াতেন। মাঝেমধ্যেই দেখে নিতাম আমার আত্মা, আমার প্রাণকে।  কত মিস্টিই না ছিল সেদিনটা। উপলব্ধি করতাম, আমি ঠিক আছি তো?  কোনোদিন কথা বলি নি, বুকের ব্যথা বুকেই থেমে থেকে গেছে। আজ আফশোস আর করি না। লাভ কি, লাভ নেই কিন্তু লোকসান হয়েছে কিনা বলতে পারব না।
যাইহোক, আমার মন পড়ে থাকত তোমার কাছে। তোমাকে ভালবাসতে পেরেছি কিনা বলতে পারব না, তবে আজ আমার আমাকে হারিয়ে সর্বহারা। এটুকু বলতে পারি।তুমি নিশ্চয় আগের মতোই আছ। হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল -- আমার সেই প্রাণভোমরা। নিশ্চয় ভাল আছ, সুখে আছ। ছেলেমেয়েরা তোমার হয়তো বেশ হয়েছে। তাদের প্রেমে বাধা দিও না, লক্ষ্মীটি। আমার চালচুলোহীন মন হারিয়ে গেছে প্রেম -ভালবাসা আমাদের মধ্যে হয় নি। শুধু তোমাকে দেখেছি আর দেখেছি। মনপ্রাণ ভরে দেখেছি দূর থেকে। তোমার পথ চেয়ে বসে আছি আজও, আগেকার সেই তুমি এসে যদি ধরা দাও-- একসাথে মিলে যায় মনপ্রাণ।
   মন খারাপ ক'রো না, লক্ষ্মীটি। আমি ভাল আছি। একা একা ভাল আছি। তুমি ভাল থেকো।
       ইতি,
          তোমার সেই স্বপ্নের রাজকুমার
                         স্বপ্নিল।



                 প্রিয়তমা অনুকে
বহুদিন বাদে জানলার কার্নিশ বেয়ে আবছা তোর ছায়ামূর্তি। এবার আমার বিদায় নেবার পালা।কেমন আছিস জানতে চাইব না । বোধ হয় কেন? নিশ্চিত তুই ভালো আছিস । সবার থেকেই একে একে বিদায় নিয়েছি। লিস্ট ঘেঁটে দেখলাম বাকি রইলি শুধু তুই, তাই এবার তোর থেকে।বিষাতুর ব্যাথাগুলো বৃষ্টির মেঘ হয়ে জমেছিল অলিন্দে আর বয়ে বেড়াতে পারছিলাম না তাই ঝেড়ে ফেললাম চিঠি দিয়ে ।অনুরোধের মুখ নেই তবু ও বলতে হয় বললাম পারলে পরিস ।
শহর টা বড্ড বোরিং হয়ে জাচ্ছিল,কাজ-কর্মহীন উন্মাদের মত মত্য নৃত্যে বেহুস হ্যালোইন থেকে মুক্ত হতে পর্ণমোচীতে আশ্রয়। প্রথমে চাকরিটা তারপর ভৃত্য রামু ও শেষে গোসা ঘর (তোর ফেলে আসা)। তঞ্চকতা জিনে নেই তাই বলে গেলাম।
বিক্ষিপ্ত শব্দ গুলো কোনক্রমে সাজাবার চেষ্টা করলাম অনভ্যস্ত হাতে। সামনা সামনি হবার ইচ্ছে গুলো মরে গেছিল আগেই দাহ করে শেষে লিখতে বসেছিলাম।তোলপাড় করা বুকের মাঝের অক্ষর গুলো কোনক্রমে বিন্যাস শুরু ও শেষের মাঝে একটা দন্ধ ছিল। লাঞ্ছিত,অনাদৃত,অপদার্থরা ভালবাসার যোগ্য নয়। যোগ্যতম উদবর্তে আন ভ্যাকেন্টই রইলাম। সমাদৃত হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে কোন ক্রমে অন্যত্র।
রুক্ষ সরজমিনে হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটটার বলরুমে রাখা ছোটপর্দার ছোট ছোট চরিত্র গুলো মাঝ রাতে গিলে খাচ্ছিল কথার জালে, ম্যাগাজিনের পেজের ইংরাজি বর্ণমালা গুলো বড্ড অসহ্য হয়ে উঠেছিল।তাই অগত্যা সাইকিয়াটিস্টের পরামর্শ,নিউ লং জার্নি কিছুটা রোমাঞ্চ রোমহর্ষ বটে তাই চললাম।
তবে কোনদিন যদি ফিরি তাহলে আরেকটা চিঠি দেব।সেটা সুখান্তরের পুরোনো টিলায় বসে পেয়ালায় ঢেলে চায়ের প্রস্তাবের হয়ত। আপাতত জ্বালাতন ভুলিয়ে বিদায় নিলাম ।
ইতি 
   প্রান খোলা হাসি 


