Monday 4 March 2019

রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে


                      রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে 
                                   
                                     মিথ্যুক



ভালোবাসাকে লেখা আমার কিছু অমূল্য চিঠি 
১।।
Dear love ,

আজ এক বছর পর এই জন্মাষ্টমীর সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে তোকে একটা চিঠি লিখছি । ভাবতে পারিস , আজ হটাৎ কেন ! এত দিন পর তোকে মনে পরল ! উত্তরে আগেই জানিয়ে রাখি , মনে তোকে রোজ পরে , প্রতি মুহূর্তে তোর জন্য বুকটা হাহাকার করে । মানতেই পারি না যে তুই আজ আমার সঙ্গে নেই , আর তাই বারবার খুঁজি তোকে , অবশেষে ভুল ভাঙে । 
আজ জন্মাষ্টমী , কৃষ্ণের জন্মদিন । কৃষ্ণ মানেই ভালোবাসার প্রতীক আর তাই আজ এই চিঠিটা লিখতে বসলাম । প্রথমেই বলি ধন্যবাদ তোকে , আজ যে এত নির্ভেজাল অভিনয় করে বেঁচে আছি , এ তোর জন্যই । তুই সেদিন শিখিয়েছিলিস যে তোকে ছাড়াও বর্তমানে বেঁচে থাকা যায় , হাসা যায় । দ্বিতীয়টা তবে পারি নি । ওটা অভিনয় করে যাই সবার সামনে । আজ এক বছর হয়ে গেল তোর সাথে কথা হয়েছিল । আর এই একটি বছরে অনেক পরিবর্তন এসে গেছে । জানিস , তোকে তো বলাই হয়নি , আর বলবো বা কি করে , আগের চাকরিটা ছেড়ে দেবো , একটা আরো ভালো চাকরি পেয়েছি । সেই ছাড়া নিয়ে বেশ চাপে রয়েছি । কারণটা আর নাই বা শুনলি ।।
এদিকে বাবার শরীর টাও বেশ খারাপের দিকে, দিন কে দিন । এখন বেশ কষ্ট পাচ্ছে । চলতে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছে , বাড়িতে মা একলা আর এই বর্ধমান শহরে আমি ভীষণ একা , খুব চাপে থাকি । মাঝে মাঝে রাতে খাওয়া দাওয়া টাও ঠিক মতো করা হয় না । এখন বন্ধু বলতে এই ফেস বুক আর আমি , কথা হয় , বা বলতে পারিস কথা বলি এরই সাথে মাঝে মাঝে । খুব একটা অনলাইন থাকাও হয় না , আজকাল । 
একটা জিনিস বলবো , রাগ করিস না যেন । করলে আই এম সরি । মাঝে মধ্যে তোর একাউন্ট টা লুকিয়ে চেক করি । কি করবো বল , তোর জন্য খুব মন কেমন করে রে । ভালো লাগে না আর । মাঝে মাঝে কেঁদে মনটা হালকা করে নি । কেউ তো আর এসব শুনবে না , আর বললেও ঠাট্টা করবে আমাকে নিয়ে । ওরা রোজ প্রেম বদল করতে পারে , তবে আমি তো পারি না । তোকে ছাড়া ভাবতেই পারি না , কাউকে । আজ ও তুই আছিস জীবনে আমার । 
লেখাটা একটা বদ অভ্যেস হয়ে দাঁড়াচ্ছে । একটা নেশার মতো , তোর দুঃখ গুলো এরই মধ্যে পুষে রাখছি । আসলে তোর মতো পারফেক্ট কাউকে পাইনি আর পাবোও না । সবাই এখন ভেজাল মেশানো । শুধু লেন দেন এর সম্পর্ক । বাড়িতে প্রায় চাপ দেয় বিয়ে করার জন্য । না বলে দিয়েছি । কথা দিয়ে তোকে কথার খেলাপ করি কি করে ?
তোর খবর কি রে ? কেমন আছিস ? মা কেমন আছে ? আর বাবা ? চাকরির চেষ্টা করছিস না ছেড়ে দিয়েছিস । লেগে থাক , আমি চাই তুই অনেক বড় পোস্টে চাকরি কর । শেষ বার বলেছিলিস , তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে । জানি , বিশ্বাস করি যে ওটা মিথ্যে ছিল । তুই আমাকে এত সহজে ভুলে যাবি , এটা হতে পারে না । কারণ তুই তো ওদের মতো নোস । তোর চাহিদাও সিমিত । কিন্তু এই মিথ্যের কারণটা কি তা আজও বুঝলাম না রে ।
খুব ভালো মেয়ে তুই । দেখিস একটা সুন্দর বর পাবি , যে তোকে আমার থেকেও বেশি ভালো বাসবে , খুব ভালো বাসবে । 
আমি দু দিনের যোগী , ভালোবাসা কি তাই বুঝি না । তাই তো বড্ডো খেয়াল রেখে ফেলেছিলাম ।
আমার কষ্ট নিয়ে একদম ভাবিস না যেন ।দুদিনের জীবন , দেখিস ঠিক কাটিয়ে দেবো । নিজের খেয়াল রাখিস , আর বাবা মা র যত্ন নিস । চাকরি পেলে জানাস কিন্তু । অপেক্ষায় থাকলাম । আর নিজের বিয়েতে নিমন্ত্রণটা করতে ভুলিস না যেন । 
আজ চলি রে । রাত অনেক হলো , কাল আবার অফিস আছে । 

ইতি 
তোর দুষ্টু প্রেমিক 
২৫/০৮/২০১৬

২।।
Dear love , 

শুভ বিকাল । আজ শুক্রবার আর শুক্রবার মানেই সপ্তাহের শেষ । এখন দুদিন ছুটি । তাই এই মুহূর্তে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পালা । ভাগ্য আর ভগবান মানি না যদিও , সে তো তুমি জানোই , তবু ভাগ্যের কি ফের দেখো , প্রতি শুক্রবার এই চম্বল এক্সপ্রেস ধরে বাড়ি ফিরতে হয় । এই ট্রেনটি আবার গোয়ালিয়র অবধি যায় , মানে তোমার বাড়ির খুব কাছে । মনে হচ্ছে , তুমি যেন আমার জীবনে এমনি জড়িয়ে গেছো , যে যত্ন সহকারে আজও বাড়ি পৌঁছানোর পথে , এক দিশারী হয়ে ফুটে উঠছো , বার বার । ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে ছুটে চলে যাই ওই গাড়িতেই তোমার ঠিকানায় । অফিস চুলোয় যাক ।
ট্রেনে খুব ভিড় নেই , আরামে বসে বসে যাচ্ছি । নাহলে কষ্ট করে যাওয়াটা আমার পোশায় না , একটু ভারী শরীর তো , তাই আর কি । তবে আমি বসে নেই চুপ করে , তোমার কথাই ভাবছিলাম ।
এই সন্ধ্যা সাতটা মানেই এক অদ্ভুত নস্টালজিক ফিলিংস । সেই দিন গুলোর মতো যদি আবার ফোনটা বেজে উঠতো , সেই আসাতেই বারবার ফোনটা দেখি । আমার তো আর অধিকার নেই তোমাকে ফোন করবো । তুমি কি ভাববে তাতে কে জানে ? আর তাছাড়া আমি তো জানিও না যে তুমি কখন কখন ফ্রি আছো । তাই অপেক্ষা টা তোমার দিকেই ছেড়ে দিলাম ।
আজ শরীরটাও বেশ খারাপ । কাল রাত থেকে পেটে হালকা একটা ব্যথা হচ্ছে । জানিনা , এ ব্যথা কিসের । তবে , আসা করছি কমে যাবে । 
সময়টাও খুব একটা ভালো চলছে না । এই কদিনের মধ্যে দু দুবার একসিডেন্ট হয়ে গেল । একবার তো বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছিলাম । হাতের কনুই টা বেশ কেটে গেছিলো  । তবে এখন সুস্থ আছি । 
এদিকে বাড়িতে বাবাকে নিয়ে একটা চিন্তা রয়েই যাচ্ছে । সারা গায়ে আঘাত নিয়ে কি যে হবে কে জানে । এখন তো ঠিক করে বসে থাকতেও পারছে না , বয়স টাও তো কম হলো না । জানো, এখন মনে হয় , তোমার সেদিনের কথাটাই ফলে যাচ্ছে । আমি সত্যি বড় একা হয়ে যাচ্ছি ।ব্রাহ্মণের অভিশাপ , না ফলে যায় কোথায় বলো । এতেও খারাপ লাগে না , শুধু খারাপ লাগে যখন আমার বন্ধু তোমায় খারাপ বলে , ও বলে নাকি তুমি এরামি , এই পুরো গল্পটা নাকি তোমার লেখা , আর এটা আগে থেকে ঠিক করাই ছিল । আমি মানি না, বিশ্বাস করি না , ওর কথা । এই নিয়ে ওর সাথে বেশ কবার ঝগড়াও হয়ে গেছে আমার । কারণ অন্য কেউ হলেও হতো , তুমি অন্তত এরাম করতেই পার না । নিশ্চই কোনো দায় ছিল , তাই তুমি দূরে সরে গেছো । তবে , একবার আমাকে বলে দেখলেই পারতে ।
যাই হোক তোমার সে স্কুল এখনো আছে ,মানে পড়াতে যাও না ছেড়ে দিয়েছ ? ছেড়ে দিলে ভালোই করবে , সময়টা নিজের পড়ায় দিতে পারবে । মন দিয়ে , পড়া করে যাও । চাকরিটা কিন্তু চাই ।
আর কি বলবো বল ? বাবা আর মা এর খেয়াল রেখো , নিজের প্রতি খেয়াল রেখো । আর আমাকে নিয়ে যেন একদম ভেবো না । সামনে তোমার বিশাল ভবিষ্যৎ , সেই নিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করো , আর আমি তো সবসময় রইলাম ই তোমার পাশে সব সময় ।
আসানসোল ঢুকছে ট্রেন , নামতে হবে । আজ তাই আসি কেমন , পরে আবার কথা হবে । 

