Wednesday 2 January 2019

স্পর্শনন্দন এর সাথে কিছু কথা কিছু সময় সঙ্গে অপরাজিত

                সত্যজিৎ মণ্ডল
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
প্রশ্ন -১)দাদা আপনি কতদিন হলো লিখছেন
উত্তর-পঁয়তাল্লিশ বছর।
প্রশ্ন-২)আপনার লেখা প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়
উত্তর-সকাল নামে একটি পত্রিকায়।
প্রশ্ন-৩)'স্পর্শনন্দন'একটি ব্রেল পত্রিকাটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা হঠাৎ আপনার মনে হলো কেন।
উত্তর-সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে।
প্রশ্ন-৪)আপনার কি মনে হয় না শুধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নয় আরও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়েও কাজ করা উচিত।
উত্তর-অবশ্যই করা উচিত।কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক ত্রুটি থাকার জন্যে আমি কাজটি সম্পূর্ন করতে পারি নি।
প্রশ্ন-৫)আপনি তো পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।এখন না হয় অবসরপ্রাপ্ত।অফিসের কাজ সামলে'স্পর্শনন্দন'এর কাজ করার সময় পেতেন।কি করে দুদিকে সামঞ্জস্য রক্ষা করতেন।
উত্তর-আমাদের চব্বিশ ঘন্টার ডিউটি ছিলো।তা সত্ত্বেও সময় বের করে কাজ করতে হতো।বিশ্রাম বলে কিছু পেতাম না।বাসে উঠে যখন বসতাম ওই সময়টুকুই বিশ্রাম পেতাম।
প্রশ্ন-৬)আপনি তো এই দীর্ঘ জীবনে অনেক বড় বড় সাহিত্যিকের সংস্পর্শে এসেছেন যেমন-শঙ্খ-সুনীল-প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায়-কমল সিকদার-পঙ্কজ সাহা-নমিতা চৌধুরী।এদের সম্বন্ধে আপনার উপলব্ধি কি।
উত্তর-প্রতিনিয়ত আমি সমৃদ্ধ হয়েছি।পরীক্ষার্থি হিসাবে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিয়েছি।প্রেরনা পেয়েছি।কবিতা উৎসবের কবিতা প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা পেয়েছি।
প্রশ্ন-৭)আর এক মহীরুহ ছিলেন মহাশ্বেতাদেবী।তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উত্তর-উনি আমায় ভাইয়ের মতন দেখতন।
প্রশ্ন-৮)আপনার এই পর্যন্ত কটা কাব্যগ্রন্থ বেড়িয়েছে।
উত্তর-চারটি কাব্যগ্রন্থ বেড়িয়েছে। আরও একটি কাব্যগ্রন্থ বের করবার ইচ্ছা আছে কিন্তু সময় ও অর্থের অভাবে হয়ে উঠছে না।
প্রশ্ন-৯)-স্পর্শ নন্দন পত্রিকাটি কতদিন হলো প্রকাশিত হচ্ছে।
উত্তর-১৯৯২ সাল থেকে
প্রশ্ন-১০)এই পত্রিকা প্রকাশ করার সময় কি কি বাধা এসেছিলো।
উত্তর-আমি পাড়ার একটি দোকানে কার্ড বোর্ডের ওপর পেপারে কবিতা চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম।পাড়ার কিছু দাদা টাইপের ছেলে এই নিয়ে গোলমাল করে এবং আশ্চর্যের বিষয় আমার পাড়ার এক বন্ধু সেটা সমর্থন করে।তারপর তারা সেটা গায়েব করে দেয়।
প্রশ্ন-১১)এই পত্রিকা বের করবার সময় আপনি কার কার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন বা কে কে আপনার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
উত্তর-বিভিন্ন দৃষ্টিহীনদের স্কুল থেকে সাহায্য পেয়েছিলাম।অমিয় শতপতি-বিদ্যুৎ পাল-গীতা দাস-বিভাস ব্যানার্জী-অভিজিৎ সাহা-বিশ্বজিৎ ধর-শাশ্বতী কুণ্ডু-শিবু সরকার-বীথিকা সরকার।
প্রশ্ন-১২)কেমন লাগে বিশেষ করে যখন ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন।
উত্তর-বেশ ভাল লাগে। প্রশ্ন-১৩)স্পর্শ নন্দন নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি।
উত্তর-সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাই।
প্রশ্ন-১৪)আপনার অবর্তমানে আপনি কার হাতে তুলে দিয়ে যেতে চান।
উত্তর-স্পর্শ নন্দন অ্যাকাদেমি অফ ব্রেল পোয়েট্রি ফর ভিসুয়ালি ইমপোর্ট্রেট পোয়েটস্(এসবিপি এফভিআইপি)(Sparshanandan Academy Of Braille Poetry For Visually Impaired Poests(SABP FVIP) নামে একটি নতুন সংগঠন তৈরী করা হচ্ছে তার হাতেই স্পর্শ নন্দনের সমস্ত কাজ ভবিষ্যতে তুলে দেওয়া হবে।
প্রশ্ন-১৫)আপনার প্রিয় লেখক ও লেখিকা কে
উত্তর-শঙ্খ ঘোষ-শ্রীজাত-সিদ্ধার্থ সিংহ-বিভাস রায় চৌধুরী-সুবোধ সরকার।
প্রশ্ন-১৬)আপনার প্রিয় মানুষ কে
উত্তর-সবাই আমার প্রিয়
প্রশ্ন-১৭)আপনার এই সাফল্যের পেছনে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশী।
উত্তর-আমার ময়ের ভূমিকা
প্রশ্ন-১৮)আপনার এই সাফল্যের পেছনে আপনার পরিবার অর্থাৎ আপনার মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তানের ভূমিকা কি
উত্তর-আমার মায়ের ভূমিকা তো অনস্বীকার্য।পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে।