     প্রিয় আমার 
        কি করছ তুমি এখন ? পড়ছ ? তোমার প্রিয় গিটার তুলে নিয়েছে হাতে ? ভেসে গেছ সুরের মায়ায় , সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পাড়ে ?হতেও পারে । তোমার গানের ভেলায় আমাকে ভাসিয়ে নেবেনা , প্রিয়তম আমার ?   
জানো , আজ না কলেজে একটা মজা হয়েছে । এস . কে . বি. স‍্যার আসেননি । আমি অলস অন‍্যমনে বসে বসে তোমার নাম লিখছিলাম । নাম লিখছিলাম , নাম লিখছিলাম আর নাম লিখছিলাম ......... আশ যেন আর মেটে না । হৃদয় গভীরে পাঞ্চজন‍্যের অনুরণন । মুখে সলাজ হাসি । 
ক্লাসে এলেন সুবর্ণা দি । ডাকবি তো ডাক আমাকেই ডাকলেন ! শ্রীময়ী চট জলদি খাতা বদল করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল । সুবর্ণা দি খাতা দেখে বললেন , -- কতদিন এসব হচ্ছে ?  আমি তো ঘেমে নেয়ে অস্থির । শ্রীময়ী হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল , -- ম‍্যাম , ও দারুন কবিতা লেখে । 
--হ‍্যা , ভাল লাগল । কাল আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে আনবে ।
এ‍্যাই , তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ , আমি কি করব ? আমিও পারি মশাই , এমন সুন্দর লিখেছি না , তোমারও তাকে লেগে যাবে ।
তাই বলে আজ তোমাকে দেখাবো না , আগে ম‍্যাম কে দেখাই । 
অবশ‍্য জানি , না দেখালে তুমি আমার চুল টানবে , আমার টিফিন - বাঁচানো টাকায় ফুচকা খাওয়াতে হবে ।
যদি ভাল লাগে , আমাকে কী দেবে ? 
অনেক , অনেক ভালবাসা ,। দেবে তো ? 
পাশের বাড়ির পেঁচিকে একদম ঝাড়ি মারবে না ।  Promise ? 
পেঁচির নামটা যেন কি ? সৃজনী , না ? 
না , চেয়ার ছেড়ে উঠবে না । তোমার বাজানো সুর আমি শুনছি । আমার মন মায়ায় ভরে যাচ্ছে । ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে তোমার কাছে । আমি আসছি , আসছি , আসছি । চোখ বুজে ভাব আমার কথা , আমি তোমার ই আর তুমি আমার ।
আমি জানি  , তুমি আমার কথাই ভাবছ । অনেক কথা ভাব , কিন্তু আমার জন‍্যে নতুন সুর compose করে কাল আমাকে শোনাবে তো ? আমার প্রাণ ।
ভালবাসি , ভালবাসি , ভালবাসি ........ 
                           তোমার ই আমি


তোমার জন্য
ইন্দিরা ব্যানার্জী

প্রিয়;
ক'দিন ধরেই মনে মন নেই তোমার; কারুর আচরণে, বাক্যবাণে জর্জরিত তুমি, সব মলমই অকেজো ব্যাথার উপশমে, সময়ের হাতে ক্ষত সারাবার দায়িত্ব।

তুমি শান্ত হও, সমালোচনায় শাণিত হও, উঠতে গেলে পড়তে হয়-- জানো তো তুমি, যোগ্য জবাব দিক তোমার লেখনী; দেখিয়ে দিও আলো-জল-শব্দকে বাঁধবার শৃঙ্খল অনাবিষ্কৃত এখনও

জানো তো, ছিদ্রপথে বিপদ আসে, বিপদ একা আসে না কখনও, এক বিষাদ যেন আহ্বান করে অন্য বিষাদকে; তাই তো 'শাঁখের করাত' বা 'জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ' এর মত বাগধারা

কলম যতই হারাক শব্দ ভাণ্ডার অফুরান জানি; প্রেরণা যে কেউ হোক সৃষ্টি একান্তই স্রষ্টার

অন্য আমিতে পূর্ণ কর অপূর্ণ সকল অধরা
শুভকামনায় শুভেচ্ছায় তোমার অন্তরতম অন্তরঙ্গ...
গোপন মন


প্র তি,
কেট টপে বন্দী রমনী..,💘
খানিকটা সকালের হলদে আলো সরিয়ে..
'কেট উইনস্লেটের' ওই ফেভারিট টপ
ছুঁয়ে গেল.. হেমন্তের প্রেমিক মন l

একটা হৃদয়-একটা প্রেম -একটা মুক্তি...
আমার না হয় ক্যাপ্রিও
ভাইরালে না হয় ওড়াবো চুম্বন..
মুঠো মুঠি করে আঁকড়ে নেব,
না হল টাইটানিক বা কোন বিগ বাজেটে..
তবে ক্ষতি কি?... হয়ে যাব প্রেমের বণিক,
ছুঁয়ে যাব... সীমাহীনের প্রান্তর..
প্রতিটি বন্দর ফুড়ে তোকে খুঁজে নেব,
তোর হাসিতে প্রেমের সিকুয়েল l
ময়দানে ময়দানে অস্হির হাওয়ায়..
বুকের মাঝে লুকিয়ে তোকে,
প্রেম জ্বালিকা শিরায় শিরায়..
ছড়িয়ে দিবি প্রেমের আস্বাদ.. l
ধরে নিও 'খাম-হীন' ওপেন লেটার..
সকল খামেরা জ্বলন্ত মিথ্যে বুকে,
ক্লান্ত শীতঘুমে..,
ঝিমোতে ঝিমোতে একদিন....
তুমি নির্ভর না হয় আমি-হীন,
না না ছাতিম নয়..তোমার ছায়া সঙ্গী..,
চিরকাল থেকে যাবো,
তোমার 'আদি অন্ত' নীরবতায়....
বাষ্পীভূত নশ্বর দেহের প্রতি শ্বাসে,
-'তোর থেকে একটা দিন বল না ভালবেসে.. '
ই তি,
অ কবি অ প্রেমিক (মেঘ)