ইতি 
তোর দুষ্টু প্রেমিক 
২৬/০৮/২০১৬

৩।।
Dear Love ,

রাত কেটে সকাল হতে চললো । সূর্যি মামা আকাশে উকি মারছে । সকাল সকাল ওঠার পুরোনো অভ্যেস টা এখনো পুরোপুরি যায় নি । কিন্তু ফারাক তো অবশ্যই দেখছি , এই একটি বছরে । এখন সকাল টা ভালো হোক এ আশীর্বাদ কেউ আর দেয় না । তুমি দিতে , সেটাই বারবার মনে পরে কষ্ট দেয় । ভাবি মাঝে মাঝে তোমায় একটা মেসেজ করি , গুড মর্নিং , আবার ভাবি তোমার কেমন লাগবে , কি ভাববে । এসব , আটঘাট বেঁধে আর পাঠাই না । আচ্ছা , তুমি তো পাঠাতে পারো , নাকি আমায় পুরোপুরি ভুলেই গেলে । আমার আসা আর বিশ্বাস টুকু এভাবে ভেঙে যেতে দিও না , আর জানি পারবেও না ।
          আজ তো শনিবার । আমার অফিস ছুটি । বাড়িতে বসে আছি আজ চুপ করে । পড়ানোটাও আজ নেই , সব মিলিয়ে একটা ছুটির দিন , তবে আমার ছুটি নেই । নিজের কাজ করার জন্য এই একটা দিন ই তো পাই , সেটাও হাত ছাড়া করে দিলে চলবো কি করে । 
তোমার আজ কি পরিকল্পনা ? বন্ধুদের সাথে দেখা করে এনজয় নাকি রোজের জীবন । আসলে কি জানতো জীবনটা আমরা যা ভাবি , ঠিক তা নয় । এটা সত্যি খুব কষ্টের । কত যে সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় , তা বুঝি না ।  
 আজ বাড়ি এসে বুঝলাম , বাবার অবস্থা খুব খারাপ । ভাবছি , হসপিটালে ভর্তি করি একবার । মা একলা পেরে উঠছে না । আবার এটাও ঠিক , বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করলে সে দৌড় ঝাঁপ কে করবে  ? মা অতো বোঝেও না , আর পারবেও না । তুমি সাথে থাকলে অনেক সুবিধা হতো , অনেক ভরসা পেতাম । যাই হোক , যা ভালো বুঝেছ , তাই করেছ ।
তোমার খবর কি বল ? মা কি এখনো হাসপাতালে ভর্তি ? তোমার চোখে যে ফেকো করালে , তার পর আর অন্য কোনো সমস্যা নেই তো ? একটা কথা সত্যি করে বলবে , তোমার কি সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে ? না হলে , করে নাও আর হয়ে গেলে বলবো যে পার্টি কবে দিচ্ছো ? এই সুযোগে তোমার বরের সাথেও দেখা হয়ে যাবে ।
সামনে তো পুজো আসছে । ও , তোমাদের ওখানে তো বোধহয় নবরাত্রি হয় । উপোস করো নাকি , আমি তো ওসব কিছু মানি না । আমাদের এখানে অফিস সব ছুটি । দেখা করার মন হলে আওয়াজ দিও । চলে আসব । আর সেটা যে আমি করতে পারি , তা তুমি খুব ভালো বোঝো । মনে আছে স্টেট ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেখা করতে পালিয়ে গেছিলাম । এর জন্য অনেকে আমাকে বোকা বলে বাট আই ডোন্ট মাইন্ড ।
ঠিক আছে , অনেক কথা বলে ফেললাম । আবার পরে লিখবো , আজ চলি । ভালো থেকো , সবাইকে ভালো রেখো আর কি বলবো বলো ।

ইতি 
তোর দুষ্টু প্রেমিক 
২৭/০৮/২০১৬

৪।।

Dear love

সুপ্রভাত । আজ রবিবার । আর রবিবার মানে তো জানোই । সবচেয়ে প্রিয় দিন । তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথেই এই প্রিয় দিনটার গুরুত্ব টুকুও বেশ হ্রাস পাচ্ছে । আগে যখন ছোট ছিলাম এই রবিবার সকালে দশটা বাজলেই বেরিয়ে যেতাম , খেলতে আর ঠিক বারোটায় বাড়ি চলে আসতাম , কারণ শক্তিমান দেখবো । সেই দিন গুলোই বেশ ভালো ছিল । আজ কাল আর বন্ধুও নেই আর খেলাও নেই । সবাই আজ সেটল । কেবল আমি ছাড়া । 
বাড়ির কাজ করতে হয় সকাল থেকে । বাবা তো আর পারে না , তাই সকাল বেলায় বাজার করে দিতে হয় ,আর এর পর ও অনেক কাজ থাকে ,
সারা সপ্তাহের পড়ে থাকা কাজ । মা বুঝতেই পারছো ততটা বোঝে না , পারে না । সেগুলো আমাকেই করে দিতে হয় । এই দেখতে দেখতে সকাল পার । তারপর দুপুর থেকে স্টুডেন্ট আসে , তাদের দেখিয়ে দিতে দিতেই দিন পার ।আজ অবশ্য সব ছুটি । কেউ আসবে না । তাই বেশ আরাম । অবশ্য আমার ওই জীবনটাই ভালো লাগে , ব্যস্ত রাখা যায় নিজেকে ।
কাল সকাল হলেই আবার দৌড় । অফিস যেতে হবে যে । এ কোনো জীবন হলো , বলো । এই জীবন তো চাইনি । একলা একলা পচে মরছি , এটাও স্বপ্নেও ভাবতে পারি না । মাঝে মধ্যে ছুটির দিনে সুযোগ পেলে খাতা পেন নিয়ে বসে যাই । লেখালেখির বদ অভ্যেস টা আছে না ! ওটুকুই তো বেঁচে থাকার স্বম্বল । নানা জিনিস কল্পনা করি আর লিখি । সবচেয়ে বেশি কল্পনায় ভেসে ওঠে , তোর মুখটা আর তাই বেশির ভাগ লেখার বিষয় বস্তুও আমাদের ভালোবাসা ।
একটা ইচ্ছে আছে , লেখাগুলো ছাপানোর । লোকে আমার লেখা পড়বে , আরও বেশি পাঠক বা পাঠিকা এর মজা নেবে , এটুকুই আশা । তবে সব স্বপ্ন কি আর সত্যি হয় ? প্রকাশক আর পাচ্ছি কই ? চেষ্টা করে যাচ্ছি , কিন্তু কেউ ছাপতে রাজি নয় ।
তোমার খবর কি ? আজকের কি স্পেশাল প্ল্যান ? কিছু ভেবেছো নাকি ? আমার মতো বোরিং জীবন নিশ্চই তোমার নয় ? আচ্ছা আমি তো ফ্রি আছি , যদি খুব বোর লাগে আমাকে কল করে নিয় , আর না হলে একটা মিস কল দিও , আমি কল করে নেব । অনেক দিন কথা হয় নি । এক ঢিলে দুই পাখি ধরা যাবে । এই , এতে আবার রাগ করলে না তো ?
আজ চলি । রাগ করো না , সত্যি বলছি আজ অনেক কাজ । তোমার দিব্বি , কাল আবার লিখবই লিখবো , যদিও জীবনে কাল কি হবে কে জানে ? ভালো থেকো ।