বিভাস ব্যানার্জী
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
প্রশ্ন-১)আপনি স্পর্শ নন্দন ও সত্যজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে কত দিন ধরে যুক্ত
উত্তর-স্পর্শ নন্দন প্রথম বর্ষের আরও বছরখানেক আগে থেকে যুক্ত
প্রশ্ন-২)আপনি তো গান শেখান।কিন্তু এটাকে আপনি পুরোপুরি পেশা হিসাবে নিলেন কেন
উত্তর-গায়ক হবার থেকেও বেশী আমার মনে হয় শিক্ষকতার মাধ্যমে এই ধারাটিকে আমি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত করে দিতে পারব।
প্রশ্ন-৩)আপনি তো লেখার সঙ্গেও যুক্ত আছেন কবে থেকে লিখছেন।
উত্তর-হ্যাঁ আমি লেখার সঙ্গে যুক্ত।প্রায় ছোট থেকে লিখছি।
প্রশ্ন-৪)আপনার লেখক-লেখিকা কে
উত্তর-প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্র।প্রিয় লেখিকা আশাপূর্ণাদেবী।
প্রশ্ন-৫)আপনার প্রিয় গায়ক-গায়িকা কে
উত্তর-প্রিয় গায়ক কিশোরকুমার।প্রিয় গায়িকা লতা মঙ্গেশকর।
প্রশ্ন-৬)আপনার প্রিয় মানুষ কে
উত্তর-আমার স্ত্রী জলি ব্যানার্জী
প্রশ্ন-৭)উত্তরবঙ্গ থেকে কিভাবে কোলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষে করেন
উত্তর-উত্তরবঙ্গ থেকে কিভাবে কোলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষে করেন
বিভিন্ন স্কুলে গানের শিক্ষক হওয়াতে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকি।আর ডুয়ার্সের কালচারাল জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কেলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেই যায়।
প্রশ্ন-৮)আপনার গান ও লেখার প্রেরনা কে
উত্তর-মূল ভূমিকা আমার মায়ের।আমার মা বিখ্যাত প্রয়াত শিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষের ছাত্রী।আমার বড়মামা বেহালাবাদক মণিশংকর গাঙ্গুলী।ছোট মামা রবি গাঙ্গুলী উনিও গায়ক।
আমার গুরু প্রয়াত বিখ্যাত প্রয়াত শিল্পী জটিলেশ্বর মুখেপাধ্যায়।
  আমি এখনও গান শিখি।একজন বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন প্রাধান মৃগাঙ্ক সরকার।আর একজন বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যয়।
প্রশ্ন-৯)আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত রবীন্দ্রনাথ।তাঁর সম্বন্ধে আপনার ভাবনা কি
উত্তর-রবীন্দ্রনাথ আছেন শয়নে-স্বপনে-জাগরনে।তিনি আছেন আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যুর পর পর্যন্ত।
প্রশ্ন-১০)স্পর্শনন্দনের সঙ্গে আপনি ভবিষ্যতে কিভাবে যুক্ত থাকতে চান।
আমি যেদিন থেকে দৃষ্টিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছি সেদিন থেকে শপথ নিয়েছি যারা দৃষ্টিযুক্ত তাদের থেকেও যারা সচল তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকা উচিত।