প্রেম পত্র
-------------
শ্যামাপদ মালাকার

অশোকের রক্তস্নাত কলিঙ্গেরর বুকে দাঁড়িয়ে সেদিন যে কথাটি বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম এই রক্তক্ষয়ী রাজার নিকটে বলা না বলা হৃদয়ের কতটাই বা মূল্য আছে! 
এর জন্য একটা সময় বা পরিস্হিতির অাবশ্যকতা আছে, এই রকম মনের ভিতরে তর্কবিতর্ক চলতে চলতে সহসা একদিন দৈবক্রমে,-এই নিষ্ঠুর রাজাই 'মহামতি' অশোকে রুপান্তরিত হয়ে বসল,- ভাবলাম কথাটি বলার এটাই উপযুক্ত সময়।

এই রকম ক্রমান্বয়ে সাহস ও প্রতিশ্রুতির সংখ্যাতীত চিন্তা করতে করতে একদিন শুনলাম,-ইতিমধ্যে তুমি তোমার একমাত্র মা'কে সঙ্গে করে,-এরাজ্য ত্যাগ করার চরম সিদ্ধান্ত স্হির করে ফেলেছ।

সঙ্গে সঙ্গে বজহত তরুর ন্যায় নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম!
একদিকে রুধিরপ্লাবিত কলিঙ্গ, অন্যদিকে মনের কথাটি না বলতে পারার নিজের মধ্যে অক্ষমতা,-দুটোয় মিলেমিশে বুকের হৃৎপিণ্ডটা নিংড়ে ছিড়ে ফেলতে লাগল!।
শ্রাবণের নদীর মতো দুই আঁখিমূলে নিরবে প্লবন হানিল। উদ্বেলিত বুকের কম্পমান অধরে শুধু একটি কথাই বেরিয়ে এল,-"তুমি শুধু আমার!"।

এর পর দু'জনের আর সাক্ষাৎ হয়নি,-মাঝখানে কেটে গেল ক'য়েকটা যুগ!।

বিবর্তনের স্রোতে কত কিছুই না পরিবর্তন হল, কিন্ত বিধি সকল নিয়ম অপরিবর্তিত রেখে,-আবার তোমাকে-আমাকে একি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, হয়তো সেই না বলা 'কথাটি' বলার জন্য।

অাজ মনে হয়,-যে কথাটি সেদিন একটি অশোকের দেশে বলতে পারিনি,-সে কথাটি কি আজ হাজার অশোকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে যেতে কি পারবো!
সে অশোক তো ক্ষমতা হত্যায় বিশ্বাসী ছিল,-কিন্তু আজকের অশোকরা,-মা'য়ের বুকে পা রেখে সতীত্বময়ী বোনদের মাধূর্য্যকে কটাক্ষ করে, সে অশোক তো ধর্মের প্রতিপালক ছিল,-আর আজকের অশোকরা,-দামালের হৃৎপিণ্ড কেটে আসুরিকদর্পে শত্রুর নিকটে মূল্যায়ণ করে। 

আজ পরম পবিত্র ভালবাসা ইন্দ্রতৃপ্তির লালসায় পর্যবসিত।
ভালবাসার নামে প্রিয়জন- প্রিয়জনের বুকে অবিশ্রান্ত অাঘাত হেনে চলেছে।
একজন পুরুষ এক নারীতে ক্ষান্ত নয়, ঠিক তেমনি,-একজন নারী এক পুরুষে স্হির নয়! চিরন্তন - শাশ্বত ভালবাসা আজ বেশ্যালয়ে রুপান্তরিত!

-"এই রকম একটি চরমদশার বুকে দাঁড়িয়ে, সেই না বলা 'কথাটি' আমি কেমন করে বলবো,--রক্তস্নাত কলিঙ্গের বুকে দাঁড়িয়ে আমি শুধু তোমায় দেখেছি-- আমি শুধু তোমাকে দেখেছি-- আমি শুধু তোমাকেই দেখেছি!"।।