ইতি 
তোর দুষ্টু প্রেমিক 
২৮/০৮/২০১৬

৫।।

Dear love

প্রথমেই বলি , আই এম সরি । আজ একটু দেরি হয়ে গেল । কি করবো বল , সোমবার মানেই ট্রেন ধরার তারা থাকে । আজ বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে সাড়ে সাতটা বেজে গেল । তার পর বাইকে আসানসোল আসা । আজ আবার সব ট্রেন লেট । বেশ চাপে ছিলাম ,টাইমে অফিস ঢুকতে হবে যে । ভাগ্য ভালো , যে পাঞ্জাব মেল পেয়েছি । এখন এতেই চললাম । 
তুমি ভাবছো নিশ্চই , আমি আগের মতোই কোনো মিথ্যে কথা বলছি । কিন্তু বিশ্বাস করো , আমি একটুও মিথ্যে বলছি না , পুরো ষোলো আনা সত্যি কথা । আর মিথ্যে বলি না , আর তাই অনেকেই আমার ওপর খছে যাচ্ছে । 
যাই হোক , আজ তো এদিকে খুব গরম । তোমাদের ওখানেও কি তাই । উত্তর প্রদেশে তো আবার বন্যা হয়েছে , খবরে দেখলাম । তোমাদের ওখানে কি অবস্থা , সব ঠিক আছে তো ? সাবধানে থেকো , বন্যা হলে আবার খুব রোগ ছড়ায় ।
এই দেখো , খবর টা শুনে আবার চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছি । আসলে এটাই বোধহয় ভালোবাসা যে তুমি কাছে না থাকলেও , তোমাকে নিয়ে সবসময় এত ভাবি ,আর এই ভাবনাতেই আমি মরলাম ।
এ সপ্তাহে বাড়ি গিয়ে একটা জিনিস দেখে খুব নিশ্চিত হলাম । বাবার শরীর আগের তুলনায় অনেক টা ভাল , তবে পুরপুরি নয় । কেমন যেন একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব । কি আর করা যাবে , প্রকৃতির নিয়ম কেউ বদলাতে পারবে না । ডাক্তারের ওষুধ শুধু কিছু আরাম দিতে পারে । তাই না ? 
তোমার প্রোফাইল পিকচার টা খুব সুন্দর । লাল শাড়িতে একেবারে মহারাণী লাগছে । ভয় হয় নজর না লেগে যায় । 
এই একটা ভালো খবর তো দেওয়াই হয় নি । আমার দুই ছাত্র lic র ado পোস্ট এ চাকরি পেয়েছে । দারুন খবর না । অনেক দিন ধরে লেগে ছিল , খুব খেটেছে । তুমিও খাটো , তুমিও পাবে । এবারে এস এস সী পরীক্ষা দিচ্ছো নাকি ? পরীক্ষা কবে ? প্রশ্ন তো খুব সোজা হচ্ছে শুনছি । এবারের টা হওয়া চাই কিন্তু । নাহলে আরো খারাপ লাগবে ।
আজ চলি সোনা , কেমন । নামতে হবে । বর্ধমান এসে গেল । নাহলে তোমাকে ছেড়ে যেতে কি আমার একটুও ইচ্ছে হয় বলো । তুমি বরং আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ । আমি তো আজও তোমারই অপেক্ষায় বসে । পারলে একদিন স পরিবারে বাড়ি চলে এস । মনের রাগটা দেখবে ধুয়ে জল হয়ে যাবে । 
আজ চলি গো । পরে আবার কথা হবে । ভালো থেকো আর যা বললাম , সেগুলো মনে রেখো ।

ইতি 
তোর দুষ্টু প্রেমিক 
২৯/০৮/২০১৬

৬।।

Dear Love

শুভ বিকাল । কি হলো সোনা , রাগ করে আছ । অনেকদিন কোনো চিঠি লিখি নি তাই । কি করবো বল , বাবা কে নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি । বাবা হাসপাতালে ভর্তি । ডাক্তার বলছে খুব সিরিয়াস অবস্থা । সোজা আই সি ইউ তে ঢুকিয়ে দিয়েছে । এখন আমাদের কাউকে চিনতেই পারছে না । ডাক্তারের ভাষায় , ব্রেইন এ ইনফেকশন হয়েছে । মারাত্মক অবস্থা । তাই সময় পাই নি । অফিস ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে আছি । শুধু হাসপাতাল আর বাড়ি । বাবার যে কি হবে তাই নিয়ে খুব চিন্তিত গো । তবে তাই বলে তোমার কথা যে ভাবিনি তা নয় । সবসময় ভাবতাম যে তুমি যদি আমার কাছে থাকতে , তবে একটা সাহায্যের হাত পেতাম । খুব একলা লাগছে নিজেকে । মা আর কত সামলাবে । 
তুমি তো এ বিষয়ে পোক্ত । তোমার মায়ের বেলায় কত দৌড় ঝাঁপ তো করেছ । 
ভালো কথা , তোমার মা এখন কেমন আছেন ? ভালো আছে তো ? উনারও তো ব্রেন প্রবলেম । কত মিল না আমাদের । শুধু দুরত্বটাই বড্ডো বেশি ।
এই দেখো না , তোমার বাবাও রেলে আমার বাবাও রেলে , তোমার পছন্দ এস এস সি , আর আমারও তাই । এখন এখানেও মিল এসে গেল । তাহলে আমরা কেন আলাদা ? চলো না , আমরাও এক হয়ে যাই । 
আচ্ছা এই ক দিনে তুমি আমাকে কখন মনে করতে ? কতবার করতে ? মনে পড়ত যদি , একটা ফোন করলেই পারতে । আমি এত ব্যস্ত ছিলাম , মন টাও খুব খারাপ । একটু মনটাও ভালো হতো । 
যাই হোক তোমার একটি উত্তরের আসায় রইলাম । প্রশ্নটা আগেই করে দিয়েছি তাই আর লিখলাম না । তোমার পরীক্ষা কবে ? মন দিয়ে পড়াটা চালিয়ে যাও আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে বল । আমি তোমার সাথে সব সময় আছি । আজ আসি । খুব তারাতারি আবার লিখবো ।

LAST WORDS 

এখন দুপুর দুটো ,
বাইরে কাঁচের জানালায় রোদ 
তবে ভিতরটা বেশ অন্ধকার ,
নিজেকেই চিনতে কষ্ট হচ্ছে বেশ 
পৃথিবীটা তো মনে থাকছে না কিছুতেই ।
কৃত্তিম কি সব যন্ত্রপাতি ,
কোনোটা গলা , আর কোনোটা নাক 
আবার কোনোটা শরীর ভেদ করা 
কি যেন মেপে যাচ্ছে প্রতিবার ।
খাবারে শুকনো রস , আর ভালোলাগছে না 
মন চাইছে আমিষ কিছু ভালোবাসার ছোয়া ।
চেয়ে চেয়ে অতীতটা দেখছি ,
বর্তমান তোমার কাছেই থাকুক 
অনেক ভারী বোঝ , দ্বায়িত্ব এবার তোমায় দিলাম 
রাত পোহালেই যাবার সময় হলো ।
কান্না হাসি অনেক দিলাম , 
অনেক বদনাম কুড়িয়ে গেলাম 
এবার মাফ করো ভাই ,
যাবার সময় হলো , দেখো 
সন্ধ্যা নেমে এলো , 
অচেনা একটা কাঁচের ঘর আমার 
আসে পাশে চেনা যে আজ কেউ নাই ।

বাবার অবস্থা নিয়ে একটা লেখা । পড় , অনেক কিছু জানতে পারবে ।
                        
ইতি 
তোর দুষ্টু প্রেমিক 
০১/০৯/২০১৬

প্রেম-পত্র

প্রেম-পত্র ১

এমন কিছু মন আজও আছে এ পৃথিবীতে ,
সহজ , নম্র , সরলতায় ঠাসা 
অসংখ্য কথা মনে পুষে রেখেও বলে যায় 
না বলা অনেক কটা মনেরই ভাষা ।। 
আমি দেখেছি তাকে প্রতিদিন 
এই পথের ধারে , কাঁচের ওই দেওয়ালের ওপারে 
চিনেছি তাকে কাছে গিয়ে ; অপেক্ষায় বসে 
এক সুন্দর প্রভাতের আলোর ।।
চোখ দুটো তার : যেন অসীম স্বপ্ন বয়ে বেড়ায় 
প্রতিদিন , প্রতিবার -- কাব্যিক ছন্দে গড়ে ওঠা 
সে মনীষী আমার চোখে , অন্ধকারের পথে এক নতুন আলো : যেন ডাকছে আমায় ।।
সাহস হলনা ঠিক , যদি তাড়িয়ে দেয় ; 
বিস্বাস টুকু বেশ নেমে গেছে মাটিতে --
তাই ফিরে এলাম নিজের ঠিকানায় উদাস ভাবে ।।
তবে দেবী অপেক্ষা কর , একদিন ফিরে আসব ঠিক 
বলব সমস্ত গল্প তোমায় ; কিভাবে একটু একটু করে 
আবার প্রেমে পড়লাম তোমার ।।