    সঞ্জীব রজক ( ২০১৭ স্পর্শনন্দন পুরস্কার প্রাপক )
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
প্রথমেই আপনাকে আমাদের পত্রিকার তরফ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই এই বছর স্পর্শ নন্দন পুরস্কার পাবার জন্যে।
প্রশ্ন-১)কেমন লাগছে এই পুরস্কার পেয়ে
উত্তর-ধন্যবাদ।ভাল লাগছে।আগেও অনেক পুরস্কার পেয়েছি কিন্তু আমার জীবনে এতো বড় পুরস্কার এই প্রথম।
প্রশ্ন-২)স্পর্শনন্দন ও সত্যজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে আপনি কতদিন ধরে যুক্ত আছেন আর কিভাবে যুক্ত হলেন।
উত্তর-আমি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণমিশনে পড়াকালীন স্পর্শনন্দনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিলো।কিছু পুরস্কারও পেয়েছিলাম।মাঝখানে কিছুদিন যোগাযোগ ছিন্ন হয়।বর্তমানে আমার বই'স্মৃতির জলসাঘরে'লেখার সময় আবার সত্যজিৎদার সঙ্গে যোগাযোগ হয়।এবং সত্যজিৎদা আমাকে স্পর্শনন্দন পুরস্কারে পুরস্কৃত করতে চান।
প্রশ্ন-৩)-যেহেতু আপনার একটি শারিরীক প্রতিবন্ধকতা আছে আপনি কিভাবে লেখেন। ভয়েস রেকর্ডিং করে না কেউ আপনাকে সাহায্য করেন এই ব্যাপারে।
উত্তর-আগে ব্রেলে লিখতাম এখন কম্পিউটারে লিখি।
প্রশ্ন-৪)আপনি কতদিন ধরে লিখছেন
উত্তর-আমি ছোটবেলা থেকেই লিখি।
প্রশ্ন-৫)আপনি তো গান ভালবাসেন।আপনার প্রিয় গায়ক-গায়িকা কে
উত্তর-আমার প্রিয় গায়ক কবীর সুমন।প্রিয় গায়িকা জয়তী চক্রবর্তী
প্রশ্ন-৬)আপনার প্রিয় লেখক-লেখিকাকে
উত্তর-অনেকেরই লেখা খুব ভাল লাগে।জয় গোস্বামীকে এখনকার কবি হিসাবে ভাল লাগে।এছাড়া পূর্ববর্তী হিসাবে রবীন্দ্রনাথ-জীবানানন্দ।গল্পকার হিসাবে শরৎচন্দ্র-মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়-মহাশ্বেতা দেবী-সুচিত্রা ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন-৭)আপনার প্রিয় মানুষকে
উত্তর-প্রিয় তো অনেকেই আছেন।এভাবে নির্বাচন করা খুব মুশকিল।তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে আমার কাছে প্রিয়।
প্রশ্ন-৮)আপনার লেখার প্রেরনা কে
উত্তর-  মূল প্রেরনা আমি নিজেই।নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে থাকার সময়েই আমি সবার দেখাদেখি লিখতে শুরু করি।সেক্ষেত্রে আমার বিদ্যালয়ই আমার প্রেরনা বলতে পারেন।
প্রশ্ন-৯)আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত আছেন রবীন্দ্রনাথ।তাঁর সম্বন্ধে আপনার উপলব্ধি কি।
উত্তর-রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাহিত্যের মাপকাঠি বলতে পারেন।রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করেই আমাদের আধুনিক সাহিত্যের পরিবর্তন এসেছে।দুটো ব্যাপার এখনও ঘটে চলেছে।নয় রবীন্দ্রনাথের মতন লিখব নয় বিপরীতভাবে লিখব।উনিই আধুনিক আধুনিক সাহিত্যের স্তম্ভ বলতে পারেন।
প্রশ্ন-১০)আপনার লেখার ব্যাপারে আপনার পরিবারের ভূমিকা কি
উত্তর-যেহেতু বাইরেই আমি বেশীরভাগ সময় কাটিয়েছি বন্ধু-বান্ধবদের সান্নিধ্যে।লেখার ব্যাপরে তাদের ভূমিকাই বেশী।
প্রশ্ন-১১)ভবিষ্যত প্রজন্মকে আপনি কি বার্তা দিতে চান
উত্তর-মানুষ আজকাল যতই ডিজিটাল হয়ে যাক্ মানুষের বই পড়া উচিত বেশী করে।যদিও টেকনলজি আমদের কাজ অনেক সাহায্য করে তবু বই পড়ার বিকল্প কোনও কিছু নেই।
প্রশ্ন-১২)আপনি ভবিষ্যতে কিভাবে স্পর্শনন্দনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান।
এবার আমাদের দায়িত্ব নেবার পালা এসেছে।একটা মানুষ তো সারাজীবন একা চলতে পারেন না।এবার আমাদের তাঁর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার সময় এসেছে।সত্যজিৎদা একনিষ্ঠ মানুষ।কোন স্পনসর ছাড়াই একা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই পত্রিকাটি চালাচ্ছেন।আমরা যৌথভাবে একটা ফাণ্ড তৈরী করতে।আর শুধু পত্রিকা বের করা নয় কবিতা উৎসব বা অন্যান্য কাজেও আমরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাই।


No comments:

রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে

                      রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে                                                                            মিথ্যুক ভা...