               ও আমার 
পাগলাসোনা, 
       তোমার মিষ্টি চিঠিটা বাংলা বইয়ের মধ্যে পেলাম ।পড়ার ফাঁকে কখন না জানি রেখে দিয়েছো ।কেউ যদি দেখে ফেলতো কি হত বলতো? খুব বীরপুরুষ দেখছি ।চিঠিটায় তোমাকে আমার দেওয়া সেই Special scent টা মাখানো ছিল তাই বুঝতে পারলাম ।তুমি লিখেছো আমি তোমাকে ভুলে যাব একদিন, বড়লোকের মেয়েরা নাকি এই রকমই হয়।না গো, বিশ্বাস কর তোমাকে কোন দিন আমি ভুলতে পারবো না ।তোমার ওপর আমার ভরসা আছে, আমি জানি joint এ তুমি ভালোই rank করবে ।
     মায়ের খুব শরীর খারাপ, তাই কাল স্কুলে যাওয়া হবে না ।তোমাকে একদিন না দেখলে আমি থাকতে পারি না গো ।কেন জান? 
আমার পরাণ যাহা চায়,   
তুমি তাই গো, 
তোমা ছাড়া আর এ জগতে 
মোর কেহ নাই, 
কিছু নাই গো ।
কাল স্কুলে যাব না, কিন্তু মনটা তো তোমাকে দেখার জন্যে ছটফট করবে ।কাল ঠিক বিকেলে পাঁচটায় আমাদের বাড়ির কাছের পার্কটাতে অবশ্যই এসো ।না এলে আড়ি, আড়ি, আড়ি ।অনেক ভালোবাসা আর চুমু নিও ।
       ইতি-
        তোমার হৃদয় - কমলিকা