প্রেম - পত্র ২

বয়ে যাওয়া একটা ঝড়ের মত 
আমার চোখে ধরা দিয়েছ তুমি , 
শূন্যতার এক অদ্ভুত খেলায় 
মেঘ হয়েই বর্ষে গেছ ভালবাসার চিঠিখানি ।।
তোমায় সামনাসামনি দেখি নি কোনদিন 
হয়ত সুযোগ হয় নি দেখা করবার --
তবু একটিবার তোমায় সামনাসামনি দেখতে চাই 
জানতে চাই এক অচেনা পাখি হয়েও 
কেন এত বিস্বাস করতে শুরু করেছি তোমায় ।।
কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলতে চাই 
ভালবাসি তোমায় , ভালবাসবে তুমি কি আমায় ??
তোমার ছবিটা প্রথম দেখি এই পাতাতেই 
ফুটে উঠেছিল আমার এই ঝাপসা চোখের সামনে ,
মনে হয়েছিল আবার একবার তোমার জন্য তো 
বাঁচাই যায় ।।
তারপর বহু বার পত্রের আদান প্রদান ঘটে গেছে 
তুমি আমায় চিনেছ খানিকটা আর অল্প আমি তোমায় 
ভাষার মধ্যে দিয়েই প্রথম দৃষ্টি পড়েছিল 
তোমার চাউনির দিকে , যেন রাম সিতার প্রাক স্বয়ম্বর মিলন ।।
নানা হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি আর কবিতার প্রতি 
তোমার ভালবাসা আমাকে আরও কাছে ঠেলে দিয়েছে ।।
ডাক হরকরার মত ফেরি করে ফিরেছি এত দিন 
নানা সুখ দুঃখ প্রেম যন্ত্রণার কাহিনী ,
তবু অপেক্ষা রয়ে গেছে আজও যখন বসে আছি 
এই ভিনদেশে , তোমার থেকে অনেক দূরে ;
অপেক্ষা যেন বন্দিনী সিতার তার ভালবাসার থেকে 
একটা চিঠির অপেক্ষা : একটা বার্তার অপেক্ষা ।।
ভেবে দেখতে পার , হতে পারে তোমার মনের অনেক গভীরে 
আগ্নেগিরির হৃদয় থেকে ম্যাগমা একই ভাবে বেরিয়ে আসতে চায় : প্রচুর ধাক্কা খেয়ে 
আমারই মত সাহস হারিয়ে ফেলেছে ।।

প্রেম-পত্র ৩

একগুচ্ছ জনতার ভিড়ে আমি একলা 
অনেকের কথায় বোকা , তাই পারিনি আজও 
জীবনের পূর্ণগোলক এঁকে দিতে ।। হয়ত ওরা কিছুটা ঠিকই বলে ,
কিন্তু যেটুকু জানে সেটুকুই বলে , যেটা জানেনা সেটা হল 
রাজকন্যার সামনে দাঁড়িয়েও বলতে পারিনি আজও 
খাঁটি হৃদয়ের খাঁটি তিনটে কথা ।।
বাড়ির কাছেই বিশাল ঝিল আছে , জলের ধরে কত পাখি 
রোজ বসে আড্ডা দেয় , খেলা করে ।। সেদিন নজরে এল 
দুইজন দূরে একলা বসে ।। ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উপভোগ করছে 
ভালবাসার মুহূর্ত ।। 
এরকম কত তো রয়েছে , চোখ খুলে তাকালেই দেখা যায় 
গাছে গাছে , পাতায় পাতায় , জলের স্রোতে , হাওয়ায় হাওয়ায় -- 
সবাই পেরেছিল বলতে ।। শুধু আমি ছাড়া ।। 
সূর্যের অস্তগামী চেহারার পিছনে অন্ধকার নেমে আসছে ,
ঠিক যেন ঝড়ের পূর্বাভাস -- ফিরতি পাখিদের দলে আমরা দুজন ; 
চলো না মনের কথা শেষবার বলে ফেলা যাক ।।
তোমার জানি অভাব নেই কোন , 
খুঁজলেই ভাল ছেলে পেয়ে যাবে অনায়াসে : 
সমস্যাটা আমার ; বলেই দেখি অন্তত যদি কোন পেত্নিও 
জুটে যায় শেষমেস ।।

প্রেম-পত্র ৪

মন থেকে তোমায় ভালবেসে গেছি 
খাঁটি সোনার মত আমার চাওয়া 
আমি জানি নি আজও তোমায় 
জানিনা কোনদিন হবে কি হবে না দেখা ।।
তুমি এক ভিনদেশিনী আমার চোখে 
এক তৃপ্তি জোড়া বৃষ্টি ফোঁটা এ বুকে --
ঠিক যেমন করে দ্বিপ্রহরের শেষে 
ঘন কালবৈশাখী ঝড় ধেয়ে আসে 
শীতল এক বাতাস বেসে ।।
তুমি ঠিক তেমনি নতুন এক ছন্দ হয়ে বিরাজমান 
কাব্যের পাতায় পাতায় ।। প্রচন্ড ঠান্ডায় এক গরম 
কম্বলের ছোঁয়া হয়ে তুমি ঘুম পাড়িয়ে যাও 
ঘন কুয়াসাময় মাঝ দরিয়ায় ।।
এই কদিনের পরিচয় তোমার সাথে 
কখনো হাসিতে , কখনো রাগের অগ্নিগ্রাসে ;
কখনো তুমি শান্তি রুপিনী , কোথাও আবার 
প্রেমময়ী অমৃত সুধা ।। 
তবু অনেক বাকি রয়ে গেছে এখনও
জীবনের পথে চলতে গিয়ে খুঁজে নেব 
তোমায় সমস্ত খোঁজা ।।
আর তো কটাদিন মাত্র বাকি , তারপর সব বলে দেব 
সেদিন চাইলে কাছে টেনে নিও , নাহলে ঠেলে দিও 
বহু দূরে : রাগ করব না সোনা , একটুও রাগ করব না 
অপমানটা সয়ে গেছে ।।

প্রেম-পত্র ৫  

কত দিন কেটে গেল এভাবে ,
কত রাত কেটে গেল আগামীর স্বপ্নে 
তোমার কাছে আরো এগিয়ে এসেছি আমি 
দেখেছি , চিনেছি , পেয়েছি তোমায় অবশেষে 
আমার মনে মনেই যে ; হিরকের চেয়েও অনেক দামি ।।
আমি জানি ভয় তুমিও পাও , আর 
অনেকটা আমিও --
তবু কাটিয়ে দিচ্ছি দিব্বি ; পার করছি 
ধাপে ধাপে সিঁড়ির অংশবিশেষ ।।
আমি জানি তুমি আজ আংশিক
আমাকে ছাড়া , আমিও তাই 
বিশ্বাস কর , অসহায় বড্ড লাগে নিজেকে 
তোমার প্রেমে যে আমি পাগলহারা ।।
অভ্যাসটা আজ খুব বাস্তব 
সমস্ত কিছুই একটি বার জানিয়ে রাখা তোমায় ।
যদি কোনভাবে একটুও আমার 
ভুল হয়ে যায় , তুমি তো আছো সোনা ।।
পরিশেষে একটা কথা বলে যাই ,
ভয় পেয়ে পথ হারিও না কোনদিন 
ফিরব তোমার খুব কাছেই একদিন 
অপেক্ষার আর তো কিছু দিন -- 
দুটো জীবন আজ চলন্ত বাসে বন্দি যেন 
ভুল বুঝে আবার যেন অচেনা পথে নেমে যেও না ।।