      
রেবন্ত ,
       তোমার জন্য মনখারাপ গুলো আমার চারদিকে ভাইরাস হয়ে অদৃশ্য উড়ছে আর আমার জল হাওয়া নিশ্বাস চোখচাওয়া পড়ে ফেলছে যত ভুঁইফোঁড় ... বাড়িয়ে দিচ্ছে স্বান্তনা ছড়িয়ে দিচ্ছে নতুন মায়ার আহ্বান ... আমি সময় চেয়েছি কিন্তু ভাবিনি কিছুই ... আমি তো জানি চেনা দুঃখ আমায় পাগল করলেও সময়ের সাথে অধঃক্ষেপ রয়ে যাবে তুমি ... যেমন আছে আমার আর সব পাওয়া না পাওয়া ক্ষণিক পাওয়া ভালোবাসার জনেরা ... যাবনা , আপাতত যাবো না দূরের দুঃখের কাছে ... আমার এখনো অনেক অবগাহন বাকি তোমার প্যাসিভ থাকায় ... তবু তো কিছু আছে আমার ... যার জন্য পিঁড়ি পেতে রেখেছি ... হঠাৎ ঝলকের মত মুচকি হেসে বলে উঠবে ... ' বাওয়া'... হা হা ... আমার দুটো , তোমার তিনটে ... এই নিয়ে ভালো থাকা ... এই নিয়ে প্রাণপণ প্রেমে থাকা ... এস আমার নেই কারণের দুঃখ বিলাস , আমায় আরও আরও আদরে বাঁদর করো ...
তোমায় দেখি আর পাগল পাগল লাগে । পারলে আরেক জন্মের বর চাইতাম ঈশ্বরের কাছে । তোমায় চেয়ে রাখলাম আগামী জন্মের জন্য । আর এই জন্মের হিসেব তোমার নিজের হাতেই সোনা । চাইলে ছুঁয়ে যেও এই নশ্বর দেহ । না পারলে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখ কোন কন্দরে কোন তন্ত্রীতে বাজে ভায়োলিন তোমার জন্য । পারলে আমার মনের গ্রে ম্যাটার হোয়াইট ম্যাটার খুলে দেখিয়ে দিতাম কি বলে ওরা , কার ছবি আঁকে । আমার হরমোন ফেরোমন  লহু স্বেদ সিবাম সিরাম কাকে চায় । আসবে সোনা ? হয় হোক মোহভঙ্গ আমায় দেখার পরে , কিন্তু একবার , আমার জীবদ্দশায় একবার এসে দেখে যেও কে ভালোবাসে আরও বেশি । 
তোমার ভালোবাসা শুধু নয় , আমি হতে চাই তোমার স্নানঘরের নগ্ন বিষাদ , কান্না , অভিমান , একা লাগার কাঁধ , নির্ঘুম রাতের কোল ... 
আমায় নেবে সোনা ? নেবে বন্ধু করে ?
ভাল থেক সোনা,
আজ সারারাত কথা বলব, আজ সারারাত অঝোর ঝরবে আমার উথাল পাথাল অকাল শ্রাবণ । তুমি বলতে না তুমি ই শুধু এগিয়েছিলে , তুমি কি দেখেও দ্যাখ নি আমার ব্যগ্রতা ?
'আমার কিছু কথা ছিল , তোমায় বলার , শুধুই তোমায় , যেই না আমি বলতে গেলাম , সেই কথাটা হারিয়ে গেল ... '
পেয়েও কি হারালাম তোমায় ? নাকি আমি একটা স্বপ্ন দেখে উঠলাম ? হতে পারে । এখনো ঠোঁটে লেগে আছে তোমার নিকোটিন , এখনো সমস্ত শরীর কাঁপিয়ে জ্বর , এখনো অনিদ্রার মাঝে অকারণ জ্বলন , এখনো চোখ জুড়ে ঐ নিষ্পাপ মুখটা , এখনো অনুভব করছি আমার বুকে চেপে রাখা তোমার মাথা , চুলে বিলি কেটে আদর আর ঠোঁট ডুবিয়ে শুষে নেবার চেষ্টা তোমার যত অসহায়তা , কষ্ট , রাগ , অভিমান । এখনো আশা করে যাওয়া ফিরবে , তুমি ফিরবে , ঠিক চিনে নেবে তোমার জন্য বাড়িয়ে রাখা হাত , পিঁড়ি পেতে রাখা ভালবাসা , এক হৃদয় শুভেচ্ছা , তোমায় অনিঃশেষ চাওয়া জনিত অন্যায় দাবী , তোমায় পোষ মানাতে চাওয়া ভালোবাসার ফাঁদ ... আর , আর নেহাত ছেলেমানুষি , কিছু পাগলামি , কিছু ঠোঁট ফোলানো অভিমান , রাতভর যে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ডুবিয়ে ভাসিয়ে হাসিয়ে কাঁদিয়ে যাচ্ছে , তার কাছে কোন অনুযোগ নেই , কোন দিব্যি দেয় নি কেউ যে তোমায় তা পাত্তা দিতেই হবে । 
বরাবরই হয় দেখি এমন , বলতে চেয়েছি যা , কথা বিট্রে করেছে । যখন ভেঙ্গে গেছি ঝড় বাদলে , অন্তঃস্থ বর্ষণে , বলতে চেয়েছি কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তোমায় ছাড়া , মুখে বলেছি , ' তুমি পচা '।
জানি , তুমি ছড়িয়ে আছ বহুধা বিভক্ত , তোমার জন্মাবধি যাপন জলে । জানি , আমি সেখানে তস্করের মত সিঁদ কাটার চেষ্টা করেছি । তবে এটুকু বলব , যা দিয়েছ তা আমার বেঁচে থাকার রসদ । আরও কিছুদিন সূর্যে সূর্যে কাটবে ।
তোমায় খোলা চিঠি লিখছি আজ । আগে লিখিনি এমন নয় । আদতে অনেক রূপকের আড়ালে অনেকবার গিয়েছি তোমার দুয়ারে, কি চাইতে কে জানে! তবে সবচেয়ে বেশি যা অনুভব করেছি তা হলো, অপার শান্তি মেলে এখানে। এ যেন এক স্বচ্ছ তোয়া নদী, যার কিনারায় দু দণ্ড বসে জিরনো যায়। যার কাছে অকপট বলে ফেলা যায় মনের গহীন গোপন অন্ধকার থেকে উৎসারিত যাবতীয় ভয় ভুল পাপের ইতিবৃত্ত। যার তীরে এসে বসা যায় চরম ভাললাগায়, পরম কে ছোঁয়া যায় হৃদয় পেতে দিয়ে। অপূর্ব সে প্রশান্তি, অপরূপ সে আলো, যাকে আমি বলি আমার ঈশ্বর! আমি স্রেফ ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম আমার চোখে তুমি কি, কেন করি এমন আমি তোমার জন্য। এ শুধু আমার অনুভব, যাকে বুকের ভেতর সযত্নে লালন করি আমি, যাকে ফিরে ফিরে দেখি অপত্য মায়ায়! আমি যেন এক আলোকবৃত্তে আছি, যেখানে লুকিয়ে আছে আমার আনন্দ, যেখান থেকে উৎসারিত হয় আমার কিছু বলতে চাওয়ার আকাঙ্খা, যাকে দেখে মনে হয়, এখনো বাঁচা যেতে পারে আরও কিছু দিন, কাটান যেতে পারে আরও কিছু সময় সূর্যে সূর্যে! জানি না এ চিঠিও ছিঁড়ে ফেলবে কিনা, আমার আনন্দ তো লিখেই! এই টুকুই আমার থাক, একান্তে.....................।।
ভালো আছি, ভাল থাকার আপ্রাণ চেষ্টাকরছি আজ । এটা খুব জরুরি , তোমায় শান্তি দেবার জন্য । তবুও প্রতি মুহূর্তে ছিঁড়ে ফুঁড়ে আসছে একরাশ স্মৃতির বৃষ্টি , তার তোড়ে আছাড়ি পিছাড়ি করছে আমার জ্যান্ত লাশ । আমি জানিনা , কি বলে একে । ভাল আছি , ভাল থেক । ভাল থেক , আজ যখন একটা আপদ বা বিপদ পরিত্রাণ দিয়েছে তোমায় । ভাল থেক , যখন আলটপকা উপদ্রব রূপি এই আমি বোবা কালা অন্ধের ভূমিকায় । ভাল থেক , আজ কেউ ঘ্যানঘ্যান করবে না তোমার কানের গোরায় ।  কেউ অসময়ে কবিতা শোনানোর আবদার জানাবে না।  ভাল থেক আজ , যখন তুমি গ্রিন হলেই ছুটে আসবে না কিছু ইন বক্স মেসেজ , পড়াবে না তোমায় নিয়ে লেখা নতুন কবিতা, ভাল থেক , খুব ভাল থেক । এই সব মান অভিমানের থেকে অনেক দূরে তোমার নিজস্ব ভাললাগায় , ভাল থেক তোমার শব্দ খেলায় , ভালথেক তোমার তুমি কে নিয়ে তোমার আত্মরতির একান্ত জগতে .................................।
                            - বল, বল, আমি কে তোমার