প্রেম-পত্র  6

আলোর এক সরলরেখায় তুমি এসেছিলে সেদিন 
সে সময় , মুহূর্তগুলো সত্যি বলতে ভুলতে পারি নি আজও 
আর ভুলতে পারবও না কোনদিন ।।
তখন শীতের ছোঁয়া সেভাবে লাগেনি জীবনে ,
বসন্তের কোকিল ডাকেনি তার কুহু তান ,
রাতের তারারা যখন ঘুমিয়ে গেছে আকাশ চাদর তলে 
তখনও সেই একটাই আবদার -- 
কবিতাগুলো সিরিজ হতে দিও না এবার ।।
বিশ্বাস হয় নি একটিবারও , এভাবেও মনের কথাগুলো 
পড়ে ফেলা যায় ; এভাবেও বুঝতে পারা যায় আমাকে ।।
বিশ্বাস হয় নি এভাবে চিঠিগুলো সে রাতেই 
কেউ চুরি করবে নিজের মনের ঠিকানাতে ।।
আর তারপর !! শুধুই আদরবাসার দিনরাত্রি কাটানো 
আর দিন গোনা নতুন নভেম্বরের প্রতীক্ষায় ।।
কত রাত সেরাতে জেগেছিলাম দুজনে ; মনে পড়ে ?
কত কথা লিখেছিলাম রাত জুড়ে 
ফেসবুকের পাতা ভরে দুজনে ; মনে পড়ে ? 
না ফুরানো সে দিনগুলো ---
রাত জাগা সে রাতগুলো --- 
খুবই গুরুত্বপূর্ণ আজও --- 
তোমার কাছে , আমার কাছে ; আমাদের কাছে ।।
আজ উঠি , তবে খেয়াল রেখো
" দা সো মাস্ট গো অন ।। "


প্রেমপত্র

প্রেমপত্র 1 

চলতে চলতে হঠাৎ হারিয়ে যাই যদি 
খুঁজে কি নেবে সেদিন নিরঞ্জনা ;
ক্লান্ত আমার চোখের বন্ধ ইশারায় লিখবে কি প্রেম 
ভালোবাসার গল্পগুলি আগের মতোই -
পাবো কি ফিরে আবার ; এই পথে কোনদিন 
নিরঞ্জনা প্রতিদিন ||
বদলের শুরুটা হঠাৎ ; দেখা হয়ে গেলো সিনেমায় 
পাশাপাশি তুমি আর আমি 
কোনের ঠিকানায় ||
বাড়িয়ে দিই হাত , জড়িয়ে ধরি বুকে 
বালি রাশি তবু উড়ে যায় - ফেলে যাওয়া পুরাতন ; ব্যাস !!
তুমি ; আমি আর নিরঞ্জনা : প্রথম পরিচয় ||
তারপর পরপর রোজরোজ নেশাতুর চাওয়া পাওয়া 
এক পাতা ভরে লিখবে সাগরের জলে চোখে চোখে 
কিভাবে বেঁচে আছে বুক ; নিরঞ্জনার অপেক্ষায় ||

প্রেমপত্র 2 

রাস্তার ধারে পোস্ট দুটো পাশাপাশি 
দরজা খোলা ; সুনসান বাস ট্রাম রাজপথ 
দুটো চোখ দেখছে -- হাতে হাত  
আঙুলের মিলনে আজ প্রথম পরিচয় ||
ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে ; পড়ন্ত বিকেলের রোদ 
পরিচয় যেন এরই ফাঁকে খুঁজে পেলো তার পরিচয় --
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

বৃষ্টি হয়নি সেদিন ; তবে কে আর জানতো 
বাইসের সেই চোখের বৃষ্টি ; ভিজিয়ে দেবে তিরিশের মন 
ছেড়ে যাওয়ার আগেই মিলন ঘটবে ||
আরও এগিয়ে দেখা যাক ; পায়ে পায়ে ঘেষাঘেষি 
ছবিটুকু আজও পড়ে আছে -- মুঠোফোন খুলে দেখি 
পা নয় শুধু ; রাস্তার ধারে পোস্ট দুটো পাশাপাশি 
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

প্রেমপত্র 3 

সেই ভাঙা বেঞ্চ ; 
সেই ছেঁড়া ঘাস ;
সেই পুরোনো সময় 
ফিরে দেখা সেই মিলনের কাল ||
ব্যর্থ ভাষা ;
ব্যর্থ অভিলাষ ;
বারবার খোঁজে চেনা সেই হাতখানা 
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||
জল ঝোরে বয়ে যায় ;
ভিজে যায় মাটি ;
প্রথম নয় তবু শেষ হতে চাওয়া 
মিথ্যে স্বপ্নের বেড়াজালে আটকে পড়া 
দুটি ফেলে যাওয়া রুমাল 
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

প্রেমপত্র 4 

আজকের সকালটা 
কেমন অন্যরকম লাগছে -- 
প্রানখুলে হাসছে আকাশ ; 
হালকা চুমু দুগাল ছুঁয়ে 
পেরিয়ে গেলো হালকা বাতাস ;
নতুন করে বেঁচে উঠতে 
সূর্যমূর্খী ধরা দিচ্ছে গানে ;
প্রিয়তমা যাই তবে , মন ভার 
এসময় দরকার ; অল্প অপেক্ষার 
মিলবো এখানেই একদিন 
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

হয়তো আদর ;
অনেক বেশি , ছুঁয়ে যাবে 
অন্য হাতে , তোমার প্রাণে ---
সেদিন আমায় মনে করে ; মনে রেখো 
আর আমায় ছাড়া চলতে শেখো 
বসন্তের এই রাস খেলাতে 
একবার খুঁজে দেখো  : পুরোনো রুমাল 
গন্ধটাকে 
মনে মনেই অচেনা সব 
কবিতার পাতা ; ঘটনা ঠাসা 
খুব লাগবে চেনা ; 
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

প্রেমপত্র ৫ 

ভাঙা দরজা ; খোলা হাওয়া ; রেলপথে লাগে ব্রেক 
হকারের চিৎকার ; জোয়ারে ভাটায় ভেসে আসা প্যাসেঞ্জার 
আর ছেড়ে যাওয়া ফাঁকা ইস্টিশন প্রেম ||
চুপচাপ বেঞ্চগুলো মুখে মুখে তাকিয়ে 
ভেজা গা ; ফাঁকা পা ; বসে থাকে জমে থাকা 
নীরব রাতের কুয়াশা কাটিয়ে ||
খোলা বুক ; শুয়ে সুখ ; ঠান্ডায় জড়িয়ে 
একা একা ভাবে ওরা ; কি হবে এই রাতটুকু পেরিয়ে !!
ফাঁকা ট্রেন ; ফাঁকা বেঞ্চ ; ফাঁকা প্ল্যাটফর্ম 
আর ঠোঁটে ঠোঁটে জেগে থাকা 
দুজনার খোলা বুক আর ছেড়ে যাওয়া 
ফাঁকা ইস্টিশন প্রেম ||

প্রেমপত্র ৬

ভালবাসার মগডালে বসে আছি 
হালকা হাওয়ায় দুচোখের স্বপ্ন 
ফুটে উঠছে চোখে ;
গভির অন্ধকার জীবন ; রাত্রি ধেয়ে আসছে 
মৃত্যুর বেসে ।। 
তুমি সেদিন আলো হয়ে ফুটেছিলে 
পূব আকাশে ; নবান্ন হয়ে আমাকে দিয়েছিলে 
ভোজ্য একটি কণা ;
আমি অবুঝ মায়া ঘেরা দিন ; তবু তোমার চোখে 
অসভ্য ; দুমুখো সরীসৃপ ,
অপেক্ষায় এক নতুন সূর্যোদয়ের লাল আকাশ 
ভাসমান তুমি , আমি আর নিলাঞ্জনা ।।