উড়ো চিঠি(স্মৃতির পাতা থেকে) ★
        --©মহঃ ওলিউল ইসলাম
নিহা,--
হয়তো তোমার মনে আছ,
কিংবা নেই|
--- মটর বাবুর বাগান বাড়ির বিকেল সময় গুলো।
এখনো হৃদয়ের সোনার খাঁচায় তালাবন্দি|
--স্মৃতি গুলো পুষে রেখেছি সোহাগ-আদরে|
তোমার সেই দো'ফলা চুলের লাল ফিতার ফুল।
শুভ্রকোমল আলতা রাঙা পা,
এক পায়ের কেতা দেখিয়ে শরীর নাচিয়ে----
ছল্ কিত্ কিত্ খেলা|
আমি টায়ার দৌড়ের খেলা ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম।
--সে যে কি সুখ!!
এখনো খুজি |
মনে আছে,কষ্টও হয়।
--সেভনি একবার হক্কে করে তোমাকে তেদ্দা করে দিয়েছিলো।
বুঝতে পেরেছিলাম তুমি দুঃখ পেয়েছিলে|
তোমার পাকমাটির বাঁধ দেওয়া খেলা ঘর থেকে মাটির পুতুল চুরি করেছিলাম।
যাদের তুমি শখ করে আলতা ও সাফিনা বলে ডাকতে।
তোমার খেলার ঘর 'মুনতোর' দিয়ে
বন্ধ করে রাখতে|
---"অলম্ কাঠি,বলম্ কাঠি ---যে যাবি তার বুক্কে কাঠি"|
এই ছিলো  'মুনতোর'|
বলতে--"যে এই ঘরে ঢুকবে,  ভূতে তার বুকের হাড় ভাংগবে রাতে"।
তবুও আমি তোমার আলতা -সাফিনা কে নিয়ে পালিয়ে ছিলাম।
জান?আমি তাদের কত আদরে রেখেছিলাম !
তাদের খাওয়াতাম,গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম।
বলতাম "সাফিনা ঘুমাও,তোমার মা আসবে এখুনি|আব্বুকে বকা খাওয়াবে তোমরা?
আমি তোমার পুতুল ছেলে-মেয়ের আব্বাও হয়েছি।কি আনন্দ!!
--দুই দিন কেঁদেছিলে আলতা সাফিনার জন্য|
ঐ হারামজাদা লালকা না বল্লে আমি ধরা পড়তাম না,আলতা সাফিনা কেও ফেরত দিতাম না।
তারাতো আমার কাছে ভালই ছিলো।
তোমার পিসিকে দিয়ে মার খাইয়ে কেড়ে নিয়ে ছিলে আলতা সাফিনা কে।
মনে আছে, যাওয়ার সময় তোমার পিসির সেই ডর জাগানো বাণী।
--"জাস অই পাড়া দিয়্যা,তোকে উল্ট্যা কোর‍্যা টাংভো"।
আমি ছ'দিন যাইনি।তোমাকে দেখার জন্য মন ছট্ ফট্ করেছে।
আর তখনি পিসির কথা মনে পড়েছে।
হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে।তখন বোধ হয় ক্লাস ফাইভ। লালকার মুখে শুনেছিলাম,তুমি নাকি শহরে চলে গেছো।
তোমার খালাজানের কাছে। ওখানেই নাকি থাকবে।
দাদির মুখে শুনেছি, তোমার মায়ের  ক্যান্সারে মৃত্যুর পর তোমার আব্বু তোমাকে আর আগের মতো ভালোবাসতো না।
--কিছু দিন পরে গাঁয়ের রজিনা বেওয়া কে বিয়ে করেছিলো।
তার পরে তো ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে|
ছোট্ট নিহা কে কতদিন খুজেছি|
পাই নি।
কবে কবে তুমি নিহারীকা বেগম হয়ে গেছো। ফিরেছো গাঁয়ে।
সতেরো ক্লাস পাশ হয়েছো।আমি ফাইভ থেকে আর যেতে পারিনি আগে।বাপজান পড়ালো না।খুব কেঁদেছি।ওই চায়ের দোকানে হাতলুড়কা বানালো।
কিন্তু অপেক্ষায় ছিলাম তুমি একদিন আসবে।
--কিছু কথা বুকের ভেতর জমে আছে সে গুলো বলে একটু হালকা হবো।
আমিও বড় হয়েছি,আর তুমিও-----।
এখন আর বুঝতে-বোঝাতে অসুবিধা হবে না।
কিন্তু পোড়া কপালে কয়লার গুড়ো। শুনলাম এক নাম করা আইনজীবীর এক মাত্র ছেলের বৌ হতে চলেছো।
আমার জমানো কথা গুলো তালা বন্ধই থাকলো।
আমি জানি নসিব খারাপের কোনা চিকিৎসা  নেই, ঔষধ নেই।
তবে আমার হৃদয়ে ভালোবাসা যেটুকু আছে সব তোমারি নামে।
মন বলছে আর একটু অপেক্ষায় থাকতে।জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে।
অন্য মেয়ে কে বিয়ে করা বড় বেইমানী হবে হয়তো।
--তুমি সুখে থাকো, তাহলেই আমি শান্তি পাবো।
একদিন গল্পের ছলে আমার এই মনের কথা তোমাকে  শোনাবোই।
সেই মুহুর্ত কবে আসবে জানিনা।
বসে আছি অপেক্ষায়।
স্থান -                                  ইতি--
তিন টাকার                      চা ওয়ালা মোড়                                       
                           তাং-১১/০৯/১৬
----+----+----+-----+-----+---

[]শব্দার্থ -
১|হক্কে-জোর করে চাপিয়ে দেওয়া।
২|তেদ্দা-তৃতীয় স্থান।
    (প্রচলিত শব্দ)


দোলা ঘোষাল 
Dear,
         
         তোমাকে আর কিভাবে সম্বোধন করব বুঝতে পারলাম না।তাই শুধু'Dear'বলেই সম্বোধন করলাম।জানি না জীবনে চলার পথে তুমি কতটা বদলেছ। আমি তোমায় সেদিন যেতে বলি নি।তুমি সেদিন নিজেই চলে গিয়েছিলে।ভাল আছ সুস্থ আছ শুধু এইটুকুই জানি।জানি না নতুন কোনও সঙ্গিনীর সঙ্গে জীবন শুরু করেছ কিনা।আমার কোনও অপেক্ষা নেই দিন গোনা নেই।শুধু আছে দিনযাপন।হয়তো কোথাও প্রতীক্ষা আছে কিংবা হয়তো নেই।
                   আজ শুধু এইটুকু থাক্।
                         ভাল থেকো।
"ভাল আছি ভাল থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
                                                     ইতি
                                                             তোমার
                                                                          পলা।




১০. বিশেষ বিভাগ ( ধারাবাহিক)


তান্ত্রিক হত্যা রহস্য(প্রথম পর্ব)
-নিজামউদ্দিন মোল্লা


সাইকেল টা ফেলে রবি দৌড়ে পালাল।ঠিক এমন সময় লোকের সমাগম বেড়ে গেল, রাস্তার ধারে পড়ে আছে এক তান্ত্রিকের লাশ, মুখে ফ্যানা উঠেছে, মনে হচ্ছে বিষক্রিয়া। 
কিছু লোক যখন যখন বলা কওয়া করছে, নানান কথা। ভিড়ের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি টাই, পকেট থেকে মোবাইল বার করে ফোন করল পুলিশে।

আধঘন্টা লাগল পুলিশ আসতে,যতই হোক গ্রাম কিন্তু মানুষ সংখ্যা প্রচুর এখানে, গ্রামের নাম রামচন্দ্রপুর। থানা বেশি দূর নয় ওই ৩-৪ কিলোমিটার হবে। পুলিশ লাশ টা ভালো করে।  তার পর ডোমেরা এল লাশ তুলে নিয়ে গেল।

প্রথমে গ্রাম টার বর্ণনা দিই,এটাকে গ্রাম বলা চলে না।তার কারণ হল, হাওড়া জেলার অনেক গ্রাম আছে, যেটা কে মুক্ত শহরের অংশ বলতে পারো।রাস্তাঘাট উন্নত,বাড়িঘর প্রায় সবই পাকা, দু একটা ঘর টালির।

লাশ টা পড়েছিল এক আদি ভগ্ন  বাড়ির সামনে। বাড়িতে কেউই থাকত না। শুনেছিলাম ওটা নাকি ব্যারিস্টার জয়ন্ত সান্যাল এর বাড়ি। ব্রিটিশ আমলে তিনি নাকি বিলেতফেরত। 

পরের দিন সকালের পুলিশের আগমন ঘটল, সাধারণ মানুষ একটু অসুস্থতাই অনুভব করছে।এর প্রত্যক্ষ কারণ ও আছে, কারণ তারা পুলিশের ঝামেলা পছন্দ করে না, তারা খুবই ব্যস্ত। পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা শুরু করে দিল, কিন্তু কি আশ্চর্য কেউই চেনে না এই তান্ত্রিক কে।না গ্রামের একটা মানুষ চেনে, যিনি গ্রামের সবচেয়ে লম্বা মানুষ শশধর কুন্ডু। সে বলল, " স্যার এই লোকটাকে আমি চিনতাম।"
পুলিশের কনস্টেবল একটু গম্ভীর ভাবেই শশধর কে জিজ্ঞাসা করল, "লোকটি কে? কি নাম? কিছু জানো?"
 তখন শশধর বলল, " না শুধু একটাই জানি, লোকটি খুব বড় তান্ত্রিক।এই দুইমাস হল এখানে এসেছেন।আসলে কি জানেন আমরা হিন্দু।তান্ত্রিক বা সাধুদের একটু বেশিই সন্মান করি।আর ওনার ক্ষমতা ছিল আশ্চর্য মানের।"
 "কি রকম?"- পুলিশকনস্টেবল জিজ্ঞাসা করল।
 "আর বলবেন না স্যার, ওই যে দোতলা বাড়ি দেখতে পাচ্ছেন, ওটা আমার বাড়ি।আমি তান্ত্রিক মহারাজ কে দেখেছি,উনি খুবই কম বাইরে বেরোতেন।আর কারোর সাথে কথাও বলতেন না। কিন্তু কি জানেন, গ্রামের সকলকে  চেনেন,আর তাদের গুপ্ত খবর  ও  জানেন।"
"গুপ্ত খবর জানে কিভাবে? আর তুমিই বা বুঝলে কিভাবে?"
"তা জানি না। কিন্তু উনি গুপ্ত খবর জানে।কারণ কিছু দিন আগে একবার আমার গুপ্ত কথা উনি এসে আমায় বলে গেলেন। আমি ওই দিন থেকেই ভক্ত হয়ে গেলাম।"