প্রেমপত্র  ৭

চিঠি লিখে গেছি আনমনে তোমাকে প্রতিদিন ধরে ;
কিছু পৌছায় ; কিছু আবার আগেই হারিয়ে যায় ।।
অনেকে ঠাট্টা করে , তাই লিখতে আর সাহস পাই না ,
জানা নেই , তুমি কি ভাববে !!  
এই শুনছ  , গত সপ্তাহে মায়ের কাছে গেছিলাম ,
তুমিও যাবে বলেছিলে সেদিন ; তবু আজ তোমায় 
জিজ্ঞাসা না করেই চলে গেলাম ,
জানা নেই , তুমি কি ভাববে !!  
গোলু আর গুলটির সাজানো সংসারটা ভেঙে গেছে অনেকদিন ;
তোমার স্বপ্ন ; আজও ধরে রেখেছি – কিন্তু তুমি ছাড়া সবটাই তো বৃথা 
তাই না নিরঞ্জনা ?? 
সামনেই দুর্গাপূজা ; এক বছর আগের কথা মনে পড়ছে 
কথায় কথায় খুঁজে পেয়েছিলাম জীবনের মানে ; 
রাত জাগা দুটো চোখ বন্দি মুঠোফোনে ; সে-দিন সত্যি কি ফিরে আসবে আবার ?
নাকি এমনই অপেক্ষায় রাত কেটে যাবে দুজনার দুটি পথে 
হারিয়ে যাবে গোলু আর গুলটি ; পুচু আর পুচকি অথবা সেই চেনা 
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ।। 
চাকরিটা তুমি একদিন ঠিকই পেয়ে যাবে ; তোমার ক্ষমতা অসীম 
পরীক্ষাটা আমিও উত্তীর্ণ হবো সেদিন ; তোমার বিশ্বাসেই ডানা মেলে , 
পৃথিবী ঘুরবে ; কালো থেকে একদিন আকাশ সেজে উঠবে লাল সিঁদুরে ; 
না হওয়া প্রেমপত্রগুলো ; কবিতা হয়েই ঘুরে বেড়াবে লোকের ভিড়ে ; 
প্রেমপত্র হয়ে ওঠা হবে না কোনদিন ।। 
সবাই সত্যিটুকু জানবে ঠিকই , কবরের এপিটাফে 
শুকনো আকাশও বৃষ্টি ঝরাবে ঠিকই , খুদিত পাষাণের ফাঁকে ।। 
ভাল থাকবে সবাই , ভালো থাকবে প্রতিবাদ থেকে প্রেমের সমস্ত কবিতা 
হারিয়ে যাবে তিনটি কথা আমাদের – তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ।।


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ 0

গুলটি ,

জানো , কাল আমার বই বেরোবে ।
হিজিবিজি ভরা পাতাগুলো 
ওদের মনে ধরেছে ।

জানো , কাল আমি মঞ্চে উঠবো ।
ওই ভিড় ঠেলে ওপরে 
ওপর থেকে দেখবো শ্রোতাদের ।

জানো , কাল খুলে যাবে কিছু রহস্য ।
তাই ভয় হচ্ছে 
কে যে কি বিধান ছুড়ে দেয় ।

তুমি আসবে তো ? 
ব্যস্ততা দিন দিন গ্রাস করেছে আমায় 
তাই বাড়ি গিয়ে বলে আসা হয় নি আর ।

কিছু বললে না তো !
রাগ করেছ 
নাকি অভিমান এই মানুষটার ওপরে ?

আমি অপেক্ষা করে যাচ্ছি ।
ধোঁয়াশা কেটে যাবে সব 
সব আবার ঠিক হয়ে যাবে ।

হয়তো দিনটা কালই 
তোমার ভাষায় ,
বি পজিটিভ ...

ইতি,
তোমার গোলু

১১আগস্ট ২০১৮ 
দুপুর ২:৩৬

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১

গুলটি ,

টু স্টেটস দেখেছো ? 
আমাদের অবস্থা আজ ওই রকম ।
ভারতের বুকে একই রাজ্যে বসে আছি । 

তবু , অসহায় ।

আমার খুব মনে হয় জানো 
একজন অভিভাবক যদি বুঝতো ,

আমাদের অবস্থা ।

মেঘের চোখে জল নেই 
আকাশ তবু ভিজে যাচ্ছে ।

বাজারে ভিড় করে আছে 
কলতলা থেকে বেড়িয়ে আসা 

শ্রোতার দল ... 

মাছের থলিতে গু ধোয়া পাছার গন্ধ 
তবু ফিরে ফিরে আসছি 
কলতলা ঘেঁষা এদো গলিতে 

চিকেনের লাইনে 
ফরাসি বন্দরের মেয়েটা 

ওরফে 

তুমি ... তার খোঁজে ।

ইতি 
গোলু 

১১আগস্ট , ২০১৮ 
বিকেল ৫:৪৫

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ২

গুলটি ,

কাল যখন মঞ্চে উঠলাম তখনও 
অনেক কিছুই ভেবে যাচ্ছি । 

তারপর 

মোড়ক খুলে দিল ওরা । 
সবাই দেখলো বহুরূপীর মুখ ...
মঞ্চে আমি তখনও দাঁড়িয়ে । অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ।

তোমার ...

ঠিক যেমন ভিড় করে পাবলিক 
সকাল সকাল 
পাবলিক টয়লেটের বাইরে ।
অতীতের সব জমে থাকা 
বেড়িয়ে এল 

ধিরে ধিরে ....

ইতি 
গোলু 

১৩ই আগস্ট 
দুপুর ২:১৭

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ৩

গুলটি ,

কফি হাউসের তিনতলাটা ভিড়ে ভিড় ।
অনেকেই আড্ডা জমিয়েছে সেখানে 
দেখে একটাই কথা মাথায় এলো -- 
ডাল আর ভাত ; চা আর চিনি ; 
আয়না আর চিরুনি অবিচ্ছেদ্য যেমন ,
ঠিক তেমনই জোড়ায় জোড়ায় ফুটে থাকা 
ফুল ওদের টেবিল জুড়ে ।

কোন রকমে একটা জায়গা পেলাম ,
ট্রেনের সিট দখলেও এমন সমস্যা ছিল না ।
আবার মনে উঁকিও দিচ্ছিল 
আমাদের শেষ ছবিটা 

কবিতার ভাষা 

আঁকতে পারে ...

আর স্মৃতি 

চলমান ছবি ....

আজ ওই ছবির কিছুটা মনে পড়ল 
আমাদের শেষ ছবিটা 
আমার পিঠে কবিতার ভার 
আর বুকে ছবিটা 

শেষ ছবিটা 

কষ্ট আর যন্ত্রণাময় ।

তবু বেড়িয়ে আসতে চায় 
দুজনেই ... 
কবিতা হোক আর প্রেমের বিরহব্যথা 

ঠিক কষা পায়খানা যেমন ...

ইতি 
গোলু 

১৩ই আগস্ট 
রাত ৮:৫০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ - ৪

গুলটি ,

আজ হঠাৎ এত রাতে লিখতে বসলাম । 
জানি আমি এখন পর , 
তবু একবার জানবে না কেন ? 

ব্যর্থতা ।

জীবনে সবই তো তোমায় বলে এসেছি । কোন দিন আনন্দে 
আবার চরম দুখেও তোমাকে পাশে পাওয়ার পর থেকে তোমাকেই ,
শুধু তোমাকেই আঁকড়ে ধরেছি ।

অভ্যাসটা পুরোনো । 

চুপ করে থাকি এখন , তবু কোনকিছুই ভুলিনি । তাই তোমাকে জানাতে লিখতে বসেছি আবার ।

ব্যর্থতা ।

কবিতা আজ আমার নয় । সবার , কিন্তু আমার নয় । আমি তো কোন অন্যায় করিনি 
স্বপ্ন দেখেছিলাম শুধু , ভালোবেসে ।
আচ্ছা ! ভালোবাসা , স্বপ্ন দেখা কি খুব অপরাধ ? নাকি আমি সত্যিই কোন কিছুর অযোগ্য । চুপ থেকো না আর । বিগত তিনটে চিঠি , উত্তর মেলে নি একটারও ।
আজ চুপ থেকো না । উত্তর দিও প্লিস , এই পৃথিবী কি আমার যোগ্য নয় ? 

ভেবে দেখো তো , তোমাকে সেরা করতে আমি কি না করেছিলাম । তোমার যে কোন সমস্যায়
আমি কিভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলাম । ঠিক একই ভাবে কবিতাকে জানতে আমি বিনয় থেকে জীবনানন্দ , সুনীল কিংবা শক্তি কিংবা মলয় ; অজিতেশ অথবা জয় অথবা শ্রীজাত -- সবাইকে পড়েছি ।

তবু কলম হাতে লিখতে বাধ্য হচ্ছি আজ তোমায় 

ব্যর্থ । আমি ষোল আনা ব্যর্থ । 

প্লিস , প্লিস গুলটি উত্তর চাই এইবার । আমারও জানা দরকার কতটা নিঃস্বার্থ হলে সফল হওয়া যায় 
আর কতবার মরে মরে ফিরে আসলে , 
ভালোবাসা ধরা দেয় ?

আমি তো বেইমান নই । তবু কেন জীবনে দাম মেলে না আমার ? খেয়াল রাখা অথবা যত্ন করা পৃথিবীতে অভিশাপ ?