পুলিশ আরো অনেক প্রশ্ন করে চলে গেল।আর বলে গেল," এই খুনের রহস্য সমাধানের জন্য সাহায্য করুন।কারণ খুনি যদি আপনাদের মধ্যে থাকে,তাহলে আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা আসতে পারে, সো প্লিজ হেল্প।এতে লাভ আপনাদেরই হবে।"


পুলিশ ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। লোকের ভিরে সামনের রাস্তা প্রায় জ্যাম।আর স্কুলের বাচ্ছাগুলো সব আতঙ্কে,ভয়ে ভয়ে মাথা নীচু করে যাচ্ছে।


তান্ত্রিক হত্যা রহস্য(দ্বিতীয় পর্ব)
-নিজামউদ্দিন মোল্লা

একটা শান্ত এলাকায় এই অস্বাভাবিক হত্যাটা চাঞ্চল্য পড়ে গেল। মানুষ জনের মধ্যে একটা অস্বস্তি আস্তে আস্তে কিভাবে জন্মালো তা  নিয়তিই জানে। শুধুমাত্র ভির হয়েছে আজ ওই পশ্চিমের কামাখ্যা দেবীর মন্দিরে।সবার ধারণা কালকের সেই  তান্ত্রিক, যার মৃতদেহ রাস্তায় পাওয়া যায়, তিনি খুব বড় কামাখ্যা দেবীর ভক্ত  তাই যদি দেবীর অভিশাপ হয়, এই ভেবে গ্রামে  আরাধনা বেশ জমজমাট হতে লাগল।

এবার  এই সময়ে পুলিশ এর চেনা পুলিশ টা কিছু সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে চলে আসে।  ঠিক  জয়ন্ত সান্যাল এর আদি পুরানো বাড়ির সামনে এসে, চারিদিকে তাকাতে লাগল, মনে হয় স্থানীয় কাউকে খুঁজছে।ঠিক এমন সময়ে, সামনে দিয়েই যাচ্ছিল বিন্দুমিত্র দাস।এই বিন্দুমিত্র দাস ব্যবসায়ী, সম্ভাবত সে ব্যবসার জন্যই যাচ্ছিল, কারণ এই সময়ে সে নিজের দোকানেই যায়। পুলিশ টা বিন্দুমিত্র কে দেখে বলল, " এখানে একবার এস তো!"
  "আমাকে ডাকছেন?" বেশ নরম সুরেই বলল, বিন্দুমিত্র দাস।
তৎক্ষণাৎ পুলিশকনস্টেবল হ্যা বলবে সেটা  ইশারায় বলল।আর বিন্দুমিত্র এসে বলল, "হ্যা বলুন।"
 "আচ্ছা এই পুরাতোন বাড়ির ভিতরে যেতে চাই, সার্চ করার জন্য। কিন্তু বাড়িটার অবস্থা কিছুই জানি না, তাই আপনি আমাদের সঙ্গে থাকলে ভালো হতো।     
 না বেশিক্ষণ নয়, পাঁচ -দশ মিনিটের মত।"
কথা টা শুনে বিন্দুমিত্র বলল, " নিশ্চয় চলুন।" আর যেতে যেতে বিন্দুমিত্র, পুলিশকনস্টেবল কে প্রশ্ন করল," তা স্যার একটা কথা বলার ছিল। আসলে, তান্ত্রিক এর মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে একটু বলবেন?"
পুলিশ একটু চুপ করেই,তার পরেই বলল, " সেটাই রহস্য, তার শরীরে সাপের বিষ পাওয়া গেছে, এতে বোঝা যায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু। কিন্ত ময়নাতদন্তে সাপের কামড়ের কোনো দাগ পাওয়া যায়নি। "
 বিন্দুমিত্র শুনেই অবাক হয়ে গেল। সে হয়ত বিস্ময় হয়েছে তাই প্রশ্ন টা এইভাবে করল," আচ্ছা স্যার ওনার নাম, পরিচয় জানলেন কি?"

পুলিশ আর বিন্দুমিত্র প্রবেশ করল, আর পুলিশ বলল, " বলছি সব বলছি।"

ক্রমশঃ 






রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে

                      রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে                                                                            মিথ্যুক ভা...