প্লিস লিখ এইবার শেষবার, সবটুকু ছিড়ে ফেলার আগে ।

আমার ঠিকানা :
অভাগা @ তোমার ভালোবাসা . কম ।

ইতি 
গোলু 

২৩সে আগস্ট 
রাত ১২:২৩


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ - ৫

গুলটি , 

আজ সকাল এসেছিল আমার কাছে 
কি বললো জানো এসে ! তুমি নাকি খুব আনন্দে আছো 
শুনে মনটা আনন্দে ভরে উঠল ।
আসলে তুমি ভালো থেকো রোজ আর সমস্যা যেদিন 
জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে আসবে , আমাকে জানিও একবার 
হাত দুটো কেটে ফেলবো , সমস্যার ।

আমার কথা জানতে কেউ চায় না 
তাই সবার মত ঘাড় নেড়ে দিই আজকাল আর 
খুব চেনা কেউ হলে , বলি , ভাল আছি 
খারাপটা মুখ দিয়ে বেরোয় না ।
তবে এখানে তো কাছের কেউ নেই , দুরেরও নেই 
হৃদয়ের আছে 
তাই চুপিচুপি বলছি ভাল নেই একদম 
আমি ভাল থাকতে ভুলে গেছি ।

সামনে পুজো । ভাবছি এবার আর নেশা করবো না ।
তারচেয়ে অনুমতি দাও তো , অধিকার থাকলেও দেখাবো না 
অভিমানে 
দূর থেকে তোমার হাসি ঢাকা মুখটা 
দেখে দেখে কাটিয়ে দিতে চাই ।

জগদ্ধাত্রী আমায় ডাকবে না কোনদিন 
ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি লেখাগুলো 
কোনদিন প্রাপ্তিস্বীকার হবে না ।
বিসর্জন ঘাটে তাকিয়ে 

ডুবছে ... ডুবছে ... 
আসছে বছর আর হবে না 
আমার  মনে হয় এটাই শেষ । 

কিগো গুলটি
গোলুর কাছে একদিন আসবে না 

শেষদিন ... বিজয়া প্রণাম ।

ইতি 
গোলু 

২৩সে আগস্ট 
বিকেল ৬:৩৭


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ - ৬ 

গুলটি , 

প্রভাতফেরির গান মানেই শিউলি কুড়িয়ে আনা 
শিউলি মানেই শরতের আনন্দ 
 শরৎ মানেই উৎসব 
আর উৎসব মানেই তো ভালোবাসা ।
ঠিক বছরের কাঁটা ধরে ফিরে যাওয়া পথে 
সেই ভুলে যাওয়া বাসস্টপ আসে 
নামতে গিয়েও হয়নি নামা 
আর আজ দেখো নেমে যাওয়াটাও দুরহ দুষ্কর ।
আর তারপর হাসি , ঠাট্টা আর আড্ডার মেলায় 
উড়ে যাওয়া নিকোটিনের শেষ ধোঁয়ায় 
হৃদয় ভেঙে যাওয়ার আগে 
কত প্রেম , অবিরাম বকবক আর কথাবলা 
মনে আছে তোমার ? 
আমি তো আজও সাজিয়ে তুলে রেখেছি সব 
যত্ন করে , মাটি থেকে অনেক দূরে 
তুমিও কি তাই ...?
না হলে থাক সেটুকু না হয় গোপনে 
অমূল্য বলতে আমার ঐটুকুই 
আর বাদবাকি সব ....

উহ্য থাক । বাকি ওসব আজ উহ্য থাক ।

ইতি 
গোলু 

২৯সে আগস্ট 
সকাল ৯:১০

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ৭

গুলটি ,

সমুদ্রের নীল জলের ভিতরে চেয়ে দেখো 
মুক্ত পেলেও পেয়ে যেতে পারো ।
অনন্ত গভীরে যে সম্পদ পড়ে আছে 
সে তো সবার নয় 
তবু 
দুর্ভাগ্য এটাই , যার জন্য আগলে রাখা এত সব 
সেই আবর্জনা ভেবে ফেলে দেয় আপনজনের শব
কি ভাঙলো আর কিই বা হারালো হিসাব খাতায় ওঠে না 
পদ থাকলেও সব অসম্পূর্ণ 
যখন নিজেতে আর  মন লাগে না ।

ভাবে , হয়তো কাল ভালো হবে 
কাল সূর্য উঠবে আবার 
আবার খুলবে নতুন করে জীবনের পাঠশালা ।

তারপর 
পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লো , সূর্য উঠলো না 
কারন 

সূর্য আজ আমার প্রতিবেশী তারা ।

ইতি 
গোলু 

৩০সে আগস্ট 
রাত ৮:৪৩

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ৮

গুলটি ,

শুনেছিলাম কবিতারা অমর , যেমন দেবতা 
তাই রোজ সকালে কবিতায় লিখি প্রার্থনা 
এই ভেবে যে কবিতাই তোমার আমার 
ভাগ্যমাতা ।
শরীর আমার পর্ণমোচি , আয়ুগুলো ঝড়ে প্রতিদিন 
বার্থডের ছুরিটা কেক কাটে না , 
কাটা পড়ে এক একটা ভাবনা ।
হয়তো পরের জন্ম আছে , কিন্তু তার জন্য 
মরন হতে হবে দুই চেতনার 
কিন্তু 
মৃত্যু মানেই তো কষ্ট আর তোমাকে কষ্টের দুহাত 
ছুঁয়ে যাবে -- অসহ্য ভীষণ ।

তাই কবিতার খাতায় কবিতার বদলে মৃত্যুর আবেদন 
চিঠি আসবে একদিন 
তারপর , সবার ভিতরে আমিও থাকব
তোমারও ভিতরে ঢুকে যাবো 
এই রাস্তা , বাড়ি , পোড়া টায়ার , গোবরের মাছি 
অথবা বাসা হীন পিঁপড়ে , ফিরে যাবে 

আমিও ফিরবো 
তবে ভিতরে ভিতরে তোমাদের সকলের ।

ইতি 
গোলু 

৩১সে আগস্ট 
দুপুর ৩:৪৯

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ৯

গুলটি ,

সামনে হলুদ একটা ব্যাগ । ট্রেনে আমি । 
ট্রেনটা দৌড়াচ্ছে । দৌড়াচ্ছি আমি আর 
আমার আগে আগে দৌড়াচ্ছে হলুদ ব্যাগ । 

বাইরে আলো এখনো অনেক । কালো হয়নি একফোঁটাও ।
কালো মানেই কয়লা আর কয়লা কালো চুল তোমার 
কালো তোমার প্রিয় , তাই রোজ ফিরে আসো 
আমার রাত জাগা স্বপ্নে ।
আমার মন জানতে প্রতিদিন 
মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায় , তুমি সূর্যের চোখে চোখ রাখো জানি 
তাই হলুদকে নিজের বানাতে চাই ।


সামনে হলুদ একটা ব্যাগ । ঠেসে ঠেসে ভর্তি করেছি 
এতদিন ধরে । তবু সব ভরা যায়নি 
ভরা হয়নি সেই এলমোনিয়াম ফয়েলে মোড়া খাবার 
সেই ঝুলন ঝোলা দুজনের পুতুল , তুমি আর আমি 

কালো ব্যাগটার সাথে ঘরেতেই মুলাকাত হবে
আমার ঘর ; আমাদের কি হবে না কোনদিন ? 

ইতি 
গোলু 

৩১সে আগস্ট 
বিকেল ৫:৫৮

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১০

গুলটি ,

প্রায় মাস এক পেড়িয়ে গেলে চিঠি লিখতে বসি আবার । 
অনেক দিন অপেক্ষা করেছি , অন্ধকার আজ কেটেছে জানো 
শিউলির গন্ধে আমি বছর ফিরে যাই । 
শিশির আর ঝড়ে না হাওয়ায় 
আমার দুচোখে তার নতুন ঠিকানা 
ভালোবাসা , এখন দেয় না কেউ 
সৃষ্টিগুলো তাই মাতৃহারা হয়ে মরতে চায় ।
পুজো আসছে , লক্ষ্মী আর স্বরস্বতীদের ভিড়ে তুমিও রেডি 
হ্যান্ডসাম কোন হাতে হাত রাখবে , 
রাত জাগা উল্লাস আর স্ট্যান্ডের ধারে ভেসে চলবে গঙ্গা 
তারপর একদিন হাওড়া ব্রিজ অথবা আর্মেনিয়ার ধারে 
বিসর্জন হতে আসা দেবীরা খুঁজে পাবে 
হাজার সাতাশীর লাশ আর কবিতা 
রামধনু মোড়া আকাশে নীল তারারা চোখ মারছে 
তোমায় 
আর সেপ্টেম্বর ষোলতে যে ছেলেটা জন্ম নিল 
তার আয়ু মাত্র এক মাস এক হপ্তা : 
কেকের ওপর খেয়াল কোরো ; 
ওগুলো চেরি নয় , কাটা পড়া মৃত রক্ত কনা ।

ইতি 
গোলু 


১লা অক্টোবর
দুপুর ২:৪০ 


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১১

গুলটি ,

আমার হৃদয়ে অনেক গুলো কবিতা আজ নাচছে 
তাদের কেউ কেউ সাদা কাপড়ে , 
           কেউ কেউ কাপড়খোলা , ন্যাংটা ।
কেউ কেউ বুক থেকে স্বাস নালির ভিতরে ঢুকে গেছে 
মিশে যেতে, প্রশ্বাসের বায়ু কনায় ।
তারা স্বাধীন , আকাশের পাখিদের মতো 
উড়ে যায় কবিতা , সূর্যের বুক চিরে 
           আমি সব দেখেছিলাম , ভাবনায় 
আর সেদিন থেকেই কি অসহ্য যন্ত্রনা 
 পেটের নিচের মাংসে 
মনে হচ্ছে কেউ আঘাত করছে ।
মুখ খুলে চিৎকার করতে পারছি না 
কবিতা বেড়িয়ে পড়বে ব্যাগ থেকে 
সাবধানে ঘুমাতে যাই 
       বিছানায় অগোছালো কবিতা 
       চাদরের ওপর , বালিশের সাদা কাপড়ে 
তাদের মাঝে শুয়ে গেলে , অসহ্য লাগে 
রাত গভীর হলে , জ্যোৎস্না কবিতার রাতে 
মঞ্চে ছুটে যাই : চাঁদের কবিতা , নক্ষত্রদের কবিতা শুনি 
আরও গভীর হলে গর্ভবতী হই 
পিছনের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলো কবিতা 
কোলে নতুন ভাবনা তার ।

ইতি 
গোলু 

১লা অক্টোবর
রাত ১১:৩০  


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১২

গুলটি ,

....এবং বিসর্জনের বাদ্দি বেজে উঠলো ।
ফরাসি বন্দরের ঘাটের আকাশটা তখন আবির মেখেছে ,
গঙ্গার জল দূর থেকে তাকিয়ে পল্টনের দিকে 
ওখানে কত উন্মাদনা আর এখানে 
একলা একটা ল্যাম্পপোস্ট 
গিলে খাচ্ছে গিলোটিন মনটাকে 
চন্দনের ছোঁয়া লাগছে না নগরের শরীরে 
অপেক্ষায় কিছু বাতি জলে ভাসছে 
একটু পড়ে ডুবে নিভে যাবে সব 
আবার ব্যস্ততায় গ্রাসিত হবে আমাদের সমাজ
জল তখনও হাওড়ার দিকে দৌড়াচ্ছে 
মিলনের সেই পুরোনো তৃষ্ণা বুকে নিয়ে 
ট্রেন ছাড়ছে তোমার ওখানে যখন 
তখন এখানে আমার বিসর্জন ....

ইতি 
গোলু 

২২সে অক্টোবর
সন্ধ্যে ৭:৫০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১৩

গুলটি ,


খুব অসুস্থ ।

বিছানা আর বালিসকে নিজের প্রেমিকা ভেবে জড়িয়ে ধরছি বারবার । আসলে একটা সময়ের পর সবারই এমন একজনকে দরকার যার সাথে দুটো কথা বলা যায় । বন্ধু শব্দটি যখন শব্দকোষে পড়ে থাকে শুধু , তেমন একটা সময় ভেবে নিন । 

শুয়ে আছি নিজের ঠিকানায় । লোক আসছে , লোক চলে যাচ্ছে । আমি স্থিতিশীল । আসা বা যাওয়ার কেউই আমার জন্য নয় । তবু মুখটা তুলে দেখছি এলো কি না সময় । 

রাতের ঝাঁপ বন্ধ হলো । শব্দটা শুনলে মনে হয় একটা জেলখানার লকআপ । এইবার যন্ত্রণাটা বাড়বে , ছটফট করতে করতে লম্বা ঘুমের পৃথিবীতে হারিয়ে যাবো । 

একটা নরম কোলে মাথা এলিয়ে দিলাম । শরীরে খুব যন্ত্রণা । বামদিক ঘেঁষে আরো বেশি । হাতটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছি তোমায় । মশা আসছে , গান শোনাচ্ছে । আমি চুপ করে থাকি । 

রাত গভীর হলে জোনাকিরা ছুটে আসে । শরীরটা ১০২ এ ফুটছে । মুখ সমানে ঈশ্বরীকে ডাকছে --- আমার ঈ কে । আজ সারারাত আমার পাশেই ছিল , তবু সারা দেয়নি একবারও । 

শরীরটা হিম হয়ে আসছে । হালকা মনে হল অনেকটা । তবু অসুখটা আসবে জানি । ফিরে আসুক আবার এটা আমিও চাই । 

কারন

অসুস্থ হলে ঈশ্বরী এসে ধরা দেয় আর সেরে গেলেই বালিশ হয়ে মেঘের দেশে হারিয়ে যায় ....

খুব অসুস্থ আজ থেকে আবার । ছুটির এই কদিন আমার সঙ্গেই তাই থাকবে আমার ঈশ্বরী 

ওরফে 

আমার মেঘ পিয়ন ।

ইতি 
গোলু 

২৩সে অক্টোবর
সকাল ০৬:২৫ 


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১৪

গুলটি ,

একাকীত্ব সুর তুলেছে মাতাল পূর্ণিমায় 
হালকা হাওয়ায় রূমঝুম শব্দ বাজে 
বাঁশ ঝাড়ের ওপারে ।
মাঝে মাঝে ভাবি তোমাকে হয়তো খুঁজে পাবো 
একদিন 
হয়তো উঁকি দেবে তুমি , আমার এই মেঘময় আকাশে 
আড়চোখা সূর্যের মত , কোন ভালোবাসার ইশারায় ।
ফরাসি বন্দরের ঘাটে সন্ধে নেমে আসে 
তরুণ তরুণী কপোত কপোতির ভিড় 
কথা বলে চুম্বনের চুম্বক ভাষায় ---

আর আমি 
অপেক্ষায় বসে নির্জন নৌকায়
গঙ্গার বয়ে যাওয়া লাল হলুদ স্রোতে 
আবছা কুয়াশা মেখে দুটো হাতে 

সামনের ফাঁকা স্ট্যান্ডে তখনও ভিড় 
মেঘেদের আনাগোনা 
আমিই শুধু হেঁটে চলেছি একটা মেয়ের জন্য 
মেঘ পিয়নের চিঠি বুকে জড়িয়ে ...
ফরাসি বন্দর তখনও বয়ে চলেছে সাথে সাথে 
আমারই কলকাতায় ।

ইতি 
গোলু 

২৩সে অক্টোবর
সকাল ১০:৪০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি 
ভাগ ১৫

গুলটি ,

সূর্যের হিলিয়াম আজ ফুরিয়ে এসেছে 
অনেক কান্নার পর্ব পেরিয়ে এসেছি 
বালিশের তুলো ভিজে পেজিয়ে গেছে কতকাল 
আমি তোমায় দেখে গেছি তবু 
জীবিত চোখে ।
বিদায়ের ঘন্টা বাজলো 
একবার , দুবার , তিনবার 
সিলভার রঙের নদীর জল আজ বেশ ঘোলা 
মাটির ছোয়া পেয়েছি প্রথমবার ।
এর পরে এই ফরাসি বন্দরকে একলা ছেড়ে 
চলে যেতে হবে মোহনায় 
প্রকৃতির প্রতিটা ভাষায় এই সুরই বেজে যায় 
তরঙ্গ আসে , তরঙ্গ বয়ে যায় 
থেমে যায় হৃদ স্পন্দন ।
কিন্তু 
তোমার পরিচয় ! সে তো আজও অজানা 
ভবিষ্যৎ কি জানতে চাইবে না সেটা !
সেদিন কি উত্তর দেবো !
আমার প্রতিজ্ঞা , তোমায় অমর হতে দেখা 
আমার লেখায় , আমার কবিতায় 
তার কি হবে সেদিন !!

যাওয়ার সময় হল যখন 
যখন সন্ধ্যা তারা দক্ষিণপথগামী 
তখন অমর হচ্ছে অন্য কোথাও 
একটা ভালোবাসার কাহিনী 
সৌজন্যে 
আমি আর আমার  
ঈশ্বরের পবিত্র কলমখানা ।

ইতি 
গোলু 

২৩সে অক্টোবর
সন্ধ্যে ৭:০০



No comments:

রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে

                      রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে                                                                            মিথ্যুক ভা...